শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসে আলোচনা হল এবং দীর্ঘ শুনানীর পর এনিম্যান নামের প্রাণীটাকে বিক্রি করার অনুমতি দেয়া হল। এটি রাতারাতি অসম্ভব জনপ্রিয় একটা পোষা প্রাণী হয়ে গেল। আমেরিকার প্রত্যেকটা পরিবার এখন একটা এনিম্যান চায়।
তিষা অবশ্যি কারণটা বুঝতে পারে। এতো মিষ্টি চেহারার একটা প্রাণী, অনেকটা মানবশিশুর মতো আবার মানব শিশু নয়, বড় বড় মায়া কাড়া চোখ, শরীরে কোমল পশম, মুখের মাঝে একটা ছেলেমানুষী প্রায় দুষ্টুমীর হাসি–এই প্রাণীটাকে একজন ভালো না বেসে পারে কীভাবে?
যারা যারা এনিম্যানকে কিনে এনেছে তারা সবাই এর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। এটি খুবই মিষ্টি স্বভাবের। এটি শান্ত এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। এর প্রয়োজন খুবই কম, বাথরুম নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। প্রাণীটি খুবই হাসিখুশী, যার বাসায় একটি এনিম্যান আছে সেই বাসাটিতেই হতাশা বা দুঃখ রাতারাতি কমে গেছে।
সেই রাতে যখন তিষার আব্বু তিষাকে দেখতে এলেন তিষা বলল, “আব্বু আমাকে একটা এনিম্যান কিনে দেবে?”
আব্বু তিষাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, “শুধু এনিম্যান কেন, তুই চাইলে তোকে আমি রয়াল বেঙ্গল টাইগার কিনে দেব।”
তিষা হি হি করে হেসে বলল, “না আব্বু, আমার রয়েল বেঙ্গল টাইগার দরকার নেই। একটা এনিম্যান হলেই হবে।”
আব্বু বললেন, “এনিম্যানের তো এখন খুব ডিমান্ড তাই চাইলেই পাওয়া যায় না, বুকিং দিতে হয়। বুকিং দেওয়ার পর কম পক্ষে ছয় সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয়। আমি আজকেই বুকিং দিয়ে দেব, ছয় সপ্তাহের মাঝে চলে আসবে।”
আম্মু বললেন, “তুই যখন প্রথম কুকুর পুষতে চেয়েছিলি তখন আমি কতো আপত্তি করেছিলাম মনে আছে?”
তিষা মাথা নাড়ল, “মনে আছে।”
“ভাগ্যিস তোকে পুষতে দিয়েছিলাম, সেজন্যে তুই বেঁচে আছিস।”
তিষা নিচু গলায় বলল, “আমি টুইটির কথা ভুলতে পারি না আম্মু!”
আম্মু বললেন, “আমরাও পারি না।”
আব্বু বললেন, “যখন এনিম্যান চলে আসবে তখন হয়তো একটু ভুলে থাকতে পারবি।”
তিষা বলল, “কিন্তু সে জন্য তো ছয় সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে।”
আম্মু বললেন, “দেখতে দেখতে ছয় সপ্তাহ কেটে যাবে।”
.
তিষার অবশ্য ছয় সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হল না তার আগেই একটা এনিম্যান পেয়ে গেল।
জ্ঞান ফিরে পাবার তিন সপ্তাহ পর তিষাকে তার বাসায় যাবার অনুমতি দেয়া হল। যদিও সে আবার নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারছে কারো সাহায্য না নিয়েই হাঁটতে পারছে তারপরও তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হল একটা হুইল চেয়ারে বসিয়ে। ঠিক যখন তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হচ্ছে তখন তার স্কুলের বেশ কয়জন ছেলে মেয়ে এসে হাজির। বাসায় যাবার আগে তাকে তাদের স্কুল হয়ে যেতে হবে, সেখানে সবাই মিলে তাকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্যে বিশাল একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে রেখেছে।
স্কুলের কাছাকাছি পৌঁছে তিষার আব্বু আম্মু দেখলেন সত্যিই বিশাল আয়োজন। স্কুলের ঢোকার রাস্তায় বেলুন দিয়ে একটা গেট তৈরী করা। হয়েছে। গেটের ওপর বিশাল ব্যানার সেখানে হাস্যোজ্জল তিষার ছবি, বড় বড় করে লেখা, তিষার জন্য ভালোবাসা।
তিষাকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে কে তাকে ঠেলে নেবে সেটা নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মাঝে একটা ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত যাকে সে সুযোগটা দেয়া হল তার নাম জন। ছেলেটি কানে শুনতে পায় না এবং সাইন ল্যাংগুয়েজে কথা বলে, আলু আর আম্মু আগেই তিষার মুখে বেশ কয়েকবার জনের কথা শুনেছিল, তিষার ভাষায় জন হচ্ছে কম্পিউটারের জিনিয়াস। তিষাকে স্কুলের করিডোরে আনা মাত্রই ড্রামের শব্দ হতে থাকে। ড্রামের সাথে সাথে ছেলে মেয়েদের চিৎকার শোনা যায়। তিষাকে হুইল চেয়ারে করে স্কুলের অডিটরিয়ামে নেয়া হয়। স্টেজে কয়েকটা চেয়ার রাখা হয়েছে সেখানে এখনো কেউ বসে নেই। অডিটরিয়ামে সব ছেলে মেয়েরা বসে চেঁচামেচি করছে। হুইল চেয়ার ঠেলে যখন তিষাকে স্টেজে তোলা হল। তখন ছেলে মেয়েদের চেঁচামেচিতে অডিটরিয়ামের ছাদ ধ্বসে পড়ার মতো অবস্থা হল।
স্কুলের প্রিন্সিপাল মিসেস সাস্টিক আর তিষার ক্লাশ টিচার মিসেস রামজি স্টেজে উঠলেন, হাত নেড়ে বাচ্চাদের থামানোর চেষ্টা করলেন। বাচ্চারা চিৎকার করতেই থাকল, মিসেস সাস্টিক তখন মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বললেন, “বাচ্চারা তোমরা শান্ত হও! টিশা এই মাত্র হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছে, তোমরা চিৎকার করে তাকে আবার অসুস্থ করে দিও
বাচ্চারা তখন একটু শান্ত হল, মিসেস সাস্টিক তখন বললেন, “তোমরা সবাই জান আমাদের টিশা সাসকুয়ান লেকে বরফের ফাটলে পড়ে গিয়েছিল। লেকের উপর সেই ফাটল কেন তৈরী হয়েছিল সেটি এখনো একটি রহস্য। জিওলজিস্টরা বের করার চেষ্টা করছেন, অনুমান করা হয় একটা ভূকম্পনের কারণে এটা ঘটেছিল। যাই হোক সেই হিমশীতল পানিতে টিশা ডুবে গিয়েছিল, মানুষ নিঃশ্বাস না নিয়ে এক দুই মিনিটের বেশী বেঁচে থাকতে পারে না, টিশা সেই পানিতে প্রায় সাতাইশ মিনিট ডুবেছিল, তার বেঁচে থাকার কোনো কথা ছিল না কিন্তু তোমরা সবাই দেখছ টিশা শুধু যে বেঁচে আছে তা নয় সে আমাদের সামনে বসে আছে।”
বাচ্চারা আনন্দে চিৎকার করে উঠল। মিসেস সাস্টিক বললেন, “এই দীর্ঘ সময় মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ না হলে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিন্তু আমরা সবাই জানি, হাসপাতালের ডাক্তারদের টিম রিপোর্ট দিয়েছেন টিশার মস্তিষ্ক পুরোপুরি ঠিক আছে।”