.
এক সপ্তাহ পর তিষা তার স্কুল বাস থেকে নামল, তারপর রাস্তা পার হয়ে সে হেঁটে হেঁটে তাদের এলাকায় ঢুকে পড়ে। অন্যান্য দিনের মত আকাশে মেঘ, পথে কোনো মানুষজন নেই। ছবির মত একটি একটি বাসা পার হয়ে সে তার বাসায় এল, সামনে কোনো গাড়ী নেই। তার অর্থ আম্মু এখনো আসেননি। আজকে কিন্তু তার মন খারাপ হল না, তিষা জানে সে একা নয়। বাসায় তার জন্যে টুইটি অপেক্ষা করছে। দরজার তালায় চাবিটা স্পর্শ করা মাত্রই ভেতরে সে টুইটির উত্তেজনা টের পেল, সে ঘরের ভেতর ছোটাচ্চুটি শুরু করেছে। দরজা খুলতেই টুইটি তার ছেলেমানুষী গলায় ভেউ ভেউ করে ডাকতে ডাকতে তিষাকে ঘিরে ঘুরতে থাকে। তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, তারপর আবার ছুটে ঘরের আরেক মাথায় চলে যায় আবার ছুটে আসে। দেখে বোঝা যায় আনন্দে সে কী করবে বুঝতে পারছে না।
তিষা স্কুলের ব্যাগটা নিচে রেখে বলল, “আস্তে টুইটি, আস্তে! তোর তো উত্তেজনায় স্ট্রোক হয়ে যাবে!”
টুইটি তিষার কথা কিছু বুঝল কীনা কে জানে কিন্তু তার উত্তেজনা বিন্দুমাত্র কমল না। সে ছোটাচ্চুটি করতে লাগল, তিষাকে ঘিরে ঘূরতে লাগল, তার উপর লাফিয়ে পড়তে লাগল এবং চিকন গলায় ভেউ ভেউ করে ডাকতে লাগল। তিষা টুইটিকে জাপটে ধরে আদর করতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত তার উত্তেজনা কমে আসে। তিষা তখন তার ঘরে গিয়ে ব্যাগটা রাখে, স্কুলের পোষাক পাল্টে নেয় এবং সারাক্ষণ টুইটি তাকে ঘিরে লাফ ঝাঁপ দিতে থাকে। তারপর নিচে নেমে তিষা ফ্রীজ থেকে একটা পিৎজার টুকরো বের করে মাইক্রোওয়েভে গরম করে নেয়। একটা প্লেটে পিজার টুকরোটা নিয়ে সে পিছনের দরজা খুলে বের হয়ে আসে। তিষা বের হবার আগেই টুইটি লাফিয়ে বের হয়ে যায়। ঘরের ভেতর সবকিছু সে এতোদিনে চিনে গেছে বাইরে সবকিছু তার কাছে রহস্যময়। সে সতর্কভাবে এদিকে সেদিকে তাকায়। গাছে একটা রবিন পাখীকে দেখে গরগর করে একটা গর্জনের মত ভঙ্গী করে। একটা কাঠবেড়ালীকে দেখে তাকে ধাওয়া করে এবং হঠাৎ করে থেমে গিয়ে মাটি শুকতে শুকতে এগিয়ে যায়।
তিষা এক ধরণের স্নেহ নিয়ে এই অবুঝ পশুটির দিকে তাকিয়ে থেকে তার পিৎজাটি খেতে থাকে। একটা ছোট অবুঝ পশু একজন মানুষের জীবন এভাবে পাল্টে দিতে পারে তিষা আগে কখনো কল্পনা করেনি।
. ঠিক এরকম সময় তিষার বাসা থেকে দুই হাজার তিরিশ কিলোমিটার দূরে একটা ছয়তলা দালানে লিডিয়া এপসিলোন কোম্পানীতে যোগ দিতে গিয়েছি।
০৩. রিকার্ডো লিডিয়ার দিকে চোখ
রিকার্ডো লিডিয়ার দিকে চোখ মটকে বলল, “তুমি বলেছিলে তুমি এপসিলোনে যোগ দেবে না।”
লিডিয়া কোনো উত্তর দিল না। রিকার্ডো সহৃদয়ভাবে হেসে বলল, “আমার ধারণা শেষ পর্যন্ত মত পরিবর্তন করে এখানে যোগ দেয়াটা তোমার জন্যে খুব চমৎকার একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
লিডিয়া হিংস্র মুখে বলল, “তুমি যখন আমার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলে তখন যদি পরিষ্কার করে সত্যি কথাটা বলে আসতে তাহলে
আমার সিদ্ধান্ত নেওয়াটা আরো সহজ হতো।”
রিকার্ডো অবাক হবার ভান করে বলল, “কোন সত্যি কথাটা তোমাকে বলা হয়নি?”
“তোমার সাথে দেখা হওয়ার দুই সপ্তাহের মাঝে বিশ্ববিদ্যালয় আমার থিসিস নিয়ে তদন্ত কমিটি বসিয়েছে, তিন সপ্তাহের মাঝে ইনকাম ট্যাক্স অফিস থেকে চিঠি এসেছে, চার সপ্তাহের মাঝে এফ বি আই কথা বলতে এসেছে–এগুলো কী এমনি এমনি হয়েছে?”
“তুমি যখন একটা বি.এমডব্লিউ গাড়ী কিনে আমাদের সিগন্যাল দিয়েছ যে তুমি আমাদের সাথে যোগ দেবে তখন কী ম্যাজিকের মতো সব যন্ত্রণা মিটে যায়নি?”
“গিয়েছে।”
“তাহলে আমরা তোমার ভালো চাই লিডিয়া। তুমি একা একা থাকলে আগে হোক পরে হোক বিপদে পড়বে। আমাদের সাথে থাকো তুমি জীবনের চ্যালেঞ্জগুলো পাবে, কিন্তু কখনো বিপদে পড়বে না। আমরা তোমাকে রক্ষা করব। আর যদি না থাকো–”
“আর যদি না থাকি?”
রিকার্ডো হা হা করে হাসল, “আর যদি না থাকো তাহলে কী হতে পারে সেটা তো দেখেছই। সেটা এখন অতীত। এখন তুমি আমাদের এসসিলনের একজন সম্মানীত গবেষক। এপসিলনে তোমাকে স্বাগত জানাই।”
লিডিয়া জিজ্ঞেস করল, “এখন আমাকে কী করতে হবে?”
“তোমাকে আলাদা করে কিছুই করতে হবে না। আমাদের কাজকর্মের সাথে পরিচিত হও, দেখো কী ধরণের কাজ তোমার ভালো লাগে। সেটা করো।”
“ঠিক আছে।”
রিকার্ডো উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “চল, তোমাকে আমাদের অফিসটা ঘুরিয়ে দেখাই। তোমার ভালো লাগবে।”
রিকার্ডো তখন লিডিয়াকে সবকিছু ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাল। বড় লাইব্রেরী, বড় ডাটা সেন্টার, নানা ধরনের ল্যাবরেটরি। সবচেয়ে দর্শনীয় বিষয়টি হচ্ছে ক্র্যাগনন নামে একটা বিশাল সুপার কম্পিউটার। সারা পৃথিবীতেই মনে হয় এই মডেলের কম্পিউটার খুব বেশী নেই। ছোট ছোট অফিস ঘরে টেবিলে ঝুঁকে মানুষজন কাজ করছে। মানুষগুলোর চেহারার মাঝে তীক্ষ্ণ বুদ্ধির ছাপ আছে কিন্তু কোনো কমনীয়তা নেই। চেহারার মাঝে এক ধরনের অস্বাভাবিকতা রয়েছে সেটা কেন বোঝা যায় না শুধু অনুভব করা যায়।
সবকিছু ঘুরিয়ে দেখিয়ে যখন অফিসের শেষ প্রান্তে চলে এসেছে তখন লিডিয়ার চোখ পড়ল একটা নোটিস বোর্ড–সেখানে আলাদা আলাদাভাবে বেশ কিছু মানুষের ছবি। মানুষগুলোর সবাই কম বয়সী। লিডিয়া জিজ্ঞেস করল, “এগুলো কাঁদের ছবি?”