কোনো সাড়া নেই। তিষা দরজা খুলে ভিতরে পা দিয়েই পাথরের মতো স্থির হয়ে গেল। ঘরের সোফায় মধ্যবয়স্ক একজন মানুষ বসে আছে, মানুষটিকে সে আগে কখনো দেখেনি। মানুষটির সামনে মিশকা শুয়ে আছে, তার হাত পা বাঁধা। মুখে একটা টেপ লাগানো, তাই কোনো শব্দ করতে পারছে না।
মানুষটি তিষার দিকে তাকল, তিষা দেখল তার কোলে একটা বেঢপ রিভলবার। মানুষটি রিভলবারটা হাতে নিয়ে বলল, “তোমার ভয় পাবার কিছু নেই, আমি তোমাকে এখন গুলী করব না। কিন্তু এই রিভলভারের বাট দিয়ে তোমার ঘাড়ে মারতে পারি, তখন তুমি অচেতন হয়ে যাবে। আমি তখন তোমাকে ঘাড়ে করে আমার গাড়ীতে তুলে নেব। কিংবা তুমি নিজেই হেঁটে হেঁটে ঐ বাইরে পার্ক করে রাখা ফোর্ড এস. ইউ. ভি.-টাতে উঠতে পার তাহলে আমার রিভলভারের বাট দিয়ে তোমার ঘাড়ে মারতে হবে না।”
তিষা হতবুদ্ধি হয়ে মধ্যবয়সী মানুষটার দিকে তাকিয়ে রইল। মানুষটা বলল, “অন্যকিছু করার চেষ্টা করো না মেয়ে। আমি কিন্তু প্রফেশনাল।”
তিষা অন্যকিছু করার চেষ্টা করল না। হেঁটে হেঁটে বাসার বাইরে পার্ক করে রাখা সিলভার কালারের ফোর্ডের এস. ইউ. ভি-টাতে গিয়ে উঠল। তিষা অবাক হয়ে দেখল পিছনের সিটে জন বসে আছে। তার হাত পা বাঁধা। মুখে টেপ লাগানো। তিষার মুখেও টেপ লাগানো হল, হাত পা গুলো বেঁধে নেয়া হল। তারপর এস. ইউ. ভি-টা চলতে শুরু করল।
জন কিংবা তিষা নিজেদের মুক্ত করার চেষ্টা করল না, তারা জানে চেষ্টা করে লাভ নেই। মিশকা জানে না, তাই সে মুক্ত হবার জন্যে ছটফট করতে লাগল।
১৬. লিডিয়া তিষার কাছে এসে
লিডিয়া তিষার কাছে এসে তার মুখে লাগানো ধূসর রঙের ডাক্ট টেপটা এক টান দিয়ে খুলে ফেলল, তারপর কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, “তুমি তাহলে সেই মেয়ে।”
তিষা কোনো উত্তর দিল না। সেই মেয়ে বলতে কোন মেয়ে বোঝানো হচ্ছে সে জানে না। লিডিয়া তার চোখের দিকে তাকিয়ে ক্লান্ত গলায় বলল, “তোমার জন্যে আমাদের খুব যন্ত্রণা হল। তুমি নির্বোধ একটা মেয়ে আর তোমার ছোট একটা নির্বুদ্ধিতার জন্যে আমাদের কতো ঝামেলা। তুমি একা হলে তবু একটা কথা ছিল, তোমার সাথে এখন যোগ দিয়েছে এই প্রতিবন্ধী।”
লিডিয়া তখন জনের কাছে গিয়ে তার মুখে লাগানো ডাক্ট টেপটাও টান দিয়ে খুলে ফেলল। জন সাথে সাথে তার বুক ভরে একবার নিঃশ্বাস নেয়। তাকে দেখে মনে হয় সে অনেকক্ষণ থেকে এই সময়টার জন্যে অপেক্ষা করে আছে। লিডিয়া কিছুক্ষণ তাদের দিকে তাকিয়ে রইল, তারপর টেবিলের কোথায় জানি চাপ দিয়ে নিচু গলায় ইন্টারকমে কাউকে বলল, “এদের সরিয়ে নিয়ে যাও।”
তিষা জিজ্ঞেস করল, “আমাদেরকে এখানে কেন এনেছ?”
“তোমরা দুই নির্বোধ যে নির্বুদ্ধিতা করেছিলে সেগুলো শুদ্ধ করার জন্যে।”
“তুমি বার বার বলছ আমরা নির্বুদ্ধিতা করেছি, কিন্তু সেটি কী বলছ না।”
“যদি নির্বোধ না হতে তাহলে বুঝে যেতে। নির্বোধ বলে বুঝতে পারছ না।”
তিষা বলল, “কিন্তু তুমি একজনকে জোর করে ধরে আনতে পার না। এটা বেআইনী।”
লিডিয়া কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে তিষার দিকে তাকিয়ে আছে, সেই ভয়ংকর দৃষ্টি দেখে তিষার বুক কেঁপে উঠল। এটি মানুষের নয় এটি যেন একটি অশরীরি প্রেতাত্মার দৃষ্টি।
তিষা ভয় পাওয়া গলায় বলল, “আমাদেরকে এখন কী করবে?”
“সময় হলেই দেখবে।”
ঠিক তখন দরজা খুলে দুজন মানুষ এসে ঢুকল, তাদের পাহাড়ের মতো শরীর, তারা তিষা আর জনকে ধরে প্রায় শূন্যে তুলে ফেলল। তিষা সেই অবস্থায় জিজ্ঞেস করল, “মিশকা কোথায়? আমার মিশকা?”
কেউ তার প্রশ্নের উত্তর দেয়া প্রয়োজন মনে করল না।
.
তিষা আর জনকে যে ঘরটাতে আটকে রেখেছে সেই ঘরটা খুব সুন্দর, পাশে একটা ছোট ছিমছাম বাথরুম। বাথরুমে পরিষ্কার তোয়ালে, সাবান, টুথ ব্রাশ। ঘরের কোণায় ছোট একটা ফ্রীজ সেখানে কোল্ড ড্রিংকস, স্যান্ডউইচ এবং কিছু ফলমূল। ঘরের দুই পাশে দুটো সোফা, সোফার উপর ভাঁজ করে রাখা কম্বল। সোফায় বসে থাকা যায় ইচ্ছে করলে শুয়ে থাকা যায়।
এই ঘরে এনে তাদের হাতের বাঁধন খুলে দিয়েছে। মধ্যবয়স্ক যে মানুষটি তাদের ধরে এনেছে সে নিজেকে প্রফেশনাল বলে দাবী করেছিল, কথাটি নিশ্চয়ই সত্যি। তাদেরকে ধরে রীতিমত প্লেনে উড়িয়ে অন্য স্টেটে নিয়ে এসেছে কোথাও বিন্দুমাত্র ঝামেলা হয়নি। যাদের আকাশে ওড়ার জন্যে নিজেদের প্লেন থাকে নিজেদের রানওয়ে থাকে তাদেরকে মনে হয় গুরুত্ব দিয়েই নেয়া উচিৎ। তিষা আর জন এখন তাদেরকে খুব গুরুত্ব দিয়ে নিচ্ছে।
ভয়ে এবং আতংকে তিষার শরীর খারাপ হয়ে যাচ্ছে, সেই তুলনায় জন মনে হল বেশ শান্ত। সে ফ্রীজ খুলে একটা স্যান্ডউইচ বের করে খেয়ে ফেলল। শুধু যে খেল তা নয়, বেশ তৃপ্তি করে খেল এবং খাওয়া শেষ করে তিষাকে বলল, “খেয়ে দেখতে পার। বেশ ভালো স্যান্ডউইচ।”
তিষা স্যান্ডউইচের ধারে কাছে গেল না, ভয় পাওয়া গলায় বলল, “আমাদের কী হবে?”
জন বলল, “এখন কী করবে জানি না কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিশ্চয়ই মেরে ফেলবে।”
তিষা আতংকিত হয়ে বলল, “মেরে ফেলবে? মেরে ফেলবে কেন? আমরা কী করেছি।”
“আমরা মনে হয় ওদের বিলিওন বিলিওন ডলারের ব্যবসার অনেক ক্ষতি করেছি।”
“কখন ব্যবসার ক্ষতি করেছি?”