২৪ দেশের চূড়ান্ত পর্বের ১৪টি দেশ ইওরোপের, চারটি দক্ষিণ আমেরিকার। বাকি ছয়টি স্থান ভরায় এশিয়া, আফ্রিকা এবং মধ্য—উত্তর আমেরিকা অঞ্চলের প্রতিটি থেকে দুটি করে দেশ। ১৯৮৬ চূড়ান্ত পর্বের মাত্র নয়টি দেশ—ইংল্যাণ্ড, সোভিয়েত ইউনিয়ন, পশ্চিম জার্মানি, স্কটল্যাণ্ড, স্পেন, বেলজিয়াম, উরুগুয়ে, ব্রাজিল ও দক্ষিণ কোরিয়া— এবার চূড়ান্ত পর্বে খেলার যোগ্যতা সংগ্রহ করতে পারে। না পারাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, পোল্যাণ্ড। একটি যুব প্রতিযোগিতায় মেক্সিকো বেশি বয়সী চারজন খেলোয়াড় খেলাবার অপরাধে ফিফা কর্তৃক দু বছর সাসপেণ্ড হওয়ায়, এবারের বাছাই পর্ব থেকে তারাই প্রথম বাতিল হয়।
চূড়ান্ত পর্বে প্রথমবার খেলতে এল রিপাবলিক অব আয়ার্ল্যাণ্ড, কোস্তা রিকা এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহী (ইউ এ আর)। চূড়ান্ত পর্বে বহু বছর পর খেলতে আসে মিশর (শেষবার ১৯৩৪), যুক্তরাষ্ট্র (১৯৫০) ও কলম্বিয়া (১৯৬২)। ব্রাজিল ও চিলির মধ্যে বাছাই পর্বের দ্বিতীয় খেলাটি ছিল যোগ্যতা নির্ধারক ম্যাচ। রিও—তে এই খেলায় চিলি গোলকিপার বোরোর্তো রোস—এর কাছাকাছি একটা পটকা ফাটে এবং তার মুখ রক্তাক্ত দেখায়। চিলি প্রতিবাদ জানিয়ে মাঠ ত্যাগ করে। পরে তদন্ত করে জানা যায় রোস অভিনয় করে এবং নকল রক্ত মুখে মাখিয়ে এই মিথ্যাচার করেছে। ফিফা তাকে চিরজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করে ম্যাচটিতে ব্রাজিলকে বিজয়ী ঘোষণা করে। এর ফলে ব্রাজিল ১৯৩০ থেকে প্রতিটি বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার একমাত্র সম্মানের অধিকারী হয়। পশ্চিম জার্মানি চূড়ান্ত পর্বে যতবার খেলেছে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে, সাতবার সেমিফাইনালে, পাঁচবার ফাইনালে এবং ১৯৫৪ ও ১৯৭৪—এ বিজয়ীর সুনাম নিয়ে ইতালিতে আসে। তাদের কোচ ফ্রানৎজ বেকেনবাউয়ার বাছাই পর্ব খেলার সময়ই জানিয়ে দিয়েছিলেন চূড়ান্ত পর্ব শেষ হলেই তিনি কোচ—এর পদ থেকে সরে যাবেন।
মধ্য—উত্তর আমেরিকান গ্রুপ প্রকৃতপক্ষে সম্পূর্ণ হতে পারেনি। এল সালভাদর ও গুয়েতামালার মধ্যে দুটি ম্যাচ, যদিও তখন ফলাফলের মূল্য ছিল না, কিন্তু ফিফা বাতিল করে দেয়, এল সালভাদরে গৃহযুদ্ধের জন্য। এশিয়া অঞ্চল থেকে দক্ষিণ কোরিয়া পরপর দ্বিতীয়বার চূড়ান্ত পর্বে উঠে আসে। সিঙ্গাপুরে নিরপেক্ষ দেশে অনুষ্ঠিত বাছাই পর্বের শেষ প্রতিযোগিতায় উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান ও চীন খেলেছিল। সৌদি আরব ও চীন—এর মধ্যে কেউ দ্বিতীয় স্থান পাবে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু পিছন থেকে এসে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি দ্বিতীয় স্থান দখল করে ইতালি যায়।
১৯৮২ চূড়ান্ত পর্বে গ্রুপ লীগে তিনটি ম্যাচই অমীমাংসিত খেলে এবং অপরাজিত থেকে বাতিল হওয়া ক্যামেরুন আবার চূড়ান্ত পর্বে এল আফ্রিকা থেকে। এই মহাদেশের দ্বিতীয় দলটি হল মিশর। তারা প্লে—অফ ম্যাচে গত দু বারের চূড়ান্ত পর্বে খেলা আলজিরিয়াকে ১—০ হারিয়ে যোগ্যতা পায়।
রোম—এর ‘প্যালাজ্জো দেলো স্পোর্ত’—এ অর্থাৎ স্পোর্টস প্যালেসে ৯ ডিসেম্বর, ১৯৮৯, অনুষ্ঠিত হয় ২৪ দেশ কে কোন গ্রুপে প্রথম রাউণ্ডে খেলবে তারই লটারি। ২৪ দেশকে ছয় গ্রুপে ভাগ করা হবে। প্রতিটি গ্রুপে থাকবে একটি করে বাছাই দল যাতে তারা প্রথমেই পরস্পরের সঙ্গে না খেলে। বিশ্বকাপে পূর্বফল এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বর্তমান গুণাগুণ ধরে বাছাই নির্বাচন হয়। এবার বাছাই হয় আর্জেন্তিনা, ইতালি, ব্রাজিল, পশ্চিম জার্মানি, স্পেন ও বেলজিয়াম। কিন্তু ইংল্যাণ্ড দাবি জানায় তাদের উচ্ছৃঙ্খল সমর্থকদের হাঙ্গামা বাধাবার ভয় আছে তাই তাদের নিয়ন্ত্রণের জন্য ভূমধ্য সাগরীয় দ্বীপ সার্দিনিয়ার রাজধানী ক্যালিয়ারিতে খেলা দেওয়া হোক বাছাই গণ্য করে। ফিফা এই যুক্তি মেনে স্পেনের বদলে ইংল্যাণ্ডকে বাছাই সম্মান দেয়। লটারির জন্য বিশ্বকাপ জয়ী ছয়টি দেশের ছয়জন প্রতিনিধিকে—পেলে (ব্রাজিল), প্যাসারেল্লা (আর্জেন্তিনা), সোসা (উরুগুয়ে), মুর (ইংল্যাণ্ড), রুমেনিগে (পশ্চিম জার্মানি) এবং কোন্তি (ইতালি)—আমন্ত্রণ করা হয়েছিল। ছয়টি পাত্র থেকে তারা ২৪টি দেশের নামগুলি টেনে তোলেন। এক ঘণ্টার এই অনুষ্ঠান টিভি মারফৎ বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষ দেখেন।
গ্রুপ ভাগের তালিকা প্রকাশ হতেই আর্জেন্তিনা অধিনায়ক মারাদোনা সমালোচনা করে তির্যক মন্তব্য করেন, গড়াপেটা করে আগেই ঠিক করা হয়েছে কে কোন গ্রুপে খেলবে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ইতালীয় লীগের শৃঙ্খলারক্ষা কমিশন তাকে ৭,৭০০ ডলার জরিমানা করে। আর্জেন্তিনা গ্রুপের দুটিম্যাচ খেলেছে নেপলসে কিন্তু ১৯৯০—এর ৮ জুন উদ্বোধনী ম্যাচ ক্যামেরুনের সঙ্গে খেলার জন্য তাদের যেতে হয় মিলানে।
বিশ্বের বৃহত্তম বাজি ধরার ব্যবসা সংস্থা লণ্ডনের ল্যাডব্রোকস, গ্রুপ বিন্যাসের পর সম্ভাব্য বিশ্বকাপ জয়ীদের সম্পর্কে বাজির যে দর প্রকাশ করেছিল তাতে প্রথমে ছিল ইতালি (৭—২ ফেভারিট), ব্রাজিল (৯—২), হল্যাণ্ড (৯—২), পশ্চিম জার্মানি (৬—১) ও আর্জেন্তিনা (৮—১)।
ভারত ও বিশ্বকাপ
বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতায় এখন পর্যন্ত ভারত মাত্র একবারই বাছাই পর্বে অংশ নেয়। ১৯৮৬ প্রতিযোগিতার জন্য এশিয়ার তিন নম্বর গ্রুপের ‘বি’ সাব—গ্রুপে ভারত খেলে। তারা জাকার্তায় ১—২ গোলে ইন্দোনেশিয়ার কাছে, ব্যাঙ্ককে তাইল্যাণ্ডের সঙ্গে ০—০ ও ঢাকায় বাংলাদেশকে ২—১ গোলে হারায়। ভারতের গোল তিনটি দেন : কৃশানু দে, শিশির ঘোষ ও বিকাশ পাঁজি। ফিরতি খেলা তিনটি হয় কলকাতার সল্টলেকে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে। ভারত ১—১ করে ইন্দোনেশিয়ার ও তাইল্যাণ্ডের সঙ্গে এবং বাংলাদেশকে হারায় ২—১ গোলে। ভারতের পক্ষে গোল চারটি দেন : নরিন্দর থাপা, তরুণ দে, বিকাশ পাঁজি ও ক্যামিলো গঞ্জালেস। সাব—গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ইন্দোনেশিয়া। ভারতের অধিনায়ক ছিলেন সুদীপ চ্যাটার্জি এবং কোচ অরুণ ঘোষ।
বিশ্বকাপ চূড়ান্ত পর্বে ১৯৩০—১৯৮৬
সেমি—ফাইনাল