কী?
আমার মনে হচ্ছে আমার কী সৌভাগ্য যে তোমার সাথে দেখা হলো, এখন আমি সারাজীবন তোমার কথা মনে রাখতে পারব। বুলবুল আস্তে আস্তে বলল, আমি যখন আকাশে উড়ব তখন ভাবব একদিন তোমাকে নিয়ে আমি আকাশে উড়েছিলাম।
মিথিলা ফিসফিস করে বলল, আমার অসিলে চলে যেতে ইচ্ছে করছে না।
বুলবুল কথাটির কোনো উত্তর দিল না, একটু পরে বলল, তুমি কি আজকে আবার উড়তে চাও?
তোমার কোনো কষ্ট হবে না তো?
না। কোনো কষ্ট হবে না।
তাহলে চল যাই।
কিছুক্ষণের ভেতর বুলবুল মিথিলাকে নিয়ে আকাশে উড়ে গেল। ঠিক তখন একজন ডক্টর আশরাফের কেবিনে জোরে জোরে ধাক্কা দিচ্ছিল। ডক্টর আশরাফ ঘুম থেকে উঠে ভয় পাওয়া গলায় বলল, কী হয়েছে?
আপনি বিশ্বাস করবেন না স্যার। নিজের চোখে দেখলেও বিশ্বাস করবেন না।
কী হয়েছে?
বিশাল বড় একটা পাখির পালক কোথা থেকে এসেছে আমি জানি।
কোথা থেকে।
একজন মানুষ, তার পাখির মতোন পাখা।
ডক্টর আশরাফ বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে রইল। বলল, কী বলছ?
বলছি, একজন মানুষ তার পাখির মতো পাখা।
সে কোথায়?
মিথিলাকে নিয়ে আকাশে উড়তে গেছে। একটু পরে আসবে।
মি-মিথিলাকে নিয়ে? মিথিলাকে?
হ্যাঁ স্যার। মানুষটা মিথিলাকে চিনে, দুজন খুব বন্ধু। আমি স্যার তাদের কথা শুনেছি।
ডক্টর আশরাফ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, সবাইকে ডেকে তোলে। এই ক্রিয়েচারটাকে ধরতে হবে। মনে হয় এটা হবে। বায়োলজিক্যাল সায়েন্সের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার।
ঘণ্টা দুয়েক পর যখন মিথিলাকে পিঠে নিয়ে বুলবুল লঞ্চের ছাদে নেমে এল তারা ঘুণাক্ষরেও কল্পনা করতে পারেনি প্রায় দুই ডজন মানুষ তাদের জন্যে অপেক্ষা করছে। মিথিলা তার পিঠ থেকে নেমে যখন বুলবুলের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে তখন এক সাথে সবাই তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল।
মুহূর্তের মাঝেই বুলবুল বুঝে যায় কী হচ্ছে, সে তার শক্তিশালী পাখা। দিয়ে আঘাত করে কয়েকজনকে নিচে ফেলে দেয়। পা দিয়ে ধাক্কা দিয়ে সে উড়ে যাওয়ার চেষ্টা করল কিন্তু পারল না, কেউ একজন একটা লোহার রড দিয়ে তার মাথায় আঘাত করেছে, জ্ঞান হারিয়ে অচেতন হওয়ার আগে সে। শুনতে পেল মিথিলা তার সমস্ত শক্তি দিয়ে চিৎকার করে বলছে, না! না! না!
মিথিলাকে ডক্টর আশরাফ ধরে রাখতে পারছে না, আরো দুজন মিলে মিথিলাকে আটকে রেখেছে। সে হিস্টিরিয়াগ্রস্ত মানুষের মতো চিৎকার করে কাঁদছে, তার সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে।
৩.৪ বুলবুলকে পিছমোড়া করে বাঁধা হয়েছে
বুলবুলকে পিছমোড়া করে বাঁধা হয়েছে। শুধু হাত বেঁধেই কেউ নিশ্চিত হতে পারেনি, তাই পা দুটিকেও শক্ত করে বাঁধা হয়েছে। লঞ্চের ছাদে রেলিংয়ের সাথে তার শরীরটা বেঁধে রাখা হয়েছে। তার সারা দেহ রক্তাক্ত ও ক্ষতবিক্ষত। সে জানত তাকে যদি ধরে ফেলতে পারে সেটাই হবে তার শেষ, তাই সে প্রাণপণে নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টা করছিল, এতগুলো মানুষের সাথে সে একা কিছুতেই পেরে ওঠেনি। শেষ মুহূর্তে একজন লোহার বউ দিয়ে মাথায় মেরে বসেছে, তখন সে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। তা না হলে সে হয়তো কোনোভাবে নিজেকে মুক্ত করে উড়ে যেতে পারত। খুব ধীরে ধীরে তার জ্ঞান ফিরে এসেছে, মাথায় প্রচণ্ড ব্যথা। তার চারপাশে কী ঘটছে সে ভালো করে বুঝতে পারছে না। তার সামনে অনেক মানুষ, তাকে অবাক হয়ে দেখছে, এটুকুই সে বুঝতে পারে। শুনতে পেল কেউ একজন বলল, জ্ঞান ফিরেছে! স্যারকে ডাকো। স্যারকে ডাকো।
কিছুক্ষণের মাঝেই ডক্টর আশরাফ লঞ্চের ছাদে চলে এল। বুলবুলের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে সে অবাক হয়ে তার দিকে তাকালো। তাকে ডাকল, এই।
বুলবুল চোখ খুলে তাকাল, কোনো কথা বলল না। ডক্টর আশরাফ জিজ্ঞেস করল, তুমি কোথা থেকে এসেছ?
বুলবুল কোনো কথা বলল না। তার কথা বলার ইচ্ছে নেই, তা ছাড়া সে কোথা থেকে এসেছে সেটা সে কাউকে কেমন করে বোঝাবে? ডক্টর আশরাফ আবার জিজ্ঞেস করল, তুমি কোথা থেকে এসেছ?
বুলবুল কোনো উত্তর দিল না। ডক্টর আশরাফ আবার জিজ্ঞেস করল, তুমি কী?
বুলবুল কষ্ট করে চোখ তুলে ডক্টর আশরাফের দিকে তাকালো, তারপর ফিসফিস করে বলল, আমি জানি না। আপনি বলবেন আমি কী?
ডক্টর আশরাফ কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে বুলবুলের দিকে তাকিয়ে থাকে, তারপর উঠে দাঁড়ায়। যারা তার আশপাশে ছিল তাদের লক্ষ করে বলল, এই ক্রিয়েচারটাকে একটু পরীক্ষা করা দরকার। মেডিকেল পরীক্ষা।
একজন একটু এগিয়ে এসে বলল, করেছি স্যার।
কী দেখেছ?
অনেক ব্লাড লস হয়েছে। মানুষ হলে বলতাম রক্ত দিতে হবে। কিন্তু এটা তো মানুষ না, কী বলব বুঝতে পারছি না। কী ট্রিটমেন্ট করব বুঝতে পারছি না।
বেঁচে থাকবে?
জানি না স্যার। মাথার পেছনে রড দিয়ে মারা হয়েছে, ব্রেন ইনজুরি হয়েছে কি না বুঝতে পারছি না। মানুষ হলে এতক্ষণে মরে যেত।
ডক্টর আশরাফ একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, এই প্রাণীটা মানুষের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রাণী। চেষ্টা করো এটাকে বাঁচিয়ে রাখতে।
চেষ্টা করব স্যার।
তবে শেষ পর্যন্ত অবশ্য বেঁচে না থাকলে ভালো।
কেন স্যার?
প্রাণীটার মানুষ অংশটা খুব প্রবল। আমার মেয়েকে মুগ্ধ করে ফেলেছে, বুঝতে পারছ না? যদি তার কথাবার্তা চিন্তাভাবনা মিডিয়াতে চলে আসে সায়েন্টিফিক কমিউনিটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সবাই তখন এটার ইমোশনাল অংশটা নিয়ে কথা বলবে। সায়েন্টিফিক অংশটা চাপা পড়ে যাবে।