কীশা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, তা হলে আমরা এখন বৃহস্পতির ওপর আছড়ে পড়ব?
হ্যাঁ।
আমাদের হাতে কতটুকু সময় আছে?
পৃথিবীর হিসাবে দিন সাতেক। তবে শেষের অংশটুকুর কথা ভুলে যাও, প্রচণ্ড বেগে ছুটে যাব বলে আমাদের জ্ঞান থাকবে না।
মৃত্যুটি কি খুব ভয়ঙ্কর হবে?
ইরন হেসে ফেলে বলল, জানি না। আমি আগে কখনো এভাবে মারা যাই নি।
ত্রালুস এবং শুমান্তি এতক্ষণ চুপ করে দুজনের কথা শুনছিল, এবারে ত্রানুস একটু সোজা হয়ে বসে বলল, আমি একটা কথা বলতে পারি?
বল।
তোমরা আমাদের দুজনকে দায়িত্ব দিয়েছিলে মহাকাশযানে কী কী আছে খুঁজে দেখতে।
হ্যাঁ।
আমরা দেখা শুরু করেছি–পুরোটা এখনো শেষ হয় নি। আর্কাইভ ঘরে কিছু জিনিস রয়েছে যার কোনো তালিকা নেই।
ইরন অবাক হয়ে বলল, তালিকা নেই?
না। শুমান্তি মাথা নেড়ে বলল, মহাকাশযানের মূল তথ্যকেন্দ্রে কোনো তালিকা নেই।
অসম্ভব! ইরন মাথা নেড়ে বলল, মহাকাশযানের প্রত্যেকটি স্কুর পর্যন্ত তালিকা থাকতে হবে।
শুমান্তি মাথা নেড়ে বলল, আমিও তাই জানতাম। কিন্তু আমরা আর্কাইভ ঘরে গেছি সেখানে অনেকগুলো নানা আকারের বাক্স আছে, যন্ত্রপাতি আছে, কিন্তু সেগুলোতে কী আছে কোথাও বলা নেই।
কীশা মাথা নেড়ে বলল, ইরন। আমি যতই দেখছি ততই তোমার ষড়যন্ত্র থিওরিকে বিশ্বাস করতে শুরু করেছি।
ইরন টেবিলে থাবা দিয়ে বলল, ষড়ষন্ত্র নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু সেই ষড়যন্ত্রটা কী আমাদের জানা দরকার?
যারা ষড়যন্ত্র করছে তারা যদি চায় তা হলে আমরা নিশ্চয়ই জানব!
ইরন ভুরু কুঁচকে বলল, কি মজার ব্যাপার কী জান? পুরো ব্যাপারটা যদি দেখ তা হলে মনে হবে আমরাও সেই ষড়যন্ত্রের অংশ। আমি টাইটানিয়ামের রড দিয়ে বর্গেনকে মারতে গিয়েছি তুমি মেরেই ফেলেছ।
কীশা একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, ওভাবে বল না, রোবটের বেলায় মেরে ফেলা কথাটা খাটে না। তা ছাড়া আমি সেটাকে মারতে চাই নি তোমাকে বাঁচাতে চেয়েছিলাম। এত সহজে মাথাটা আলাদা হয়ে যাবে কে জানত?
অত্যন্ত দুর্বল ডিজাইন। ইরন মাথা নেড়ে বলল, কে জানে সেটাও নিশ্চয়ই ষড়যন্ত্রের অংশ।
ত্রালুস নড়েচড়ে বলল, আমার কী মনে হয় জান?
কী?
আর্কাইভ ঘরে বাক্সগুলোতে কী আছে আমরা যদি খুলে দেখতে পারি তা হলে হয়তো কিছু একটা বুঝতে পারব।
ইরন মাথা নাড়ল, ঠিক বলেছ।
কাজটা অবশ্য খুব সহজ হবে না। তথ্যকেন্দ্রে যেহেতু এদের তালিকা নেই, এটা খোলারও কোনো উপায় নেই। বাক্সগুলো ভাঙতে হবে।
ভাঙতে হবে?
হ্যাঁ। ঠিক যন্ত্রপাতি খুঁজে বের করতে হবে।
কীশা মাথা নেড়ে বলল, যদি ভিতরে বিপজ্জনক কিছু থাকে?
ইরন হঠাৎ শব্দ করে হেসে উঠে বলল, তা হলে আমরা এক সপ্তাহের মাঝে মারা না গিয়ে হয়তো আরো দুদিন আগে মারা যাব! খুব কি ক্ষতি–বৃদ্ধি হবে?
কীশা আবার একটি নিশ্বাস ফেলে বলল, না। তা হবে না।
ইরন কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, শুমান্তি বাধা দিয়ে বলল, আমরা এই মহাকাশযানে আরো একটি বিচিত্র জিনিস পেয়েছি।
কী?
এন্টি ম্যাটার১৬। প্রতিপদার্থ।
ইরন চমকে সোজা হয়ে বসে বলল, এন্টি ম্যাটার? কী বলছ?
হ্যাঁ।
কতখানি?
অনেক। মহাকাশযানের সামনে পুরোটাই এন্টি ম্যাটার। চৌম্বক ক্ষেত্রে আটকে রেখেছে। মনে হয় খুব সুরক্ষিত। তারপরও প্রচুর গামা রেডিয়েশন হচ্ছে। আসলে– শুমান্তি একটু লজ্জিত ভঙ্গিতে বলল, আমি তো স্বাভাবিকভাবে বড় হই নি, পড়াশোনার সেরকম সুযোগ হয় নি, তাই বিজ্ঞান বিশেষ জানি না। কতটুকু এন্টি ম্যাটার আছে, কীভাবে আছে দেখলে তোমরা বলতে পারবে।
ইরন অবিশ্বাসের ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে বলল, তুমি বিজ্ঞান না জেনেও চমৎকার বিজ্ঞানীর মতো কাজ করছ শুমান্তি!
কীশা একটু সামনে ঝুঁকে বলল, কিন্তু মহাকাশযানে এন্টি ম্যাটার কেন? তাও এই বিশাল পরিমাণের?
এন্টি ম্যাটার হচ্ছে শক্তি তৈরির সবচেয়ে সহজ উপায়। কোনো ম্যাটার বা পদার্থের সাথে জুড়ে দাও সাথে সাথে বুম প্রচণ্ড বিস্ফোরণ।
কিন্তু সেটা তো অনিয়ন্ত্রিত শক্তি। সেটা কী কাজে লাগবে?
যদি অনিয়ন্ত্রিতভাবেই থাকে তা হলে বিশেষ কোনো কাজে আসবে না। যদি ব্যবহার করার জন্য বিশেষ ইঞ্জিন থাকে সেটা ব্যবহার করা যেতে পারে।
কীশা ত্রালুস আর শুমান্তির দিকে তাকিয়ে বলল, তোমরা কি দেখেছ সেরকম ইঞ্জিন?
দুজনে একসাথে মাথা নাড়ল, বলল, না দেখি নি।
এ রকম কি হতে পারে যে, দেখেছ কিন্তু বুঝতে পার নি?
হতে পারে। ত্রালুস মাথা নেড়ে বলল, তবে তার সম্ভাবনা খুব কম। মহাকাশযানের মূল তথ্যকেন্দ্র আর্কাইভ ঘরে কী আছে সেটা গোপন রেখেছে, কিন্তু অন্য সবকিছু খুব স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে। সেখানে নেই।
কীশা ভুরু কুঁচকে বলল, তা হলে?
ইরন হাসার চেষ্টা করে বলল, ধরে নাও তোমার কাছে যে পরিমাণ এন্টি ম্যাটার আছে সেটা দিয়ে আধখানা পৃথিবী কিংবা বৃহস্পতির একটা চাঁদ উড়িয়ে দিতে পারবে! পৃথিবীর কোনো মানুষ আগে এ রকম কিছু করে নি–সেটা চিন্তা করে তুমি যদি একটু আনন্দ পেতে চাও পেতে পার।
কীশা বিমর্ষ মুখে বসে রইল, তাকে দেখে মনে হল না সে ব্যাপারটি থেকে কোনো আনন্দ পাওয়ার চেষ্টা করছে।
পরবর্তী চব্বিশ ঘণ্টা তারা আর্কাইভ ঘরের বাক্সগুলো খোলার চেষ্টা করল, কিন্তু প্রথম কয়েক ঘণ্টার মাঝেই বুঝতে পারল ব্যাপারটি প্রায় অসম্ভব। বাক্সগুলো অত্যন্ত যত্ন করে রাখা আছে, বাইরে থেকে সেগুলো মসৃণ এবং কোথাও খোলার মতো কোনো জায়গা নেই। ক্রোমিয়াম এবং টাইটানিয়ামের যে সংকর ধাতু দিয়ে বাক্সগুলো তৈরি করা হয়েছে সেগুলো কাটার মতো কোনো যন্ত্রপাতি মহাকাশযানে নেই। বাক্সগুলোর কোনো কোনোটি স্পর্শ করলে ভিতরে খুব সূক্ষ্ম কম্পন অনুভব করা যায়, ভিতরে কোনো এক ধরনের যন্ত্রপাতি চলছে, কিন্তু সেগুলো কী ধরনের যন্ত্রপাতি বোঝার কোনো উপায় নেই।