ক্যামেরুনের কাছে ১—০ গোলে আর্জেন্তিনার, কোস্তা রিকার কাছে ১—০ গোলে স্কটল্যান্ডের পরাজয় বা মিশরের কাছে হল্যান্ডের ১—১ আটকে যাওয়া অথবা কষ্টেসৃষ্টে ইতালির ১—০ গোলে আয়ার্ল্যান্ডকে হারানোর মত বিস্ময়কর ফলের জন্য নানান কারণ দাখিল করা হয়। তার একটি হল : সারা বিশ্ব জুড়ে ফুটবল খেলোয়াড়রা ক্রমশ উন্নতি করেছে, তাদের কন্ডিশনিং ও স্কিল এখন প্রায় সমপর্যায়ে এসে গেছে। কোচিং কৌশল এখন সবদেশেই জানাজানি হয়ে যাচ্ছে আর সবারই মূলমন্ত্র ডিফেন্স। উঠতি দেশগুলির মধ্যে আয়ার্ল্যান্ড, যাদের দলে কোন তারকাই নেই, তারা শুধু ডিফেন্স আর দেহসক্ষমতার জোরেই পাঁচ ম্যাচে দুটি গোল করে বিপক্ষদের ভয় পাইয়ে দেয়। টাই—ব্রেকারে একটি গোল ছাড়া মারাদোনা আর গোলই পেলেন না! হল্যান্ডের গুলিত ও বাস্তেন তাদের দলকে দ্বিতীয় রাউন্ডেই ছিটকে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে পারলেন না। গুলিত পান মাত্র একটি গোল, বাস্তেন তাও নয়। ব্রাজিলের কারেকা, বেলজিয়ামের বুরাগুয়েনো বা উরুগুয়ের রুবেন সোসা কেউই তাদের সুপারস্টার খ্যাতি অনুযায়ী খেলতে পারেননি। কিন্তু বেশি গোল করে গেলেন অখ্যাত নামারাই— চেকোশ্লোভাকিয়ার টোমাস সুরাভি, (কোস্তা রিকার বিরুদ্ধে হ্যাট্রিকসহ) ৫ গোল। রজার মিল্লা ৪ গোল। স্পেনের মিগুয়েল মিশেল (হ্যাটট্রিক দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে) ৪ গোল। অবশ্য তারকাদের মধ্যে ৪ গোল পেয়েছেন দুজন—পশ্চিম জার্মানির অধিনায়ক লোটার ম্যাটাউস ও ইংল্যান্ডের গ্যারি লিনেকার।
প্রতিযোগিতার সর্বোচ্চচ ব্যক্তিগত গোলদাতা, ইতালির সালভাতোর শিলাচি—৬ গোল। সর্বাধিক গোল দেওয়া দল, পশ্চিম জার্মানি—১৫ গোল। ইতালির গোলরক্ষক ওয়াল্টার জেঙ্গা ৫১৮ মিনিট অপরাজিত থেকে ইংল্যান্ডের পিটার শিলটনের ৫০১ মিনিটের রেকর্ড ভাঙেন। এবার নিয়ে ১২টি বিশ্বকাপে পশ্চিম জার্মানি খেলল সর্বাধিক ম্যাচ—৬৮। ব্রাজিল ১৪ বিশ্বকাপে খেলল ৬৬ ম্যাচ। বিশ্বকাপে প্রথমাবির্ভাবে জয়: কোস্তা রিকা ১, স্কটল্যান্ড ০। ”ইতালিয়া ৯০” টেলিভিশনে সারা বিশ্বে দেখেছেন রেকর্ড ২৬৭০ কোটি দর্শক গড়ে প্রতিম্যাচে ৫১.৩৩ কোটি। এশিয়ায় মোট দর্শকসংখ্যা ছিল ১২০০ কোটি। টিভি—তে সব থেকে বেশি লোক দেখেছেন ফাইনাল ম্যাচটি—১৬৭ দেশের ১০৬ কোটি দর্শক।
ইতালি ১৯৯০
.
প্রথম রাউন্ড
গ্রুপ ১
ইতালি ১, অস্ট্রিয়া ০
চেকোশ্লোভাকিয়া ৫, যুক্তরাষ্ট্র ১
ইতালি ১, যুক্তরাষ্ট্র ১
চেকোশ্লোভাকিয়া ১, অস্ট্রিয়া ০
ইতালি ২, চেকোশ্লোভাকিয়া ০
অস্ট্রিয়া ২, যুক্তরাষ্ট্র ১
.
গ্রুপ ২
ক্যামেরুন ১, আর্জেন্তিনা ০
রোমানিয়া ২, সোভিয়েত ইউঃ ০
আর্জেন্তিনা ২, সোভিয়েত ইউঃ ০
ক্যামেরুন ২, রোমানিয়া ১
আর্জেন্তিনা ১, রোমানিয়া ১
সোভিয়েত ইউঃ ৪, ক্যামেরুন ০
গ্রুপ ৩
ব্রাজিল ২, সুইডেন ১
কোস্তা রিকা ১, স্কটল্যান্ড ০
ব্রাজিল ১, কোস্তা রিকা ০
স্কটল্যান্ড ২, সুইডেন ১
ব্রাজিল ১, স্কটল্যান্ড ০
কোস্তা রিকা ২, সুইডেন ১
.
গ্রুপ ৪
কলম্বিয়া ২, সং আ. আমিরশাহি ০
পঃ জার্মানি ৪, যুগোশ্লাভিয়া ১
যুগোশ্লাভিয়া ১, কলম্বিয়া ০
পঃ জার্মানি ৫, সং আ. আমিরশাহি ১
পঃ জার্মানি ১, কলম্বিয়া ১
যুগোশ্লাভিয়া ৪, সং আ. আমিরশাহি ১
.
গ্রুপ ৫
বেলজিয়াম ২, দঃ কোরিয়া ০
উরুগুয়ে ০, স্পেন ০
বেলজিয়াম ৩, উরুগুয়ে ১
স্পেন ৩, দঃ কোরিয়া ১
স্পেন ২, বেলজিয়াম ১
উরুগুয়ে ১, দঃ কোরিয়া ০
গ্রুপ ৬
ইংল্যান্ড ১, আয়ার্ল্যান্ড ১
হল্যান্ড ১, মিশর ১
ইংল্যান্ড ০, হল্যান্ড ০
আয়ার্ল্যান্ড ০, মিশর ০
ইংল্যান্ড ১, মিশর ০
আয়ার্ল্যান্ড ১, হল্যান্ড ১
দ্বিতীয় রাউন্ড (প্রি—কোয়ার্টার ফাইনাল)
ক্যামেরুন ২, কলম্বিয়া ১ (নির্ধারিত সময়ের পর ০—০)
চেকোশ্লোভাকিয়া ৪, কোস্তা রিকা ১
আর্জেন্তিনা ১, ব্রাজিল ০
পঃ জার্মানি ২, হল্যান্ড ১
ইতালি ২, উরুগুয়ে ০
আয়ার্ল্যান্ড ৫, রোমানিয়া ৪ (অতিরিক্ত সময়ের পর ০—০)
ইংল্যান্ড ১, বেলজিয়াম ০ (নির্ধারিত সময়ের পর ০—০)
স্পেন ২, যুগোশ্লাভিয়া ১
কোয়ার্টার ফাইনাল
ইতালি ১, আয়ার্ল্যান্ড ০
আর্জেন্তিনা ৩, যুগোশ্লাভিয়া ২ (অতিরিক্ত সময়ের পর ০—০)
ইংল্যান্ড ৩, ক্যামেরুন ২ (নির্ধারিত সময়ের পর ২—২)
পঃ জার্মানি ১, চেকোশ্লোভাকিয়া ০
সেমি—ফাইনাল
আর্জেন্তিনা ৫, ইতালি ৪ (অতিরিক্ত সময়ের পর ১—১)
পঃ জার্মানি ৫, ইংল্যান্ড ৪ (অতিরিক্ত সময়ের পর ১—১)
তৃতীয় স্থানের ম্যাচ
ইতালি ২, ইংল্যান্ড ১
ফাইনাল (রোম)
পঃ জার্মানি ১, আর্জেন্তিনা ০
গোলদাতা—ব্রেহমে।
পঃ জার্মানি—ইলগনার, বেরটোল্ড (রয়টার, ৭৩ মিঃ), কোহলার, আউগেনটালার, ব্রেহমে হাসলার, ম্যাটাউস, লিটবারস্কি, ক্লিনসম্যান, ফোলার।
আর্জেন্তিনা—গয়কোসিয়া, রাগেরি (মনজোন, ৪৬ মিঃ), সিমন, সেরিজুয়েলা, লোরেঞ্জো, বাসুয়াল্ডো, ত্রেগলিও, বুরুশাগা (কল্ডেরন, ৫৩ মিঃ), সেনসিনি, দিজোত্তি, মারাদোনা।
১৯৯৪ যুক্তরাষ্ট্র
ফিফার মহাসচিব ব্ল্যাটার ১৯৯০ বিশ্বকাপ সম্পর্কে তিক্তস্বরে বলেছিলেন, ৫২ ম্যাচের গুটি তিনেক মাত্র দেখার যোগ্য হয়েছিল। তাই যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৪ বিশ্বকাপের আগে ফুটবলকে আকর্ষণীয় করার জন্য সময় নষ্ট বন্ধ করতে, গোল বৃদ্ধি করতে, খেলার গতি বাড়াতে এবং খেলাকে পরিচ্ছন্ন করে তুলতে খেলার নিয়মে কিছু রদবদল ঘটান হয়। হিসেব কষে দেখা গেছে ইতালিতে ৯০ মিনিটের ম্যাচ প্রকৃতপক্ষে খেলা হয়েছে গড়ে প্রতিটি ৪৬ মিনিট। বাকি সময়টা নানাভাবে নষ্ট করেছেন গোলকিপাররা বা আহত হয়ে মাঠে পড়ে থাকার ভান করে খেলোয়াড়রা। তাই ফিফা আইন সংশোধন করে ব্যাকপাস ধরতে গোলকিপারের হাতের ব্যবহার বন্ধ করে দেয়। দেখা গেল এই সংশোধনের ফলে খেলার সময়কাল শতকরা আটভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। আহত হবার ভান করলেই ওয়ানির্ং পাবে, এই নিয়মের ফলে দেখা গেল হঠাৎই আহত খেলোয়াড়ের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ম্যাচে দুজন পরিবর্ত খেলোয়াড়ের বদলে তিনজন নামান যাবে, এই সংশোধনটি করা হয় ১৯৯৪ বিশ্বকাপ শুরুর সাড়ে তিনমাস আগে। তবে পরিবর্ত তিনজনের একজনকে অবশ্যই গোলকিপার হতে হবে এবং সে নামবে শুধু গোলকিপারেরই পরিবর্তে।