জন বলল, “যদি কোনোভাবে এই ঘর থেকে বের হতে পারতাম। তাহলে চেষ্টা করে দেখতাম।”
তিষা বলল, “কেমন করে ঘর থেকে বের হবে?”
“সেটাই তো জানি না।” মি
শকা সাইন ল্যাংগুয়েজে বলল, “দুই চার দুই পাঁচ।”
জন জিজ্ঞেস করল, “সেটা কী?”
“দরজা।”
“দরজার কী?”
মিশকার ভাষা জ্ঞান যথেষ্ট না তাই সে ঠিক বোঝাতে পারল না, কয়েকবার বোঝানোর চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দিল।
আধা ঘন্টা পর আবার খুট করে দরজা খুলে গেল। আগের মানুষটি এসে মিশকাকে তিষার কোল থেকে টেনে সরিয়ে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। মিশকা যেতে চাচ্ছিল না। দুই হাত দিয়ে তিষাকে ধরে রাখল কিন্তু লাভ হল না। মানুষটা হ্যাঁচকা টান দিয়ে তাকে সরিয়ে নিল।
কিছুক্ষণ পর হঠাৎ তিষা দরজায় একটু খুট খুট শব্দ শুনতে পেল, মনে হল কেউ দরজা খোলার চেষ্টা করছে কিন্তু খুলতে পারছে না। তিষা দরজায় কান লাগিয়ে বোঝার চেষ্টা করে কী হচ্ছে, কেন জানি তার মনে হল এখানকার কোনো মানুষ নয় মিশকা দরজা খোলার চেষ্টা করছে!
সত্যি সত্যি হঠাৎ দরজা খুলে গেল এবং দেখা গেল দরজার সামনে মিশকা দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখে বিজয়ীর মতো হাসি। সে বলল, “দুই চার দুই পাঁচ।”
তিষা আর জন এবারে দুই চার দুই পাঁচের রহস্যটা বুঝতে পারে। দরজার বাইরে যে ইলেকট্রনিক নাম্বার লক লাগানো সেটা খুলতে নাম্বার প্যাডে দুই চার দুই পাঁচ নম্বর বোতামে চাপ দিতে হয়। মিশকাকে নিয়ে যখন মানুষটি এসে দরজা খুলেছে তখন মিশকা সেটা লক্ষ্য করেছে। এখন সে নিজে এসে দরজা খুলে দিয়েছে। কিন্তু সে কোথা থেকে এসেছে? কেমন করে একা একা চলে এসেছে? [ মিশকা নিজেই বলল যে তাকে একটা ঘরে তালা মেরে রেখেছিল। সেই ঘরের ছাদে বাতাস প্রবাহের যে সরু ডাক্ট আছে তার ভেতর দিয়ে সে বের হয়ে এসেছে। মানুষগুলো বুঝতে পারেনি সে এভাবে পালিয়ে যেতে পারবে। তিষা তার পিঠ চাপড়ে বলল, “চমৎকার কাজ মিশকা!
মিশকা বিজয়ীর মতো মুখ ভঙ্গি করে হাসল। তিষা বলল, “চল, এখন পালাই।”
জন বলল, “চেষ্টা করি। কিন্তু খুব বেশী দূর পালিয়ে যেতে পারব বলে মনে হয় না। আবার আমাদের ধরে ফেলবে।“
“তবু চেষ্টা করি।”
মিশকাকে কোলে নিয়ে তিষা আর জন খুব সাবধানে ঘর থেকে বরে হল। এদিক সেদিক তাকিয়ে যখন দেখল কেউ নেই তখন সাবধানে করিডোর ধরে হাঁটতে থাকে। আশে পাশে যে এই মূহুর্তে কোনো মানুষ নেই। সেটা অনেক ভাগ্যের কথা।
ঠিক সেই মুহূর্তে সুপার কম্পিউটারের সিস্টেম ম্যানেজার, এক ধরনের কৌতুকের দৃষ্টিতে মনিটরের দিকে তাকিয়েছিল। একটা এনিম্যান যে দরজার কোডটা মনে রেখে সেই কোড ব্যবহার করে দরজাটা খুলে ফেলতে পারবে সেটা সে কখনো কল্পনা করেনি। কী ভাবে এনিম্যানটা মুক্ত হয়ে এসেছে সেটা সে এখনো জানে না। খোঁজ নিতে হবে। কিন্তু একদিক ভালোই হল, তার সফটওয়ারটির একটা ফিল্ড টেস্ট হবে! এই ছেলে আর মেয়ে জানে না তাদের সম্পর্কে সব তথ্য এমন ভাবে লোড করা আছে যে আগামী এক ঘন্টা তারা কী করবে সে এখানে বসে নিখুঁত ভাবে বলে দিতে পারবে। ইচ্ছে করলেই সে এলার্ম বাজিয়ে সবাইকে সতর্ক করে দিতে পারে কিন্তু সেটা করল না। আজ রাতে সবাই পাগলের মতো কাজ করছে। এর মাঝে হঠাৎ একটা এলার্ম বাজিয়ে সবাইকে আলাদাভাবে দুশ্চিন্তিত করে দেয়ার প্রয়োজন নেই। সে জানে ঠিক কোথায় তাদেরকে পাওয়া যাবে, সিকিউরিটির মানুষ দিয়ে তাদেরকে সেখান থেকে ধরে নিয়ে আসলেই হবে।
তাই সিস্টেম ম্যানেজার সিকিউরিটির মানুষটিকে জানিয়ে দিল ঠিক দশ মিনিট পর করিডোরের শেষ মাথায় সিঁড়ির নিচে লুকিয়ে থাকা তিষা আর জনকে ধরে নিয়ে আসার জন্যে। এর আগে সেখানে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। দশ মিনিট পর তিষা আর জন সেখানে লুকিয়ে থাকবে।
.
ঘর থেকে বের হয়ে করিডোর ধরে হাঁটতে হাঁটতে তিষা জনকে জিজ্ঞেস করল, “আমরা এখন কোনদিকে যাব?”
জন মাথা নেড়ে বলল, “জানি না। কোনোভাবে ধরা না পড়ে একটু হেঁটে হেঁটে আগে জায়গাটা বোঝার চেষ্টা করি।”
“লুকিয়ে থাকতে হবে।”
তিষা বলল, “ঐ যে সিঁড়ির নিচে মনে হয় কিছুক্ষণ লুকিয়ে থাকা যাবে।”
জন বলল, “হ্যাঁ চল ওদিকে এগিয়ে যাই।”
মিশকা হঠাৎ করে তিষার হাত ধরে অন্যদিকে টেনে নিতে থাকে। তিশা একটু অবাক হয়ে মিশকাকে জিজ্ঞেস করল, “কী হয়েছে?”
মিশকা জানাল, “আস। আমার সাথে আস।”
“কোথায়?”
“আমাদের ঘরে?”
“তোমাদের ঘরে?”
“হ্যাঁ।”
“কী আছে তোমাদের ঘরে।”
“আমরা আছি।”
“তোমরা?” “
হ্যাঁ।”
কোথায় যাবে সেটা যেহেতু তারা কেউই জানে না তাই মিশকা যেখানে নিয়ে যেতে চাইছে তারা সেদিকেই রওনা দিল। মিশকা মনে হয় এলাকাটা বেশ ভালো ভাবে চিনে, নানা ধরনের ছোট বড় করিডোর ধরে হেঁটে হেঁটে তারা বড় একটা গুদাম ঘরের মতো জায়গায় পৌঁছাল। একটা বড় লোহার গেট। গেটে ইলেকট্রনিক তালা।
মিশকা বলল, “তিন তিন সাত চার।”
সংখ্যটা কী এবারে তারা চট করে বুঝে গেল। তিষা জিজ্ঞেস করল, “তুমি কেমন করে জান?
“আমি দেখেছি। একটু আগে আমাকে নিয়ে তিন তিন সাত চার করে ভিতরে ঢুকেছে।”
তিষা ইলেকট্রনিক তালায় তিন তিন সাত চার সংখ্যা ঢুকাতেই তালাটা খুট করে খুলে গেল। ভারী লোহার গেটটা ঠেলে ভিতরে ঢুকে তিষা আর জন হতবাক হয়ে গেল। ফুটবল মাঠের মতো বিশাল একটা হল ঘর সেখানে যতদূর তাকানো যায় ততদূর শুধু এনিম্যান আর এনিম্যান। হাজার হাজার নয়, মনে হয় লক্ষ লক্ষ এনিম্যান! গেট খোলার শব্দ শুনে সবগুলো এনিম্যান তাদের দিকে তাকিয়ে আছে, বড় বড় চোখে এক ধরনের কৌতূহল আর বিস্ময়। তিষা আর জন হতবাক হয়ে এই অসংখ্য এনিম্যানগুলোর দিকে তাকিয়ে রইল।