“শুধু এক দিক দিয়ে, আমি বলি আর সে শুনে। শুনে আর হাসে।”
“তোমার কথা কী বুঝতে পারে?”
“জানি না।”
তিষা দরজা বন্ধ করে বলল, “চল তুমি নিজেই দেখ।”
দুজনে সিঁড়ি দিয়ে হেঁটে তিষার রুমে ঢুকল, মিশকা জনকে দেখে তার কাছে ছুটে এসে তার হাত ধরল। জন মিশকাকে কোলে তুলে নিয়ে তার মাথার চুল এলোমেলো করে দিল। মিশকা মনে হয় এই ব্যাপারটাতে খুব মজা পায়, সে খিলখিল করে হাসতে থাকে। জন আবার তাকে নিচে নামিয়ে দেয়, তিষা তখন মিশকাকে তার নিজের কোলে বসিয়ে তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করতে থাকে, “মিশকা, তুমি খুবই সুইট একটা এনিম্যান। তোমার মাথায় অনেক বুদ্ধি, তোমার একটাই সমস্যা তুমি শুধু হাসো, কথা বলার চেষ্টা কর না। এখন আমি তোমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করব। তুমি খুব মন দিয়ে শোনো আমি কী বলছি। মিশকা, তুমি বল তুমি কী আমার কথা বুঝতে পেরেছ?”
মিশকা মাথা নাড়ল, তারপর খিলখিল করে হাসতে থাকল। তিষা হতাশ ভাবে মাথা নেড়ে বলল, “না, না হাসলে হবে না। হাসি বন্ধ কর। কথা বলার চেষ্টা কর। বল, তোমার নাম কী? বল।”
মিশকা আবার খিল খিল করে হাসল। তিষা জনের দিকে তাকিয়ে বলল, “এটা হচ্ছে সমস্যা। কোনো কথার উত্তর দেয় না। শুধু হাসে।”
জন তার হাত নেড়ে সাইন ল্যাংগুয়েজ ব্যবহার করে বলল, “এনিম্যানদের কথা বলার ক্ষমতা নেই। মিশকা কী করবে? কেমন করে কথা বলবে?”
“আমি ভাবছিলাম যদি চেষ্টা করে তাহলে হয়তো একটু পারবে।”
জন বলল, “আমার কথা চিন্তা কর। আমি কী চেষ্টা করলে তোমার মত মুখ দিয়ে কথা বলতে পারব? পারব না। আমাকে হাত দিয়েই কথা বলতে হবে। সাইন ল্যাংগুয়েজে!”
মিশকা খুব মনোযোগ দিয়ে একবার তিষার মুখের দিকে আরেকবার জনের দিকে তাকাচ্ছিল। হঠাৎ তার কী মনে হল কে জানে, সে হাত দিয়ে সাইন ল্যাংগুয়েজের মত একটা ভঙ্গী করল। জন চমকে উঠে মিশকার দিকে তাকাল তারপর তিষার দিকে তাকাল, উত্তেজিত ভঙ্গীতে বলল, “তুমি দেখলে তিষা, মিশকা কী করল?”
“কী করল?”
“সাইন ল্যাংগুয়েজে কিছু একটা বলার চেষ্টা করল।”
“সত্যি?”
“হ্যাঁ। তার মানে বুঝতে পারছ?”
তিষা উত্তেজিত গলায় বলল, “তার মানে মিশকা যদি মুখ দিয়ে কথা। নাও বলতে পারে সে সাইন ল্যাংগুয়েজে কথা বলতে পারবে?”
“হ্যাঁ। আমি স্পষ্ট দেখলাম সে এই মাত্র চেষ্টা করল।”
মিশকা তাদের দুজনের মুখের দিকে তাকিয়েছিল এবারে অকারণেই খিল খিল করে হেসে উঠল। জন মিশকাকে নিজের কাছে টেনে এনে হাত দিয়ে নিজেকে দেখিয়ে সাইন ল্যাংগুয়েজে বলল, “আমি জন।”
মিশকা মনোযোগ দিয়ে তাকে দেখল তারপর সেও সাইন ল্যাংগুয়েজ দিয়ে বলল, “আমি জন।”
তিষা চিৎকার করে উঠে, “দেখেছ? দেখেছ জন? মিশকা কথা বলছে। মিশকা কথা বলছে!”
জন মাথা নাড়ল, “এখনো নিজে কথা বলছে না। আমি যেটা বলেছি সেটা অনুকরণ করছে।”
“কিন্তু শিখিয়ে দিলে নিশ্চয়ই নিজে কথা বলবে। নিশ্চয়ই বলবে।” জন মাথা নাড়ল, বলল, “চেষ্টা করে দেখি।”
তারপর বেশ খানিকক্ষণ সময় নিয়ে সে মিশকাকে সাইন ল্যাংগুয়েজ দিয়ে তাদের তিনজনের নাম বুঝিয়ে দিল। তার নিজের নাম হচ্ছে মিশকা। আর তারা দুজনের একজন জন অন্যজন তিষা। যতবার তাকে শেখানো হল প্রত্যেকবারই মিশকা খুব মনোযোগ দিয়ে সেটা দেখল তারপর মাথা নাড়ল। যখন জন আর তিষার মনে হল মিশকাকে বেশ ভালোভাবে শেখানো গেছে তখন জন সাইন ল্যাংগুয়েজ দিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করল, “আমি কে?”
মিশকা এক মুহূর্ত জনের দিকে তাকিয়ে রইল তারপর হাত দিয়ে বলল, “জন।”
জন তিষাকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল, “এটি কে?”
মিশকা জানাল, “তিষা।”
জন মিশকার দিকে আঙ্গুল দিয়ে জিজ্ঞেস করল, “তুমি কে?”
মিশকা জানাল, “আমি মিশকা।”
তিষা আনন্দে চিৎকার করে ওঠে। জনও জোরে জোরে মাথা নাড়ল, তারপর বলল, “আমার মনে হয় মিশকাকে আমরা সাইন ল্যাংগুয়েজ শেখাতে পারব।”
তিষা উত্তেজিত গলায় বলল, “তার মানে বুঝতে পেরেছ? তার মানে আমরা মিশকার কাছ থেকে তার ভেতরের সব কথা জেনে যাব।”
জন বলল, “কিন্তু মনে আছে তো, এই কথাটা কাউকে বলতে পারবে না?”
“মনে আছে।”
“তোমার বাবা মাকেও না।”
তিষা মাথা নাড়ল, “ঠিক আছে, বলব না।”
“ব্লগে লিখতে পারবে না”
“ঠিক আছে, লিখব না।”
“সারা পৃথিবীতে এটা এখন শুধু তিনজন এটা জানবে। তুমি আমি আর মিশকা।”
তিষা গম্ভীর মুখে বলল, “ঠিক আছে। সারা পৃথিবীতে শুধু আমরা তিনজন এটা জানব।”
. জনের সাথে থাকতে থাকতে তিষাদের ক্লাশের সব ছেলে মেয়েই কম বেশী সাইন ল্যাংগুয়েজ শিখে গেছে। জনের সাথে একটু বেশী সময় কাটিয়েছে বলে তিষা অন্যদের থেকে সেটা অনেক ভালো জানে। তিষা তাই পরের কয়েকদিন মিশকাকে তার নিজের মতো করে সাইন ল্যাংগুয়েজ শেখাতে লাগল। যখনই সময় পেতো তখনই জনও চলে আসতো। খাতা কলম টেলিভিশন চেয়ার টেবিল এগুলো শেখানো গেল খুব সহজেই। ব্যথা, দুঃখ ভয় কষ্ট আনন্দ এগুলো শেখানো হল সবচেয়ে কঠিন। তারপরও মিশকা। দ্রুত শিখতে লাগল, কতো তাড়াতাড়ি মিশকা কতো সুন্দর করে কথা বলতে শিখে গেল দেখে তিষা নিজেই আবাক হয়ে যায়।
১৩. রালফ তোমার চাকরী নেই
“রালফ, তোমার চাকরী নেই?”
“না।”
“কতোদিন থেকে চাকরী নেই?”
“জানি না। অনেক দিন।”
“কেন তোমার চাকরী নেই রালফ?”