লিডিয়া হিস হিস করে বলল, “তুমি মনে করো না আমাকে রাক্ষুসী ডেকে তুমি আমাকে অপমান করতে পারবে।”
মধ্যবয়স্ক মানুষটি হঠাৎ করে গম্ভীর হয়ে গেল, “আমি তোমাকে অপমান করার চেষ্টা করছি না, আমি সত্যি কথাটাই বলছি।” লিডিয়া শীতল দৃষ্টিতে মধ্যবয়স্ক মানুষটির দিকে তাকিয়ে রইল, কোনো উত্তর দিল না।
১২. জিমনাসিয়ামে স্কুলের বাস্কেটবল টিম
জিমনাসিয়ামে স্কুলের বাস্কেটবল টিম এ্যাকটিস করছে। দুই পাশের গ্যালারীতে কোনো দর্শক নেই, শুধু ডান দিকের গ্যালারীতে ঠিক মাঝখানে তিষা আর জন বসে আছে। দুদিন আগে একটা ভয়ংকর একসিডেন্টে মারা যেতে যেতে কোনোভাবে তারা বেঁচে গেছে, বিষয়টা সেভাবে কেউ জানে না। জন কিংবা তিষা দুজনের কেউই সেটা তাদের বাসাতে সেভাবে বলেনি।
জন এখন নিশ্চিতভাবে জানে যে তার গাড়ীটিতে কিছু একটা করা হয়েছিল। সে যেহেতু কানে শুনতে পায় না তাই গাড়ী চালানোর সময় প্রতি সেকেন্ডে কয়েকবার রিয়ারভিউ মিররে তাকায়। দুর্ঘটনার ঠিক আগে আগে সে রিয়ারভিউ মিররে একটা সিলভার রংয়ের ফোর্ড এস.ইউ.ভি দেখেছে, তাকে ওভারটেক করার সুযোগ পেয়েও সেটা ওভারটেক করেনি তার পিছনে রয়ে গেছে। ঠিক যখন তার ব্রেক ফেল করেছে তার আগে সে একটা ঝাঁকুনী অনুভব করেছে। এখন তার মনে হচ্ছে রিমোট কন্ট্রোলে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তার ব্রেক ফেল করিয়েছে। শুধু তাই না, সে দেখেছে তার পিছনের গাড়ীর ড্রাইভার হাতে কিছু একটা ধরে সেখানে চাপ দিচ্ছে আর তার গাড়ীর গতি বেড়ে গেছে। যখন সে গাড়ী থামিয়েছে তখন সে দেখেছে এই এস. ইউ. টি তার গাড়ীর পাশে থামিয়েছে। তখন অনেক মানুষের ভীড়, সেই ভীড়ের মাঝে মানুষটি জনের গাড়ীর হুড খুলে কিছু একটা খুলে নিয়েছে। গাড়ীর ফুয়েল ইনজেকশানে কিছু একটা লাগিয়েছিল, তার একটা ছেঁড়া তার পরেও সেখানে লাগানো ছিল, জন পরে দেখেছে। সে কাউকে কিছু বলেনি। বলেও লাভ নেই, পুলিশ তার এই আজগুবি কথা বিশ্বাস করবে না। তিষাকেও বলেনি, বললে মেয়েটি শুধু শুধু ভয় পাবে।
গ্যালারীতে বসে জন হাত নেড়ে সাইন ল্যাংগুয়েজে তিষাকে বলল,
“তিষা। তুমি খুব সাবধানে থেকো।”
তিষা একটু অবাক হয়ে বলল, “কেন আমাকে সাবধানে থাকতে হবে। কেন?”
“বিপদ যখন আসে একা আসে না। তিনবার আসে। তোমার দুইবার হয়েছে, একবার সাসকুয়ান লেক, দুইদিন আগে আমার গাড়ীতে। এখন তিন নাম্বারটা বাকী আছে। খুব সাবধান।”
তিষা কোনো কথা বলল না। জন একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল “আর আমার কী মনে হয় জান?”
“কী?”
“তুমি যে ভেবেছিলে এনিম্যানের হাসিটা তার সত্যিকারের হাসি নয়, এটা কৃত্রিম, সেটা হয়তো সত্যি। এনিম্যান আসলে হাসি খুশী প্রাণী না, খুব দুঃখী একটা প্রাণী সেটাও হয়তো সত্যি।”
তিষা অবাক হয়ে বলল, “কেন? হঠাৎ করে তোমার এই কথা মনে হল কেন?”
“হঠাৎ করে না, আমি কয়েকদিন থেকেই এটা ভাবছি। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে এটা সত্যি।”
জনের খুব ইচ্ছে করল সে তিষাকে তার আসল সন্দেহের কথাটা বলে দেয়। সেদিন তার গাড়ীর ব্রেকটি ফেল করিয়ে আসলে তিষাকেই মারতে চেয়েছিল। তার গাড়ীটি শুধু ব্যবহার করেছে। জন সেটা বলতে পারল না, এই সহজ সরল মেয়েটাকে সে ভয় দেখাতে চায় না, শুধু সাবধান করতে চায়।
জন বলল, “তিষা।”
“বল।”
“এনিম্যান নিয়ে তুমি যদি নতুন কিছু পাও সেটা কিন্তু ব্লগে লিখ না।”
“ব্লগে লিখব না?”
“না।”
“কেন?”
“এনিম্যান কোম্পানী খুব বড় কোম্পানী, যদি তাদের ব্যবসার ক্ষতি হয় তখন রেগে মেগে তোমার ক্ষতি করতে পারে।”
“আমার ক্ষতি? আমার আবার কী ক্ষতি করবে?”
জনের একবার ইচ্ছে হল বলে, তোমাকে মেরে ফেলতে পারে। দুইদিন আগে যেরকম আমাকে সহ মেরে ফেলতে চেয়েছিল। কিন্তু সে বলল না। শুধু হাসার ভঙ্গি করে বলল, “কী ক্ষতি করতে পারে আমি সেটা জানি না, কিন্তু বড় কর্পোরেশানকে কোনো বিশ্বাস নেই। দরকার কী ওদের চটিয়ে।”
“ঠিক আছে।”
“আমার কী মনে হয় জান?”
“কী?”
“ব্লগে তোমার যে লেখাটা আছে আপাতত তুমি সেটাও সরিয়ে ফেল।”
“সরিয়ে ফেলব?”
“হ্যাঁ।”
“ঠিক আছে।”
.
তিষা সেই রাতে ব্লগ থেকে তার লেখাটি সরিয়ে ফেলল।
তবে তিষা যতক্ষণ বাসায় থাকে ততক্ষণ সে তার এনিম্যান মিশকাকে লক্ষ্য করে। তার দিকে তাকিয়ে থাকে, মিশকাকে বোঝার চেষ্টা করে। আশে পাশে যখন কেউ নেই তখন একবার সে মিশকাকে তার কোলে নিয়ে বসল, মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, “বল তো মিশকা, তুমি কী আমার কথা বুঝতে পারছ?”
মিশকা মাথা নাড়ল, তারপর ফিক করে হেসে ফেলল। তিষা বলল, “তুমি যদি আমার কথা বুঝে থাকো তাহলে বল দেখি আমার নাম কী?” মিশকা আবার একটু হেসে ফেলল। তিষা বলল, “ বল দেখি তোমার নাম কী?”
মিশকা একটু মাথা নাড়ল তারপর আবার হাসল। তিষা বলল, “বল মিশকা। মি-শ-কা। মি-শ-কা।”
মিশকা কিছু না বলে খিলখিল করে হাসল। ঠিক তখন বাইরে একটা গাড়ীর শব্দ শুনে তিষা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখল জন তাদের বাসার সামনে তার গাড়ী পার্ক করছে। তিষা নিচে গিয়ে দরজা খুলে দেয়, জন তাকে দেখে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল, “তুমি ঠিক আছ?”
তিষা বলল, “এখন পর্যন্ত।”
“কী করছিলে?”
“মিশকার সাথে কথা বলার চেষ্টা করছিলাম।”
“কথা বলতে পেরেছ?”