সবাই ছুটে এসে জনকে পিছন থেকে ধরে টেনে সোজা করে-লিডিয়া কোনোমতে উঠে বসে বিড় বিড় করে বলল, “খবরদার ওর গায়ে হাত দিও না। ওর শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন থাকতে পারবে না।”
সবাই মিলে জনকে ধরে টেনে সরিয়ে নিয়ে যায়, তার সিকিউরিটি গার্ডটি তখনো দুই পায়ের মাঝখানে ধরে বাঁকা হয়ে শুয়ে কোকাচ্ছিল, চোখে আগুন ঝরিয়ে সে জনের দিকে তাকিয়ে একটা কুৎসিত গালি দিল।
লিডিয়া হাত দিয়ে তার নাক মুখ থেকে রক্ত মুছে তার হাতের দিকে তাকিয়ে রইল। তাকে দেখে মনে হতে থাকে সে বুঝি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না।
লিডিয়া টেবিলটা ধরে কোনোমতে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বলল, “কাজ শেষ করো। এই দুই নর্দমার কীটকে তাদের সত্যিকার জায়গায় পাঠাও। এই মুহূর্তে।”
বেশ কয়েকজন তখন শক্ত করে দুইজনকে ধরে রাখে, ডাক্তারের মতো দেখতে বয়স্ক মানুষটা সিরিঞ্জটা নিয়ে তাদের দিকে এগিয়ে যায়। যারা জন আর তিষাকে ধরে রেখেছে তাদেরকে বলল, “ইঞ্জেকশান পুশ করার সময় ধরে রেখ। যখন আমি বলব তখন ছেড়ে দিও।”
তিষা জনের দিকে তাকিয়ে বলল, “গুড বাই জন। আমি তোমাকে ভালোবাসি।”
জন ফিসফিস করে বলল, “আমিও তোমাকে ভালোবাসি তিষা। সবসময়।”
ডাক্তারের মতো মানুষটা সিরিঞ্জ হাতে প্রথমে জনের দিকে এগিয়ে গেল।
হঠাৎ করে ঘরের সবাই এক সাথে স্থির হয়ে গেল। তারা বহুদূর থেকে। সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো এক ধরনের শব্দ শুনতে পায়। ঘরের মেঝেতে মৃদু এক ধরনের কাঁপন অনুভব করে। সবাই বিস্মিত হয়ে একে অন্যের দিকে তাকাল, ঢেউয়ের মতো শব্দটা ধীরে ধীরে ছোট শিশুদের সম্মিলিত হাসির মতো শোনাতে থাকে আর মৃদু কম্পনটা অসংখ্য ছোটছোট পায়ের শব্দের মতো শোনাতে থাকে। সবাই বুঝতে না পারলেও তিষা সাথে সাথে বুঝে গেল কী ঘটেছে। তার মিশকা এনিম্যান শিশুদের বুঝিয়ে এখানে নিয়ে আসছে তাদেরকে উদ্ধার করার জন্য।
সবাই এক ধরনের বিস্ময় নিয়ে দরজার দিকে তাকালো এবং হঠাৎ করে দরজাটা ধড়াম করে খুলে যায় এবং বন্যার পানির মতো অসংখ্য এনিম্যান ঘরের ভেতরে এসে ঢুকে আর মুহূর্তে সারা ঘরে তারা ছড়িয়ে পরে। সংখ্যায় তারা একজন দু’জন নয়, অসংখ্য। তারা একে অনের উপর দিয়ে ছুটে যেতে থাকে। দেখতে দেখতে হাজার হাজার এনিম্যান শিশু আর তাদের হাসির শব্দে পুরো ঘরটা ভরে যায়। এনিম্যান শিশুগুলো খালি হাতে আসেনি। তাদের হাতে ছোট পাথর, কাঠি, কাঁচের টুকরো, কাঁটা, চামুচ বা কিছু একটা আছে। তারা শুধু আসিনি তাদের সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য আছে। যতোগুলো মানুষ ছিল তাদের প্রত্যেকের শরীর বেয়ে তারা উপরে উঠতে থাকে। তারা খিল খিল করে হাসির শব্দ করতে করতে মানুষগুলোকে আঘাত করতে থাকে। জন আর তিষা অবাক হয়ে দেখল ঘর বোঝাই হবার পরও তাদের আসা বন্ধ হল না। তারা আসতেই থাকল, একে অন্যের উপর দিয়ে ছুটতে লাগল।
অন্যদের আঘাত করলেও জন আর তিষাকে কিছু করল না। মাঝে মাঝে তাদের শরীর বেয়ে উপরে উঠে তারা তাদের গলা জড়িয়ে ধরে গালে চুমু খেয়ে আবার নিচে নেমে অন্যদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে থাকে।
জন আর তিষাকে যারা ধরে রেখেছিল তারা ততক্ষণে তাদেরকে ছেড়ে দিয়ে নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টা করে-একটি এনিম্যান শিশু একেবারেই দুর্বল, তাদের হাতের আঘাতে কারো ব্যথা পাওয়ার কথা নয়। কিন্তু যখন একসাথে হাজার হাজার এনিম্যান শিশু এসে একজনকে জাপটে ধরে তাকে টেনে নিচে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করতে থাকে তখন তারা অসহায়! এনিম্যান শিশুরা যখন তাদের ছোট ছোট হাত দিয়ে আঘাতের পর আঘাত করতে থাকে তখন সেখান থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ নয়।
জন লক্ষ্য করল সিকিউরিটি গার্ডগুলো তাদের হাতের অস্ত্রগুলো দিয়ে এনিম্যান শিশুগুলোকে গুলি করার চেষ্টা করছে, হাজার হাজার এনিম্যান তাদের ধরে রেখেছে বলে তারা অস্ত্রগুলো ঠিক করে ধরতে পারছে না। জন তখন এগিয়ে গিয়ে একজন সিকিউরিটি গার্ডের হাত থেকে তার অস্ত্রটি কেড়ে নিল। তিষার হাতে সেটি দিয়ে সে তখন দ্বিতীয় গার্ডের অস্ত্রটিও কেড়ে নেয়। এনিম্যান শিশুগুলো মানুষগুলোকে টেনে নিচে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করতে থাকে। তাদের পা ধরে টানতে থাকে, কামড় দিতে থাকে, ধাক্কা দিতে থাকে, লাথি দিতে থাকে।
দেখতে দেখতে মানুষগুলো ঘরের মেঝেতে পড়ে যেতে থাকে তখন এনিম্যানগুলো তাদের হাত পা ধরে রাখে যেন তারা নড়তে না পারে, অন্য অনেকগুলো এনিম্যান তাদের উপর লাফাতে থাকে। লাথি মারতে থাকে, তাদের হাতে কাঁটা চামুচ কাঠি যা কিছু আছে সেটা দিয়ে খোঁচাতে থাকে। তিষা আর জন বিস্ফারিত চোখে দেখল লিডিয়া মেঝেতে পড়ে কোনোমতে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করছে, পারছে না। অসংখ্য এনিম্যান শিশু তাকে নিয়ে টানা হ্যাঁচড়া করছে, তার মাথার চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলার চেষ্টা করছে। যন্ত্রণায় চিৎকার করছে কিন্তু এনিম্যান শিশুর হাসির শব্দে সব কিছু চাপা পড়ে গেছে।
তিষা জনকে আঁকড়ে ধরে ভয় পাওয়া গলায় বলল, “এরা সবাই মেরে ফেলবে।”
জন বলল, “হ্যাঁ।”
তিষা বলল, “আমি সহ্য করতে পারছি না জন। কিছু একটা কর।“
“কী করব? এদেরকে কেমন করে থামাই?”
“মিশকা! মিশকাকে বলে দেখি।”
জন বলল, “এর মাঝে খুঁজে পাবে?”