আমি জানি।
ইচ্ছে করলে তারা তাদের ক্লোন দিয়ে সারা পৃথিবী ছেয়ে ফেলতে পারে, পৃথিবীর মানুষ এই ক্লোনদের দিয়ে অপসারিত হতে পারে।
গ্রুটাসের মুখ শক্ত হয়ে আসে, সে ক্রুদ্ধ গলায় বলে, প্রতিরক্ষা দপ্তর তাদেরকে একজন একজন করে হত্যা করার দায়িত্ব নিয়েছে।
একজন অতিমানবীকে হত্যা করা এত সহজ নয় গ্রুটাস। আমি জানি তারা সেই দায়িত্ব পালন করতে পারছে না।
তুমি কেমন করে জান?
কারণ আমি সেই হত্যাকারীদের এক জন। আমি তাদের হত্যা করতে পারি নি।
গ্রুটাস সরসর করে ছিটকে আমার কাছ থেকে সরে গেল, একবার উপরে উঠে গেল, নিচে নেমে এল, তারপর ঘরের মাঝামাঝি স্থির হয়ে বলল, কেন তুমি হত্যা করতে পার নি?
তাদেরকে হত্যা করার প্রয়োজন নেই বলে।
কেন প্রয়োজন নেই?
কারণ তারা স্বেচ্ছায় এখানে ফিরে আসবে।
গ্রুটাস সরসর করে নিচে নেমে এল। শক্ত মূখে জিজ্ঞেস করল, কেন ফিরে আসবে?
কারণ তাদের সম্পর্কে যেটা ভাবো সেটা সত্যি নয়–তারা ভয়ঙ্কর নৃশংস প্রাণী নয় তারা প্রকৃত অর্থে একজন মানুষ। শুধু একটি ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিলেই তারা ফিরে আসবে।
কোন ব্যাপারে?
তারা অতিমানবী হতে চায় না। সাধারণ মানুষ হতে চায়। তাদেরকে সাধারণ মানুষে পাল্টে দিতে হবে।
গ্রুটাস কোনো কথা না বলে আমার দিকে হলুদ চোখে তাকিয়ে রইল। আমি বললাম, জিনের যে পরিবর্তনটুকুর কারণে তারা অতিমানবী রয়েছে, ধরে নাও সেটি একটি ক্রটি। সেই টিটুকু সারিয়ে দাও। সেই কত শত বছর আগে রিকম্বিনেন্ট ডি, এন, এ. টেকনিক দিয়ে ক্রটিপূর্ণ জিনকে ভালো জিন দিয়ে সারিয়ে দেওয়া হত। তোমরা এখন সেটা নিশ্চয়ই অত্যন্ত নিখুঁতভাবে করতে পার।
গ্রুটাস মাথা নাড়ল, পারি।
তা হলে তাদেরকে সারিয়ে দাও, অতিমানবিকতাকে একটি জিনেটিক ক্রটি হিসেবে ধরে নিয়ে তাদের চিকিৎসা করে সারিয়ে তোল। তাদের সাধারণ মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকতে দাও।
গ্রুটাস কোনো কথা বলল না, আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইল। একটা বড় নিশ্বাস ফেলে বলল, যদি না দিই?
তুমি দেবে। কারণ তোমার কোনো উপায় নেই। তোমার ল্যাবরেটরিতে তৈরি একজন অতিমানবীর সাথে আমার পরিচয় হয়েছে। আমি তার দেহকোষ নিয়ে সারা পৃথিবীর অসংখ্য গোপন জায়গায় সঞ্চিত রেখেছি। অতিমানবীদের সাধারণ মানুষে পাল্টে না দেওয়া পর্যন্ত আমি সেই দেহকোষ ফিরিয়ে দেব না।
উৎকট দুর্গন্ধ ছড়িয়ে গ্রুটাস আমার কাছে ছুটে এল, তুমি আমাকে ভয় দেখাচ্ছ?
হ্যাঁ। আমি হাতকড়া দিয়ে লাগানো আমার দুই হাত উপরে তুলে বললাম, তুমিও আমাকে ভয় দেখাচ্ছ এই দেখ আমাকে হাতকড়া পরিয়েছ।
গ্রুটাস কোনো কথা না বলে আমার দিকে তীব্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। আমি শান্ত গলায় বললাম, তুমি কি আমার প্রস্তাবে রাজি?
গ্রুটাস সরসর করে পিছনে সরে গিয়ে বলল, কিন্তু আমি কীভাবে নিশ্চিত হব যে তুমি অতিমানবীদের কোনো দেহকোষ লুকিয়ে রাখবে না?
আমাকে তোমার বিশ্বাস করতে হবে। আমি একমুহূর্ত থেমে শান্ত গলায় বললাম, মানুষকে মানুষের বিশ্বাস করতে হয়।
গ্রুটাস তীব্র স্বরে বলল, আমি মানুষ, তাই আমি মানুষকে বিশ্বাস করি না।
আমি হাসার ভঙ্গি করে বললাম, সেটি তোমার সমস্যা। তুমি যদি চাও আমার মস্তিষ্ক স্ক্যান করেও দেখতে পার।
তাই দেখব।
বেশ। এখন তুমি কি অনুমতি দেবে? আমি কি অতিমানবীদের নিয়ে আসব?
গ্রুটাস আবার একটি বড় নিশ্বাস ফেলে বলল, যাও। নিয়ে এসো।
তোমাকে ধন্যবাদ গ্রুটাস। আমি চলে যেতে যেতে হঠাৎ দাঁড়িয়ে গিয়ে বললাম, গ্রুটাস!
বল।
তোমাকে ব্যক্তিগত কিছু প্রশ্ন করতে পারি?
কী প্রশ্ন?
তুমি নিজেকে মানুষ বলে দাবি কর, কিন্তু বেঁচে আছ যন্ত্রের মতো। তোমার মস্তিষ্ক থেকে টিউব বের হয়ে আসছে, আমি দেখতে পাচ্ছি তোমার মস্তিষ্কের ভিতরে কোনো একটা যন্ত্র নড়ছে, টিউবে করে তরল যাচ্ছে, সূক্ষ্ম ধাতব ফাইবার দিয়ে তুমি শূন্য থেকে ঝুলে আছ, কারণটা কী?
আমি মানুষের সীমাবদ্ধতার কথা জানি। তাই চেষ্টা করছি যন্ত্রের কাছাকাছি যেতে। মানুষের জিন নিয়ে আমি কাজ করি, গুরুত্বপূর্ণ জিনের বেস পেয়ারের তালিকা আমাকে জানতে হয়, তাই বিশাল তথ্যকেন্দ্রের সাথে আমার মস্তিষ্ককে জুড়ে দিয়েছি। আমি সরাসরি তথ্য নিতে পারি। মস্তিষ্ককে জীবাণুমুক্ত রাখার জন্য আমার মস্তিস্কে জীবাণু–নিরোধক তরল পাঠাতে হয়, মস্তিষ্ককে সতেজ রাখার জন্য উত্তেজক ওষুধ পাঠাতে হয় সে জন্য খুলির ভিতরে ক্রায়োজেনিক পাম্প বসিয়েছি।
আমার সারা শরীর কাঁটা দিয়ে ওঠে, গ্রুটাসের বীভৎস মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি ইচ্ছে করে এই জীবনপদ্ধতি বেছে নিয়েছ?
গ্রুটাস হঠাৎ ছটফট করে সরসর করে ছিটকে গিয়ে চিৎকার করে বলল, তুমি সীমানা অতিক্রম করছ নির্বোধ মানুষ। আমি ইচ্ছে করে এই জীবনপদ্ধতি বেছে নিয়েছি নাকি বাধ্য হয়ে নিয়েছি তাতে তোমার কিছুই আসে–যায় না।
আমি মাথা নাড়লাম, বললাম, ঠিকই বলেছ। আমার কিছুই আসে–যায় না।
০৬. পলিলন কর্ডটি ঝুলিয়ে রেখেছিলাম
পরিত্যক্ত খনিটিতে আমি যে পলিলন কর্ডটি ঝুলিয়ে রেখেছিলাম সেটি এখনো ঝুলছে। আমি সেটা ধরে নিচে নামতে থাকি, আগেরবার যখন এই কর্ড বেয়ে নেমে এসেছিলাম তখন নানা ধরনের উত্তেজক বায়োকেমিক্যাল দিয়ে আমাকে একটি হিংস্র শ্বাপদের মতো সজাগ করে রাখা হয়েছিল। এবারে আমার মাঝে কোনো উত্তেজনা নেই। খনির নিচে আমি একা নেমে এসেছি সত্যি কিন্তু উপরে আমার জন্য প্রতিরক্ষা দপ্তরের বিশাল বাহিনী একাধিক ভাসমান যান নিয়ে অপেক্ষা করছে।