“এরকম মহিলার সংখ্যা বাড়াতে হবে।”
“চমৎকার। নূতন নূতন দেশ খুঁজে বের করতে হবে। দেশের সরকার যদি সহযোগিতা না করে সেই দেশে বিপ্লব করে সরকার ফেলে দিতে হবে।”
“জী ম্যাডাম।”
“তাছাড়া আমাদের গবেষণা চলছে।”
রিকার্ডো দ্বিধান্বিত গলায় বলল, “মায়ের গর্ভ ব্যবহার না করে সত্যিকারের বায়োসেল তৈরি করার গবেষণা?”
লিডিয়া শব্দ করে হেসে উঠল, সারা জীবনে সে এতো কম হেসেছে যে সে ঠিক করে হাসতে শিখেনি এবং তার হাসি দেখে রিকার্ডো এক ধরনের আতংক অনুভব করে। লিডিয়া হাসি থামিয়ে বলল, “তোমার কথা শুনে আমার খুব আশা ভঙ্গ হয়েছে রিকার্ডো। তুমি আমাকে খুব নিরাশ করেছ।”
“আমি খুব দুঃখিত ম্যাডাম।”
“তুমি আমাকে বল রিকার্ডো, একটা সত্যিকারের বায়োসেলের দাম বেশী নাকী এশিয়া কিংবা আফ্রিকার একটা গরীব দেশের একটা দরিদ্র মেয়ের জীবনের দাম বেশী।”
“অবশ্যি বায়োসেলের দাম বেশী।”
“এতো সস্তা দরিদ্র মহিলারা থাকতে আমরা কেন মূল্যবান বায়োসেল তৈরি করতে যাব?”
রিকার্ডো ইতস্তত করে বলল, “তাহলে গবেষণাটা কীসের উপর হচ্ছে ম্যাডাম?”
“গবেষণাটা হচ্ছে একটা মহিলার গর্ভে মাত্র একটা এনিম্যান জাইগট ইমপ্লান্ট না করে এক সাথে পাঁচটা ইমপ্লান্ট করা যায় কী না তার ওপর। মায়ের শরীরের ওপর চাপ পড়তে তার জীবনী শক্তি কমে যাবে কিন্তু সেটা হয়তো খারাপ না।”
রিকার্ডো মাথা নাড়ল, বলল, “জী ম্যাডাম। এই হতভাগ্য মহিলাদের কষ্টের জীবন যত কমানো যায় ততই মঙ্গল।”
লিডিয়া জিব বের করে তার হাতে ধরে রাখা ললিপপটা আরো একবার চেটে নিল তারপর বলল, “তিনটি পর্যন্ত জাইগট ইমপ্লান্ট করার গবেষণা শেষ হয়েছে। আমি পাঁচটি করার জন্য চাপ দিচ্ছি।”
“জী ম্যাডাম।”
“ঠিক আছে রিকার্ডো, তুমি তাহলে ফাইলগুলো আপলোড কর। আমি দেখি।”
“জী ম্যাডাম।”
লিডিয়া হঠাৎ সুর পাল্টে বলল, “রিকার্ডো, তুমি কী ললিপপ খেতে পছন্দ কর?”
“জী ম্যাডাম।”
লিডিয়া তার হাতের ললিপপটা রিকার্ডোর দিকে এগিয়ে দেয়, নাও। এটা তোমার জন্যে।”
রিকার্ডো হাত বাড়িয়ে ললিপপটা হাতে নেয়। লিডিয়া মুখে হাসি টেনে বলল, “খাও রিকার্ডো।”
রিকার্ডো লিডিয়ার টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চেটে চেটে ললিপটা খেতে থাকে।
০৮. তিষা তার বিছানায় পা তুলে বসে
তিষা তার বিছানায় পা তুলে বসে এনিম্যানের ম্যানুয়েলটি দেখছে। স্কুল থেকে তাকে যে ছোট এনিম্যান শিশুটি দিয়েছে সেটি তার ঘরের মাঝে ইতস্তত ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রাণীটি কৌতূহলী, যেটাই দেখছে সেটাই হাত দিয়ে স্পর্শ করছে, যদি হাতে নেয়া সম্ভব হয় তাহলে হাতে তুলছে, দেখছে আবার রেখে দিচ্ছে। কোনো কিছু একটু মসৃণ হলে সে হাত দিয়ে সেটা বারবার অনুভব করছে। ম্যানুয়েলে লেখা আছে এনিম্যানের স্মৃতি খুব দুর্বল। কোনো একটা কিছু দেখলে সেটা মনে রাখতে পারে না, কিন্তু তিষা বুঝতে পারল কথাটা পুরোপুরি সত্যি না, যে জিনিষটা সে একবার দেখেছে সেটি সে দ্বিতীয়বার তুলে দেখে না।
এনিম্যানটার কিছু বিচিত্র ব্যবহার আছে। এটি পিছনের দুই পা আর দুই হাতে ভর দিয়ে হাঁটে। ছেলে মেয়েরা যখন চারপায়ে হাঁটার ভঙ্গী করে তখন তারা দুই হাত আর হাঁটুতে ভর দেয়, এটি হাঁটু ব্যবহার করে না, পায়ের পাতা ব্যবহার করে। তিষা লক্ষ্য করেছে এনিম্যানটি ইচ্ছে করলে দুই পায়ে দাঁড়াতে পারে কিন্তু কখনোই দাঁড়ানোর চেষ্টা করে না। কেউ যদি আশে পাশে না থাকে তাহলে খুব সাবধানে দুই পায়ে ভর দিয়ে মানুষের মত দাঁড়ায় কিন্তু খুব কম সময়ের জন্যে। কাউকে দেখলেই আবার হাত পায়ের উপর ভর দিয়ে ফেলে।
যে কারণে এনিম্যান নামের এই পোষা প্রাণীটি এতো জনপ্রিয়তা পেয়েছে সেটি হচ্ছে তার মুখের হাসি। সবসময়েই এর হাসি মুখ, মাঝে মাঝে সত্যি সত্যি শব্দ করে হেসে ওঠে। হাসিটি খুবই সুন্দর, এনিম্যানটি ছোট বাচ্চাদের মত খিল খিল করে হেসে ওঠে। এনিম্যানটি যখন হাসে তখন তাকে দেখে অন্যরাও না হেসে পারে না। ম্যানুয়েলটিতে এই হাসি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে অনেক গবেষণা করে এই
এনিম্যান প্রাণীটিকে খুব সুখী এবং আনন্দময় প্রাণীতে তৈরি করা হয়েছে। এই হাসিটি আন্তরিক কারণ এর মাঝে কোনো দুঃখ নেই। শুধু যে দুঃখ নেই তা নয় এর মাঝে ভয় আতংক বা হিংসা বলেও কিছু নেই। ম্যানুয়েলটিতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে এটি হাসতে পারলেও আর কিছু পারে না, কেউ যেন এর মাঝে অন্যান্য মানবিক গুণ খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা না করে। এনিম্যানের হাসিটি এই প্রাণীটির একটি অতি সাধারণ অভিব্যক্তি তার ভাষা। প্রাণীটির কথা বলার ক্ষমতা নেই তাই এই হাসিটি দিয়েই সে আশে পাশে অন্যান্যদের সাথে ভাব বিনিময় করে।
তিষা বেশ কিছুক্ষণ এনিম্যানটিকে লক্ষ্য করে শেষে তাকে ডাকল, “এই যে! এদিকে তাকাও–”
এনিম্যানটি মাথা ঘুরে তিষার দিকে তাকাল তারপর ফিক করে হেসে ফেলল হুবহু একটা মানুষের বাচ্চার মত। তিষা হাত এগিয়ে দিয়ে বলল, “এসো আমার কাছে।”
এনিম্যানটি তার কথা ঠিক বুঝতে পারল বলে মনে হয় না, মেঝেতে বসে ঘাড় নাড়িয়ে তাকিয়ে রইল। তিষা হাত দিয়ে ডাকল, “এসো। কাছে এসো।”
এবারে এনিম্যানটি তার কাছে এগিয়ে আসে, কাছে এসে তার হাতকে স্পর্শ করে। ছোট ছোট আঙ্গুল, হাতটা শীতল। তিষা এনিম্যানটার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই সেটি আবার ফিক করে হেসে ফেলল তারপর আরামে চোখ বুজে ফেলল। মাথায় লম্বা চুল, শরীরে কোমল এক ধরণের পশম, তিষা আদর করে সারা শরীরে হাত বুলিয়ে দেয়।