“ঐ যে তুমি ভিডিওটা আপলোড করে দিলে তখন। ওটা আপলোড করা ঠিক হয়নি।”
“আমি বুঝতে পারিনি–আমি ভেবেছিলাম–”
“এখন চিন্তা করে লাভ নেই।”
তিষা অবুঝের মতো বলল, “সেইজন্যে আমাদের মেরে ফেলবে?”
তার কথা শেষ হবার আগেই ঘরের দরজাটা খুলে যায়। দরজায় প্রায় যমদূতের মতো দুজন মানুষ তাদের হাতে দুটো স্বয়ংক্রিয় রাইফেল, তারা রাইফেলটি তাদের দিকে তাক করে গুলী করতে শুরু করে। বাঁচার আদিম প্রবৃত্তির কারণে দুজনেই চিৎকার করে মাথা নিচু করে মেঝেতে শুয়ে পড়ল এবং তাদের মাথার উপর দিয়ে বুলেটগুলো ছুটে যেতে থাকে, সেগুলো পিছনের দেওয়ালে আঘাত করতে থাকে। তারা দুজন মাথা নিচু করে ঘাপটি মেরে পড়ে রইল এবং বেশ কিছুক্ষণ তাদের মাথার উপর দিয়ে বুলেটগুলো ছুটে গেল। স্বয়ংক্রিয় রাইফেলের প্রচণ্ড আওয়াজ তাদের কানে তালা লেগে যায়। ঘর ধূলো বালিতে অন্ধকার হয়ে যায়।
যমদূতের মতো মানুষগুলো যে-ভাবে হঠাৎ করে গুলী শুরু করেছিল, ঠিক সেরকম হঠাৎ করে গুলী থামিয়ে, দরজা বন্ধ করে চলে গেল।
প্রথমে জন তারপর তিষা উঠে দাঁড়ায়। তিষা ভয়ে থর থর করে কাপঁছে, ফিস ফিস করে বলল, “কী হয়েছে? কী হয়েছে এখানে?”
জন বলল, “আমাদেরকে মারতে চায়নি। শুধু ভয় দেখিয়েছে।”
“কেন? ভয় দেখাবে কেন?”
“জানি না। মারতে চাইলে আমাদের গুলী করতে পারত। গুলী করেনি।”
দুইজন ঘরটার দিকে তাকায়। রাইফেলের গুলীতে ঘরটা লণ্ডভণ্ড হয়ে এনিম্যান গেছে। ঘরের ভেতর ধূলো, ধোঁয়া এবং বারুদের গন্ধ।
.
ঠিক তখন এই বিল্ডিংয়ের অন্য মাথায় লিডিয়া একটা কনফারেন্স রুমে বসেছে। টেবিলে বেশ কয়েকজন নানা বয়সী মানুষ নিঃশব্দে বসে আছে। তাদের মুখ পুরোপুরি ভাবলেশহীন, দেখে মনে হয় তাদের মুখে কখনো আনন্দ দুঃখ বেদনা বা কোনো কিছুরই ছাপ পড়ে না।
লিডিয়া তার চেয়ারে সোজা হয়ে বসে বলল, “আমি কোনোরকম ভূমিকা না করে সরাসরি শুরু করে দিই। আমাদের হাতে একেবারে সময় নেই।”
সবাই নিজ নিজ চেয়ারে সোজা হয়ে বসে নিরুত্তাপ দৃষ্টিতে লিডিয়ার দিকে তাকাল। লিডিয়া বলল, “বারো ঘন্টা আগে তিষা আহমেদ নামে পনেরো বছরের একটা মেয়ে আর জন উইটক্যাম্প নামে ষোল বছরের একটা ছেলে ইন্টারনেটে একটা ভিডিও আপলোড করেছে। ভিডিওর বিষয়বস্তু হচ্ছে এনিম্যানকে সাইন ল্যাংগুয়েজ শিখিয়ে দিলে সেটি সাইন ল্যাংগুয়েজ ব্যবহার করে কথা বার্তা বলতে পারে। তারা তার উদাহরণ হিসেবে তাদের এনিম্যানকে সাইন ল্যাংগুয়েজ শিখিয়ে তার কাছ থেকে অনেক তথ্য বের করে এনেছে, যেগুলো আমাদের কর্পোরেশনের জন্যে ভয়ংকর বিপদজনক।
“ভিডিওটা আমরা খুব সাবধানে পর্যবেক্ষণ করছি। এখনো খুব বেশী মানুষ দেখেনি। কিন্তু যারাই দেখছে তারাই এটা অন্যকে দেখার জন্য উৎসাহিত করছে। কাজেই আমাদের হিসেবে আগামী ছত্রিশঘন্টার মাঝে এটা ভাইরাল হয়ে যাবে, বিয়াল্লিশ ঘন্টার মাঝে এটা জাতীয় পত্রিকায় আর আটচল্লিশ ঘন্টার মাঝে আন্তর্জাতিক খবরে চলে আসবে। এক কথায় আমরা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাব।”
লিডিয়া চুপ করে সবার দিকে তাকাল। সবাই ভাবলেশহীনভাবে যন্ত্রের মতো তার দিকে তাকিয়ে রইল। লিডিয়া বলল, “আমরা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাব কথাটার অর্থ বুঝতে পারছ? তার অর্থ এই প্রতিষ্ঠানের সবাই আইনী ঝামেলায় পড়ে যাবে। আমাদের বাকী জীবন জেলে কাটাতে হবে।
“আমাদের বেঁচে থাকার একটা উপায়। কোনো না কোনোভাবে পৃথিবীর মানুষকে বোঝাতে হবে যে এই টিনএজ ছেলেমেয়ের তৈরি ভিডিওটা ভূয়া এবং এই ছেলেমেয়ে দুটো আসলে গ্রহণযোগ্য চরিত্রের নয়। তারা অসৎ, অসামাজিক এবং ড্রাগ এডিক্ট।
“আমরা সেই কাজ শুরু করেছি। তোমরা সবাই জান আমরা পৃথিবীর চলচ্চিত্র জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রাফিক্স সফটওয়ার কিনেছি। একটা সময় ছিল যখন কোনো চলচ্চিত্র তৈরী করার জন্যে অভিনেতা অভিনেত্রীদের পুরা সময় অভিনয় করতে হতো। এখন তার প্রয়োজন হয় না, তোমরা নিশ্চয়ই ব্লক বাস্টার ছবি দি থার্ড আই দেখেছ সেখানে অভিনয় করেছে ক্যারেন মাহিলা আর রিচি কর্ডোনা। তোমরা সবাই জান ছবি তৈরী করার আগে ক্যারেন আর রিচির শরীরের সম্ভাব্য সকল অঙ্গভঙ্গীর ভিডিও করা হয়েছিল। তারপর গ্রাফিক্স সফটওয়ার সেই সম্ভাব্য সকল অঙ্গভঙ্গীকে ব্যবহার করে মূল ছবিটা তৈরী করেছে। ছবিটি দেখে কেউ বুঝতে পারে না যে আসলে এখানে ক্যারেন বা রিচি অভিনয় করেনি।
“আমরা এই সফটওয়ার ব্যবহার করে তিষা আর জনের একটা ভিডিও তৈরি করব। যেখানে দেখানো হবে তিষা আর জন তাদের এনিম্যানকে দিয়ে জোর করে একটিং করিয়ে এই ভিডিওটা তৈরী করেছে। শুধু তাই না আরো একটা ভিডিওতে দেখানো হবে যে তারা আসলে ড্রাগ এডিক্ট, তারা দুইজন ড্রাগ নেয়, নানা ধরনের অপকর্ম করে।”
কনফারেন্স টেবিলের অন্য পাশে বসে থাকা স্কুল মাস্টারের মতো দেখতে শুকনো খিটখিটে একজন মানুষ বলল, “আমরা স্ক্রিপটা তৈরী করেছি। এখন গ্রাফিক্সের কাজ শুরু করব। সে জন্যে আমার এই ছেলে মেয়ের ভিডিও গুলো দরকার।
লিডিয়া বলল, “ভিডিও নেয়া শুরু হয়েছে। তাদেরকে একটা ঘরে আটকে রাখা হয়েছে সেখানে নানা ধরনের পরিস্থিতি তৈরী করে তাদের ভিডিও নেয়া হচ্ছে। তাদেরকে ভয় দেখানো হচ্ছে, অপমান করা হবে, যন্ত্রণা দেয়া হবে, আনন্দ দেয়া হবে–”