মহাজাগতিক হিসেবে খুবই কাছে। আমরা এখন যে গতিতে যাচ্ছি তাতে এক সপ্তাহের ভেতর পৌঁছাতে পারব।
যদি এত কাছে আছে তা হলে সিগন্যালটা আগে কেন পেলাম না?
টাটুল বলল, সিগন্যালটা খুবই দুর্বল, সেজন্যে।
ক্যাপ্টেন রন অন্যমনস্কভাবে তার গাল চুলকাল। মহাকাশযানের কোডে পরিষ্কার লেখা আছে কোনো বিপদগ্রস্ত মহাকাশযান যদি সাহায্য চায় তা হলে সাথে সাথে সাহায্যের জন্যে ছুটে যেতে হবে। কিন্তু মহাকাশযানটি যদি মানুষের না হয়ে মহাজাগতিক কোনো প্রাণীর হয় তা হলে কী করতে হবে সেটা পরিষ্কার করে লেখা নেই। যে সিদ্ধান্তটা নেয়ার সেটা তাকেই নিতে হবে। ক্যাপ্টেন রন চোখ বন্ধ করে এক মুহূর্ত ভাবল তারপর ঘুরে কমিউনিকেশন অফিসার রাটুলের দিকে তাকিয়ে বলল, রাটুল তুমি একটা উত্তর পাঠাও।
কী বলব সেখানে?
বল আমরা আসছি।
কন্ট্রোল প্যানেল ঘিরে মহাকাশযানের কুরা দাঁড়িয়েছিল ক্যাপ্টেন রন তাদের দিকে তাকিয়ে বলল, তোমরা সবাই এস। কীভাবে তাদের সাহায্য করা যায় সেটা নিয়ে একটু কথা বলি।
মহাকাশযানের কন্ট্রোল রুমে বড় টেবিলটা ঘিরে সবাই বসেছে। ক্যাপ্টেন রন সবার দিকে একবার তাকিয়ে বলল, তোমরা সবাই শুনেছ আমরা বিপদগ্রস্ত মহাকাশযানটিকে সাহায্য করার জন্যে যাচ্ছি। ঠিক কীভাবে সাহায্য করব আমি সেটা নিয়ে তোমাদের সাথে কথা বলতে চাই।
ইঞ্জিনিয়ার শুরা বলল, তাদের সমস্যাটা কী সেটা না জানা পর্যন্ত আমরা তো কোনো পরিকল্পনা করতে পারছি না।
ক্যাপ্টেন রন মাথা নেড়ে বলল, ঠিকই বলেছ। আমরা প্রথমেই জানতে চাইব তাদের সমস্যাটা কী।
তথ্যপ্রযুক্তিবিদ লানা বলল, মহাজাগতিক প্রাণীদের মহাকাশযানের নিশ্চয়ই নিজস্ব তথ্যকেন্দ্র আছে। আমাদের তথ্যকেন্দ্রের সাথে সেই তথ্যকেন্দ্রের তথ্য বিনিময় করা দরকার। আমাদের জানা উচিত তাদের সভ্যতা কোন ধরনের।
জীববিজ্ঞানী কায়াল মাথা নাড়ল, বলল, আমার আর তর সইছে না। আমি প্রাণীগুলোকে দেখতে চাই। ঠিক কীভাবে প্রাণের বিকাশ হয়েছে আমি বুঝতে চাই। এটাও কি জিনমকেন্দ্রিক? কার্বনভিত্তিক নাকি সিলিকনভিত্তিক।
ক্যাপ্টেন রন জীববিজ্ঞানী কায়ালকে থামিয়ে দিয়ে বলল, তুমি তোমার কৌতূহল মেটানোর অনেক সুযোগ পাবে। আগে বাস্তব সমস্যাগুলোর কথা বলি। আমাদের কী কী ঝুঁকি আছে?
যেহেতু প্রাণীগুলো সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না, নিরাপত্তার জন্যে অবশ্যই কোয়ারেন্টাইন করতে হবে। আমাদের একটা নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে নিতে হবে। সবার আগে দরকার…
মহাকাশযানের সকল ক্রু, ইঞ্জিনিয়ার আর বিজ্ঞানীরা অস্থির গলায় কথা বলতে থাকে। সবার ভেতরে এক ধরনের উত্তেজনা, মানবজাতির ইতিহাসে যেটা ঘটে নি সেটা প্রথমবারের মতো ঘটতে যাচ্ছে। পৃথিবীর মানুষ প্রথমবারের মতো একটা মহাজাগতিক প্রাণীর মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। দীর্ঘ আলোচনার পর যখন সবাই নিজের কাজে ফিরে যাচ্ছিল তখন হঠাৎ ক্যাপ্টেন রন আবিষ্কার করে বড় টেবিলের এক কোনায় গালে হাত দিয়ে পদার্থবিজ্ঞানী খ্রাউস বসে আছে। ক্যাপ্টেন রন তার দিকে তাকিয়ে বলল, উস তুমি কিছু বলবে?
নাহ্। খ্রাউস মাথা নাড়ল, আমার বলার কিছু নেই।
আমরা একটা মহাজাগতিক প্রাণীকে দেখতে পাব সেটা নিয়ে তোমার কোনো আগ্রহ নেই?
এত বড় বিশ্বব্রহ্মাণ্ড, আমরা ছাড়া আরো কত মহাজাগতিক প্রাণী আছে-আগে হোক পরে হোক তাদের সাথে আমাদের দেখা হবেই।।
আমরা আগামী এক সপ্তাহের মাঝে প্রথমবারের মতো এই মহাজাগতিক প্রাণীদের দেখতে পাব। কত কী হতে পারে-নিরাপত্তার ব্যাপারে তোমার কোনো বক্তব্য আছে?
নাহ্! শুধু
শুধু কী?
তাদের ডান হাত কি ডান দিকে না বাম দিকে সেটা জানা থাকলে ভালো হত।
কন্ট্রোল ঘরে বসে থাকা সবাই ঘুরে খ্রাউসের দিকে তাকাল। মানুষটি ঠাট্টা করে কিছু বলছে কি না কেউ বুঝতে পারল না। জীববিজ্ঞানী কায়াল বলল, এই প্রাণীগুলো কী রকম আমাদের জানা নেই। তাদের হাত-পা আছে না অক্টোপাসের মতো শুঁড় আছে আমরা কিছুই জানি না। ডান হাত বাম হাত থাকবে তোমাকে কে বলেছে?
তথ্যপ্রযুক্তিবিদ লানা বলল, তুমি এরকম হেঁয়ালি করে কেন কথা বলছ? ডান হাত আবার বাম দিকে কেমন করে হয়?
ইঞ্জিনিয়ার শুরা হাসার ভঙ্গি করে বলল, আমাদের বিজ্ঞানী খ্রাউস সব সময় সবকিছু নিয়ে ঠাট্টা করে। কাজেই মহাজাগতিক প্রাণী নিয়েও ঠাট্টা করবে এতে অবাক হবার কী আছে?
খ্রাউস দুর্বল গলায় বলল, আমি আসলে ঠাট্টা করছিলাম না।
ক্যাপ্টেন রন বলল, এর মাঝে ডান বামের ব্যাপারটা কেমন করে আসছে? একটা মহাজাগতিক প্রাণীকে ডান বা বাম কেমন করে বোঝাবে? ডান মানে কী? বাম মানে কী?
খ্রাউস বলল, ডান বাম বোঝানো কঠিন নয়। একটা নিউট্রন থেকে যখন বেটা বের হয় তখন স্পিনের সাথে যে সম্পর্ক থাকে সেটা দিয়ে বাম ডান বোঝানো যায়। প্রকৃতি স্পষ্টভাবে জানে বাম মানে কী ডান মানে কী-
ক্যাপ্টেন রন উঠে দাঁড়িয়ে বলল, জানা থাকলে ভালো। আমার সেটা নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। আমার কাছে ডান আর বামের কোনো পার্থক্য নেই। যারা ডান হাত দিয়ে কাজ করে আর যারা বাম হাত দিয়ে কাজ করে তারা সবাই আমার কাছে সমান।
খ্রাউস বলল, আমি সেটা বলছিলাম না। আমরা যখন তথ্য বিনিময় করব তখন যদি পদার্থবিজ্ঞানের তথ্য বিনিময় করি তা হলেই আমরা ডান বা বাম বলতে কী বুঝি সেটা বুঝে যাব। আমি বলছিলাম সেখান থেকে–