লিডিয়া এবারেও কোনো কথা বলল না। রিকার্ডো অন্যমনষ্কভাবে আঙুল দিয়ে টেবিলে টোকা দিতে দিতে বলল, “বুঝেছ লিডিয়া আমি যখন চিন্তা করি যে আমি তোমাকে রিক্রুট করেছিলাম তখন আমার এক ধরণের অহংকার হয়। বলতে পার তুমি হচ্ছ আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অবদান।”
লিডিয়া বলল, “তুমি আমার কাছে কেন এসেছ বল।”
“আমি এনিম্যানের পরের প্রডাকশান নিয়ে কথা বলতে এসেছি। তুমি তো জান আমাদের প্রথম প্রডাকশন”
লিডিয়া হাত তুলে তাকে থামাল। বলল, “দাঁড়াও।”
রিকার্ডো কথা থামিয়ে লিডিয়ার দিকে তাকাল। লিডিয়া বলল, “আমি যখন প্রথমবার বসের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম তখন তুমি আমাকে কিছু উপদেশ দিয়েছিলে, মনে আছে?”
রিকার্ডো একটু অবাক হয়ে বলল, “হ্যাঁ। কেন?”
“তুমি বলেছিলে বস অনুমতি না দিলে বসবে না, নাম ধরে ডাকার অনুমতি দিলেও নাম ধরে ডাকবে না, সোজাসুজি চোখের দিকে তাকাবে না, কিছু খেতে দিলে জোর করে হলেও খাবে। মনে আছে?”
“হ্যাঁ মনে আছে।”
“তুমি কেন সেই উপদেশ দিয়েছিলে বলতে পারবে?”
“তার কারণ তুমি তখন ছিলে একেবারে নূতন একজন গবেষক আর বস কতো ওপরে!”
“এখন?”
“এখন তুমিও অনেক উপরে উঠেছ। অনেক উপরে—”
“আর তুমি?”
“আমি?” রিকার্ডো কেমন যেন ভ্যাবাচেকা খেয়ে লিডিয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।
লিডিয়া বলল, “আর তুমি এখনও অনেক নিচে আছ। অনেক নিচে যারা থাকে তাদের অনেক উপরে যারা থাকে তাদের সাথে যেরকম ব্যবহার করার কথা, আমি চাই তুমি সেভাবে আমার সাথে ব্যবহার কর।”
রিকার্ডো বিস্ফারিত চোখে বলল, “কী বলছ তুমি লিডিয়া?”
“যদি নিয়মটা পছন্দ না হয় তুমি এপসিলন ছেড়ে চলে যেতে পার। যারা এপসিলন ছেড়ে চলে গেছে তাদের ছবি করিডোরের শেষে টানানো আছে। তোমারটাও টানিয়ে দেব।”
রিকার্ডোর মুখ কেমন যেন রক্তশূন্য হয়ে ওঠে। লিডিয়া বলল, “যাও। তুমি আবার শুরু কর। অফিসের বাইরে যাও। ঢোকার আগে দরজায় শব্দ করে অনুমতি নিও।”
“লিডিয়া–”
“শুধুমাত্র আমি অনুমতি দিলে–”
রিকার্ডো উঠে দাঁড়াল। সে কিছুক্ষণ লিডিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। খুব ধীরে ধীরে তার মুখে এক ধরনের হাসি ফুটে ওঠে। হাসিটা মুখে ধরে রেখে সে অফিস থেকে বের হয়ে যায়।
প্রায় সাথে সাথেই দরজায় শব্দ করে রিকার্ডো তারপর মাথাটা ঢুকিয়ে বলল, “আসতে পারি?”
লিডিয়া জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়েছিল, মাথা ঘুরিয়ে রিকার্ডোর দিকে তাকাল, তারপর বলল, “এসো।”
রিকার্ডো অফিসের ভেতরে ঢুকে লিডিয়ার টেবিলের সামনে দাঁড়াল, লিডিয়া তার মুখের দিকে তাকাল কিন্তু রিকার্ডো লিডিয়ার চোখের দৃষ্টি এড়িয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে রইল। লিডিয়া তার ড্রয়ার খুলে একটা ললিপপ বের করে, তার ওপরের প্লাস্টিকটা সময় নিয়ে খুলে ফেলে তারপর ছোট বাচ্চাদের মত সেটা চেটে চেটে খেতে শুরু করে। রিকার্ডো কোনো কথা না বলে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে রইল।
লিডিয়া বলল, “তুমি কিছু বলবে?”
“জী ম্যাডাম।”
“বল।”
“এনিম্যানের প্রথম শিপমেন্ট শেষ হয়ে যাবে। দ্বিতীয় শিপমেন্ট পথে আছে। তৃতীয় শিপমেন্ট তৈরী হচ্ছে। আমরা যেরকম অনুমান করেছিলাম এনিম্যানের চাহিদা তার থেকে অনেক বেশী।”
“আমি জানি।”
রিকার্ডো বলল, “জী ম্যাডাম। আপনি সেটা অনেকবার বলেছেন। আমাদের মার্কেটিং ডিপার্টমেন্ট খুব সতর্কভাবে পরিকল্পনা করায় আমরা এই ক্রাইসিসে পড়েছি।”
লিডিয়া তার ললিপপটা আরেকবার চেটে বলল, “এটা মোটেও ক্রাইসিস না। আমাদের হাতে যদি এক শিপমেন্ট এনিম্যান থাকত যেটা মার্কেটিং করা যাচ্ছে না সেটা হতো ক্রাইসিস।”
রিকার্ডো বলল, “জি ম্যাডাম।”
“এখন মার্কেটিং ডিপাটমেন্ট প্রডাকশান কতো বাড়াতে চাচ্ছে?”
“কম পক্ষে দশ গুণ। এনিম্যানের দামও বাড়িয়ে দেবে।”
“চমৎকার।”
“কিন্তু–“
“কিন্তু কী?”
রিকার্ডো বলল, “কীভাবে প্রোডাকশন এতো বাড়াব আমি বুঝতে পারছি না।”
লিডিয়ার মুখ হঠাৎ কঠিন হয়ে উঠল, সে হিংস্র গলায় বলল, “রিকার্ডো, তোমার সম্ভবত বয়স হয়ে গেছে। তোমার মস্তিষ্ক সম্ভবত আগের মতো ধারালো নেই। তুমি খুব সহজ বিষয় বুঝতে পার না।”
রিকার্ডো ফ্যাকাসে মুখে বলল, “আমি দুঃখিত।”
লিডিয়া মাথাটা একটু সামনে ঝুঁকিয়ে বলল, “আমরা কীভাবে এনিম্যান প্রডাকশান করি রিকার্ডো?”
“ক্লোন করে।”
“গুড। এই প্রজেক্টের সবচেয়ে বড় ফান্ড ব্যয় করা হয়েছে এই অসাধারণ ক্লোনটি তৈরি করতে। এনিম্যান ক্লোন করার জন্যে আমাদের কোল্ড স্টোরেজে তিন মিলিওন জাইগট জমা করে রাখা আছে। যখন খুশী আমরা এই জাইগট থেকে এনিম্যান তৈরি করি।”
“জী ম্যাডাম।”
“কীভাবে তৈরি করি?”
“সেটি গোপনীয় ম্যাডাম। আমরা মিডিয়াকে একভাবে জানিয়েছি। তাদেরকে বলেছি আমাদের বিশাল জাইগট ফার্ম আছে সেখানে হাজার হাজার বায়োসেল, সেই বায়োসেলে জাইগট বড় হচ্ছে। এই শতাব্দীর সবচেয়ে বড় আবিষ্কার। মায়ের গর্ভ ব্যবহার না করে স্তন্যপায়ী প্রাণীর জন্ম দেওয়া।
“আর আসলে আমরা কী করি?”
“আফ্রিকা এশিয়ার গরীব দেশের মহিলাদের গর্ভটাকে এনিম্যান জন্ম দেয়ার জন্য ব্যবহার করি। আমাদের দেশের এন জিও সেই সব দেশে স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার নামে তাদের গর্ভে এনিম্যান জাইগট ইমপ্লান্ট করে। বড় হলে বের করে নেয়।”
“তাহলে প্রডাকশান বাড়াতে হলে কী করতে হবে?”