হ্যাঁ।
কেন এসেছ?
নিশিকে নিতে।
নিশিকে নিতে? কিন্তু তোমরা তো নিশিকে নিতে পারবে না।
কেন পারব না?
কারণ আমি নিশিকে ওদের দিয়ে দিয়েছি। ওরা এক্ষুনি ওকে নিতে আসবে।
তুমি জান ওরা কারা? তুমি কি ওদের দেখেছ?
না। আমি দেখি নি।
ইরন কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে বলল, আমরা দেখেছি, তুমি নিশিকে ওদের দিতে পারবে না।
কীশা কোনো কথা না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল।
ইরন গলার স্বর উঁচু করে নিশিকে ডাকল। বলল, নিশি তুমি আমার কাছে চলে এস। তিন দিক থেকে তিন জন কীশার দিকে অস্ত্র তাক করে আছে। সে তোমাকে কিছু করার চেষ্টা করলেই তাকে শেষ করে দেবে।
নিশি সোজা হয়ে বসল, দূরে দাঁড়িয়ে থাকা ইরনের দিকে তাকিয়ে বলল, কিন্তু আমি কেমন করে আসব? এই দেখ আমাকে বেঁধে রেখেছে।
নিশি দেখাল তার স্পেসস্ট থেকে শক্ত ধাতব শেকল বের হয়ে এসেছে। শেকল দিয়ে সে চতুষ্কোণ একটা বাক্সের সাথে বাধা।
ইরন সাবধানে আরো কয়েক পা এগিয়ে এসে বলল, ওটা কিসের বাক্স? ওর ভিতরে কী আছে?
নিশি মাথা নাড়ল, বলল, আমি জানি না।
ইরন আরো কয়েক পা এগিয়ে যায়। কীশার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, কীশা।
বল।
এই বাক্সটি কী?
আমি ঠিক জানি না।
এই বাক্সটির সাথে নিশিকে বেঁধে রেখেছ কেন?
আমার মনে হয় এখান থেকে কোনো ধরনের সঙ্কেত বের হচ্ছে। ওরা এই সঙ্কেত থেকে বুঝতে পারবে নিশি কোথায়।
ও। ইরন মাথা নেড়ে বলল, নিশি তুমি বাক্সটি থেকে যতটুকু সম্ভব দূরে সরে দাঁড়াও।
নিশি ভয় পাওয়া গলায় বলল, কেন?
আমি গুলি করে এই বাক্সটি ধ্বংস করে দেব।
কীশা হাসির মতো শব্দ করে বলল, না ইরন, তুমি সেটা করবে না।
কেন?
কারণ আমি তোমাকে করতে দেব না। কীশা তার কথা শেষ করার আগেই হঠাৎ করে নিশিকে জাপটে ধরে চতুষ্কোণ বাক্সটার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। নিশিকে বাক্সটার উপর চেপে রেখে বলল, আমাকে তোমরা ক্ষমা করে দিও। আমাকে যেভাবে প্রোগ্রাম করা হয়েছে আমি তার বাইরে কিছু করতে পারব না।
কীশা ইরন চিৎকার করে বলল, কীশা—
আমি দুঃখিত ইরন। ঐ দেখ ওরা আসছে।
ইরন আকাশের দিকে তাকাল, আকাশের নানা জায়গায় বিদ্যুতের ঝলকানির মতো আলো জ্বলছে। চারদিক থেকে কুৎসিত মাংসপিণ্ডের মতো কিছু একটা কিলবিল করে আবার অদৃশ্য হয়ে যেতে শুরু করে।
নিশি চিৎকার করে ওঠে আতঙ্কে, কীশা তাকে শক্ত করে ধরে রেখে শান্ত গলায় বলে, আর কয়েক সেকেন্ড নিশি। আর মাত্র কয়েক সেকেন্ড।
ইরন শুনতে পেল ত্ৰালুস এবং শুমান্তি ছুটে আসছে। এলুস অস্ত্র উদ্যত করে বলল, সরে যাও কীশা, সরে যাও। ছেড়ে দাও নিশিকে। ছেড়ে দাও।
কীশা ত্রালুসের কথা শুনতে পেল বলে মনে হল না। নিশিকে চেপে ধরে রেখে নিচু গলায় বলল, নিশি লক্ষ্মী মেয়ে। তুমি ছটফট কোরো না, চুপ করে শুয়ে থাক। তারা আমাদের খুঁজে পেয়েছে। ঐ দেখ তারা আসছে।
নিশি আতঙ্কে একটা আর্তচিৎকার করে নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টা করে, একটি ঝটকা দিয়ে উঠে বসে, ত্রালুস এবং শুমান্তি কীশার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে টেনে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে, ঠিক তখন খুব কাছে হঠাৎ করে একটা তীব্র বিদ্যুতের ঝলকানি দেখা গেল, কালো ধোঁয়ায় চারদিক ঢেকে যায় এবং হঠাৎ করে কীশা একটা আর্তনাদ করে ওঠে।
ত্রালুস এবং শুমান্তি চিৎকার করে পিছনে সরে এল, কীশার স্পেসস্যুট ভেঙে তার ভিতর থেকে কুৎসিত থলথলে মাংসপিণ্ডের মতো কিছু একটা বের হয়ে আসছে। ইরন বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে রইল–নিশিকে নেবার জন্য চতুর্মাত্রিক প্রাণীটি যেখানে হাজির হয়েছে ঠিক সেখানে কীশা ছিল, প্রাণীটি নিশিকে নিতে পারে নি কিন্তু চেষ্টা করতে গিয়ে কীশার শরীরের ভিতর দিয়েই বের হয়ে এসেছে। ইরন অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে কীশার দিকে তাকিয়ে রইল, অবাক হয়ে দেখল, তার দেহ ছিন্নভিন্ন করে ভিতর থেকে থলথলে মাংসপিণ্ডের মতো কিছু একটা বের হয়ে আসছে। কীশা থরথর করে কাঁপতে থাকে, তার মুখ যন্ত্রণায় বিবর্ণ হয়ে উঠছে–দাতে দাঁত চেপে সে ভয়ঙ্কর আর্তনাদ করে ওঠে।
ত্রালুস আর সহ্য করতে পারল না, অস্ত্রটি উপরে তুলে থলথলে মাংসপিণ্ডের মতো জিনিসটা লক্ষ্য করে গুলি করে বসে। প্রচণ্ড একটা বিস্ফোরণের শব্দ হল, কালো ধোঁয়ায় চারদিক ঢেকে যায়। এক ধরনের জান্তব শব্দ শুনতে পেল সবাই, থলথলে জিনিসটি জান্তব। এক ধরনের শব্দ করতে থাকে, ভিতর থেকে সাদা কষের মতো আঠালো এক ধরনের তরল ফিনকি দিয়ে বের হতে শুরু করে। মাংসপিণ্ডটি হঠাৎ বিশাল বড় হয়ে যায়, সেখান থেকে। অসংখ্য শুড়ের মতো জিনিস বের হয়ে আসে। সেগুলো কিলবিল করতে করতে হঠাৎ করে পুরো জিনিসটি অদৃশ্য হয়ে গেল।
পুরো ব্যাপারটি বুঝতেই তাদের কয়েক মুহূর্ত সময় লেগে যায়। যখন বুঝতে পারল তখন তারা দৌড়ে কীশার কাছে গেল, তার শরীর এবং স্পেসস্যুটটা দেখে মনে হয় তার শরীরের ভিতরে একটা বিস্ফোরণ ঘটেছে। ইরন কীশার হাত ধরে দেখল সেটি নিশ্চল, দেহে জীবনের কোনো চিহ্ন নেই। শুমান্তি ফ্যাকাসে মুখে বলল, কী হয়েছে? কী হয়েছে। কীশার?
আমার ধারণা একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে। নিশিকে নেওয়ার জন্য প্রাণীটা আসছিল, ঠিক যেখানে বের হয়েছে সেখানে কীশা ছিল। হুটোপুটি হওয়ার কারণে প্রাণীটা ওর শরীরের ভিতর দিয়ে বের হয়ে এসেছে।