“দেখি চেষ্টা করে।”
তখন তিষা গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে ডাকল, “মিশকা! মি-শ-কা! তুমি কোথায়?”
হাজার হাজার এনিম্যানের ভয়ঙ্কর হাসিয় শব্দ আর মানুষগুলোর আর্তনাদের মাঝে তিষার গলা চাপা পড়ে গেল। তিষা আবার গলা ফাটিয়ে ডাকল, “মি-শ-কা! মি-শ-কা!”
এবারে হঠাৎ করে মিশকাকে দেখা গেল। স্কুল মাস্টারের মতো দেখতে মানুষটির উপর অসংখ্য এনিম্যান শিশুদের একটা ঢিবি। তার উপর মিশকা দাঁড়িয়ে দুই হাত তুলে তিষার ডাকের সাড়া দিল। তিষা সাইন ল্যাংগুয়েজে তাকে বলল, “এদেরকে মেরে ফেলো না।”
মিশকা মেরে ফেলা শব্দটির সাথে পরিচিত না। তাকে সাইন ল্যাংগুয়েজে অনেক কিছু শেখানো হয়েছে কিন্তু মেরে ফেলা শব্দটি কখনো শেখানো হয়নি। মিশকা হাত নেড়ে সাইন ল্যাংগুয়েজে জিজ্ঞেস করল, “তার মানে কী?”
“এখন থামাও।”
“কেন? এরা খারাপ। এরা দুষ্ট। এদেরকে কষ্ট দিতে হবে।”
“কষ্ট দেওয়া হয়েছে। এখন থামাও।”
মিশকাকে এই প্রস্তাবে রাজী হতে দেখা গেল না, হাত নেড়ে বলল, “থামালে এরা আমাদের কষ্ট দিবে।”
“কষ্ট দিতে পারবে না। আমরা এদেরকে বেঁধে রাখব।”
“বেঁধে রাখবে?”
“হ্যাঁ।”
“কেমন করে?”
“তোমরা থাম, তখন আমি তোমাকে দেখাব।”
মিশকাকে আরো খানিকক্ষণ বোঝাতে হল তখন তারা থামতে রাজী। হল। তিষা আর জন তাদেরকে বোঝাল যে তারা ইচ্ছে করলে শক্ত করে মেঝেতে চেপে ধরে রাখতে পারে কিন্তু তাদেরকে আর কিছু করার প্রয়োজন। নেই।
মানুষগুলোকে বাঁধার জন্যে দড়ি পাওয়া সহজ হল না, তাই প্যান্টের বেল্ট, কম্পিউটারের পাওয়ার কর্ড, স্টুডিও লাইটের তার এরকম জিনিস দিয়ে তাদের একজন একজন করে বেধে রাখা হল। কয়েকজন মানুষের সার্ট খুলে সেটাকে পাকিয়ে দড়ির মতো করে সেগুলোও বাঁধার জন্যে ব্যবহার করা হল। এনিম্যান শিশুগুলো পুরো প্রক্রিয়াটা খুব মনোযোগ দিয়ে লক্ষ করল তারপর সম্ভষ্টির মতো মাথা নাড়ল।
লিডিয়াকে ঠেলে সোজা করে বসিয়ে দেয়া হল। তার মাথার চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলেছে, এখন পুরো মাথায় কোনো চুল নেই, তাকে দেখে চেনা যায়। না। মুখ ক্ষতবিক্ষত উপরের ঠোঁটটা দুইভাগ হয়ে রক্ত পড়ছে। শরীরের কাপড়ও ছিন্ন ভিন্ন, তিষা ভেবেছিল তার জ্ঞান নেই, কিন্তু দেখা গেল জ্ঞান আছে।
তিষা ফিস ফিস করে বলল, “আমার আয়ু তাহলে মাত্র দশ মিনিট ছিল না! মনে হয় ভালোই আছে। তোমার আয়ু নিয়েই মনে হচ্ছে সমস্যা।”
লিডিয়া কোনো কথা বলল না। তিষা বলল, “আরেকটা জিনিস জেনে রাখো, আমার গরীব দেশটা কিন্তু খুব সুন্দর সেই দেশে কিন্তু তোমার মতো
একটাও অসুন্দর মানুষ নেই! তোমার দেশটাও খুব সুন্দর কেন জানো? কারণ এখানে জনের মতো ছেলেরা আছে!”
লিডিয়া এবারেও কোনো কথা বলল না। তিষা বলল, “একটু আগে। আমি তোমার মুখে থুতু দিয়েছিলাম, তুমি খুব রাগ করেছিলে। এখন যত ইচ্ছে তত থুতু দিতে পারব, কিন্তু আমি দেব না। কেন দেব না জান?”
লিডিয়া কোনো কথা বলল না, তিষা বলল, “তার কারণ একজন মানুষের মুখে থুতু দিয়ে তার যেটুকু সম্মান নষ্ট করা যায় তোমার সেই সম্মানটুকুও আর নেই। তুমি এখন আর নর্দমার কীটও নও।”
লিডিয়া কোনো কথা না বলে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিল।
.
তিষা আর জন পুরো বিল্ডিংয়ের সবগুলো মানুষকে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলার পর বাইরে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে আবিষ্কার করল এই পুরো এলাকাটুকু বাইরের পুরো জগতের সাথে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। কোনোভাবেই যোগাযোগ করা সম্ভব নয়। টেলিফোন কাজ করে না, নেটওয়ার্ক কাজ করে
, আশে পাশে কোনো জনমানব নেই। বাইরের জগতের সাথে যোগাযোগের কোনো উপায় না পেয়ে তারা শেষ পর্যন্ত একটা বিল্ডিংয়ে আগুন ধরিয়ে দিল। আগুনের শিখাটা এনিম্যান শিশুরা খুবই উপভোগ করল বলে মনে হল।
আগুন ছড়িয়ে পড়ার পর প্রথমে ফায়ার ব্রিগেড তারপর পুলিশের গাড়ি এসে এলাকাটা ঘিরে ফেলল। পুলিশের একটা দল ভিতরে ঢুকে তিষা আর জনকে দেখে খুব অবাক হয়ে বলল, “ তোমরা কারা? এখানে কী হচ্ছে?”
তিষা বলল, “সেটি বোঝাতে অনেক সময় লাগবে। কিন্তু তার আগে আমি কী আমার মায়ের সাথে একটু কথা বলতে পারি? মা’কে শুধু জানাব আমি ভালো আছি?”
.
ঘণ্টাখানেক পর পুরো এলাকার দৃশ্যটি পাল্টে গেল। শত শত পুলিশের গাড়ি, অসংখ্য এম্বুলেন্স, টেলিভিশনের গাড়ি, সাংবাদিক, আকাশে হেলিকপ্টার। এনিম্যান শিশুদের দায়িত্ব নেবার জন্য ডাক্তার নার্স। সামাজিক কর্মী তাদের কীভাবে শান্ত রাখা যায় জিজ্ঞেস করার পর তিষা বলেছে আইসক্রিম খেতে দিতে, সে জন্যে বেশ কয়েকটা আইসক্রীমের ।ট্রেইলার ট্রাক। দেখা গেছে তিষার কথা সত্যি। এনিম্যান শিশুগুলো আইসক্রিম পেয়ে মহাখুশী।
অনেক রাতে যখন পুরো এলাকাটা নিয়ন্ত্রণের মাঝে এসেছে তখন একটা সিঁড়িতে নক্ষত্রের আলোতে জন আর তিষা বসে আছে। তিষা তখন জনকে সাইন ল্যাংগুয়েজে বলল, “ঠিক যখন আমাদের ড্রাগ ওভারভেজ করতে যাচ্ছিল তখন আমি তোমাকে কী বলেছিলাম, তুমি খেয়াল করেছিলে?”
জন মাথা নাড়ল। তিষা বলল, “আমি বলেছিলাম, আমি তোমাকে ভালোবাসি। তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ ওটা কিন্তু খুবই মানবিক একটা ভালোবাসা। ওর মাঝে কিন্তু কোনো রোমান্স ছিল না।
জন হাসল, বলল, “হ্যাঁ। আমি বুঝতে পেরেছিলাম।“ তারপর দুজনই হি হি করে হাসতে লাগল।