“আনন্দ? আনন্দ কেমন করে দেবে?”
“দুইভাবে। ড্রাগস দিয়ে এবং তাদের পোষা এনিম্যান দিয়ে। পোষা এনিম্যানটা তাদের কাছে রাখব, সেটাকে দেখলে তারা নিশ্চয়ই এক ধরনের আনন্দ পাবে।”
শুকনো খিটখিটে মানুষটা বলল, “ যাই হোক আমি ডিটেলসে যাচ্ছি না। আমার টিম রেডি। তুমি যত তাড়াতাড়ি আমাকে ভিডিও ফুটেজটা দেবে আমি তত তাড়াতাড়ি কাজ শুরু করব।”
লিডিয়া মাথা নাড়ল, বলল, “আজ রাতের মাঝে তুমি পেয়ে যাবে।”
“আমি অন্য একটা শরীর ব্যবহার করে কাজ শুরু করে দিয়েছি। তোমার ভিডিও ফুটেজ পেলে আসল শরীর বসিয়ে দেব।”
“চমৎকার।” লিডিয়া বলল, “মনে রেখো তোমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই শুধু আমরা এই বিপদ থেকে উদ্ধার পেতে পারি। এটা হচ্ছে। আমাদের অস্তিত্ত্বের প্রশ্ন।”
কেউ কোনো কথা বলল না। সবাই পাথরের মুখ করে লিডিয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।
.
ঘন্টা খানেক পর লিডিয়া সিস্টেম ম্যানেজারকে তার অফিসে ডেকে পাঠালো। সিস্টেম ম্যানেজার কমবয়সী একজন মেয়ে, লিডিয়ার ঘরে ঢুকে শংকিতভাবে দাঁড়িয়ে রইল। লিডিয়া জিজ্ঞেস করল, “তোমাকে যে দায়িত্বটি দিয়েছিলাম তার কী খবর?”
“কাজ চলছে। যতই ডাটা আসছে ততই ভবিষ্যৎবাণী ভালো হচ্ছে।”
“আমাকে দেখাতে পারবে?”
“হ্যাঁ, অবশ্যই পারব।”
মেয়েটি লিডিয়ার টেবিলে বড় মনিটরটিতে লগ ইন করল কিছু গোপন পাসওয়ার্ড দিয়ে সে সরে দাঁড়াল, বলল, “বাম দিকে আসল মানুষ দুজন। ডানদিকে তাদের ভবিষ্যৎবাণী।”
লিডিয়া তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে দুটো ছবির দিকে তাকিয়ে থাকে। বামদিকের ছবিতে তিষা সোফায় বসে আছে, কাছাকাছি আরেকটি সোফায় হেলান দিয়ে জন মেঝেতে বসে আছে। ডান দিকের ছবিটিও প্রায় একই রকম শুধু জন সোফায় হেলান না দিয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে মেঝেতে বসে আছে। সুপার কম্পিউটারের সবচেয়ে চমকপ্রদ যে প্রোগ্রামটি ব্যবহার করা হচ্ছে এটি সেই সফটওয়ারের আউটপুট। একজন মানুষ সম্পর্কে তার সব তথ্য দিয়ে দেয়ার পর সেই মানুষটি কখন কী করবে সেটি এই সফটওয়ার প্রায় নিখুঁত ভাবে বলে দিতে পারে।
বাম দিকের ছবিতে দেখা গেল জন উঠে দাঁড়িয়ে ঘরে পায়চারী শুরু করেছে। ডানদিকেও দেখা গেল জন উঠে ঘরে পায়চারী করছে। সফটওয়ারটি নিখুঁতভাবে সেটি বলে দিতে পেরেছে।
লিডিয়া সম্ভষ্টির ভঙ্গী করে বলল, “তুমি কতোক্ষণ পর্যন্ত ভবিষ্যত্বাণী করতে পারবে?”
“এক ঘন্টা প্রায় নিখুঁত হয়। তারপর ধীরে ধীরে ছোটখাটো বিচ্যুতি দেখা দিতে পারে।”
“আমরা কী বিষয়টা পরীক্ষা করতে পারি।”
“কীভাবে পরীক্ষা করতে চাও?”
লিডিয়া বলল, “যদি আমরা এই দুজনের ঘরের দরজা খুলে তাদেরকে ছেড়ে দিই তাহলে তারা কখন কোথায় থাকবে সেটা কী ভবিষ্যৎবাণী করতে পারবে?”
“পারার কথা।”
“কখন কোথায় যাবে, কী করবে সেটা বলতে পারবে?”
“পরের এক ঘন্টা নিখুঁতভাবে পারব। যদি এই ছেলে মেয়ের আরো কিছু ডাটা থাকে তাহলে আরো নিখুঁতভাবে পারার কথা।”
“চমৎকার।” লিডিয়া বলল, “তুমি এখন যেতে পার।”
মেয়েটি চলে যাবার পর লিডিয়া কিছুক্ষণ মনিটরটির দিকে তাকিয়ে রইল তারপর কী বোর্ডটি নিজের কাছে টেনে নিয়ে সেখানে নিজের নামটি টাইপ করে। লিডিয়া তার নিজের সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণীটি দেখতে চায়।
লিডিয়া দেখল আটচল্লিশ ঘন্টার মাথায় একজন মানুষ তার মাথায়। গুলী করছে। মানুষটির চেহারা এখনো স্পষ্ট নয়। ধীরে ধীরে হয়তো স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
লিডিয়া হিংস্র মুখে কী বোর্ডটি ছুঁড়ে দিয়ে হিস হিস করে বলল, “না! এটা হতে পারে না। এটা হতে পারবে না।”
১৭. দরজাটা খুট করে খুলে
দরজাটা খুট করে খুলে ভেতরে একজন মানুষ ঢুকল। সে এক হাতে মিশকাকে ধরে রেখেছে। গত কয়েক ঘন্টায় দরজাটা অনেকবার খুট করে খুলেছে এবং অনেক রকম মানুষ এসেছে। অনেক কিছু করে গেছে। তাই প্রত্যেকবার যখন খুট করে দরজাটা খুলে যায় তিষা আর জন ভয় পেয়ে চমকে ওঠে।
এই প্রথম বার তারা ভয় পেয়ে চমকে উঠল না। মিশকাকে দেখে তাদের দুজনের মুখে হাসি ফুটে উঠল। তিষা হাত বাড়িয়ে বলল, “মিশকা! তুমি।”
মিশকা মানুষটির হাত থেকে নিজেকে মুক্ত করে তিষার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ল। তিষা মিশকার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ফিস ফিস করে বলল “কোথায় ছিলে তুমি দুষ্ট ছেলে? কোথায় ছিলে?”
এরকম সময় সব সময় মিশকা যা করে তাই করল, খিল খিল করে হাসল। তারপর সেও তার ছোট ছোট শীতল হাত দিয়ে তিষার মাথায় মুখে হাত বুলিয়ে দিল, তারপর তার গালে চুমু খেল।
তিষা ভেবেছিল মানুষটি বুঝি সারাক্ষণই দাঁড়িয়ে থাকবে, কিন্তু মানুষটি মিশকাকে রেখে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। খুট করে আবার দরজা বন্ধ হয়ে গেল।
মিশকা তার হাত নেড়ে সাইন ল্যাংগুয়েজ দিয়ে বলল, “তুমি বন্ধ। তুমি ঘরে বন্ধ। তুমি কেন ঘরে বন্ধ?”
তিষা বলল, “আমরা তো জানি না কেন আমাদের ঘরে বন্ধ করে রেখেছে।”
মিশকা বলল, “খারাপ। মানুষ খারাপ।”
তিষা বলল, “হ্যাঁ। মানুষগুলো খুব খারাপ।“
মিশকা বলল, “এখানে না। বাসা যাব।”
তিষা ম্লান মুখে হেসে বলল, “হ্যাঁ। আমরা কি এখানে থাকতে চাই? চাই না। আমরাও তো বাসায় যেতে চাই। বাসায় আব্বু আম্মু না জানি কতো চিন্তা করছে।” কথা বলতে বলতে সে কেঁদে ফেলল, মিশকা কী করবে বুঝতে পারে না, একটু হাসে তারপর তিষার চোখ মুছে দেয়।