তোমরা আমাকে যে অতিমানবীকে হত্যা করতে পাঠিয়েছিলে, আমি তাকে হত্যা করি নি। আমার তার সাথে পরিচয় হয়েছে
অসম্ভব।
তার কোন ক্রোমোজমের কোন জিনটির কোন বেস পেয়ারবটির মিউটেশানের কারণে তাদের মৃত্যু ঘটে নি সেটি বললে কি তুমি বিশ্বাস করবে?
বয়স্ক মানুষটি দীর্ঘসময় আমার দিকে তাকিয়ে রইল, তারপর কেমন জানি ভয় পাওয়া গলায় বলল, তুমি কী চাও?
আমি প্রজেক্ট অতিমানবীর মহাপরিচালকের সাথে কথা বলতে চাই।
বৃদ্ধ মানুষটি বিচিত্র এক ধরনের দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইল, তাকে হঠাৎ কেমন জানি ক্লান্ত এবং বিধ্বস্ত দেখাতে থাকে। খানিকক্ষণ চেষ্টা করে বলল, তুমি কেন এটা করতে চাইছ?
অতিমানবীদের নিয়ে যে নৃশংসতা শুরু হয়েছে আমি সেটা বন্ধ করতে চাই।
তুমি?
হ্যা আমি।
তুমি কীভাবে সেটা করবে?
আমি সেটা প্রজেক্ট অতিমানবীর মহাপরিচালককে বলব।
বৃদ্ধ মানুষটি খানিকক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, প্রজেক্ট অতিমানবীর মহাপরিচালক সম্পর্কে তুমি কতটুকু জান?
আমি কিছু জানি না।
আমারও তাই ধারণা, তাই তুমি তার সাথে দেখা করতে চাইছ।
আমি একটু অবাক হয়ে বললাম, কেন? তার সাথে দেখা করতে অসুবিধা কী?
আমার জানামতে কোনো মানুষ তার সাথে দেখা করে নি।
কেন?
এই প্রজেক্টটি পুরোপুরি পরিচালিত হয় আধা জৈবিক কিছু প্রাণী, কিছু রোবট, কিছু পরামানব–মানবী এবং কিছু যন্ত্র দিয়ে। সেখানে কোনো মানুষের প্রবেশাধিকার নেই।
আমার শরীর কেন জানি শিউরে উঠল, আমি বৃদ্ধ মানুষটির দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললাম, আমি তবু সেখানে যেতে চাই।
হলোগ্রাফিক স্ক্রিনে বৃদ্ধ মানুষটি দীর্ঘসময় আমার দিকে তাকিয়ে রইল, বলল, আমি যদি তোমাকে এই মুহূর্তে হত্যা করার নির্দেশ দিয়ে অতিমানবীদের একে একে ধ্বংস করার প্রক্রিয়াটি চালু রাখি?
তুমি সেটা করবে না।
কেন?
তোমরা যে অতিমানবীকে হত্যা করার জন্য আমাকে পাঠিয়েছিলে, সেই লাইনার সাথে আমার পরিচয় হয়েছে। আমি তার শরীর থেকে রক্ত নিয়েছি, টিস্যু নিয়েছি। সেই রক্ত, টিস্যু, জীবন্ত কোষ বায়োজ্জ্যাকেটে করে হিম নগরীতে পাঠিয়েছি, পৃথিবীর নানা প্রান্তে জমা রেখেছি।
না– বৃদ্ধ মানুষটি চিৎকার করে বলল, না!
হ্যাঁ। তথ্যকেন্দ্রে আমি সেই তথ্যও জমা রেখেছি– বিশ্বাস না হলে খোঁজ নিতে পার। আমার মৃত্যু হলে সেই তথ্য প্রকাশিত হবে। পৃথিবীর অর্থলোলুপ ব্যবসায়ীরা সেই টিস্যু, সেই জীবন্ত কোষ থেকে ৪৬টি ক্রোমোজম নিয়ে অতিমানবীর ক্লোন তৈরি করবে। কয়েকটি অতিমানবীর জায়গায় পৃথিবীতে থাকবে কয়েক সহস্র অতিমানবী। সেখান থেকে কয়েক লক্ষ। তোমরা কত জনকে হত্যা করবে?
না। না না। তুমি জান না তুমি কী ভয়ঙ্কর খেলায় হাত দিয়েছ। বৃদ্ধ মানুষটি চিৎকার করে বলল, তুমি উন্মাদ। তুমি বদ্ধ উন্মাদ।
সম্ভবত। কিন্তু একটা জিনিস জান?
কী?
আমি খুব সাধারণ একজন মানুষ ছিলাম। তোমরা আমাকে বদ্ধ উন্মাদ করে তুলেছ। আর মজা কী জান? বদ্ধ উন্মাদ হয়ে আমার কিন্তু ভালো লাগছে।
বৃদ্ধ মানুষটি শীতল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, তুমি আমার কাছে কী চাও?
আমি একটি নিশ্বাস ফেলে বললাম, তুমি কি আমাকে প্রজেক্ট অতিমানবীর মহাপরিচালকের সাথে দেখা করিয়ে দেবে?
বৃদ্ধ মানুষটি খানিকক্ষণ আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইল, তার পর অবিশ্বাসের ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে বলল, ঠিক আছে আমি চেষ্টা করব।
.
ভাসমান যানটি আমাকে চত্বরের শক্ত কংক্রিটে নামিয়ে দিয়ে এইমাত্র আবার আকাশে উঠে গেছে। আমি যতক্ষণ সম্ভব ভাসমান যানটির দিকে তাকিয়ে রইলাম। লাল আলো জ্বলতে জ্বলতে এবং নিভতে নিভতে ভাসমান যানটি দূরে মিলিয়ে গেল। আমি সামনে তাকালাম, আমাকে বলে দেওয়া না হলে কখনোই বিশ্বাস করতাম না যে এই প্রায় বিধ্বস্ত দালানটি প্রজেক্ট অতিমানবীর মূল ল্যাবরেটরি। দূরে শক্ত পাথরের দেয়াল দিয়ে ঘেরা, উপরে নিশ্চয়ই শক্তিশালী ইনফ্রারেড আলোর অদৃশ্য প্রহরা। ভিতরে অবিন্যস্ত গাছপালা এবং ঝোঁপঝাড়, কংক্রিটের চত্বর থেকে ল্যাবরেটরি পর্যন্ত নুড়ি পাথর ছড়ানো রাস্তা। আমি হেঁটে হেঁটে ল্যাবরেটরির সামনে দাঁড়ালাম। কোথায় দরজা হতে পারে সেটা নিয়ে চিন্তা করছিলাম ঠিক তখন হঠাৎ ঘরঘর শব্দ করে চতুষ্কোণ একটা দরজা খুলে গেল, মনে হচ্ছে আমার জন্য কেউ একজন সেখানে অপেক্ষা করে আছে। আমি একটা নিশ্বাস ফেলে ভিতরে পা দিলাম, নিজের অজান্তেই বুকের ভিতরে হঠাৎ আতঙ্কের একটা শিহরন বয়ে গেল।
দরজার পাশে একজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে, মানুষটিকে দেখে আমি চমকে উঠলাম, তার চারটি হাত। দুই হাতে সে শক্ত করে একটি বীভৎস অস্ত্র ধরে আছে, অন্য দুই হাতে আমাকে জাপটে ধরে আমি কিছু বোঝার আগেই আমার দুই হাতে একটা হাতকড়া লাগিয়ে দিল।
আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে মানুষটির দিকে তাকালাম, সে খসখসে গলায় বলল, নিরাপত্তার খাতিরে তোমার হাতে হাতকড়া লাগাচ্ছি, তার বেশি কিছু নয়।
আমি মানুষটির দিকে তাকিয়ে রইলাম, একজন মানুষের চারটি হাত দেখে নিজের অজান্তেই সারা শরীর কাঁটা দিয়ে ওঠে। কিন্তু যে জিনিসটি আমাকে বিস্মিত করল তার সাথে এই মানুষটির বিচিত্র দেহ–গঠনের কোনো সম্পর্ক নেই। আমার মুখে এবং হাতের মাংসপেশিতে ভয়াবহ বিস্ফোরক লাগানো রয়েছে, ইচ্ছে করলেই আমি কঠোর নিরাপত্তাকে পুরোপুরি উপেক্ষা করে এখানে ভয়ঙ্কর আঘাত হানতে পারি। প্রজেক্ট অতিমানবীর ল্যাবরেটরির এই প্রহরী সেই কথা জানে না প্রতিরক্ষা দপ্তর এই তথ্যটি জানার পরেও এদেরকে সে বিষয়ে সতর্ক করে দেয় নি ইচ্ছে করেই দেয় নি যার অর্থ এই ভয়ঙ্কর প্রজেক্টের জন্য প্রতিরক্ষা দপ্তরের কারো মনে এতটুকু সহানুভূতি নেই। কেন নেই?