তিষা বেঁচে আছে না নেই কেউ সেটা পরীক্ষা করার চেষ্টা করল না, তাকে নিয়ে ছুটে যেতে থাকে, ততক্ষণে একটা এম্বুলেন্স চলে এসেছে। এম্বুলেন্সের স্ট্রেচারে শুইয়ে দিতেই এম্বুলেন্সটি সাইরেন বাজাতে বাজাতে ছুটে যেতে থাকে।
আম্মু আব্বুর বুকের কাপড় ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে বললেন, “আমার তিষা এনিম্যান বেঁচে যাবে? বেঁচে যাবে?”
আব্বু কিছু বললেন না। এতো দীর্ঘ সময় পানির নিচে ডুবে থাকলে কেউ বেঁচে থাকে না কথাটি কেমন করে বলবেন? যদি বেঁচে থাকে সেই বেঁচে থাকার অর্থ কী? মস্তিষ্কে অক্সিজেন না গেলে সেই মস্তিষ্কের যে ক্ষতি হয় সেই ক্ষতিগ্রস্ত মস্তিষ্ক নিয়ে বেঁচে থাকা একজন মানুষের জীবন কতো ভয়ংকর সেটি কী কেউ কল্পনা করতে পারবে?
০৫. লিডিয়া জিজ্ঞেস করল
লিডিয়া জিজ্ঞেস করল, “বিল, আমি কী শুরু করব?”
উইলিয়াম ম্যাকেঞ্জী বলল, “হ্যাঁ শুরু কর।” যখনই কারো সাথে তার পরিচয় হয় সে তাকে তার নাম ধরে ডাকার অনুমতি দেয়। এই মেয়েটির আগে কেউ তাকে নাম ধরে ডাকার সাহস পায়নি।
লিডিয়া বলল, “আমরা প্রায় এক ডজন এনিম্যান প্রটোটাইপ তৈরি করেছি। আমাদের ল্যাবরেটেরিতে সেগুলো বড় হচ্ছে। তুমি চাইলে আমি একটি দুটি নিয়ে আসতে পারতাম কিন্ত আমার মনে হয় এই ছবি ভিডিও আর ত্রিমাত্রিক প্রেজেন্টেশান থেকে তুমি একটা ধারণা পেয়ে যাবে।
“তোমার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা, টাকা পয়সা নিয়ে আমার কখনো চিন্তা করতে হয়নি তাই গবেষণার কোথাও আমাকে বিন্দুমাত্র সীমাবদ্ধতার সম্মুখীন হতে হয়নি। আমার মনে হয় টাকা পয়সার থেকেও বড় সহযোগিতা ছিল আইনী সহযোগিতা। এই গবেষণায় অনেক কিছুই ছিল যেটি দেশের প্রচলিত আইনে বেআইনী এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আমি নির্দ্বিধায় সেগুলো করে গেছি কারণ আমি জানি তুমি আমাকে সেই জায়গাগুলো থেকে রক্ষা করবে। বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র মহিলাদের গর্ভে আমরা নানা ধরনের মডেল পরীক্ষা করেছি। এক দুইবার স্থানীয় কোনো সাংবাদিক তার আঁচ পেয়ে যে প্রতিবাদের চেষ্টা করেনি তা নয় কিন্তু তোমার সহযোগিতার কারণে কখনোই সেটা সমস্যা হতে পারেনি। সমস্যাটা শেষ পর্যন্ত সাংবাদিকদেরই হয়েছে।
“লিডিয়া তখন স্ক্রীনে একটি মানবশিশুর ছবি দেখিয়ে বলল, এটি হচ্ছে আমাদের এনিম্যানের মডেল। তুমি দেখতেই পাচ্ছ এটি যে মানব শিশু তাতে কোনো ভুল নেই কিন্তু একই সাথে সাধারণ মানুষকে যদি বলা হয় এটি আসলে মানব শিশু নয় এটি একধরণের পশু সেটাও সবাই মেনে নেবে! তুমি নিশ্চয়ই লক্ষ্য করছ শিশুটির চোখ সাধারণ মানুষের চোখ থেকে বড়, চোখের রং আমরা ডিজাইন করতে পারি। চাপা নাক সে কারণে যখন এটি পূর্ণ বয়স্ক হবে তখনও তাকে দেখে শিশুর মতো মনে হবে। কানগুলো একটু লম্বা করা হয়েছে, উপরের ভাগ সূঁচালো মানুষ থেকে ভিন্ন। মুখ দাঁত জিবে আমরা কোনো পরিবর্তন করিনি, তাহলে মানুষের কাছে গ্রহণ যোগ্য হবে না।
“যেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেটি হচ্ছে তার গায়ের লোম। অনেক চিন্তা ভাবনা করে আমরা তার সারা শরীর লোম দিয়ে ঢেকে দিয়েছি। তার কয়েকটা কারণ, শরীরে কুকুর বা বেড়ালের মত লম্বা লোম থাকলে এটাকে মানুষ না ভেবে পশু হিসেবে কল্পনা করা সহজ। দ্বিতীয়ত শরীরে এক ধরনের নিরাপত্তা থাকে, মানুষের যেরকম কাপড় পরে থাকতে হয়, এদের তার প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া শরীরের লোমের নানা ধরণের রং দিয়ে বৈচিত্র আনতে পারব।
“যদিও এরা মানুষ কিন্তু আমরা এটাকে সাধারণত মানুষের মতো দুই পায়ে দাঁড়াতে দিই না। হাতগুলো তুলনামূলকভাবে লম্বা করে ডিজাইন করা হয়েছে যেন চার হাত পায়ে যখন হেঁটে বেড়াবে তখন বিসদৃশ্য মনে না হয়। ইচ্ছে করলে কোনো কিছু ধরে এই এনিম্যান দুই পায়ে দাঁড়াতে পারবে, কিন্তু সেটি আমরা ক্রেতাদের ইচ্ছের উপর ছেড়ে দিচ্ছি।”
লিডিয়া দ্রুত কয়েকটা ছবি এবং ভিডিও দেখিয়ে বলল, “এখন আমি এনিম্যানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশটুকুতে আসি। এদের ব্যবহার এবং আচার আচরণ। এর বুদ্ধিমত্তা হবে পাঁচ বছরের শিশুর মতো। এর কোনো ভাষা নেই, মুখে কথা বলতে পারবে না। চেষ্টা করলে বড় জোর এক বছরের শিশুর মতো দুর্বোধ্য শব্দ করতে পারবে। এর চেহারায় সব সময়েই হাসিখুশি এবং আনন্দের ভাব থাকবে। এর মুখের দিকে তাকালেই মানুষের মন ভালো হয়ে যাবে।
“পৃথিবীর সকল প্রাণীরই ভয় আতংক এমন কী কোনো কোনো প্রাণীর মাঝে দুঃখের অনুভূতি থাকে, কাজেই এনিম্যানের ভেতর থেকে এই অনুভূতিগুলো কোনোভাবেই পুরোপুরি সরানো সম্ভব হয়নি। তার ভেতরেও আনন্দের পাশাপাশি দুঃখ কষ্টের অনুভূতি আছে। কিন্তু তার মুখে কখনো তার প্রতিফলন ঘটবে না। এটি সবসময়েই হাসি হাসি মুখ করে থাকবে। এটি হাসবে।”
ঠিক এই সময়ে উইলিয়াম ম্যাকেঞ্জী হাত তুলে লিডিয়াকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করল, “আমি যদি ইচ্ছে করে এটাকে যন্ত্রণা দিই, ধরা যাক একটা লোহার শিক গরম করে ছ্যাকা দিই তাহলে কী করবে?”
লিডিয়া মুখে হাসি টেনে বলল, “তাহলেও এটা খিলখিল করে হাসবে। তার সমস্ত অনুভূতির মাত্র একধরণের প্রতিফলন, সেটি হচ্ছে হাসি! সাধারণ মানুষ কখনোই তার চেহারায় অন্য কোনো অনুভূতি খুঁজে পাবে না। যারা এটাকে পোষা প্রাণী হিসেবে পালবে তারা কখনোই এই প্রাণীটাকে কষ্ট দিচ্ছে তার অনুভূতি পাবে না। তাকে কষ্ট দিয়ে মেরে ফেললেও সবাই ভাববে প্রাণীটার বুঝি অনেক সুখ, অনেক আনন্দ।”