বিষম কান্ড
কর্তা চলেন, গিন্নী চলেন, খোকাও চলেন সাথে,
তড়্বড়িয়ে বুক ফুলিয়ে শুতে যাচ্ছেন রাতে ।
তেড়ে হন্হন্ চলে তিনজন যেন পল্টন চলে,
সিঁড়ি উঠ্তেই একি কান্ড! এ আবার কি বলে!
ল্যাজ লম্বা কান গোল গোল, তিড়িং বিড়িং ছোটে,
চোখ্ মিট্মিট্ কুটুস্ কাটুস্-এটি কোনজন বটে !
হেই! হুস! হ্যাস!ওরে বাস্রে মতলবখানা কিরে,
করলে তাড়া যায়না তবু,দেখ্ছে আবার ফিরে।
ভাবছে বুড়ো করবো গুঁড়ো ছাতার বাড়ি মেরে,
আবার ভাবে ফস্কে গেলে কাম্ড়ে দেবে তেড়ে।
আরে বাপ্রে! বস্ল দেই দুখ পায়ে ভর করে,
বুক দুর দুর বুড়ো ভল্লুর, মোমবাতি যায় পড়ে।
ভীষন ভয়ে দাঁত কপাটি তিন মহাবীর কাঁপে ,
গড়িয়ে নামে হুড়মুড়িয়ে সিঁড়ির ধাপে ধাপে।
বিষম ভোজ
“অবাক কান্ড!” বল্লে পিসী, “এক চাঙাড়ি মেঠাই এল-
এই ছিল সব খাটের তলায়, এক নিমিষে কোথায় গেল?”
সত্যি বটে বললে খুড়ী, “আনলো দু’সের মিঠাই কিনে-
হঠাৎ কোথায় উপসে গেল? ভেল্কিবাজি দুপুর দিনে?”
“দাঁড়াও দেখি” বল্লে দাদা, “কর্ছি আমি এর কিনারা-
কোথায় গেল পটলা ট্যাঁপা – পাচ্ছিনে যে তাদের সাড়া?”
পর্দাঘেরা আড়াল দেওয়া বারান্দাটার ঐ কোণেতে
চল্ছে কি সব ফিস্ ফ্সি্ ফিস্ শুনলে দাদা কানটি পেতে।
পটলা ট্যাঁপা ব্যস্ত দুজন ট্প্টপাটপ্ মিঠাই ভোজে,
হঠাৎ দেখে কার দুটো হাত এগিয়ে তাদের কানটি খোঁজে।
কানের উপর প্যাঁচ্ ঘুরাতেই দু চোখ বেয়ে অশ্রু ছোটে,
গিলবে কি ছাই মুখের মিঠাই ,কান বুঝি যায় টানের চোটে।
পটল বাবুর হোম্রা গলা মিল্ল ট্যাঁপার চিকন সুরে
জাগ্ল করুন রাগরাগিণী বিকট তানে আকাশ জুড়ে।
বেজায় খুশি
বাহবা বাবুলাল! গেলে যে হেসে!
বগলে কাতুকুতু কে দিল এসে?
এদিকে মিটিমিটি দেখ কি চেয়ে?
হাসি যে ফেটে পড়ে দু’গাল বেয়ে !
হাসে যে রাঙা ঠোঁট দন্ত মেলে
চোখের কোণে কোণে বিজলী খেলে
হাসির রসে গ’লে ঝরে যে লালা
কেন এ খি-খি-খি-খি হাসির পালা?
যে দেখে সেই হাসে হাহাহা হাহা
বাহবা বাবুলাল বাহবা বাহা!
বেজায় রাগ
ও হাড়্গিলে, হাড়্গিলে ভাই, খাপ্পা বড্ড আজ।
ঝগড়া কি আর সাজে তোমার? এই কি তোমার যোগ্য কাজ?
হোম্রা চোম্রা মান্য তোমরা বিদ্যেবুদ্ধি মর্যাদায়
ওদের সঙ্গে তর্ক করছ – নাই কি কোন লজ্জা তায়?
জান্ছ নাকি বলছে ওরা ? কিচির মিচির কিচ্চিরি,
অর্থাৎ কিনা, তোমার নাকি চেহারাটা বিচ্ছিরি ।
বলছে আচ্ছা বলুক, তাতে ওদেরই তো মুখ ব্যথা,
ঠ্যাঁটা লোকের শাস্তি— যত ওরাই শেষে ভুগবে তা ।
ওরা তোমায় খোঁড়া বলছে? বেয়াদব ত খুব দেখি!
তোমার পায়ে বাতের কষ্ট- ওরা সেসব বুঝবে কি?
তাই বলে কি নাচ্বে রাগে? উঠ্বে চ’টে চট করে?
মিথ্যে আরো ত্যক্ত হবে ওদের সাথে টক্করে।
ঐ শোন কি বলছে আবার , কচ্ছে কত বক্তৃতা-
বল্ছে তোমার নেড়া মাথায় ঘোলা ঢালবে – সত্যি তা?
চড়াই পাখির বড়াই দেখ তোমায় দিচ্ছে টিট্কিরি-
বল্ছে তোমার মিষ্টি গলায় গান ধরত গিট্কিরি ।
বল্ছে তোমার কাঁথাটাকে ‘রিফুকর্ম’ করবে কি?
খোঁড়া ঠ্যাঙে নামেবে জলে ? আর কোলা ব্যাং ধরবে কি?
আর চ’টো না আর শুনো না ঠ্যাঁটা মুখের টিপ্পনি,
ওদের কথায় কান দিতে নেই, স’রে পড়্ এক্ষুনি।
বেশ বলেছ
এসব কথা শুনলে তোদের লাগবে মনে ধাঁধাঁ,
কেউ বা বুঝে পুরোপুরি, কেউ বা বুঝে আধা।
কারে বা কই কিসের কথা, কই যে দফে দফে,
গাছের ‘পরে কাঁঠাল দেখে তেল মেখ না গোঁফে।
একটি একটি কথায় যেন সদ্য দাগে কামান,
মন বসনের ময়লা ধুতে তত্ত্বকথাই সাবান।
বেশ বলেছ, ঢের বলেছ, ঐখেনে দাও দাঁড়ি,
হাটের মাঝে ভাঙ্বে কেন বিদ্যে বোঝাই হাঁড়ি!
বড়াই
গাছের গোড়ায় গর্ত করে ব্যাং বেঁধেছেন বাসা,
মনের সুখে গাল ফুলিয়ে গান ধরেছেন খাসা।
রাজার হাতি হাওদা -পিঠে হেলে দুলে আসে-
বাপরে ব’লে ব্যাং বাবাজি গর্তে ঢোকেন ত্রাসে!
রাজার হাতি মেজাজ ভারি হাজার রকম চাল ;
হঠাৎ রেগে মটাং করে ভাঙল গাছের ডাল।
গাছের মাথায় চড়াই পাখি অবাক হ’য়ে কয়-
বাসরে বাস! হাতির গায়ে এমন জোরও হয়!
মুখ বাড়িয়ে ব্যাং বলে, ভাই তাইত তোরে বলি-
“আমরা, অর্থাৎ চার-পেয়েরা, এন্মি ভাবেই চলি”।।
ভারি মজা
এই নেয়েছ, ভাত খেয়েছ, ঘন্টাখানেক হবে-
আবার কেন হঠাৎ হেন নামলে এখন টবে?
একলা ঘরে ফুর্তি ভরে লুকিয়ে দুপুরবেলা,
স্নানের ছলে ঠান্ডা জলে জল ছপ্ছপ্ খেলা ।
জল ছিটিয়ে, টব পিটিয়ে, ভাবছ, “আমোদ ভারি-
কেউ কাছে নাই, যা খুশি তাই করতে এখন পারি।”
চুপ্ চুপ্ চুপ্- ঐ দুপ্ দুপ্! ঐ জেগেছে মাসি,
আসছে ধেয়ে, শুনতে পেয়ে দুষ্ট মেয়ের হাসি।
ভাল ছেলের নালিশ
মাগো!
প্রসন্নটা দুষ্টু এমন! খাচ্ছিল সে পরোটা
গুড় মাখিয়ে আরাম ক’রে বসে –
আমায় দেখে একটা দিল ,নয়কো তাও বড়টা,
দুইখানা সেই আপনি খেল ক’ষে!
তাইতে আমি কান ধরে তার একটুখানি পেঁচিয়ে
কিল মেরেছি ‘হ্যাংলা ছেলে’ বলে-
অম্নি কিনা মিথ্যা করে ষাঁড়ের মত চেচিয়ে
গেল সে তার মায়ের কাছে চলে!
মাগো!
এম্নিধারা শয়তানি তার, খেলতে গেলাম দুপুরে,
বল্ল, ‘এখন খেলতে আমার মানা’-
ঘন্টাখানেক পরেই দেখি দিব্যি ছাতের উপরে
ওড়াচ্ছে তার সবুজ ঘুড়ি খানা।
তাইতে আমি দৌড়ে গিয়ে ঢিল মেরে আর খুঁচিয়ে
ঘুড়ির পেটে দিলাম করে ফুটো-
আবার দেখ বুক ফুলিয়ে সটান মাথা উঁচিয়ে
আনছে কিনে নতুন ঘুড়ি দুটো!