শুমান্তি মাথা নাড়ল। বলল, একেবারেই নেই। সত্যি কথা বলতে কী তুমি যদি অনুমতি দাও তা হলে আমি আর ত্রাস নিশিকে উদ্ধার করার জন্য এই গ্রহটাতে যেতে চাই।
ইরন কয়েক মুহূর্ত ওদের দিকে তাকিয়ে থেকে একটা লম্বা নিশ্বাস ফেলে বলল, আমি যদি তোমাদের সাথে যেতে চাই আমাকে নেবে?
শুমান্তি হেসে বলল, কেন নেব না? নিশ্চয়ই নেব।
ত্রালুস বলল, আমি জানতাম তুমিও নিশ্চয়ই আমাদের সাথে যাবে।
ইরন উঠে দাঁড়িয়ে বড় স্ক্রিনটা চালু করে দিয়ে বলল, দেখা যাক স্কাউটশিপটা কোথায়?
খানিকক্ষণ চেষ্টা করতেই স্কাউটশিপটাকে খুঁজে পাওয়া গেল। যোগাযোগ মডিউল স্পর্শ করতেই স্কাউটশিপের ভেতর কীশাকে দেখা গেল, পিছনে জানালায় মাথা রেখে নিশি বসে আছে। তার কিশোরী–মুখে এক অসহায় বিষণ্ণতা।
যোগাযোগ মডিউলের শব্দ শুনে কীশা ঘুরে তাকাল, ইরনের ভুলও হতে পারে কিন্তু মনে হল কীশার চেহারায় এক ধরনের অমানবিক যান্ত্রিক ছাপ চলে এসেছে। সে এক ধরনের নিস্পৃহ গলায় বলল, কে?
ইরন স্ক্রিনের সামনে দাঁড়িয়ে বলল, আমি। ইরন।
কী চাও ইরন?
আমি নিশির সাথে একটু কথা বলতে চাই।
কী বলবে তাকে?
তুমিও শুনতে পাবে।
ইরন নিশিকে ডাকল, নিশি।
নিশি মাথা তুলে তাকাল, কিছু বলল না।
নিশি, আমরা তোমাকে একটা জিনিস বলতে ভুলে গেছি।
কী জিনিস?
আমরা তোমাকে উদ্ধার করে নিতে আসছি। কীশা তোমাকে সাহায্য করতে পারছে কারণ সে রোবট। আমরা পারব।
সত্যি? নিশির চোখমুখ হঠাৎ আনন্দে ঝলমল করে উঠল।
হ্যাঁ। তুমি চিন্তা কোরো না নিশি। আমরা আসছি।
ইরন আরো কিছু একটা বলতে চাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। ইরন একটা নিশ্বাস ফেলে ত্রাস এবং শুমান্তির দিকে তাকাল, বলল, এবারে বল আমরা কী করব?
ত্রালুস হেসে বলল, আমরা তো কিছু জানি না। কী করব সেটা আমরা তোমার মুখেই শুনতে চাই।
২.৪ স্ক্রিনের সামনে দাঁড়িয়ে
পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের বিশাল স্ক্রিনে কিছু নেই। স্ক্রিনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বৃদ্ধ মানুষটি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে। সে তার বুকের মাঝে আটকে থাকা একটি নিশ্বাস বের করে দিয়ে কাঁপা গলায় বলল, কতক্ষণ হয়েছে?
মধ্যবয়স্ক মানুষটি বলল, সাত সেকেন্ড।
সাত সেকেন্ড? সাত সেকেন্ড হয়ে গেছে?
হ্যাঁ।
তা হলে এখনো বের হয়ে আসছে না কেন?
আমি জানি না।
প্রজেক্টটা কি বৃথা গেল?
আমি জানি না।
এতদিনের পরিকল্পনা, এত পরিশ্রম, এত গোপনীয়তা, এত অর্থ ব্যয়–তারপর প্রজেক্টটা বৃথা হয়ে গেল?
মধ্যবয়স্ক মানুষটি বিরক্ত হয়ে বলল, আহ! তুমি দশ সেকেন্ড চুপ করে থাকতে পার?
বৃদ্ধ মানুষটি মাথা নাড়ল, অধৈর্য হয়ে বলল, না পারি না। কখনো কখনো পারি না।
৩.১ স্কাউটশিপের নিয়ন্ত্রণ প্যানেলের সামনে
স্কাউটশিপের নিয়ন্ত্রণ প্যানেলের সামনে ত্রালুস চিন্তিত মুখে বসে আছে। মহাকাশযানে সব মিলিয়ে তিনটি স্কাউটশিপ, তার মাঝে একটি কীশা নিয়ে গেছে। এটি দ্বিতীয় স্কাউটশিপ, প্রথমটির মতো এটি অত্যাধুনিক নয়–ত্রালুস সেটি নিয়ে চিন্তিত। অনেক ক্ষেত্রেই এটা চালানোর জন্য নিজের বিচারবুদ্ধি ব্যবহার করতে হয়। তৃতীয় স্কাউটশিপটি একেবারেই দায়সারা। সেটি যদি কখনো ব্যবহার করতে হয়, সফল উড্ডয়নের সম্ভাবনা শূন্যের কাছাকাছি।
পিছনে নিরাপত্তা মডিউলটি নিয়ে শুমান্তি বসেছিল, সে ত্রাসের চিন্তিত মুখ দেখে বলল, কী হল ত্ৰালুস? কোনো সমস্যা?
আলাদাভাবে নতুন কোনো সমস্যা নয়, পুরো ব্যাপারটি নিয়ে খানিকটা সমস্যা।
স্কাউটশিপটা চালাতে ভয় পাচ্ছ?
ভয়টা সঠিক শব্দ নয়, বলতে পার আতঙ্ক।
ইরন হেসে বলল, আমাদের এই প্রজেক্টে নতুন করে ভয় পাবার বা আতঙ্কিত হবার। কিছু নেই। মোটামুটিভাবে ধরে নাও একঘণ্টা পর নাকি দুই ঘণ্টা পর আমরা মারা পড়ব। সেটা নিয়ে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে আমার উদ্দেশ্য।
হ্যাঁ, এভাবে দেখলে পুরো ব্যাপারটা খুব সহজ হয়ে যায়।
এভাবেই দেখ।
বেশ! স্কাউটশিপে তোমাদের ভ্রমণ খুব আনন্দদায়ক হবে না আগেই বলে রাখছি।
শুমান্তি হাসিমুখে বলল, আমাদের অভিযান শুরু করার আগে কীভাবে স্কাউটশিপ চালাতে হয় তার ওপর একটি লম্বা ট্রেনিং হয়েছিল মনে আছে?
মনে আছে। তবে ট্রেনিঙে কী বলেছিল সেসব এখন আর মনে নেই।
ইরন যোগাযোগ মডিউলের বিভিন্ন সুইচ টেপাটিপি করে পরীক্ষা করতে করতে বলল, তুমি এসব নিয়ে চিন্তা না করে শুরু করে দাও। যদি সেরকম কিছু বিপদ হয় স্কাউটশিপের নিজস্ব নিয়ন্ত্ৰণ দায়িত্ব নিয়ে নেবে।
ঠিক আছে।
স্কাউটশিপে কী কী নিয়েছ?
বাইরে বের হওয়ার জন্য দ্বিতীয় মাত্রার স্পেস স্যুট, কিছু খাবার এবং পানীয় এবং অস্ত্র।
অস্ত্র?
হ্যাঁ। মহাকাশযানে যা ছিল প্রায় সব তুলে এনেছি। দরকার হলে নিনীষ স্কেলের পঞ্চম মাত্রার দুই–চারটা প্রাণীর মাথা উড়িয়ে দেব।
শুমান্তি বলল, সত্যি?
ত্রালুস হেসে বলল, আমি বলেছি দরকার হলে।
ইরন যোগাযোগ মডিউলটি সামনে রেখে নিজেকে চেয়ারের সাথে সংযুক্ত করে বলল, তুমি ধরে নিয়েছ এই গ্রহটিতে যে প্রাণীরা আছে তাদের আমাদের মতো মাথা রয়েছে?
কী করব বল! মহাকাশযানের মূল তথ্যকেন্দ্র তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখেছি, কোথাও এই প্রাণীদের সম্পর্কে এতটুকু তথ্য নেই। এরা কি বড় না ছোট, কার্বনভিত্তিক না সিলিকনভিত্তিক, ভিন্ন বা সামগ্ৰকি_