- বইয়ের নামঃ অন্যান্য ছড়াসমূহ
- লেখকের নামঃ সুকুমার রায়
- বিভাগসমূহঃ ছড়াসমগ্র
অন্ধ মেয়ে
গভীর কালো মেঘের পরে রঙিন ধনু বাঁকা,
রঙের তুলি বুলিয়ে মেঘে খিলান যেন আঁকা!
গবুজ ঘাসে রোদের পাশে আলোর কেরামতি
রঙিন্ বেশে রঙিন্ ফুলে রঙিন্ প্রজাপতি!
অন্ধ মেয়ে দেখ্ছে না তা – নাইবা যদি দেখে-
শীতল মিঠা বাদল হাওয়া যায় যে তারে ডেকে!
শুনছে সে যে পাখির ডাকে হরয কোলাকুলি
মিষ্ট ঘাসের গন্ধে তারও প্রাণ গিয়েছে ভুলি!
দুঃখ সুখের ছন্দে ভরা জগৎ তারও আছে,
তারও আধার জগৎখানি মধুর তারি কাছে।।
আকাশের গায়ে
আকাশের গায়ে কিবা রামধনু খেলে,
দেখে চেয়ে কত লোক সব কাজ ফেলে;
তাই দেখে খুঁৎ-ধরা বুড়ো কয় চটে,
দেখছ কি, এই রং পাকা নয় মোটে।।
আদুরে পুতুল
যাদুরে আমার আদুরে গোপাল, নাকটি নাদুস থোপ্না গাল,
ঝিকিমিকি চোখ মিটমিটি চায় ঠোঁট দুটি তায় টাট্কা লাল।
মোমের পুতুল ঘুমিয়ে থাকুক দাঁত মেলে আর চুল খুলে-
টিনের পুতুল চীনের পুতুল কেউ কি এমন তুলতুলে?
গোব্দা গড়ন এম্নি ধরন আব্দারে কেউ ঠোট ফুলোয়?
মখমলি রং মিষ্টি নরম – দেখছ কেমন হাত বুলোয়!
বলবি কি বল হাব্লা পাগল আবোল তাবোল কান ঘেঁষে,
ফোক্লা গদাই যা বল্বি তাই ছাপিয়ে পাঠাই “সন্দেশে”।
আনন্দ
যে আনন্দ ফুলের বাসে,
যে আনন্দ পাখির গানে,
যে আনন্দ অরুণ আলোয়,
যে আনন্দ শিশুর প্রাণে,
যে আনন্দ বাতাস বহে,
যে আনন্দ সাগরজলে,
যে আনন্দ ধুলির কণায়,
যে আনন্দ তৃণের দলে,
যে আনন্দ আকাশ ভরা ,
যে আনন্দ তারায় তারায়,
যে আনন্দ সকল সুখে,
যে আনন্দ রক্তধারায়
সে আনন্দ মধুর হয়ে
তোমার প্রাণে পড়ুক ঝরি,
সে আনন্দ আলোর মত
থাকুক তব জীবন ভরি।
আলোছায়া
হোক্না কেন যতই কালো
এমন ছায়া নাইরে নাই –
লাগ্লে পরে রোদের আলো
পালায় না যে আপনি ভাই!
শুষ্কমুখে আঁধার ধোঁয়া
কঠিন হেন কোথায় বল্,
পাগল যাতে হাসির ছোঁয়া
আপনি গলে হয় না জল।।
আয়রে আলো আয়
পুব গগনে রাত পোহাল,
ভোরের কোণে লাজুক আলো
নয়ন মেলে চায়।
আকাশতলে ঝলক জ্বলে,
মেঘের শিশু খোলার ছলে
আলোক মাখে গায়।।
সোনার আলো, রঙিন্ আলো,
স্বপ্নে আঁকা নবীন আলো –
আয়রে আলো আয়।
আয়রে নেমে আঁধার পরে,
পাষাণ কালো ধৌত করে
আলোর ঝরণায়।।
ঘুম ভাঙান পাখির তানে
জাগ্রে আলো আকুল গানে
অকুল নীলিমায়।
আলসভরা আখিঁর কোণে,
দুঃখ ভয়ে আঁধার মনে,
আয়রে আলো আয়।।
ও বাবা !
পড়তে বসে মুখের পরে কাগজ খানি থুয়ে
রমেশ ভায়া ঘুমোয় পড়ে আরাম ক’রে শুয়ে।
শুনছ নাকি ঘড়র্ ঘড়র্ নাক ডাকার ধুম?
সখ যে বড় বেজায় দেখি- দিনের বেলায় ঘুম!
বাতাস পোরা এই যে থলি দেখ্ছ আমার হাতে,
দুড়ম করে পিট্লে পরে শব্দ হবে তাতে।
রমেশ ভায়া আঁতকে উঠে পড়বে কুপোকাৎ
লাগাও তবে -ধুম ধাড়াক্কা! ক্যাবাৎ! ক্যাবাৎ!
ও বাবারে! এ কেরে ভাই! মারবে নাকি চাটি?
আমি ভাবছি রমেশ বুঝি! সব করেছে মাটি!
আবার দেখ চোখ পাকিয়ে আস্ছে আমায় তেড়ে,
আর কেন ভাই? দৌড়ে পালাই, প্রানের আশা ছেড়ে!
কত বড়
ছোট্ট সে একরতি ইঁদুরের ছানা,
ফোটে নাই চোখ তার, একেবারে কানা।
ভাঙা এক দেরাজের ঝুলমাখা কোণে
মার বুকে শুয়ে শুয়ে মার কথা শোনে।
যেই তার চোখ ফোটে সেই দেখে চেয়ে-
দেরাজের ভারি কাঠ চারিদিক ছেয়ে।
চেয়ে বলে মেলি তার গোল গোল আঁখি-
“ওরে বাবা! পৃথিবীটা এত বড় নাকি?”
কলিকাতা কোথা রে
গিরিধি আরামপুরী, দেহ মন চিৎপাত,
খেয়ে শুয়ে হু হু করে কেটে যায় দিনরাত;
হৈ চৈ হাঙ্গামা হুড়োতাড়া হেথা নাই;
মাস বার তারিখের কোন কিছু ল্যাঠা নেই;
খিদে পেলে তেড়ে খাও, ঘুম পেলে ঘুমিও-
মোট কথা, কি আরাম, বুঝলে না তুমিও !
ভুলেই গেছিনু কোথা এই ধরা মাঝেতে
আছে যে শহর এক কলকাতা নামেতে-
হেন কালে চেয়ে দেখি চিঠি এক সমুখে,
চায়েতে অমুক দিন ভোজ দেয় অমুকে ।
‘কোথায়? কোথায়?’ বলে মন ওঠে লাফিয়ে
তাড়াতাড়ি চিঠিখানা তেড়ে ধরি চাপিয়ে,
ঠিকানাটা চেয়ে দেখি নীচু পানে ওধারে
লেখা আছে ‘কলিকাতা’ – সে আবার কোথারে !
স্মৃতি কয় ‘কলিকাতা ‘ রোস দেখি; তাই ত ,
কোথায় শুনেছি যেন , মনে ঠিক নাই ত,
বেগতিক শুধালেম সাধুরাম ধোপারে ;
সে কহিল, হলে হবে উশ্রীর ওপারে।
ওপারের জেলেবুড়ো মাথা নেড়ে কয় সে ,
‘হেন নাম শুনি নাই আমার এ বয়সে ।’
তারপরে পুছিলাম সরকারী মজুরে
তামাম মুলুক সে ত বাৎলায় ‘হুজুরে’
বেঙাবাদ বরাকর , ইদিকে পচম্বা ,
উদিকে পরেশনাথ ,পাড়ি দাও লম্বা ;
সব তার সড়গড় নেই কোন ভুল তায় –
‘কুলিকাতা কাঁহা’ বলি সেও মাথা চুলকায় !
অবশেষে নিরুপায় মাথা যায় ঘুলিয়ে ‘
‘টাইম টেবিল’ খুলি দেখি চোখ বুলয়ে ।
সেথায় পাটনা পুরী গয়া গোমো মাল্দ
বজবজ দমদম হাওড়া ও শ্যালদ –
ইত্যাদি কত নাম চেয়ে দেখি সামনেই
তার মাঝে কোন খানে কলিকাতা নাম নেই !!
-সব ফাঁকি বুজ্রুকী রসিকতা -চেষ্টা !
উদ্দেশে ‘শালা ‘ বলি গাল দিনু শেষটা।-
সহসা স্মৃতিতে যেন লাগিল কি ফুৎকার
উদিল কুমড়া হেন চাঁদপানা মুখ কার!
আশে পাশে ঢিপি ঢুপি পাহাড়ে পুঞ্জ,
মুখ চাঁচা ময়দান, মাঝে কিবা কুঞ্জ !
সে শোভা স্মরণে ঝরে নয়নের ঝরনা ;
গৃহিনীরে কহি ‘প্রিয়ে !মারা যাই ধর না ।
তার পরে দেখি ঘরে অতি ঘোর অনাচার –
রাখে না কো কেউ কোন তারিখের সমাচার !
তখনি আনিয়া পাঁজি দেখা গেল গণিয়া,
চায়ের সময় এল একেবারে ঘনিয়া !
হায়রে সময় নেই, মন কাদে হতাশে-
কোথায় চায়ের মেলা! মুখশশী কোথা সে !
স্বপন শূকায়ে যায় আধারিয়া নয়নে ,
কবিতায় গলি তাই গাহি শোক শয়নে।
কহ ভাই কহ রে
কহ ভাই কহ রে, অ্যাঁকা চোরা শহরে,
বদ্যিরা কেন কেউ আলুভাতে খায় না?
লেখা আছে কাগজে আলু খেলে মগজে
ঘিলু যায় ভেস্তিয়ে বুদ্ধি গজায় না।
কানা-খোঁড়া সংবাদ
পুরাতন কালে ছিল দুই রাজা,
নাম ধাম নাহি জানা,
একজন তার খোড়া অতিশয়,
অপর ভূপতি কানা।
মন ছিল খোলা, অতি আলো ভোলা
ধরমেতে ছিল মতি,
পর ধনে সদা ছিল দোঁহাকার
বিরাগ বিকট অতি।
প্রতাপের কিছু নাহি ছিল ত্রুটি
মেজাজ রাজারি মত,
শুনেছি কেবল, বুদ্ধিটা নাকি
নাহি ছিল সরু তত,
ভাই ভাই মত ছিল দুই রাজা,
না ছিল ঝগড়াঝাঁটি,
হেনকালে আসি তিন হাত জমি
সকল করিল মাটি।
তিন হাত জমি হেন ছিল, তাহা
কেহ নাহি জানে কার,
কহে খোঁড়া রায় “এক চক্ষু যার
এ জমি হইবে তার”।’
শুনি কানা রাজা ক্রোধ করি কয়
“আরে অভাগার পুত্র,
এ জমি তোমারি- দেখ না এখনি
খুলিয়া কাগজ পত্র”।
নক্সা রেখেছে এক বছর
বাক্সে বাঁধিয়া আঁটি,
কীট কুটমতি কাটিয়া কাটিয়া
করিয়াছে তারে মাটি ;
কাজেই তর্ক না মিটিল হায়
বিরোধ বাধিল ভারি,
হইল য্দ্দু হদ্দ মতন
চৌদ্দ বছর ধরি।
মরিল সৈন্য, ভাঙিল অস্ত্র,
রক্ত চলিল বহি,
তিন হাত জমি তেমনি রহিল,
কারও হার জিত নাহি
তবে খোঁড়া রাজা কহে, হায় হায়,
তর্ক নাহিক মিটে,
ঘোরতর রণে অতি অকারণে
মরণ সবার ঘটে”
বলিতে বলিতে চঁটাৎ করিয়া
হঠাৎ মাথায় তার
অদ্ভুত এক বুদ্ধি আসিল
অতীব চমৎকার।
কহিল তখন খোঁড়া মহারাজ,
শুন মোর কানা ভাই,
তুচ্ছ কারণে রক্ত ঢালিয়া
কখনও সুযশ নাই।
তার চেয়ে জমি দান করে ফেল
আপদ শান্তি হবে।”
কানা রাজা কহে, খাসা কথা ভাই,
কারে দিই কহ তবে।”
কহেন খঞ্জ, ” আমার রাজ্যে
আছে তিন মহাবীর-
একটি পেটুক, অপর অলস,
তৃতীয় কুস্তিগীর।
তোমার মুলুক কে আছে এমন
এদের হারাতে পারে?-
সবার সমুখে তিন হাত জমি
বকশিস দিব তারে।
কানা রাজা কহে ভীমের দোসর
আছে ত মল্ল মম,
ফালাহারে পটু, পঁচাশি পেটুক
অলস কুমড়া সম।
দেখা যাবে কার বাহাদুরি বেশি
আসুক তোমার লোক;
যে জিতিবে সেই পাবে এই জমি-
খোড়া বলে, তাই হোক।
পড়িল নোটিস ময়দান মাঝে
আলিশান সভা হবে,
তামাসা দেখিতে চারিদিক হতে
ছুটিয়া আসিল সবে।
ভয়ানক ভিড়ে ভরে পথঘাট,
লোকে হল লোকাকার,
মহা কোলাহল দাড়াবার ঠাই
কোনোখানে নাহি আর।
তারপর ক্রমে রাজার হুকুমে
গোলমাল গেল থেমে,
দুইদিক হতে দুই পালোয়ান
আসরে আসিল নেমে।
লম্ফে ঝম্ফে যুঝিল মল্ল
গজ-কচ্ছপ হেন,
রুষিয়া মুষ্টি হানিল দোহায়-
বজ্র পড়িল যেন!
গুঁতাইল কত ভোঁতাইল নাসা
উপাড়িল গোফ দাড়ি,
যতেক দন্ত করিল অন্ত
ভীষণ চাপটি মারি
তারপরে দোঁহে দোঁহারে ধরিয়া
ছুঁড়িল এমনি জোরে,
গোলার মতন গেল গো উড়িয়া
দুই বীর বেগভরে।
কিহল তাদের কেহ নাহি জানে
নানা কথা কয় লোকে,
আজও কেহ তার পায়নি খবর,
কেহই দেখেনি চোখে।
যাহোক এদিকে, কুস্তির শেষে
এল পেটুকের পালা,
যেন অতিকায় ফুটবল দুটি,
অথবা ঢাকাই জালা।
ওজনেতে তারা কেহ নহে কম,
ভোজনেতে ততোধিক,
বপু সুবিপুল, ভুড়ি বিভীষন-
ভারি সাতমন ঠিক।
অবাক দেখিছে সভার সকলে
আজব কান্ড ভারি-
ধামা ধামা লুচি নিমেষে ফুরায়
দই ওঠে হাঁড়ি হাঁড়ি!
দাড়ি পাল্লায় মাপিয়া সকলে
দেখে আহারের পরে ,
দুজনেই ঠিক বেড়েছে ওজনে
সাড়ে তিন মন করে।
কানা রাজা বলে একি হল জ্বালা,
আক্কেল নাই কারো ,
কেহ কি বোঝেনা সোজা কথা এই,
হয় জেতো নয় হারো।”
তার পর এল কুঁড়ে দুই জন
ঝাকার উপর চড়ে,
সভামাঝে দোহে শুয়ে চিৎপাত
চুপ চাপ রহে পড়ে।
হাত নাহি নাড়ে, চোখ নাহি মেলে,
কথা নাই কারো মুখে,
দিন দুই তিন রহিল পড়িয়া,
নাসা গীত গাহি সুখে।
জঠরে যখন জ্বলিল আগুন,
পরান কণ্ঠাগত,
তখন কেবল মেলিয়া আনন
থাকিল মড়ার মত।
দয়া করে তবে সহৃদয় কেহ
নিকটে আসিয়া ছুটি
মুখের নিকটে ধরিল তাদের
চাটিম কদলি দুটি।
খঞ্জের লোকে কহিল কষ্টে,
“ছাড়িয়া দে নারে ভাই”
কানার ভৃত্য রহিল হা করে
মুখে তার কথা নাই ।
তখন সকলে কাষ্ঠ আনিয়া
তায় কেরোসিন ঢালি,
কুড়েদের গায়ে চাপাইয়া রোষে
দেশলাই দিল জ্বালি।
খোঁড়ার প্রজাটি বাপরে বলিয়া
লাফ দিয়া তাড়াতাড়ি
কম্পিত পদে চম্পট দিল
একেবারে সভা ছাড়ি।
দুয়ো বলি সবে দেয় করতালি
পিছু পিছু ডাকে “ফেউ”?
কানার অলস বলে কি আপদ
ঘুমুতে দিবিনা কেঊ?
শুনে সবে বলে “ধন্য ধন্য
কুঁড়ে-কুল চুড়ামণি!”
ছুটিয়া তাহারে বাহির করিল
আগুন হইতে টানি।
কানার লোকের গুণপনা দেখে
কানা রাজা খুসী ভারি,
জমিতে দিলেই আরও দিল কত,
টাকাকড়ি ঘরবাড়ি।
কানে খাটো বংশীধর
কানে ঘাটো বংশীধর যায় মামাবাড়ি,
গুনগুনে গান গায় আর নাড়ে দাড়ি।।
চলেছে সে একমনে ভাবে ভরপুর,
সহসা বাজিল কানে সুমধুর সুর।।
বংশীধর বলে, “আহা, না জানি কি পাখি
সুদূরে মধুর গায় আড়ালেতে থাকি।।
দেখ, দেখ সুরে তার কত বাহাদুরি,
কালোয়াতি গলা যেন খেলে কারিকুরি ।।
এদিকে বেড়াল ভাবে, “এযে বড় দায়,
প্রাণ যদি থাকে তবে ল্যাজখানি যায়।।
গলা ছেড়ে চেচামেচি এত করি হায়,
তবু যে ছাড়ে না বেটা, কি করি উপায়।।
আর তো চলে না সহা এত বাড়াবাড়ি,
যা থাকে কপালে দেই এক থাবা মারি ।।
বংশীধর ভাবে, “একি বেসুরা যে করে,
গলা গেছে ভেঙে তাই ‘ফ্যাঁস’ সুর ধরে ।।”
হেনকালে বেরসিক বেড়ালের চাঁটি,
একেবারে সব গান করে দিল মাটি।।
কিছু চাই?
কারোর কিছু চাই গো চাই?
এই যে খোকা, কি নেবে ভাই?
জলছবি আর লাটু লাটাই
কেক বিস্কুট লাল দেশলাই
খেলনা বাঁশি কিংবা ঘুড়ি
লেড্ পেনসিল রবার ছুরি
এসব আমার বাক্সে নাই,
কারোর কিছু চাই গো চাই?
কারোর কিছু চাই গো চাই?
বৌমা কি চাও শুনতে পাই?
ছিটের কাপড় চিকন লেস্
ফ্যান্সি জিনিস ছুচের কেস্
আল্তা সিঁদুর কুন্তলীন
কাঁচের চুড়ি বোতাম পিন?
আমার কাছে ওসব নাই,
কারোর কিছু চাই গো চাই?
কারোর কিছু চাই গো চাই?
আপনি কি চান কর্তামশাই?
পকেট বই কি খেলার তাস
চুলের কলপ জুতোর ব্রাশ্
কলম কালি গঁদের তুলি
নস্যি চুরুট সুর্তি গুলি ?
ওসব আমার কিছুই নাই,
কারোর কিছু চাই গো চাই?
কেন সব কুকুরগুলো
কেন সব কুকুরগুলো খামাখা চ্যাঁচায় রাতে?
কেন বল দাঁতের পোকা থাকে না ফোক্লা দাঁতে?
পৃথিবীর চ্যাপ্টা মাথা কেন সে কাদের দোষ?-
এস ভাই চিন্তা করি দুজনে ছায়ায় বসে।
খোকা ঘুমায়
কোন্খানে কোন সুদূর দেশে কোন মায়ের বুকে,
কাদের খোকা মিষ্টি এমন ঘুমোয় মনের সুখ?
অজানা কোন দেশে সেথা কোন্খানে তার ঘর?
কোন্ সমুদ্র কত নদী কত দেশের পর?
কেমন সুরে কি বলে মা ঘুমপাড়ানি গানে
খোকার চোখে নিত্যি সেথা ঘুমটি ডেকে আনে?
ঘুমপাড়ানি মাসীপিসী তাদেরও কি থাকে?
‘মটি দিয়ে যাওগো’ ব’লে মা কি তাদের ডাকে?
শেয়াল আসে বেগুন খেতে, বর্গি আসে দেশে?
ঘুমের সাথে মিষ্টি মধুর মায়ের সুরটি মেশে?
খোকা জানে মায়ের মুখটি সবার চেয়ে ভালো
সবার মিষ্টি মায়ের হাসি, মায়ের চোখের আলো।
স্বপন মাঝে ছায়ার মত মায়ের মুখটি ভাসে,
তাইতে খোকা ঘুমের ঘোরে আপন মনে হাসে।
খোকার ভাবনা
মোমের পুতুল লোমের পুতুল আগ্লে ধরে হাতে
তবুও কেন হাব্লা ছেলের মন ওঠে না তাতে?
একলা জেগে একমনেতে চুপ্টি করে বসে
আন্মনা সে কিসের তরে আঙুলখানি চোষে?
নাইকো হাসি নাইকো খেলা নাইকো মুখে কথা,
আজ সকালে হাব্লাবাবুর মন গিয়েছে কোথা?
ভাব্ছে বুঝি দুধের বোতল আস্ছে নাকো কেন?
কিংবা ভাবে মায়ের কিসে হচ্ছে দেরী হেন।
ভাব্ছে এবার দুধ খাবে না, কেবল খাবে মুড়ি,
দাদার সাথে কোঁমর বেঁধে করবে হুড়োহুড়ি
ফেল্বে ছুঁড়ে চামচটাকে পাশের বাড়ির চালে,
না হয় তেড়ে কামড়ে দেবে দুষ্ট দাদুর গালে।
কিংবা ভাবে একটা কিছু ঠুক্তে যদি পেতো-
পুতুলটাকে করত ঠুকে এক্কেবারে থেঁতো।
ছুটি
ঘুচবে জ্বালা পুঁথির পালা ভাবছি সারাক্ষণ-
পোড়া স্কুলের পড়ার পরে আর কি বসে মন?
দশটা থেকেই নষ্ট খেলা, ঘন্টা হতেই শুরু
প্রাণটা করে ‘পালাই পালাই’ মনটা উডু উড়–-
পড়ার কথা খাতায়, পাতায়, মাথায় নাহি ঢোকে!
মন চলে না মুখ চলে যায় আবোলতাবোল ব’কে!
কানটা ঘোরে কোন মুলুকে হুশ থাকে না তার,
এ কান দিয়ে ঢুকলে কথা, ও কান দিয়ে পার।
চোখ থাকে না আর কিছুতেই, কেবল দেখে ঘড়ি ;
বোর্ড আঁকা অঙ্ক ঠেকে আঁচড়কাটা খড়ি।
কল্পনাটা স্বপ্নে চ’ড়ে ছুটছে মাঠে ঘাটে-
আর কি রে মন বাঁধন মানে? ফিরতে কি চায় পাঠে?
পড়ার চাপে ছঁটফটিয়ে আর কিরে দিন চলে?
ঝুপ্ করে মন ঝাঁপ দিয়ে পড়্ ছুটির বন্যাজলে।
ছুটি
ছুটি! ছুটি! ছুটি!
মনের খুশি রয়না মনে হেসেই লুটোপুটি।
ঘুচল এবার পড়ার তাড়া অঙ্ক কাটাকুটি
দেখ্ব না আর পন্ডিতের ঐ রক্ত আঁখি দুটি।
আর যাব না স্কুলের পানে নিত্য গুটি গুটি
এখন থেকে কেবল খেলা কেবল ছুটোছুটি।
পাড়ার লোকের ঘুম ছুটিয়ে আয়রে সবাই জুটি
গ্রীষ্মকালের দুপুর রোদে গাছের ডালে উঠি
আয়রে সবাই হল্লা ক’রে হরেক মজা লুটি
একদিন নয় দুই দিন নয় দুই দুই মাস ছুটি।
ছোটে হনহন
চলে হন্ হন্ ছোটে পন্ পন্
ঘোরে বন্ বন্ কাজে ঠন্ ঠন্
বায়ু শন্ শন্ শীতে কন্ কন্
কাশি খন্ খন্ ফোঁড়া টন্ টন্
মাছি ভন্ ভন্ থালা ঝন্ ঝন্
টিক্-টিক্-টিক
টিক্-টিক্ চলে ঘড়ি টিক্-টিক্,টিক্,
একটা ইঁদুর এল সে সময়ে ঠিক্!
ঘড়ি দেখে এক লাফে তাহাতে চড়িল,
টং করে অমনি ঘড়ি বাজিয়া উঠিল।
অমনি ইঁদুর ভায়া লেজ গুটাইয়া,
ঘড়ির উপর থেকে পড়ে লাফাইয়া!
ছুটিয়া পালায়ে গেল আর না আসিল
টিক্-টিক্-টিক্- ঘড়ি চলিতে লাগিল!
টুকরো ছড়া
তিন বুড়ো পন্ডিত টাকচুড়ো নগরে
চ’ড়ে এক গামলায় পাড়ি দেয় সাগরে।
গাম্লাতে ছেঁদা আগে কেউ দেখনি,
গানখানি তাই মোর থেমে গেল এখনি।।
ম্যাও ম্যাও হুলোদাদা, তোমার যে দেখা নাই?
গেছিলাম রাজপুরী রানীমার সাথে ভাই!
“তাই নাকি? বেশ বেশ, কি দেখেছ সেখানে?”
দেখেছি ইদুর এক রানীমার উঠানে।।”
গাধাটার বুদ্ধি দেখ!- চাঁট মেরে সে নিজের গালে,
কে মেরেছে দেখবে বলে চড়তে গেছে ঘরের চালে।
ছোট ছোট ছেলেগুলো কিসে হয় তৈরি,
-কিসে হয় তৈরি,
কাদা আর কয়লা ধুলো মাটি ময়লা,
এই দিয়ে ছেলেগুলো তৈরি।
ছোট ছোট মেয়ে গুলি কিসে হয় তৈরি।
কিসে হয় তৈরি?
ক্ষীর ননী চিনি আর ভাল যাহা দুনিয়ার
মেয়েগুলি তাই দিয়ে তৈরি।।
রং হল চিঁড়েতন সব গেল ঘুলিয়ে,
গাধা যায় মামাবাড়ি টাকে হাত বুলিয়ে।
বেড়াল মরে বিষম খেয়ে, চাঁদের ধরল মাথা
হঠাৎ দেখি ঘর বাড়ি সব ময়দা দিয়ে গাঁথা।।
ঢপ ঢপ ঢাক ঢোল
ঢপ্ ঢপ্ ঢাক ঢোল ভপ্ ভপ্ বাঁশি
ঝন্ ঝন্ করতাল্ ঠন্ ঠন্ কাঁসি।
ধুমধাম বাপ্ বাপ্ ভয়ে ভ্যাবাচ্যাকা
বাবুদের ছেলেটার দাঁত গেছে দেখা।।
দাদা গো দাদা
দাদা গো দাদা, সত্যি তোমার সুরগুলো খুব খেলে!
এম্নি মিঠে – ঠিক যেন কেউ গুড় দিয়েছে ঢেলে!
দাদা গো দাদা, এমন খাসা কণ্ঠ কোথায় পেলে?
এই খেলে যা ! গান শোনাতে আমার কাছেই এলে?
দাদা গো দাদা, পায়ে পড়ি তোর ভয় পেয়ে যায় ছেলে-
গাইবে যদি ঐখেনে গাও, ঐ দিকে মুখ মেলে।]
দিনের হিসাব
ভোর না হতে পাখিরা জোটে গানের চোটে ঘুমটি ছোটে-
চোখ্টি খোলো, গাত্র তোলো আরে মোলো সকাল হলো।
হায় কি দশা পড়্তে বসা অঙ্ক কষা, কলম ঘষা।
দশটা হলে হট্টগোলে দৌড়ে চলে বই বগলে!
স্কুলের পড়া বিষম তাড়া, কানটি নাড়া বেঞ্চে দাঁড়া
মরে কি বাঁচে! সমুখে পাছে বেত্র নাচে নাকের কাচে।।
খেলতে যে চায় খেল্বে কি ছাই বৈকেলে হায় সময় কি পায়?
খেলাটি ক্রমে যেম্নি জমে দখিনে বামে সন্ধ্যা নামে;
ভাঙ্ল মেলা সাধের খেলা- আবার ঠেলা সন্ধ্যাবেলা-
মুখ্টি হাঁড়ি তাড়াতাড়ি দিচ্ছে পাড়ি যে যার বাড়ি।
ঘুমের ঝোঁকে ঝাপ্সা চোখে ক্ষীণ আলোকে অঙ্ক টোকে ;
ছুটি পাবার সুযোগ আবার আয় রবিবার হপ্তা কাবার!
দুষ্টুলোকের মিষ্টি কথায়
দুষ্টুলোকের মিষ্টি কথায়
নাচলে লোকের স্বস্তি কোথায়?
এম্নি দশাই তার কপালে লেখে।
কথার পাকে মানুষ মেরে
মাকড়জীবী ঐ যে ফেরে,
গড় করি তার অনেক তফাৎ থেকে।
*বিখ্যাত ইংরাজি কবিতার অনুকরণে
নদী
হে পর্বত, যত নদী করি নিরীক্ষণ
তোমাতেই করে তারা জনম গ্রহণ।
ছোট বড় ঢেউ সব তাদের উপরে
কল্ কল্ শব্দ করি সদা ক্রীড়া করে,
সেই নদী বেকে চুরে যায় দেশে দেশে,
সাগরেতে পড়ে গিয়া সকলের শেষে।
পথে যেতে যেতে নদী দেখে কত শোভা,
কি সুন্দর সেই সব কিবা মনোলোভা।
কোথাও কোকিলে দেখে বসি সাথী সনে,
কি সুন্দর কুহু গান গায় নিজ মনে।
কোথাও ময়ূর দেখে পাখা প্রসারিয়া
বনধারে দলে দলে আছে দাড়াইয়া!
নদীতীরে কত লোক শ্রান্তি নাশ করে,
কত শত পক্ষী আসি তথা বিচারে।
দেখিতে দেখিতে নদী মহাবেগে ধায়
কভুও সে পশ্চাতেতে ফিরে নাহি চায়।
নাচন
নাচ্ছি মোরা মনের সাধে গাচ্ছি তেড়ে গান
হুলো মেনি যে যার গলায় কালোয়াতীর তান।
নাচ্ছি দেখে চাঁদা মামা হাসছে ভরে গাল
চোখটি ঠেরে ঠাট্টা করে, দেখনা বুড়ার চাল।
নূতন বৎসর
‘নুতন বছর! নুতন বছর!’ সবাই হাঁকে সকাল সাঁঝে,
আজকে আমার সূর্যি মামার মুখটি জাগে মনের মাঝে।
মুস্কিলাসান করলে মামা, উস্কিয়ে তার আগুনখানি,
ইস্কুলেতে লাগ্ল তালা থাম্ল সাধের পড়ার ঘানি।
এক্জমিনের বিষম ঠেলা চুলক রে ভাই ঘুচ্ল জ্বালা,
নতুন সালের নূতন তালে হোক্ তবে আজ ‘হকির’ পালা।
কোন্খানে কোন মেজের কোণে, কলম কানে চশমা নাকে,
বিরামহারা কোন বেচারা দেখেন কাগজ, ভয় কি তাঁকে?
অঙ্কে দিবেন হকির গোলা, শঙ্কা ত নাই তাহার তরে,
তঙ্কা হাজার মিলুক তাঁহার, ডঙ্কা মেরে চলুন ঘরে,
দিনকে যদি জোটেন খেলায় সাঁঝের বেলায় মাঠের মাঝে,
‘গোল্লা’ পেয়ে ঝোল্লা ভরে আবার না হয় যাবেন কাজে!
আয় তবে আয়ে, নবীন বরষ মলয় বায়ের দোলায় দুলে
আয় সঘনে গগন বেয়ে, পাগলা ঝড়ের পালটি তুলে।
আয় বাংলার বিপুল মাঠে শ্যামল ধানের ঢেউ খেলিয়ে,
আয়েরে সুখের ছুটির দিনে আম-কাঁঠলের খবর নিয়ে!
আয় দুলিয়ে তালের পাখা, আয় বিছিয়ে শীতল ছায়া,
পাখির নীড়ে চাদের হাটে আয় জাগিয়ে মায়ের মায়া।
তাতুক না মাঠ, ফাটুক না কাঠ, ছুটুক না ঘাম নদীর মত,
জয় হে তোমার নূতন বছর! তোমার যে গুণ গাইব কত?
পুরান বছর মলিন মুখে যায় সকলের বালাই নিয়ে,
ঘুচ্ল কি ভাই মনের কলি সেই বুড়োকে বিদায় দিয়ে?
নুতন সালে নুতন বলে, নুতন আশায়, নুতন সাজে
আয় দয়ালের নাম লয়ে ভাই, যাই সকলে যে যার কাজে!
বদ্যি বুড়ো
শুন্ছ দাদা! ঐ যে হোথায় বদ্যি বুড়ো থাকে ,
সে নাকি রোজ খাবার সময় হাত দিয়ে ভাত মাখে?
শুন্ছি নাকি খিদেও পায় সারাদিন না খেলে ?
চক্ষু নাকি আপনি বোজে ঘুমটি তেমন পেলে ?
চলতে গেলে ঠ্যাং নাকি তার ভুয়েঁর পরে ঠেকে?
কান দিয়ে সব শোনে নাকি? চোখ দিয়ে সব দেখে?
শোয় নাকি সে মুন্ডুটাকে শিয়র পানে দিয়ে?
হয় না কি হয় সত্যি মিথ্যা চল না দেখি গিয়ে!
বন্দনা
নমি সত্য সনাতন নিত্য ধনে,
নমি ভক্তিভরে নমি কায়েমনে।
নমি বিশ্বচরাচর লোকপতে
নমি সর্বজনাশ্রয় সর্বগতে।
নমি সৃষ্টি-বিধারণ শক্তিধরে,
নমি প্রাণপ্রবাহিত জীব জড়ে।
তব জ্যোতিবিভাসিত বিশ্বপটে
মহাশুন্যতলে তব নাম রটে।
কত সিন্ধুতরঙ্গিত ছন্দ ভরে
কত স্তব্ধ হিমাচল ধ্যান করে।
কত সৌরভ সঞ্চিত পুষ্পদলে
কত সূর্য বিলুন্ঠিত পাদতলে।
কত বন্দনঝঙ্কৃত ভক্তচিতে
নমি বিশ্ব বরাভয় মৃত্যুজিতে।
বলব কি ভাই
বল্ব কি ভাই হুগ্লি গেলুম
বলছি তোমায় চুপি চুপি-
দেখ্তে পেলাম তিনটে শুয়োর
মাথায় তাদের নেইকো টুপি।।
বাবু
অতি খাসা মিহি সুতি
ফিনফিনে জামা ধুতি,
চরণে লপেটা জুতি জরিদার।
এ হাতে সোনার ঘড়ি,
ও হাতে বাঁকান ছড়ি,
আতরের ছড়াছড়ি চারিধার!
চক্চকে চুঁল ছাঁটা
তায় তোফা টেরিকাটা-
সোনার চশমা আঁটা নাসিকায়।
ঠোঁট দুটি এঁকে বেঁকে
ধোঁয়া ছাড়ে থেকে থেকে,
হালচাল দেখে দেখে হাসি পায়।
ঘোষেদের ছোট মেয়ে
পিক্ ফেলে পান খেয়ে ,
নিচু পানে নাহি চেয়ে,হায়রে।
সেই পিক থ্যাপ ক’রে
লেগেছে চাদর ভরে
দেখে বাবু কেঁদে মরে যায়রে।
ওদিকে ছ্যাকরাগাড়ি
ছুটে চলে তাড়াতাড়ী
ছিট্কিয়ে কাঁড়ি কাঁড়ি ঘোলাজল ।
সহসা সে জল লাগে
জামার পিছন বাগে,
বাবু করে মহারাগে কোলাহল ।।
বিচার
ইঁদুর দেখে মাম্দো কুকুর বল্লে তেড়ে হেঁকে-
“বলব কি আর, বড়ই খুশি হলেম তোরে দেখে।
আজকে আমার কাজ কিছু নেই, সময় আছে মেলা,
আয় না খেলি দুইজনাতে মোকদ্দমা খেলা ।
তুই হবি চোর তোর নামেতে করব নালিশ রুজু”-
“জজ্ কে হবে?” বল্লে ইঁদুর ,বিষম ভয়ে জুজু,
“কোথায় উকিল প্যায়দা পুলিশ , বিচার কিসে হবে?”
মাম্দো বলে “তাও জানিসনে ? শোন বলে দেই তবে!
আমিই হব উকিল হাকিম , আমিই হব জুরি,
কান ধরে তোর বলব ব্যাটা, ফের করেছিস চুরি?
সটান দেব ফাসির হুকুম অমনি একেবারে-
বুঝবি তখন চোর বাছাধন বিচার বলে কারে।”
বিষম কান্ড
কর্তা চলেন, গিন্নী চলেন, খোকাও চলেন সাথে,
তড়্বড়িয়ে বুক ফুলিয়ে শুতে যাচ্ছেন রাতে ।
তেড়ে হন্হন্ চলে তিনজন যেন পল্টন চলে,
সিঁড়ি উঠ্তেই একি কান্ড! এ আবার কি বলে!
ল্যাজ লম্বা কান গোল গোল, তিড়িং বিড়িং ছোটে,
চোখ্ মিট্মিট্ কুটুস্ কাটুস্-এটি কোনজন বটে !
হেই! হুস! হ্যাস!ওরে বাস্রে মতলবখানা কিরে,
করলে তাড়া যায়না তবু,দেখ্ছে আবার ফিরে।
ভাবছে বুড়ো করবো গুঁড়ো ছাতার বাড়ি মেরে,
আবার ভাবে ফস্কে গেলে কাম্ড়ে দেবে তেড়ে।
আরে বাপ্রে! বস্ল দেই দুখ পায়ে ভর করে,
বুক দুর দুর বুড়ো ভল্লুর, মোমবাতি যায় পড়ে।
ভীষন ভয়ে দাঁত কপাটি তিন মহাবীর কাঁপে ,
গড়িয়ে নামে হুড়মুড়িয়ে সিঁড়ির ধাপে ধাপে।
বিষম ভোজ
“অবাক কান্ড!” বল্লে পিসী, “এক চাঙাড়ি মেঠাই এল-
এই ছিল সব খাটের তলায়, এক নিমিষে কোথায় গেল?”
সত্যি বটে বললে খুড়ী, “আনলো দু’সের মিঠাই কিনে-
হঠাৎ কোথায় উপসে গেল? ভেল্কিবাজি দুপুর দিনে?”
“দাঁড়াও দেখি” বল্লে দাদা, “কর্ছি আমি এর কিনারা-
কোথায় গেল পটলা ট্যাঁপা – পাচ্ছিনে যে তাদের সাড়া?”
পর্দাঘেরা আড়াল দেওয়া বারান্দাটার ঐ কোণেতে
চল্ছে কি সব ফিস্ ফ্সি্ ফিস্ শুনলে দাদা কানটি পেতে।
পটলা ট্যাঁপা ব্যস্ত দুজন ট্প্টপাটপ্ মিঠাই ভোজে,
হঠাৎ দেখে কার দুটো হাত এগিয়ে তাদের কানটি খোঁজে।
কানের উপর প্যাঁচ্ ঘুরাতেই দু চোখ বেয়ে অশ্রু ছোটে,
গিলবে কি ছাই মুখের মিঠাই ,কান বুঝি যায় টানের চোটে।
পটল বাবুর হোম্রা গলা মিল্ল ট্যাঁপার চিকন সুরে
জাগ্ল করুন রাগরাগিণী বিকট তানে আকাশ জুড়ে।
বেজায় খুশি
বাহবা বাবুলাল! গেলে যে হেসে!
বগলে কাতুকুতু কে দিল এসে?
এদিকে মিটিমিটি দেখ কি চেয়ে?
হাসি যে ফেটে পড়ে দু’গাল বেয়ে !
হাসে যে রাঙা ঠোঁট দন্ত মেলে
চোখের কোণে কোণে বিজলী খেলে
হাসির রসে গ’লে ঝরে যে লালা
কেন এ খি-খি-খি-খি হাসির পালা?
যে দেখে সেই হাসে হাহাহা হাহা
বাহবা বাবুলাল বাহবা বাহা!
বেজায় রাগ
ও হাড়্গিলে, হাড়্গিলে ভাই, খাপ্পা বড্ড আজ।
ঝগড়া কি আর সাজে তোমার? এই কি তোমার যোগ্য কাজ?
হোম্রা চোম্রা মান্য তোমরা বিদ্যেবুদ্ধি মর্যাদায়
ওদের সঙ্গে তর্ক করছ – নাই কি কোন লজ্জা তায়?
জান্ছ নাকি বলছে ওরা ? কিচির মিচির কিচ্চিরি,
অর্থাৎ কিনা, তোমার নাকি চেহারাটা বিচ্ছিরি ।
বলছে আচ্ছা বলুক, তাতে ওদেরই তো মুখ ব্যথা,
ঠ্যাঁটা লোকের শাস্তি— যত ওরাই শেষে ভুগবে তা ।
ওরা তোমায় খোঁড়া বলছে? বেয়াদব ত খুব দেখি!
তোমার পায়ে বাতের কষ্ট- ওরা সেসব বুঝবে কি?
তাই বলে কি নাচ্বে রাগে? উঠ্বে চ’টে চট করে?
মিথ্যে আরো ত্যক্ত হবে ওদের সাথে টক্করে।
ঐ শোন কি বলছে আবার , কচ্ছে কত বক্তৃতা-
বল্ছে তোমার নেড়া মাথায় ঘোলা ঢালবে – সত্যি তা?
চড়াই পাখির বড়াই দেখ তোমায় দিচ্ছে টিট্কিরি-
বল্ছে তোমার মিষ্টি গলায় গান ধরত গিট্কিরি ।
বল্ছে তোমার কাঁথাটাকে ‘রিফুকর্ম’ করবে কি?
খোঁড়া ঠ্যাঙে নামেবে জলে ? আর কোলা ব্যাং ধরবে কি?
আর চ’টো না আর শুনো না ঠ্যাঁটা মুখের টিপ্পনি,
ওদের কথায় কান দিতে নেই, স’রে পড়্ এক্ষুনি।
বেশ বলেছ
এসব কথা শুনলে তোদের লাগবে মনে ধাঁধাঁ,
কেউ বা বুঝে পুরোপুরি, কেউ বা বুঝে আধা।
কারে বা কই কিসের কথা, কই যে দফে দফে,
গাছের ‘পরে কাঁঠাল দেখে তেল মেখ না গোঁফে।
একটি একটি কথায় যেন সদ্য দাগে কামান,
মন বসনের ময়লা ধুতে তত্ত্বকথাই সাবান।
বেশ বলেছ, ঢের বলেছ, ঐখেনে দাও দাঁড়ি,
হাটের মাঝে ভাঙ্বে কেন বিদ্যে বোঝাই হাঁড়ি!
বড়াই
গাছের গোড়ায় গর্ত করে ব্যাং বেঁধেছেন বাসা,
মনের সুখে গাল ফুলিয়ে গান ধরেছেন খাসা।
রাজার হাতি হাওদা -পিঠে হেলে দুলে আসে-
বাপরে ব’লে ব্যাং বাবাজি গর্তে ঢোকেন ত্রাসে!
রাজার হাতি মেজাজ ভারি হাজার রকম চাল ;
হঠাৎ রেগে মটাং করে ভাঙল গাছের ডাল।
গাছের মাথায় চড়াই পাখি অবাক হ’য়ে কয়-
বাসরে বাস! হাতির গায়ে এমন জোরও হয়!
মুখ বাড়িয়ে ব্যাং বলে, ভাই তাইত তোরে বলি-
“আমরা, অর্থাৎ চার-পেয়েরা, এন্মি ভাবেই চলি”।।
ভারি মজা
এই নেয়েছ, ভাত খেয়েছ, ঘন্টাখানেক হবে-
আবার কেন হঠাৎ হেন নামলে এখন টবে?
একলা ঘরে ফুর্তি ভরে লুকিয়ে দুপুরবেলা,
স্নানের ছলে ঠান্ডা জলে জল ছপ্ছপ্ খেলা ।
জল ছিটিয়ে, টব পিটিয়ে, ভাবছ, “আমোদ ভারি-
কেউ কাছে নাই, যা খুশি তাই করতে এখন পারি।”
চুপ্ চুপ্ চুপ্- ঐ দুপ্ দুপ্! ঐ জেগেছে মাসি,
আসছে ধেয়ে, শুনতে পেয়ে দুষ্ট মেয়ের হাসি।
ভাল ছেলের নালিশ
মাগো!
প্রসন্নটা দুষ্টু এমন! খাচ্ছিল সে পরোটা
গুড় মাখিয়ে আরাম ক’রে বসে –
আমায় দেখে একটা দিল ,নয়কো তাও বড়টা,
দুইখানা সেই আপনি খেল ক’ষে!
তাইতে আমি কান ধরে তার একটুখানি পেঁচিয়ে
কিল মেরেছি ‘হ্যাংলা ছেলে’ বলে-
অম্নি কিনা মিথ্যা করে ষাঁড়ের মত চেচিয়ে
গেল সে তার মায়ের কাছে চলে!
মাগো!
এম্নিধারা শয়তানি তার, খেলতে গেলাম দুপুরে,
বল্ল, ‘এখন খেলতে আমার মানা’-
ঘন্টাখানেক পরেই দেখি দিব্যি ছাতের উপরে
ওড়াচ্ছে তার সবুজ ঘুড়ি খানা।
তাইতে আমি দৌড়ে গিয়ে ঢিল মেরে আর খুঁচিয়ে
ঘুড়ির পেটে দিলাম করে ফুটো-
আবার দেখ বুক ফুলিয়ে সটান মাথা উঁচিয়ে
আনছে কিনে নতুন ঘুড়ি দুটো!
মনের মতন
কান্না হাসির পোঁটলা বেঁধে বর্ষভরা পুঁজি,
বৃদ্ধ বছর উধাও হ’লে ভুতের মুলুক খুঁজি।
নূতন বছর এগিয়ে এসে হাত পাতে ঐ দ্বারে,
বল দেখি মন, মনের মতন কি দিবি তুই তারে?
আর কি দিব?- মুখের হাসি ভরসাভরা প্রাণ।
সুখের মাঝে দুখের মাঝে আনন্দময় গান।
মাসি গো মাসি
মাসি গো মাসি পাচ্ছে হাসি
নিম গাছেতে হচ্ছে শিম্-
হাতীর মাথায় ব্যাঙের ছাতা
কাগের বাসায় বগের ডিম্ ।।
মূর্খমাছি
মাকড়সা
সান্-বাঁধা মোর আঙিনাতে
জাল বুনেছি কাল্কে রাতে ,
ঝুল ঝেড়ে সব সাফ করেছি বাসা।
আয় না মাছি আমার ঘরে,
আরাম পাবি বসলে পরে,
ফরাশ্ পাতা দেখবি কেমন খাসা!
মাছি
থাক্ থাক্ থাক আর বলে না ,
আনকথাতে মন গলে না-
ব্যবসা তোমার সবার আছে জানা।
ঢুকলে তোমার জালের ঘেরে
কেউ কোনদিন আর কি ফেরে?
বাপ্রে সেথায় ঢুক্তে মোদের মানা।
মাকড়সা
হওয়ায় দোল জালের দোলা
চারদিকে তার জান্লা খোলা
আপ্নি ঘুমে চোখ যে আসে জুড়ে!
আয়না হেথা হাত পা ধুয়ে
পাখনা মুড়ে থাক না শুয়ে-
ভন্ ভন্ ভন্ মরবি কেন উড়ে?
মাছি
কাজ নেই মোর দোলায় দুলে,
কোথায় তোমার কথায় ভুলে
প্রাণটা নিয়ে টান পড়ে ভাই শেষে।
তোমার ঘরে ঘুম যদি পায়
সে ঘুম কভু ভাঙ্বে না হায় –
সে ঘুম নাকি এমন সর্বনেশে!
মাকড়সা
মিথ্যে কেন ভাবিস্ মনে?
দেখ্না এসে ঘরের কোণে
ভাঁড়ার ভরা খাবার আছে কত!
দে-টপাটপ্ ফেলবি মুখে।
মাছি
লোভ দেখালেই ভুলবে ভবি,
ভাবছ আমায় তেমনি লোভী!
মিথ্যে দাদা ভোলাও কেন খালি,
করব কি ছাই ভাড়ার দেখে?
প্রণাম করি আড়াল থেকে-
আজকে তোমার সেই গুড়ে ভাই বালি।
মাকড়সা
নধর কালো বদন ভরে
রূপ যে কত উপচে পড়ে!
অবাক দেখি মুকুটমালা শিরে!
হাজার চোখে মানিক জ্বলে!
ইন্দ্রধনু পাখার তলে!
ছয় পা ফেলে আয় না দেখি ধীরে।
মাছি
মন ফুর্ফুর্ ফুর্তি নাচে-
একটুখানি যাই না কাছে!
যাই যাই যাই- বাপরে একি বাধাঁ।
ও দাদা ভাই রক্ষে কর!
ফাঁদ পাতা এ কেমন তরো।
পড়ে হাত পা হল বাঁধা ।