বুলবুল নিজের পায়ের ওপর দাঁড়ানোর চেষ্টা করল, হুঁমড়ি খেয়ে পড়ে যাচ্ছিল কোনোমতে মিথিলাকে ধরে সামলে নেয়। নিজের পাখা দুটো এবার বিস্তৃত করে দেখে নেয় তারপর সে মিথিলার দিকে তাকালো, বলল, ঠিক আছে মিথিলা।।
মিথিলা তার দুই হাত এগিয়ে দিয়ে বুলবুলকে গভীর মমতায় আলিঙ্গন করে ছেড়ে দিয়ে বলল, যাও! তুমি উড়ে যাও।
বুলবুল কিছুক্ষণ নিষ্পলক দৃষ্টিতে মিথিলার দিকে তাকিয়ে থাকে। খুব ধীরে ধীরে তার দুই চোখ পানিতে ভরে ওঠে। সে ফিসফিস করে বলল, মিথিলা।
বল।
তুমি আমাকে মনে রেখো।
মনে রাখব। আমি তোমাকে মনে রখব।
আমি তাহলে যাই?
যাই বলতে হয় না। বলতে হয় আসি।
আমি তাহলে আসি?
আস বুলবুল।
বুলবুল তখন এগিয়ে যেতে থাকে। খুব ধীরে ধীরে তার দুই পাখা বিস্তৃত করে ডানা ঝাঁপটিয়ে সে উপরে উঠে যায়। মিথিলা দেখতে পায় বিশাল শক্তিশালী দুটি পাখা দুর্বল ক্ষতবিক্ষত দেহটাকে উপরে তুলে নেয়ার চেষ্টা করছে, অনেক কষ্টে সে উড়ে যাচ্ছে, উড়ে যেতে যেতে সে একবার পেছনে ফিরে তাকালো।
মিথিলা তার মুখে অনেক কষ্টে একটা হাসি ধরে রাখে। হাসি হাসি মুখে সে বুলবুলের দিকে তাকিয়ে তার হাত নাড়ে। বুলবুল আবার মাথা ঘুরিয়ে নিল, তারপর ডানা ঝাঁপটিয়ে উড়ে যেতে লাগল। খুব ধীরে ধীরে সে দূরে সরে যেতে থাকে, মিলিয়ে যেতে থাকে।
পুবের আকাশে তখন সূর্য উঠছে, দেখে মনে হয় বুলবুল বুঝি ডানা। ঝাঁপটিয়ে ঠিক সূর্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ইকারাসের মতো।
মিথিলা তখন তার দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে আকুল হয়ে কাঁদল।
শেষ কথা
মিথিলা তার শিশু সন্তানটিকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, ঘুমাও বাবা আর কত দুষ্টুমি করবে?
আগে তুমি গল্প বল, তাহলে ঘুমাব।
মিথিলা তখন তাকে ডেডিলাসের পুত্র ইকারাসের গল্প বলল। ইকারাস তার ডানা ঝাঁপটিয়ে কীভাবে সূর্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল সেই গল্পটুকু বলার সময় মিথিলা কেমন যেন আনমনা হয়ে যায়। তার শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মোছে।
আম্মু কেন এটা করে মিথিলার শিশুপুত্র বুলবুল সেটা কখনো বুঝতে পারে না। বুলবুল শুধু একটা জিনিস জানে–তার আম্মু তাকে খুব ভালোবাসে, কারণে-অকারণে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলে, বুলবুল। আমার সোনা বুলবুল!
———-