তারপর টের পেলুম অসম্ভব ঠান্ডা হিম দুই হাতে কেউ আমার গলা টিপে ধরেছে। জ্ঞান হারানোর মুহূর্তেও রামলালকে ডাকার চেষ্টা করছিলুম…
জ্ঞান হলে দেখি রামলালের বিষণ্ণ মুখ। সে আস্তে-আস্তে বলল, শরীর ঠিক হয়েছে তো দাদাবাবু?
প্রথমে ঘড়ি দেখে নিলুম। বারোটা পঁচিশ বাজে। ঘরে উজ্জ্বল আলো। বিদ্যুৎ এসে গেছে। শরীর খুব ক্লান্ত। গলায় সেই ঠান্ডা স্পর্শটা এখনও লেগে আছে। দুঃস্বপ্ন নয়, যা ঘটেছে, সবই সত্যি তাহলে।
ব্যাপারটা রামলালকে বলতে যাচ্ছিলুম, সে বাধা দিয়ে বলল, চুপসে নিদ করুন দাদাবাবু! বুঝলেন তো, হাওয়া-বাতাসের ব্যাপারটা কী! এ বাড়ি কর্তামশাই কেনার পর প্রথম প্রথম আমি খুব লড়ার চেষ্টা করেছিলুম। পারিনি। তবে কর্তামশাইও এ বাড়িতে আর থাকতে চান না! বলে গেছেন, ফিরে এসে বেচে দেবেন।
বললুম,–নিচের ঘরে একজন চীনা আমার গলা টিপে ধরেছিল।
রামলাল, চীনা নয় দাদাবাবু! জাপানি! শুনেছি ব্রিটিশ আমলে জাপানের সঙ্গে লড়াই বাধলে লোকটা নিজের পেটে ছোরা মেরে আত্মহত্যা করেছিল। এ বাড়িটা ছিল তারই। তবে ব্রিটিশ সোলজাররা এসে লাশটাও বাঁশবনে ফেলে দিয়েছিল। তখনও নাকি ধড়ে প্রাণটা ছিল। এখনও রাত-বিরেতে বাঁশবনে শুয়ে কাঁদে।
চমকে উঠে বললুম,–তাহলে সেই রক্তই দেখেছি। হারাকিরির রক্ত।
হাই তুলে রামলাল বলল,–ছেড়ে দিন। আপনাকে বলেছিলুম দাদাবাবু, এসব নিয়ে মাথা ঘামাবেন না! হাওয়া-বাতাস থেকে গা বাঁচিয়ে চললে কোনও ক্ষতি হবে না। লড়তে গেলেই যত ঝামেলা! বুঝলেন তো? বুঝলুম। জাপানি ভদ্রলোক হারাকিরি করে মারা গেছেন বটে, এখনও ব্রিটিশদের ওপর রাগটা মেটেনি। ওঁকে বুঝিয়ে দেওয়া দরকার, এদেশ ছেড়ে ব্রিটিশরা কতকাল আগে চলে গেছে। আমার বিশ্বাস, সেটা বুঝলেই উনি স্বদেশে চলে যাবেন।…