বাচ্চারা আবার আনন্দে চিৎকার করে উঠল। মোটাসোটা একটা ছেলে চিৎকার করে বলল, “আমরা টিশার বেন ফাংশান টেস্ট করতে চাই। টিশা বল পাঁচ আর পাঁচে কত হয়?”
টিশা হাসল, বলল, “দুইশ বারো!”
সবাই আনন্দে চিৎকার করে ওঠে! মিসেস সাস্টিকও হাসলেন, হেসে বললেন, “আমরা এই মাত্র টিশার মস্তিষ্ক টেস্ট করলাম, তোমরা সবাই দেখেছ সেটা শুধু যে ঠিক আছে তা নয় এটা এখন ওভার ড্রাইভ মোডে কাজ করছে। যাই হোক, আমরা আজকে টিশাকে কিছুক্ষণের জন্যে আমাদের স্কুলে এনেছি কারণ আমরা সবাই তাকে বলতে চাই, আমরা তোমাকে ভালোবাসি টিশা!”
সবাই চিৎকার করে বলল, “আমরা তোমাকে ভালোবাসি, টিশা।”
দর্শকের সারিতে বসে থাকা তিষার আম্মু শাড়ীর আঁচল দিয়ে তার চোখ মুছলেন।
এবারে তিষার ক্লাশ টিচার মিসেস রামজী হাতে মাইক্রোফোন নিলেন, মোটাসোটা হাসিখুশী মহিলা, চশমা ঠিক করে বললেন, “আমরা টিশাকে এখানে এনেছি, তার দুটো কারণ আছে। প্রথম কারণটা সবাই জান। সে হচ্ছে সারা পৃথিবীর সবচেয়ে সৌভাগ্যবতী মেয়ে। এরকম নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে আসা মানুষ সারা পৃথিবীতে বলতে গেলে নেই। তাই আমরা টিশাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের স্কুল থেকে একবার ঘুরিয়ে নিতে চাই, যেন আমাদের স্কুলে টিশার সৌভাগ্যের ছিটেফোঁটা ছড়িয়ে পড়ে এবং তোমাদেরও সেই সৌভাগ্য স্পর্শ করে আর তোমারাও লেখাপড়া না করেই ভালো গ্রেড পাও!”
সবাই মিসেস রামজির কথা শুনে হাসিতে ফেটে পড়ে। মিসেস রামজি হাসির শব্দ থেমে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন তারপর গলার স্বর পরিবর্তন করে বললেন, “তোমরা নিশ্চয়ই জান টিশার একটা পোষা কুকুর ছিল, সেই কুকুরটি নিজের জীবন দিয়ে টিশাকে বাঁচিয়েছে। আমরা সবাই সেই অসম্ভব ভালো পোষা কুকুরটাকে অনেক ভালোবাসা দিয়ে স্মরণ করব। আমরা জানি টিশা নিশ্চয়ই সেই কুকুরটাকে অনেক ভালোবাসত এবং তার অভাবটা নিশ্চয়ই আর কখনো পূরণ হবে না।”
বাচ্চারা সারাক্ষণই আনন্দে চেঁচামেচি করছিল, তিষার পোষা কুকুরের প্রসঙ্গটি আসতেই সবার মন ভারী হয়ে যায়। তারা নিঃশব্দে মিসেস রামজির কথা শোনে। মিসেস রামজী নরম গলায় বললেন, “আমরা কখনো টিশার প্রিয় কুকুরটার অভাব পূরণ করতে পারব না। তারপরও সে যেন একটু হলেও তার দুঃখটা ভুলে থাকতে পারে সে জন্যে তাকে একটা পোষা প্রাণী উপহার দিতে চাই। এখানে টিশার বাবা মা আছেন, তারা যদি অনুমতি দেন। তাহলে আমরা টিশাকে একটা এনিম্যান দিতে চাই!”
সবাই এবার শুধু আনন্দে চিৎকার করে উঠল না, উত্তেজনায় নিজেদের জায়গায় দাঁড়িয়ে গেল! তিষার আব্বু আম্মু মাথা নেড়ে অনুমতি দিলেন তখন স্টেজের পাশ থেকে একটা বড় বাক্স আনা হল। সেটি সুন্দর রিবন দিয়ে বাঁধা। তিষা হুইল চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে রিবনের এক মাথা ধরে টান দিতেই বাক্সটা খুলে যায় এবং সবাই অবাক হয়ে দেখে বাক্সের মাঝামাঝি ছোট একটা এনিম্যান গুটি গুটি মেরে বসে আছে। সেটি সাবধানে তার দুই পা আর দুই হাতে ভর দিয়ে দাঁড়াল, তারপর তার বড় বড় চোখে চারদিকে তাকাল। তিষা হাত বাড়িয়ে দিতেই এনিম্যানটি তার নিজের দুই হাত বাড়িয়ে তিষাকে ধরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। তিষা সাবধানে তাকে কোলে তুলে নিয়ে তার মাথায় হাত বুলাতেই সেটি তার ফোকলা দাঁত বের করে ফিক করে হেসে দিল
তিষা এনিম্যানটি কোলে নিয়ে আবার তার হুইল চেয়ারে বসে পড়ে।
মিসেস রামজি তিষাকে বললেন, “টিশা তুমি কী কিছু বলতে চাও?”
তিষা মাথা নেড়ে বলল, “আমি কিছু বলার চেষ্টা করলেই কেঁদে ফেলব।”
“একটু না হয় কেঁদেই ফেল।”
তিষা মাইক্রোফোনটা হাতে নিয়ে সত্যি সত্যি কেঁদে ফেলল। তার কাঁদার কারণটা তবু বোঝা যায় কিন্তু ছটফট দুরন্ত বাচ্চাদের অনেকেই কেন তার সাথে সাথে কেঁদে ফেলল তার কারণটা ঠিক বোঝা গেল না!
০৭. লিডিয়া টেবিলে পা তুলে
লিডিয়া টেবিলে পা তুলে দিয়ে তার অফিসের বিশাল কাঁচের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়েছিল। রাস্তা থেকে ডাউনটাউনকে খুব ব্যস্ত একটা শহর মনে হয়, তেতাল্লিশ তালা থেকে সেই ব্যস্ততাটুকু বোঝা যায় না। মনে হয় নিচে বুঝি এক ধরণের শান্ত নির্ঝঞ্ঝাট পরিবেশ। লিডিয়া রাস্তার একটি মোড় থেকে একটা বড় দোতলা বাসকে চোখ দিয়ে অনুসরণ করছিল ঠিক তখন ঘরের মাঝে পায়ের শব্দ শুনে মাথা ঘুরিয়ে তাকাল। রিকার্ডো দরজা খুলে অফিসে ঢুকেছে, লিডিয়ার দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বলল, “কেমন আছ। লিডিয়া?”
“ভাল।”
রিকার্ডো একটা চেয়ারে বসে চারদিকে তাকিয়ে বলল, “তুমি এতো বড় মাল্টি বিলিওন ডলার প্রজেক্টের ম্যানেজার সেই হিসেবে তোমার অফিসটা একেবারে ফাঁকা। এখানে কিছু নেই, দেয়ালে অন্ততপক্ষে একটা এন্ড্রু ওয়াইথ বা জন স্টুয়ার্ট থাকা উচিৎ ছিল”
“আমি পেইনটিং দুই চোখে দেখতে পারি না।”
“তোমার অফিসে কাগজপত্র, ফাইল, কম্পিউটার কিছু নেই!”
“না। কখনো থাকে না। আমার সবকিছু মাথার মাঝে থাকে।”
রিকার্ডো মুখে জোর করে একটা হাসি ধরে রেখে বলল, “বছর তিনেক আগে তোমাকে যখন আমি রিক্রুট করেছিলাম তখন আমি চিন্তাও করিনি এতো দ্রুত তুমি এই কোম্পানীর এতো বড় একটা এসেট হয়ে উঠবে।”
লিডিয়া কোনো কথা বলল না। রিকার্ডো একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, “তুমি যখন এনিম্যানের ওপর প্রজেক্টটা দিয়েছিলে তখন আমি ভেবেছিলাম এটা স্রেফ পাগলামো। বস কিন্তু ঠিকই এর গুরুত্ব ধরতে পেরেছিলেন। এখন সারা পৃথিবী এনিম্যান নিয়ে পাগল।”