রিকার্ডো বলল, “সেটা তোমার এখনই জানতে হবে না।”
“আমি জানতে চাই।”
“বেশ। তাহলে শোনো–এরা আমাদের প্রাক্তন গবেষক।”
“প্রাক্তন?”
“হ্যাঁ।”
লিডিয়া ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল, “এখন কোথায়?”
“নেই।”
“নেই মানে?”
“মারা গেছে।”
“কীভাবে?”
রিকার্ডো কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, “কেউ একসিডেন্টে, কেউ সুইসাইড, কেউ ড্রাগ ওভারডোজ।”
লিডিয়া ধীরে ধীরে রিকার্ডোর দিকে তাকাল। জিজ্ঞেস করল, “কেন?”
“এরা সবাই এপসিলন ছেড়ে চলে গিয়েছিল। এপসিলনের কাজ করার পদ্ধতি তাদের পছন্দ হয়নি। চাকরী ছেড়ে দেবার পর হতাশায় ডুবে গিয়ে এভাবে মারা গেছে।”
লিডিয়া ফিস ফিস করে বলল, “আসলে, তোমরা এদের সবাইকে মেরে ফেলেছ, তাই না?”
রিকার্ডো কোনো উত্তর দিল না। হাসার মত ভঙ্গী করল। লিডিয়া গলা আরেকটু নামিয়ে বলল, “তারপর এই ছবিগুলো এখানে টানিয়ে রেখেছ, সবাইকে মনে করিয়ে দিচ্ছ, কেউ যদি এপসিলনের সাথে বেইমানী করে তাহলে তার অবস্থাও হবে এরকম। তাই না?”
রিকার্ডোর মুখে হাসিটুকু আরো বিস্তৃত হল, বলল “কফি খাবে? আমাদের কাফেটারিয়াতে অসাধারণ কফি পাওয়া যায়।”
.
এক সপ্তাহ পর লিডিয়া রিকার্ডোর হাতে একটা খাম ধরিয়ে দিয়ে বলল, “এই যে নাও। এর ভিতরে একটা সিডি আছে। সিডির ভেতরে আমি একটা প্রজেক্ট সম্পর্কে লিখেছি।”
রিকার্ডো খুশি হওয়ার ভান করে বলল, “চমৎকার। সাধারণত এতো তাড়াতাড়ি কেউ কোনো আইডিয়া দিতে পারে না।”
লিডিয়া কোনো উত্তর না দিয়ে লাইব্রেরীর দিকে হেঁটে গেল। ঘণ্টাখানেক পর রিকার্ডো তাকে খুঁজে বের করে বলল, “তোমার প্রজেক্টটা পড়েছি।”
লিডিয়া তার মনিটরের দিকে তাকিয়ে রইল রিকার্ডোর কথায় কোনো উৎসাহ দেখাল না। রিকার্ডো বলল, “আমি বসের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। আমার ধারণা–”
লিডিয়া এবারেও রিকার্ডোর কথায় কোনো উৎসাহ দেখাল না। তার মনিটরের দিকে তাকিয়ে রইল। রিকার্ডো হাসার চেষ্টা করে বলল, “আমার ধারণা তোমার বক্তব্য পুরোটা এক ধরনের পাগলামো। অবাস্তব পাগলামো।”
লিডিয়া কোনো কথা বলল না।
পরদিন ভোরবেলা রিকার্ডো উত্তেজিত ভাবে লিডিয়াকে খুঁজে বের করল। গলা নামিয়ে বলল, “ তোমাকে এখনই নিউইয়র্ক যেতে হবে।”
“এখনই?”
“হ্যাঁ। বস তোমার সাথে কথা বলতে চাইছেন।”
লিডিয়া বলল, “পরের ফ্লাইট কখন?”
“ফ্লাইটে যেতে হবে না। আমাদের কোম্পানীর নিজের জেট আছে। তুমি রেডি হও।”
“আমি রেডি।”
রিকার্ডো উত্তেজিত গলায় বলল, “আগে কখনো এরকম ঘটেনি। বস কখনো এতো জুনিয়র মানুষের সাথে দেখা করতে চাননি।”
লিডিয়া কিছু বলল না। রিকার্ডো বলল, “তোমার প্রজেক্ট! নিশ্চয়ই তোমার প্রজেক্টটা নিয়ে বস কিছু বলবেন। আমার কাছে মনে হয়েছে পাগলামো, কিন্তু বসের কাছে পাগলামো মনে হয়নি। বস নিশ্চয়ই এর মাঝে কিছু একটা দেখেছেন যেটা আমি দেখিনি।
লিডিয়া বলল, “বসের সাথে কথা বলার জন্যে আমার কী আলাদা কিছু জানা থাকতে হবে?”
“তাকে নাম ধরে ডাকবে না। স্যার বলবে। তোমাকে নাম ধরে ডাকার অনুমতি দিলেও নাম ধরে ডাকবে না। তোমাকে বসার অনুমতি না দেয়া পর্যন্ত বসবে না।”
“আর কিছু?”
“তোমাকে কিছু খেতে দিলে না করবে না। খাবে, অপছন্দ হলেও খাবে।”
“আর কিছু?”
“সোজাসুজি চোখের দিকে তাকাবে না।”
লিডিয়া বলল, “ঠিক আছে।”
.
ঠিক ছয় ঘন্টা পর একটা কালো গাড়ী লাগার্ডিয়া এয়ারপোর্ট থেকে লিডিয়াকে তুলে নিয়ে গেল। ম্যানহাটনের মাঝামাঝি একটা বিল্ডিংয়ের সামনে গাড়ীটা দাঁড়াতেই একজন দরজা খুলে বলল, “লিডিয়া?”
লিডিয়া মাথা নাড়ল। মানুষটি বলল, “আমার সাথে এসো। বস তোমার জন্য অপেক্ষা করছেন।”
ছিয়াশি তালায় লিফট থেমে গেল, লিডিয়া তখন মানুষটির পিছনে পিছনে লিফট থেকে বের হয়ে আসে। দরজার সামনে দাঁড়াতেই ভারী দরজাটা খুলে যায়। দুজনে ভেতরে ঢুকে গেল। সামনে আরেকটা ভারী দরজা। সেটাও খুলে গেল। মানুষটা একটা লম্বা করিডর ধরে হেঁটে হেঁটে একেবারে শেষ মাথায় পৌঁছে একটা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলল, “লিডিয়া, বস এখানে তোমার জন্য অপেক্ষা করছেন।”
লিডিয়া দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে গেল। বিশাল একটা আলোকোজ্জ্বল ঘর। ঘরের শেষ মাথায় একটা বড় টেবিলের পিছনে একজন মানুষ তার দিকে পিছন দিয়ে একটা কাগজের দিকে তাকিয়ে আছে। লিডিয়ার পায়ের শব্দ শুনে মানুষটি ঘুরে তাকাল। মানুষটির চুল ধবধবে সাদা, চোখ দুটো আশ্চর্য রকম নীল। মুখে বয়সের বলি চিহ্ন। তার বয়স কতো অনুমান করা কঠিন। সাদা রংয়ের শার্ট সাদা টাই সাদা স্যুট। জুতো দেখা যাচ্ছে না কিন্তু লিডিয়া অনুমান করতে পারল সেগুলোও নিশ্চয়ই ধবধবে সাদা। লিডিয়ার দিকে তাকিয়ে ভারী গলায় বলল, “এসো লিডিয়া।”
লিডিয়া এগিয়ে যায়। কাছে না গিয়েও বুঝতে পারে এই মানুষটি ভয়ংকর। একদিন সে কী এই মানুষটির মতো হতে পারবে?
লিডিয়া কাছাকাছি পৌঁছানোর পর মানুষটি বলল, “বস।”
লিডিয়া একটা চেয়ার টেনে বসে। চেয়ারটি সুন্দর কিন্তু আরামদায়ক নয়। ইচ্ছে করে এরকম রাখা হয়েছে, এই ঘরে নিশ্চয়ই কাউকে আমন্ত্রিত অনুভব করতে দেয়া হয় না।
মানুষটি বলল, “চা, কফি কিছু খাবে।” লিডিয়া চোখের কোনা দিয়ে আগেই দেখেছে ঘরের কোনায় একটা কফি মেশিনে কফি রাখা আছে। পাশে বেশ কয়টা মগ। তাই সে বলল, “একটু কফি খেতে পারি। ব্ল্যাক।”