কীভাবে আটকাবে?
আমাদের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রকে শক্তিশালী লেজার৩৭ রশ্মি হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
হ্যাঁ, ত্রালুস মাথা নাড়ল, মেগাওয়াট শক্তি বের হয়।
মনে হয় কাজ চালানোর জন্য যথেষ্ট। আমরা প্রাণীটার তিন দিকে দাঁড়াব, আমি সামনে, ত্রালুস বামে এবং মান্তি নিচে। আমি সামনে থেকে লেজার রশ্মি দিয়ে প্রাণীটাকে গেঁথে ফেলব। খুব সূক্ষ্ম রশ্মি, সম্ভবত প্রাণীটার বড় কোনো ক্ষতি হবে না। ঠিক একই সময় ত্রালুস বাম থেকে ডান দিকে লেজার রশ্মি দিয়ে গেঁথে ফেলবে, শুমান্তি নিচে থেকে উপরে। একই সাথে তিনটি ভিন্ন মাত্রা থেকে আটকে ফেললে প্রাণীটা এই ত্রিমাত্রিক জগতে আটকা পড়ে যাবে, এখান থেকে আর বের হতে পারবে না। লেজার রশ্মিটুকু বন্ধ করবে না, এটাকে জ্বালিয়ে রাখবে।
কিন্তু বেশিক্ষণ তো রাখা যাবে না। একটানা খুব বেশি হলে পনের মিনিট।
যতক্ষণ পারা যায় ততক্ষণই রাখ। কিছু করার নেই। দেরি করা যাবে না, তোমরা নিজেদের জায়গায় যাও, এই আমাদের শেষ আশা।
নিশিকে এতক্ষণে চতুর্মাত্রিক জগতে নিয়ে গেছে, আমি নিশ্চিত সে এখানে নেই। যাও–দেরি কোরো না।
ত্রালুস অস্ত্রটি লেজার রশ্মির জন্য প্রস্তুত করতে করতে বাম দিকে সরে গেল। শুমান্তি প্রাণীটির নিচে গিয়ে দাঁড়াল। ইরন অস্ত্রটিকে পূর্ণ শক্তির জন্য প্রোগ্রাম করে ট্রিগারে হাত দেয়। তারপর প্রাণীটির দিকে তাক করে চিৎকার করে বলল, টানো ট্রিগার।
তিনটি ভিন্ন ভিন্ন দিক থেকে শক্তিশালী লেজার রশ্মির আলো ঝলকে উঠল, প্রাণীটি মুহূর্তের জন্য ভয়ঙ্করভাবে কেঁপে উঠল, হঠাৎ করে মনে হল পায়ের নিচে মাটি বুঝি থরথর করে কেঁপে উঠেছে।
প্রাণীটির শরীর থেকে হঠাৎ সহস্র ওঁড়ের মতো জিনিস বের হয়ে কিলবিল করতে লাগল, দেখে মনে হল তাদেরকে ধরার চেষ্টা করছে, কিন্তু তাদেরকে নাগালে না পেয়ে ক্রুদ্ধ আক্রোশে ছটফট করতে থাকে। ইরন, ত্রাস আর শুমান্তি নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে তীব্র লেজার রশ্মির বেগুনি আলো দিয়ে কদাকার প্রাণীটিকে শূন্যে আটকে রাখল।
ইরন বিস্ফারিত চোখে প্রাণীটির দিকে তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ করে এই প্রথমবারের মতো প্রাণীটির আকৃতির পরিবর্তন হচ্ছে না, সত্যি সত্যি এটি এই জগতে আটকা পড়ে গেছে। ইরন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারে না, ত্রিমাত্রিক জগতের প্রাণী হয়ে সত্যি তারা চতুর্মাত্রিক জগতের একটি প্রাণীকে আটকে ফেলতে পেরেছে। প্রাণীটা নিজের শরীরকে দ্বিখণ্ডিত না করে এখন আর চতুর্মাত্রিক জগতে যেতে পারছে না। যতক্ষণ লেজার রশ্মি প্রাণীটির ভিতর দিয়ে যাবে প্রাণীটি এখান থেকে নড়তে পারবে না। তাদের লেজার রশ্মি। আর মিনিট পনের পর্যন্ত থাকবে তার ভিতরে কিছু একটা করতে থাকবে। শুধু তাই নয় ক্রুদ্ধ প্রাণীটি নিশ্চয়ই নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করবে। চতুর্মাত্রিক জগৎ থেকে তার অন্য অংশ নিশ্চয়ই তাদের আক্রমণ করার চেষ্টা করবে। সেই আক্রমণ থেকেও তাদের নিজেদের রক্ষা করতে হবে। এই মুহূর্তে তিন জন তিনটি অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে আছে, নিজের জায়গা থেকে কেউই নড়তে পারছে না। ইরন গলা উঁচিয়ে ত্ৰালুস আর শুমান্তিকে ডেকে বলল, তোমরা কোনো অবস্থাতেই লেজার রশ্মি বন্ধ কোরো না, যতক্ষণ এই রশি বের হতে থাকবে ততক্ষণ প্রাণীটা আটকে থাকবে।
ঠিক আছে।
আমি আমার স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রটা এই পাথরের উপর রাখছি। এখান থেকেই লেজার রশি তাক করে রাখব।
কেন?
প্রাণীটা যদি চতুর্মাত্রিক জগৎ থেকে আক্রমণ করে তা হলে পাল্টা আক্রমণ করা দরকার।
কী দিয়ে আক্রমণ করবে?
দেখি কী আছে।
ইরন লেজার রশ্মিটুকু চালু রেখে খুব সাবধানে অস্ত্রটি একটি পাথরের উপর নামিয়ে রেখে আকাশের দিকে তাকাল। বহুদূরে আলোর বিন্দু ফুটে উঠছে, তা হলে কি চতুর্মাত্রিক প্রাণী তাদের দিকে আসছে? ইরন কাছাকাছি ভেসে থাকা জেট প্যাকটির দিকে ছুটে গেল, উপরে কিছু দ্বিতীয় মাত্রার বিস্ফোরক, মাঝারি পাল্লার অস্ত্র, ব্যবহারী যন্ত্রপাতি এবং একটি চতুষ্কোণ বাক্স। ইরন চতুষ্কোণ বাক্সটির কাছে গিয়ে সেটি চিনতে পারে, এটি এন্টি ম্যাটারের বাক্স। এখানে যে পরিমাণ এন্টি ম্যাটার রয়েছে সেটি দিয়ে এই গ্রহের অর্ধেকটুকু উড়িয়ে দেওয়া যাবে। ইরন একটি নিশ্বাস ফেলে, চতুর্মাত্রিক প্রাণীকে জানাতে হবে তারা প্রয়োজন হলে এই গ্রহটির অর্ধেকটুকু উড়িয়ে দেবে, লেজার রশ্মি দিয়ে বেঁধে রাখা প্রাণীটার অংশটুকুসহ।
ইরন মাঝারি পাল্লার একটি অস্ত্র হাতে তুলে নিল। কিছু বিস্ফোরক তুলে নিতে গিয়ে থেমে গিয়ে সে পুরো জেট প্যাকটি টেনে নিয়ে আসে। ত্ৰালুস তার লেজার রশিটুকু স্থিরভাবে। ধরে রাখার চেষ্টা করতে করতে চোখের কোনা দিয়ে ইরনের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, জেট প্যাক দিয়ে কী করবে?
এখানে এন্টি ম্যাটারের বাক্সটা রয়েছে।
কী করবে এন্টি ম্যাটার দিয়ে?
এই গ্রহটার অর্ধেকটুকু উড়িয়ে দেব।
শুমান্তি কঁপা গলায় জিজ্ঞেস করল, উড়িয়ে দেবে?
হ্যাঁ।
উড়িয়ে দেবার ভয় দেখাবে, না সত্যি সত্যি উড়িয়ে দেবে?
সত্যি সত্যি উড়িয়ে দেব। এই চতুর্মাত্রিক প্রাণীটা যদি চায় শুধুমাত্র তা হলেই সে। আমাদের থামাতে পারবে।
অর্থাৎ নিশিকে যদি ফিরিয়ে দেয়?