সিকিউরিটি গার্ডের একজন চিৎকার করে বলল, “তোমাদের পালানোর কোনো জায়গা নেই। আমাদের সাথে এসো।” কথা বলেই সে শেষ করল না তার স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে তিষা আর জনের দিকে এগুতে থাকে। এনিম্যান শিশুগুলো সরে গিয়ে গার্ডকে জায়গা করে দেয়। তিষা আর জনের কাছাকাছি গিয়ে সিকিউরিটি গার্ড তার হাতের অস্ত্রটা ঝাকুনী দিয়ে বলল, “এসো।”
তিষা আর জন একজন আরেকজনের দিকে তাকাল। তাদের আর, কিছু করার নেই। সিকিউরিটি গার্ড আবার তার হাতের অস্ত্র ঝাঁকুনি দিয়ে। বলল, “চল আমাদের সাথে।”
তিষা আর জন এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল কিন্তু সাথে সাথে এনিম্যান শিশুরা তাদেরকে জাপটে ধরে, তারা তিষা আর জনকে যেতে দেবে না। একটি শিশুর গায়ে তেমন জোর না থাকতে পারে কিন্তু যখন একসাথে অনেকে জাপটে ধরে তখন সেটা একজনকে আটকে ফেলার জন্যে যথেষ্ঠ। তারা জোর করে এগুতে চেষ্টা করে কিন্তু লাভ হলো না। এনিম্যান শিশুরা কথা বলতে পারে না, তাদের একমাত্র প্রতিক্রিয়া হচ্ছে হাসি তাই তারা তিষা আর জনকে জাপটে ধরে খিল খিল করে হাসতে থাকে।
সিকিউরিটি গার্ড তখন এগিয়ে এসে এনিম্যান শিশুদের প্রথমে হাত দিয়ে ধরে টেনে সরিয়ে দেয়, তাতে খুব একটা লাভ হয় না একজনকে সরাতেই অন্য একজন ছুটে এসে ধরে ফেলে। সিকিউরিটি গার্ড তখন শক্ত বুট দিয়ে লাথি মেরে তাদেরকে সরিয়ে দিতে থাকে। প্রচণ্ড যন্ত্রণায় এনিম্যান শিশুদের আর্তনাদ করার কথা-তারা আর্তনাদ করতে পারে না তাই তারা এবারে অট্টহাসির মতো শব্দ করতে থাকে।
এনিম্যান সিকিউরিটি গার্ড দুজন শেষ পর্যন্ত তাদেরকে শক্ত করে তাদের কাপড় ধরে হ্যাঁচকা টান দিয়ে টেনে নিতে থাকে। হলঘরের হাজার হাজার এনিম্যান শিশু নিঃশব্দে তাকিয়ে থাকে, তাদের মুখে হাসি কিন্তু সেই হাসিতে কোনো আনন্দ নেই।
.
তিষা আর জনকে যখন লিডিয়ার ঘরে আনা হল। তখন লিডিয়া গভীর মনোযোগ দিয়ে তার মনিটরে একটা ভিডিও দেখছে, পায়ের শব্দ শুনে সে মাথা ঘুরিয়ে তাকাল। সেই মুহূর্তে মনিটরে তিষা আর জনের একটি দৃশ্য, তারা খুবই অন্তরঙ্গ ভঙ্গীতে একজন অন্যজনকে ধরে রেখেছে, জনের হাতে একটা সিরিঞ্জ। ভিডিওতে দেখা গেল তিষা তার বাম হাতটি এগিয়ে দিয়েছে তখন জন সেখানে সিরিঞ্জ ঢুকিয়ে দিয়েছে। তিষা তীব্র আনন্দের একটা শব্দ করল, দেখতে দেখতে তার শরীর কাঁপতে থাকে।
তিষা হতবাক হয়ে ভিডিওটার দিকে তাকিয়ে থাকে, এই ভিডিওটি কীভাবে তৈরী করেছে? লিডিয়া সিকিউরিটি গার্ড দুজনের দিকে তাকিয়ে। বলল, “এক্সিকিউশান টিমকে খবর দাও।”
“খবর দেওয়া হয়েছে।”
“আমাদের হাতে সময় নেই। খুব দ্রুত শেষ করতে হবে।”
“ঠিক আছে।” গার্ডটি সাথে সাথে ঘর থেকে বের হয়ে যায়।
তিষা মনিটরটির দিকে দেখিয়ে বলল, “এই ভিডিও কী ভাবে তৈরী করেছ?”
লিডিয়া বলল, “পছন্দ হয়েছে?”
“কীভাবে তৈরী করেছ?”
“পুরোটা দেখলে তোমরা মুগ্ধ হতে। দেখতে চাও?”
তিষা মাথা নাড়ল, বলল, “না। দেখতে চাই না।”
লিডিয়া হাসার ভঙ্গী করল, তার মুখের মাংশপেশি হাসিতে অনভ্যস্ত তাই তার হাসিটি কেমন যেন ভয়ংকর দেখায়। মুখে ভয়ংকর সেই হাসিটি ফুটিয়ে রেখে বলল, “আর কয়েক মিনিটের মাঝে আমরা তোমাদের দুইজনকে মেরে ফেলব তাই তোমাদের বলতে এখন কোনো সমস্যা নেই।”
তিষা নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারল না, আতংকের একটা শীতল স্রোত তার মাথা থেকে মেরুদণ্ড দিয়ে নিচের দিকে বয়ে যেতে থাকে। সে জনের দিকে তাকাল, জন মানুষের ঠোঁটের ভঙ্গী দেখে কথা বুঝে নেয়, সবসময় যে সমান ভাবে বুঝতে পারে তা নয়। এতো সহজে কাউকে মেরে ফেলার কথা বলা যেতে পারে জন সেটা জানে না তাই সে লিডিয়ার কথাটা বুঝতে পেরেও বিশ্বাস করতে পারছিল না। তিষার আতংকিত মুখ দেখে বুঝতে পারল কথাটা সত্যি, লিডিয়া সত্যিই তাদের মেরে ফেলার কথা বলছে।
লিডিয়া বলল, “আমাদের ভিডিওটাতে দেখানো হয়েছে তোমরা কীভাবে পরিকল্পনা করেছ যে আমাদের ব্ল্যাকমেল করার জন্যে তোমরা তোমাদের এনিম্যানকে নিয়ে সাইন ল্যাংগুয়েজ শেখানোর একটা ভূয়া ভিডিও তৈরী করবে। তারপর দেখানো হবে তোমরা এনিম্যানের হাত ধরে সেই হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে তাকে দিয়ে সাইন ল্যাংগুয়েজের ভান করে বানিয়ে বানিয়ে কথা বলাচ্ছ–দেখতে চাও?”
তিষা মাথা নাড়ল, সে দেখতে চায় না। সত্যি কথা বলতে কী কোনো। কিছুতেই এখন আর কিছু আসে যায় না। ভয়ংকর একটা আতংকে তার মাঝে এখন ক্রোধ হতাশা দুঃখ বা অন্য কোনো অনুভূতি নেই। লিডিয়া টেবিলে টোকা দিতে দিতে বলল, “ভিডিওটার শেষ দৃশ্যে দেখানো হবে তোমরা ড্রাগ নিতেই থাকবে, নিতেই থাকবে। ড্রাগের ওভারডোজ হয়ে তোমরা মারা যাবে। উদ্ধৃঙ্খল লোভী অনৈতিক দুশ্চরিত্র দুইজন টিন এজারের অকাল মৃত্যু। সেই মৃত্যু দেখে কারো মনে বিন্দুমাত্র সমবেদনা হবে না। আমরা পুরোটা একটু একটু করে তৈরী করেছি–পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সফটওয়ার ব্যবহার করে সেটা একটু একটু করে তৈরী হয়েছে। শেষ দৃশ্যটা আমরা তৈরী করব না। শেষ দৃশ্যটি হবে অরিজিনাল, সেইজন্যে আমরা তোমাদের এখানে ধরে এনেছি। খাঁটি ড্রাগস ওভারডোজ করে আমরা তার ভিডিও নিব! সেটা ব্যবহার করব। কী মনে হয় তোমাদের, আমাদের পরিকল্পনায় কোনো খুঁত আছে?”