• আমাদের সম্পর্কে
  • যোগাযোগ
  • গোপনীয়তা নীতি
মঙ্গলবার, মার্চ 21, 2023
  • Login
BnBoi
  • বাংলাদেশী লেখক
    • অতুলচন্দ্র গুপ্ত
    • অভিজিৎ রায়
    • আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
    • আনিসুল হক
    • আবু ইসহাক
    • আবু রুশদ
    • আবুল আসাদ
    • আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন
    • আবুল বাশার
    • আরজ আলী মাতুব্বর
    • আল মাহমুদ
    • আসাদ চৌধুরী
    • আহমদ ছফা
    • আহমদ শরীফ
    • ইমদাদুল হক মিলন
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
    • কাসেম বিন আবুবাকার
    • জসীম উদ্দীন
    • তসলিমা নাসরিন
    • দাউদ হায়দার
    • দীনেশচন্দ্র সেন
    • নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
    • নিমাই ভট্টাচার্য
    • প্রফুল্ল রায়
    • প্রমথ চৌধুরী
    • ময়ূখ চৌধুরী
    • মহাদেব সাহা
    • মাহমুদুল হক
    • মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    • হুমায়ূন আহমেদ
  • ইন্ডিয়ান লেখক
    • অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়
    • অতুল সুর
    • অদ্রীশ বর্ধন
    • অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • অনীশ দেব
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার
    • আশাপূর্ণা দেবী
    • আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
    • কাজী নজরুল ইসলাম
    • ক্ষিতিমোহন সেন
    • তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
    • তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়
    • দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
    • নারায়ণ সান্যাল
    • নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
    • নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    • পাঁচকড়ি দে
    • পূর্ণেন্দু পত্রী
    • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
    • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • বিমল মিত্র
    • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
    • হেমেন্দ্রকুমার রায়
  • বিভাগসমূহ
    • আত্মজীবনী
    • ইতিহাস
    • উপন্যাস
    • কবিতা
    • কল্পকাহিনী
    • কাব্যগ্রন্থ
    • খেলাধুলার বই
    • গল্পের বই
    • গোয়েন্দা কাহিনী
    • ছোট গল্প
    • জীবনী
    • দর্শন
    • ধর্মীয় বই
    • নাটকের বই
    • প্রবন্ধ
    • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
    • বৈজ্ঞানিক বই
    • ভূতের গল্প
    • মুক্তিযুদ্ধের-বই
    • রহস্যময় গল্পের বই
    • রোমাঞ্চকর গল্প
    • রোম্যান্টিক গল্পের বই
    • শিক্ষামূলক বই
    • সমগ্র
  • সিরিজ বই
    • মিসির আলী সমগ্র
    • হিমু সিরিজ
No Result
View All Result
  • বাংলাদেশী লেখক
    • অতুলচন্দ্র গুপ্ত
    • অভিজিৎ রায়
    • আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
    • আনিসুল হক
    • আবু ইসহাক
    • আবু রুশদ
    • আবুল আসাদ
    • আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন
    • আবুল বাশার
    • আরজ আলী মাতুব্বর
    • আল মাহমুদ
    • আসাদ চৌধুরী
    • আহমদ ছফা
    • আহমদ শরীফ
    • ইমদাদুল হক মিলন
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
    • কাসেম বিন আবুবাকার
    • জসীম উদ্দীন
    • তসলিমা নাসরিন
    • দাউদ হায়দার
    • দীনেশচন্দ্র সেন
    • নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
    • নিমাই ভট্টাচার্য
    • প্রফুল্ল রায়
    • প্রমথ চৌধুরী
    • ময়ূখ চৌধুরী
    • মহাদেব সাহা
    • মাহমুদুল হক
    • মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    • হুমায়ূন আহমেদ
  • ইন্ডিয়ান লেখক
    • অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়
    • অতুল সুর
    • অদ্রীশ বর্ধন
    • অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • অনীশ দেব
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার
    • আশাপূর্ণা দেবী
    • আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
    • কাজী নজরুল ইসলাম
    • ক্ষিতিমোহন সেন
    • তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
    • তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়
    • দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
    • নারায়ণ সান্যাল
    • নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
    • নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    • পাঁচকড়ি দে
    • পূর্ণেন্দু পত্রী
    • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
    • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • বিমল মিত্র
    • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
    • হেমেন্দ্রকুমার রায়
  • বিভাগসমূহ
    • আত্মজীবনী
    • ইতিহাস
    • উপন্যাস
    • কবিতা
    • কল্পকাহিনী
    • কাব্যগ্রন্থ
    • খেলাধুলার বই
    • গল্পের বই
    • গোয়েন্দা কাহিনী
    • ছোট গল্প
    • জীবনী
    • দর্শন
    • ধর্মীয় বই
    • নাটকের বই
    • প্রবন্ধ
    • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
    • বৈজ্ঞানিক বই
    • ভূতের গল্প
    • মুক্তিযুদ্ধের-বই
    • রহস্যময় গল্পের বই
    • রোমাঞ্চকর গল্প
    • রোম্যান্টিক গল্পের বই
    • শিক্ষামূলক বই
    • সমগ্র
  • সিরিজ বই
    • মিসির আলী সমগ্র
    • হিমু সিরিজ
No Result
View All Result
BnBoi
No Result
View All Result
  • বইয়ের নামঃ অন্যান্য ছড়াসমূহ
  • লেখকের নামঃ সুকুমার রায়
  • বিভাগসমূহঃ ছড়াসমগ্র

অন্ধ মেয়ে

গভীর কালো মেঘের পরে রঙিন ধনু বাঁকা,
রঙের তুলি বুলিয়ে মেঘে খিলান যেন আঁকা!
গবুজ ঘাসে রোদের পাশে আলোর কেরামতি
রঙিন্ বেশে রঙিন্ ফুলে রঙিন্ প্রজাপতি!

অন্ধ মেয়ে দেখ্ছে না তা – নাইবা যদি দেখে-
শীতল মিঠা বাদল হাওয়া যায় যে তারে ডেকে!
শুনছে সে যে পাখির ডাকে হরয কোলাকুলি
মিষ্ট ঘাসের গন্ধে তারও প্রাণ গিয়েছে ভুলি!
দুঃখ সুখের ছন্দে ভরা জগৎ তারও আছে,
তারও আধার জগৎখানি মধুর তারি কাছে।।

আকাশের গায়ে

আকাশের গায়ে কিবা রামধনু খেলে,
দেখে চেয়ে কত লোক সব কাজ ফেলে;
তাই দেখে খুঁৎ-ধরা বুড়ো কয় চটে,
দেখছ কি, এই রং পাকা নয় মোটে।।

 আদুরে পুতুল

যাদুরে আমার আদুরে গোপাল, নাকটি নাদুস থোপ্‌না গাল,
ঝিকিমিকি চোখ মিটমিটি চায় ঠোঁট দুটি তায় টাট্‌কা লাল।
মোমের পুতুল ঘুমিয়ে থাকুক দাঁত মেলে আর চুল খুলে-
টিনের পুতুল চীনের পুতুল কেউ কি এমন তুলতুলে?
গোব্‌দা গড়ন এম্‌নি ধরন আব্‌দারে কেউ ঠোট ফুলোয়?
মখমলি রং মিষ্টি নরম – দেখছ কেমন হাত বুলোয়!
বলবি কি বল হাব্‌লা পাগল আবোল তাবোল কান ঘেঁষে,
ফোক্‌লা গদাই যা বল্‌বি তাই ছাপিয়ে পাঠাই “সন্দেশে”।

 আনন্দ

যে আনন্দ ফুলের বাসে,
যে আনন্দ পাখির গানে,
যে আনন্দ অরুণ আলোয়,
যে আনন্দ শিশুর প্রাণে,
যে আনন্দ বাতাস বহে,
যে আনন্দ সাগরজলে,
যে আনন্দ ধুলির কণায়,
যে আনন্দ তৃণের দলে,
যে আনন্দ আকাশ ভরা ,
যে আনন্দ তারায় তারায়,
যে আনন্দ সকল সুখে,
যে আনন্দ রক্তধারায়
সে আনন্দ মধুর হয়ে
তোমার প্রাণে পড়ুক ঝরি,
সে আনন্দ আলোর মত
থাকুক তব জীবন ভরি।

আলোছায়া

হোক্‌না কেন যতই কালো
এমন ছায়া নাইরে নাই –
লাগ্‌লে পরে রোদের আলো
পালায় না যে আপনি ভাই!

শুষ্কমুখে আঁধার ধোঁয়া
কঠিন হেন কোথায় বল্,
পাগল যাতে হাসির ছোঁয়া
আপনি গলে হয় না জল।।

আয়রে আলো আয়

পুব গগনে রাত পোহাল,
ভোরের কোণে লাজুক আলো
নয়ন মেলে চায়।
আকাশতলে ঝলক জ্বলে,
মেঘের শিশু খোলার ছলে
আলোক মাখে গায়।।
সোনার আলো, রঙিন্ আলো,
স্বপ্নে আঁকা নবীন আলো –
আয়রে আলো আয়।
আয়রে নেমে আঁধার পরে,
পাষাণ কালো ধৌত করে
আলোর ঝরণায়।।
ঘুম ভাঙান পাখির তানে
জাগ্‌রে আলো আকুল গানে
অকুল নীলিমায়।
আলসভরা আখিঁর কোণে,
দুঃখ ভয়ে আঁধার মনে,
আয়রে আলো আয়।।

ও বাবা !

পড়তে বসে মুখের পরে কাগজ খানি থুয়ে
রমেশ ভায়া ঘুমোয় পড়ে আরাম ক’রে শুয়ে।
শুনছ নাকি ঘড়র্ ঘড়র্ নাক ডাকার ধুম?
সখ যে বড় বেজায় দেখি- দিনের বেলায় ঘুম!

বাতাস পোরা এই যে থলি দেখ্‌ছ আমার হাতে,
দুড়ম করে পিট্‌লে পরে শব্দ হবে তাতে।
রমেশ ভায়া আঁতকে উঠে পড়বে কুপোকাৎ
লাগাও তবে -ধুম ধাড়াক্কা! ক্যাবাৎ! ক্যাবাৎ!

ও বাবারে! এ কেরে ভাই! মারবে নাকি চাটি?
আমি ভাবছি রমেশ বুঝি! সব করেছে মাটি!
আবার দেখ চোখ পাকিয়ে আস্‌ছে আমায় তেড়ে,
আর কেন ভাই? দৌড়ে পালাই, প্রানের আশা ছেড়ে!

 কত বড়

ছোট্ট সে একরতি ইঁদুরের ছানা,
ফোটে নাই চোখ তার, একেবারে কানা।
ভাঙা এক দেরাজের ঝুলমাখা কোণে
মার বুকে শুয়ে শুয়ে মার কথা শোনে।

যেই তার চোখ ফোটে সেই দেখে চেয়ে-
দেরাজের ভারি কাঠ চারিদিক ছেয়ে।
চেয়ে বলে মেলি তার গোল গোল আঁখি-
“ওরে বাবা! পৃথিবীটা এত বড় নাকি?”

কলিকাতা কোথা রে

গিরিধি আরামপুরী, দেহ মন চিৎপাত,
খেয়ে শুয়ে হু হু করে কেটে যায় দিনরাত;
হৈ চৈ হাঙ্গামা হুড়োতাড়া হেথা নাই;
মাস বার তারিখের কোন কিছু ল্যাঠা নেই;
খিদে পেলে তেড়ে খাও, ঘুম পেলে ঘুমিও-
মোট কথা, কি আরাম, বুঝলে না তুমিও !
ভুলেই গেছিনু কোথা এই ধরা মাঝেতে
আছে যে শহর এক কলকাতা নামেতে-
হেন কালে চেয়ে দেখি চিঠি এক সমুখে,
চায়েতে অমুক দিন ভোজ দেয় অমুকে ।
‘কোথায়? কোথায়?’ বলে মন ওঠে লাফিয়ে
তাড়াতাড়ি চিঠিখানা তেড়ে ধরি চাপিয়ে,
ঠিকানাটা চেয়ে দেখি নীচু পানে ওধারে
লেখা আছে ‘কলিকাতা’ – সে আবার কোথারে !
স্মৃতি কয় ‘কলিকাতা ‘ রোস দেখি; তাই ত ,
কোথায় শুনেছি যেন , মনে ঠিক নাই ত,
বেগতিক শুধালেম সাধুরাম ধোপারে ;
সে কহিল, হলে হবে উশ্রীর ওপারে।
ওপারের জেলেবুড়ো মাথা নেড়ে কয় সে ,
‘হেন নাম শুনি নাই আমার এ বয়সে ।’
তারপরে পুছিলাম সরকারী মজুরে
তামাম মুলুক সে ত বাৎলায় ‘হুজুরে’
বেঙাবাদ বরাকর , ইদিকে পচম্বা ,
উদিকে পরেশনাথ ,পাড়ি দাও লম্বা ;
সব তার সড়গড় নেই কোন ভুল তায় –
‘কুলিকাতা কাঁহা’ বলি সেও মাথা চুলকায় !
অবশেষে নিরুপায় মাথা যায় ঘুলিয়ে ‘
‘টাইম টেবিল’ খুলি দেখি চোখ বুলয়ে ।
সেথায় পাটনা পুরী গয়া গোমো মাল্‌দ
বজবজ দমদম হাওড়া ও শ্যালদ –
ইত্যাদি কত নাম চেয়ে দেখি সামনেই
তার মাঝে কোন খানে কলিকাতা নাম নেই !!
-সব ফাঁকি বুজ্‌রুকী রসিকতা -চেষ্টা !
উদ্দেশে ‘শালা ‘ বলি গাল দিনু শেষটা।-
সহসা স্মৃতিতে যেন লাগিল কি ফুৎকার
উদিল কুমড়া হেন চাঁদপানা মুখ কার!
আশে পাশে ঢিপি ঢুপি পাহাড়ে পুঞ্জ,
মুখ চাঁচা ময়দান, মাঝে কিবা কুঞ্জ !
সে শোভা স্মরণে ঝরে নয়নের ঝরনা ;
গৃহিনীরে কহি ‘প্রিয়ে !মারা যাই ধর না ।
তার পরে দেখি ঘরে অতি ঘোর অনাচার –
রাখে না কো কেউ কোন তারিখের সমাচার !
তখনি আনিয়া পাঁজি দেখা গেল গণিয়া,
চায়ের সময় এল একেবারে ঘনিয়া !
হায়রে সময় নেই, মন কাদে হতাশে-
কোথায় চায়ের মেলা! মুখশশী কোথা সে !
স্বপন শূকায়ে যায় আধারিয়া নয়নে ,
কবিতায় গলি তাই গাহি শোক শয়নে।

কহ ভাই কহ রে

কহ ভাই কহ রে, অ্যাঁকা চোরা শহরে,
বদ্যিরা কেন কেউ আলুভাতে খায় না?
লেখা আছে কাগজে আলু খেলে মগজে
ঘিলু যায় ভেস্তিয়ে বুদ্ধি গজায় না।

কানা-খোঁড়া সংবাদ

পুরাতন কালে ছিল দুই রাজা,
নাম ধাম নাহি জানা,
একজন তার খোড়া অতিশয়,
অপর ভূপতি কানা।
মন ছিল খোলা, অতি আলো ভোলা
ধরমেতে ছিল মতি,
পর ধনে সদা ছিল দোঁহাকার
বিরাগ বিকট অতি।
প্রতাপের কিছু নাহি ছিল ত্রুটি
মেজাজ রাজারি মত,
শুনেছি কেবল, বুদ্ধিটা নাকি
নাহি ছিল সরু তত,
ভাই ভাই মত ছিল দুই রাজা,
না ছিল ঝগড়াঝাঁটি,
হেনকালে আসি তিন হাত জমি
সকল করিল মাটি।
তিন হাত জমি হেন ছিল, তাহা
কেহ নাহি জানে কার,
কহে খোঁড়া রায় “এক চক্ষু যার
এ জমি হইবে তার”।’
শুনি কানা রাজা ক্রোধ করি কয়
“আরে অভাগার পুত্র,
এ জমি তোমারি- দেখ না এখনি
খুলিয়া কাগজ পত্র”।
নক্সা রেখেছে এক বছর
বাক্সে বাঁধিয়া আঁটি,
কীট কুটমতি কাটিয়া কাটিয়া
করিয়াছে তারে মাটি ;
কাজেই তর্ক না মিটিল হায়
বিরোধ বাধিল ভারি,
হইল য্দ্দু হদ্দ মতন
চৌদ্দ বছর ধরি।
মরিল সৈন্য, ভাঙিল অস্ত্র,
রক্ত চলিল বহি,
তিন হাত জমি তেমনি রহিল,
কারও হার জিত নাহি
তবে খোঁড়া রাজা কহে, হায় হায়,
তর্ক নাহিক মিটে,
ঘোরতর রণে অতি অকারণে
মরণ সবার ঘটে”
বলিতে বলিতে চঁটাৎ করিয়া
হঠাৎ মাথায় তার
অদ্ভুত এক বুদ্ধি আসিল
অতীব চমৎকার।
কহিল তখন খোঁড়া মহারাজ,
শুন মোর কানা ভাই,
তুচ্ছ কারণে রক্ত ঢালিয়া
কখনও সুযশ নাই।
তার চেয়ে জমি দান করে ফেল
আপদ শান্তি হবে।”
কানা রাজা কহে, খাসা কথা ভাই,
কারে দিই কহ তবে।”
কহেন খঞ্জ, ” আমার রাজ্যে
আছে তিন মহাবীর-
একটি পেটুক, অপর অলস,
তৃতীয় কুস্তিগীর।
তোমার মুলুক কে আছে এমন
এদের হারাতে পারে?-
সবার সমুখে তিন হাত জমি
বকশিস দিব তারে।
কানা রাজা কহে ভীমের দোসর
আছে ত মল্ল মম,
ফালাহারে পটু, পঁচাশি পেটুক
অলস কুমড়া সম।
দেখা যাবে কার বাহাদুরি বেশি
আসুক তোমার লোক;
যে জিতিবে সেই পাবে এই জমি-
খোড়া বলে, তাই হোক।
পড়িল নোটিস ময়দান মাঝে
আলিশান সভা হবে,
তামাসা দেখিতে চারিদিক হতে
ছুটিয়া আসিল সবে।
ভয়ানক ভিড়ে ভরে পথঘাট,
লোকে হল লোকাকার,
মহা কোলাহল দাড়াবার ঠাই
কোনোখানে নাহি আর।
তারপর ক্রমে রাজার হুকুমে
গোলমাল গেল থেমে,
দুইদিক হতে দুই পালোয়ান
আসরে আসিল নেমে।
লম্ফে ঝম্ফে যুঝিল মল্ল
গজ-কচ্ছপ হেন,
রুষিয়া মুষ্টি হানিল দোহায়-
বজ্র পড়িল যেন!
গুঁতাইল কত ভোঁতাইল নাসা
উপাড়িল গোফ দাড়ি,
যতেক দন্ত করিল অন্ত
ভীষণ চাপটি মারি
তারপরে দোঁহে দোঁহারে ধরিয়া
ছুঁড়িল এমনি জোরে,
গোলার মতন গেল গো উড়িয়া
দুই বীর বেগভরে।
কিহল তাদের কেহ নাহি জানে
নানা কথা কয় লোকে,
আজও কেহ তার পায়নি খবর,
কেহই দেখেনি চোখে।
যাহোক এদিকে, কুস্তির শেষে
এল পেটুকের পালা,
যেন অতিকায় ফুটবল দুটি,
অথবা ঢাকাই জালা।
ওজনেতে তারা কেহ নহে কম,
ভোজনেতে ততোধিক,
বপু সুবিপুল, ভুড়ি বিভীষন-
ভারি সাতমন ঠিক।
অবাক দেখিছে সভার সকলে
আজব কান্ড ভারি-
ধামা ধামা লুচি নিমেষে ফুরায়
দই ওঠে হাঁড়ি হাঁড়ি!
দাড়ি পাল্লায় মাপিয়া সকলে
দেখে আহারের পরে ,
দুজনেই ঠিক বেড়েছে ওজনে
সাড়ে তিন মন করে।
কানা রাজা বলে একি হল জ্বালা,
আক্কেল নাই কারো ,
কেহ কি বোঝেনা সোজা কথা এই,
হয় জেতো নয় হারো।”
তার পর এল কুঁড়ে দুই জন
ঝাকার উপর চড়ে,
সভামাঝে দোহে শুয়ে চিৎপাত
চুপ চাপ রহে পড়ে।
হাত নাহি নাড়ে, চোখ নাহি মেলে,
কথা নাই কারো মুখে,
দিন দুই তিন রহিল পড়িয়া,
নাসা গীত গাহি সুখে।
জঠরে যখন জ্বলিল আগুন,
পরান কণ্ঠাগত,
তখন কেবল মেলিয়া আনন
থাকিল মড়ার মত।
দয়া করে তবে সহৃদয় কেহ
নিকটে আসিয়া ছুটি
মুখের নিকটে ধরিল তাদের
চাটিম কদলি দুটি।
খঞ্জের লোকে কহিল কষ্টে,
“ছাড়িয়া দে নারে ভাই”
কানার ভৃত্য রহিল হা করে
মুখে তার কথা নাই ।
তখন সকলে কাষ্ঠ আনিয়া
তায় কেরোসিন ঢালি,
কুড়েদের গায়ে চাপাইয়া রোষে
দেশলাই দিল জ্বালি।
খোঁড়ার প্রজাটি বাপরে বলিয়া
লাফ দিয়া তাড়াতাড়ি
কম্পিত পদে চম্পট দিল
একেবারে সভা ছাড়ি।
দুয়ো বলি সবে দেয় করতালি
পিছু পিছু ডাকে “ফেউ”?
কানার অলস বলে কি আপদ
ঘুমুতে দিবিনা কেঊ?
শুনে সবে বলে “ধন্য ধন্য
কুঁড়ে-কুল চুড়ামণি!”
ছুটিয়া তাহারে বাহির করিল
আগুন হইতে টানি।
কানার লোকের গুণপনা দেখে
কানা রাজা খুসী ভারি,
জমিতে দিলেই আরও দিল কত,
টাকাকড়ি ঘরবাড়ি।

কানে খাটো বংশীধর

কানে ঘাটো বংশীধর যায় মামাবাড়ি,
গুনগুনে গান গায় আর নাড়ে দাড়ি।।
চলেছে সে একমনে ভাবে ভরপুর,
সহসা বাজিল কানে সুমধুর সুর।।
বংশীধর বলে, “আহা, না জানি কি পাখি
সুদূরে মধুর গায় আড়ালেতে থাকি।।
দেখ, দেখ সুরে তার কত বাহাদুরি,
কালোয়াতি গলা যেন খেলে কারিকুরি ।।
এদিকে বেড়াল ভাবে, “এযে বড় দায়,
প্রাণ যদি থাকে তবে ল্যাজখানি যায়।।
গলা ছেড়ে চেচামেচি এত করি হায়,
তবু যে ছাড়ে না বেটা, কি করি উপায়।।
আর তো চলে না সহা এত বাড়াবাড়ি,
যা থাকে কপালে দেই এক থাবা মারি ।।
বংশীধর ভাবে, “একি বেসুরা যে করে,
গলা গেছে ভেঙে তাই ‘ফ্যাঁস’ সুর ধরে ।।”
হেনকালে বেরসিক বেড়ালের চাঁটি,
একেবারে সব গান করে দিল মাটি।।

কিছু চাই?

কারোর কিছু চাই গো চাই?
এই যে খোকা, কি নেবে ভাই?
জলছবি আর লাটু লাটাই
কেক বিস্কুট লাল দেশলাই
খেলনা বাঁশি কিংবা ঘুড়ি
লেড্ পেনসিল রবার ছুরি
এসব আমার বাক্সে নাই,
কারোর কিছু চাই গো চাই?

কারোর কিছু চাই গো চাই?
বৌমা কি চাও শুনতে পাই?
ছিটের কাপড় চিকন লেস্
ফ্যান্সি জিনিস ছুচের কেস্
আল্‌তা সিঁদুর কুন্তলীন
কাঁচের চুড়ি বোতাম পিন?
আমার কাছে ওসব নাই,
কারোর কিছু চাই গো চাই?

কারোর কিছু চাই গো চাই?
আপনি কি চান কর্তামশাই?
পকেট বই কি খেলার তাস
চুলের কলপ জুতোর ব্রাশ্
কলম কালি গঁদের তুলি
নস্যি চুরুট সুর্তি গুলি ?
ওসব আমার কিছুই নাই,
কারোর কিছু চাই গো চাই?

 কেন সব কুকুরগুলো

কেন সব কুকুরগুলো খামাখা চ্যাঁচায় রাতে?
কেন বল দাঁতের পোকা থাকে না ফোক্‌লা দাঁতে?
পৃথিবীর চ্যাপ্টা মাথা কেন সে কাদের দোষ?-
এস ভাই চিন্তা করি দুজনে ছায়ায় বসে।

খোকা ঘুমায়

কোন্‌খানে কোন সুদূর দেশে কোন মায়ের বুকে,
কাদের খোকা মিষ্টি এমন ঘুমোয় মনের সুখ?
অজানা কোন দেশে সেথা কোন্‌খানে তার ঘর?
কোন্ সমুদ্র কত নদী কত দেশের পর?
কেমন সুরে কি বলে মা ঘুমপাড়ানি গানে
খোকার চোখে নিত্যি সেথা ঘুমটি ডেকে আনে?
ঘুমপাড়ানি মাসীপিসী তাদেরও কি থাকে?
‘মটি দিয়ে যাওগো’ ব’লে মা কি তাদের ডাকে?
শেয়াল আসে বেগুন খেতে, বর্গি আসে দেশে?
ঘুমের সাথে মিষ্টি মধুর মায়ের সুরটি মেশে?
খোকা জানে মায়ের মুখটি সবার চেয়ে ভালো
সবার মিষ্টি মায়ের হাসি, মায়ের চোখের আলো।
স্বপন মাঝে ছায়ার মত মায়ের মুখটি ভাসে,
তাইতে খোকা ঘুমের ঘোরে আপন মনে হাসে।

 খোকার ভাবনা

মোমের পুতুল লোমের পুতুল আগ্লে ধরে হাতে
তবুও কেন হাব্‌লা ছেলের মন ওঠে না তাতে?
একলা জেগে একমনেতে চুপ্‌টি করে বসে
আন্‌মনা সে কিসের তরে আঙুলখানি চোষে?
নাইকো হাসি নাইকো খেলা নাইকো মুখে কথা,
আজ সকালে হাব্‌লাবাবুর মন গিয়েছে কোথা?
ভাব্‌ছে বুঝি দুধের বোতল আস্‌ছে নাকো কেন?
কিংবা ভাবে মায়ের কিসে হচ্ছে দেরী হেন।
ভাব্‌ছে এবার দুধ খাবে না, কেবল খাবে মুড়ি,
দাদার সাথে কোঁমর বেঁধে করবে হুড়োহুড়ি
ফেল্‌বে ছুঁড়ে চামচটাকে পাশের বাড়ির চালে,
না হয় তেড়ে কামড়ে দেবে দুষ্ট দাদুর গালে।
কিংবা ভাবে একটা কিছু ঠুক্‌তে যদি পেতো-
পুতুলটাকে করত ঠুকে এক্কেবারে থেঁতো।

ছুটি

ঘুচবে জ্বালা পুঁথির পালা ভাবছি সারাক্ষণ-
পোড়া স্কুলের পড়ার পরে আর কি বসে মন?
দশটা থেকেই নষ্ট খেলা, ঘন্টা হতেই শুরু
প্রাণটা করে ‘পালাই পালাই’ মনটা উডু উড়–-
পড়ার কথা খাতায়, পাতায়, মাথায় নাহি ঢোকে!
মন চলে না মুখ চলে যায় আবোলতাবোল ব’কে!
কানটা ঘোরে কোন মুলুকে হুশ থাকে না তার,
এ কান দিয়ে ঢুকলে কথা, ও কান দিয়ে পার।
চোখ থাকে না আর কিছুতেই, কেবল দেখে ঘড়ি ;
বোর্ড আঁকা অঙ্ক ঠেকে আঁচড়কাটা খড়ি।
কল্পনাটা স্বপ্নে চ’ড়ে ছুটছে মাঠে ঘাটে-
আর কি রে মন বাঁধন মানে? ফিরতে কি চায় পাঠে?
পড়ার চাপে ছঁটফটিয়ে আর কিরে দিন চলে?
ঝুপ্ করে মন ঝাঁপ দিয়ে পড়্ ছুটির বন্যাজলে।

ছুটি

ছুটি! ছুটি! ছুটি!
মনের খুশি রয়না মনে হেসেই লুটোপুটি।
ঘুচল এবার পড়ার তাড়া অঙ্ক কাটাকুটি
দেখ্‌ব না আর পন্ডিতের ঐ রক্ত আঁখি দুটি।
আর যাব না স্কুলের পানে নিত্য গুটি গুটি
এখন থেকে কেবল খেলা কেবল ছুটোছুটি।
পাড়ার লোকের ঘুম ছুটিয়ে আয়রে সবাই জুটি
গ্রীষ্মকালের দুপুর রোদে গাছের ডালে উঠি
আয়রে সবাই হল্লা ক’রে হরেক মজা লুটি
একদিন নয় দুই দিন নয় দুই দুই মাস ছুটি।

 ছোটে হনহন

চলে হন্ হন্ ছোটে পন্ পন্
ঘোরে বন্ বন্ কাজে ঠন্ ঠন্
বায়ু শন্ শন্ শীতে কন্ কন্
কাশি খন্ খন্ ফোঁড়া টন্ টন্
মাছি ভন্ ভন্ থালা ঝন্ ঝন্

 টিক্-টিক্-টিক

টিক্-টিক্ চলে ঘড়ি টিক্-টিক্,টিক্,
একটা ইঁদুর এল সে সময়ে ঠিক্!
ঘড়ি দেখে এক লাফে তাহাতে চড়িল,
টং করে অমনি ঘড়ি বাজিয়া উঠিল।
অমনি ইঁদুর ভায়া লেজ গুটাইয়া,
ঘড়ির উপর থেকে পড়ে লাফাইয়া!
ছুটিয়া পালায়ে গেল আর না আসিল
টিক্-টিক্-টিক্- ঘড়ি চলিতে লাগিল!

 টুকরো ছড়া

তিন বুড়ো পন্ডিত টাকচুড়ো নগরে
চ’ড়ে এক গামলায় পাড়ি দেয় সাগরে।
গাম‌্‌লাতে ছেঁদা আগে কেউ দেখনি,
গানখানি তাই মোর থেমে গেল এখনি।।

ম্যাও ম্যাও হুলোদাদা, তোমার যে দেখা নাই?
গেছিলাম রাজপুরী রানীমার সাথে ভাই!
“তাই নাকি? বেশ বেশ, কি দেখেছ সেখানে?”
দেখেছি ইদুর এক রানীমার উঠানে।।”

গাধাটার বুদ্ধি দেখ!- চাঁট মেরে সে নিজের গালে,
কে মেরেছে দেখবে বলে চড়তে গেছে ঘরের চালে।

ছোট ছোট ছেলেগুলো কিসে হয় তৈরি,
-কিসে হয় তৈরি,
কাদা আর কয়লা ধুলো মাটি ময়লা,
এই দিয়ে ছেলেগুলো তৈরি।
ছোট ছোট মেয়ে গুলি কিসে হয় তৈরি।
কিসে হয় তৈরি?
ক্ষীর ননী চিনি আর ভাল যাহা দুনিয়ার
মেয়েগুলি তাই দিয়ে তৈরি।।

রং হল চিঁড়েতন সব গেল ঘুলিয়ে,
গাধা যায় মামাবাড়ি টাকে হাত বুলিয়ে।
বেড়াল মরে বিষম খেয়ে, চাঁদের ধরল মাথা
হঠাৎ দেখি ঘর বাড়ি সব ময়দা দিয়ে গাঁথা।।

ঢপ ঢপ ঢাক ঢোল

ঢপ্ ঢপ্ ঢাক ঢোল ভপ্ ভপ্ বাঁশি
ঝন্ ঝন্ করতাল্ ঠন্ ঠন্ কাঁসি।
ধুমধাম বাপ্ বাপ্ ভয়ে ভ্যাবাচ্যাকা
বাবুদের ছেলেটার দাঁত গেছে দেখা।।

দাদা গো দাদা

দাদা গো দাদা, সত্যি তোমার সুরগুলো খুব খেলে!
এম্নি মিঠে – ঠিক যেন কেউ গুড় দিয়েছে ঢেলে!
দাদা গো দাদা, এমন খাসা কণ্ঠ কোথায় পেলে?
এই খেলে যা ! গান শোনাতে আমার কাছেই এলে?
দাদা গো দাদা, পায়ে পড়ি তোর ভয় পেয়ে যায় ছেলে-
গাইবে যদি ঐখেনে গাও, ঐ দিকে মুখ মেলে।]

দিনের হিসাব

ভোর না হতে পাখিরা জোটে গানের চোটে ঘুমটি ছোটে-
চোখ্‌টি খোলো, গাত্র তোলো আরে মোলো সকাল হলো।
হায় কি দশা পড়্‌তে বসা অঙ্ক কষা, কলম ঘষা।
দশটা হলে হট্টগোলে দৌড়ে চলে বই বগলে!
স্কুলের পড়া বিষম তাড়া, কানটি নাড়া বেঞ্চে দাঁড়া
মরে কি বাঁচে! সমুখে পাছে বেত্র নাচে নাকের কাচে।।
খেলতে যে চায় খেল্‌বে কি ছাই বৈকেলে হায় সময় কি পায়?
খেলাটি ক্রমে যেম্‌নি জমে দখিনে বামে সন্ধ্যা নামে;
ভাঙ্‌ল মেলা সাধের খেলা- আবার ঠেলা সন্ধ্যাবেলা-
মুখ্‌টি হাঁড়ি তাড়াতাড়ি দিচ্ছে পাড়ি যে যার বাড়ি।
ঘুমের ঝোঁকে ঝাপ্‌সা চোখে ক্ষীণ আলোকে অঙ্ক টোকে ;
ছুটি পাবার সুযোগ আবার আয় রবিবার হপ্তা কাবার!

দুষ্টুলোকের মিষ্টি কথায়

দুষ্টুলোকের মিষ্টি কথায়
নাচলে লোকের স্বস্তি কোথায়?
এম্নি দশাই তার কপালে লেখে।
কথার পাকে মানুষ মেরে
মাকড়জীবী ঐ যে ফেরে,
গড় করি তার অনেক তফাৎ থেকে।

*বিখ্যাত ইংরাজি কবিতার অনুকরণে

 নদী

হে পর্বত, যত নদী করি নিরীক্ষণ
তোমাতেই করে তারা জনম গ্রহণ।
ছোট বড় ঢেউ সব তাদের উপরে
কল্ কল্ শব্দ করি সদা ক্রীড়া করে,
সেই নদী বেকে চুরে যায় দেশে দেশে,
সাগরেতে পড়ে গিয়া সকলের শেষে।
পথে যেতে যেতে নদী দেখে কত শোভা,
কি সুন্দর সেই সব কিবা মনোলোভা।
কোথাও কোকিলে দেখে বসি সাথী সনে,
কি সুন্দর কুহু গান গায় নিজ মনে।
কোথাও ময়ূর দেখে পাখা প্রসারিয়া
বনধারে দলে দলে আছে দাড়াইয়া!
নদীতীরে কত লোক শ্রান্তি নাশ করে,
কত শত পক্ষী আসি তথা বিচারে।
দেখিতে দেখিতে নদী মহাবেগে ধায়
কভুও সে পশ্চাতেতে ফিরে নাহি চায়।

 নাচন

নাচ্ছি মোরা মনের সাধে গাচ্ছি তেড়ে গান
হুলো মেনি যে যার গলায় কালোয়াতীর তান।
নাচ্ছি দেখে চাঁদা মামা হাসছে ভরে গাল
চোখটি ঠেরে ঠাট্টা করে, দেখনা বুড়ার চাল।

 নূতন বৎসর

‘নুতন বছর! নুতন বছর!’ সবাই হাঁকে সকাল সাঁঝে,
আজকে আমার সূর্যি মামার মুখটি জাগে মনের মাঝে।
মুস্কিলাসান করলে মামা, উস্কিয়ে তার আগুনখানি,
ইস্কুলেতে লাগ্‌ল তালা থাম্‌ল সাধের পড়ার ঘানি।
এক্‌জমিনের বিষম ঠেলা চুলক রে ভাই ঘুচ্‌ল জ্বালা,
নতুন সালের নূতন তালে হোক্ তবে আজ ‘হকির’ পালা।
কোন্‌খানে কোন মেজের কোণে, কলম কানে চশমা নাকে,
বিরামহারা কোন বেচারা দেখেন কাগজ, ভয় কি তাঁকে?
অঙ্কে দিবেন হকির গোলা, শঙ্কা ত নাই তাহার তরে,
তঙ্কা হাজার মিলুক তাঁহার, ডঙ্কা মেরে চলুন ঘরে,
দিনকে যদি জোটেন খেলায় সাঁঝের বেলায় মাঠের মাঝে,
‘গোল্লা’ পেয়ে ঝোল্লা ভরে আবার না হয় যাবেন কাজে!
আয় তবে আয়ে, নবীন বরষ মলয় বায়ের দোলায় দুলে
আয় সঘনে গগন বেয়ে, পাগলা ঝড়ের পালটি তুলে।
আয় বাংলার বিপুল মাঠে শ্যামল ধানের ঢেউ খেলিয়ে,
আয়েরে সুখের ছুটির দিনে আম-কাঁঠলের খবর নিয়ে!
আয় দুলিয়ে তালের পাখা, আয় বিছিয়ে শীতল ছায়া,
পাখির নীড়ে চাদের হাটে আয় জাগিয়ে মায়ের মায়া।
তাতুক না মাঠ, ফাটুক না কাঠ, ছুটুক না ঘাম নদীর মত,
জয় হে তোমার নূতন বছর! তোমার যে গুণ গাইব কত?
পুরান বছর মলিন মুখে যায় সকলের বালাই নিয়ে,
ঘুচ্‌ল কি ভাই মনের কলি সেই বুড়োকে বিদায় দিয়ে?
নুতন সালে নুতন বলে, নুতন আশায়, নুতন সাজে
আয় দয়ালের নাম লয়ে ভাই, যাই সকলে যে যার কাজে!

বদ্যি বুড়ো

শুন্‌ছ দাদা! ঐ যে হোথায় বদ্যি বুড়ো থাকে ,
সে নাকি রোজ খাবার সময় হাত দিয়ে ভাত মাখে?
শুন্‌ছি নাকি খিদেও পায় সারাদিন না খেলে ?
চক্ষু নাকি আপনি বোজে ঘুমটি তেমন পেলে ?
চলতে গেলে ঠ্যাং নাকি তার ভুয়েঁর পরে ঠেকে?
কান দিয়ে সব শোনে নাকি? চোখ দিয়ে সব দেখে?
শোয় নাকি সে মুন্ডুটাকে শিয়র পানে দিয়ে?
হয় না কি হয় সত্যি মিথ্যা চল না দেখি গিয়ে!

 বন্দনা

নমি সত্য সনাতন নিত্য ধনে,
নমি ভক্তিভরে নমি কায়েমনে।
নমি বিশ্বচরাচর লোকপতে
নমি সর্বজনাশ্রয় সর্বগতে।
নমি সৃষ্টি-বিধারণ শক্তিধরে,
নমি প্রাণপ্রবাহিত জীব জড়ে।
তব জ্যোতিবিভাসিত বিশ্বপটে
মহাশুন্যতলে তব নাম রটে।
কত সিন্ধুতরঙ্গিত ছন্দ ভরে
কত স্তব্ধ হিমাচল ধ্যান করে।
কত সৌরভ সঞ্চিত পুষ্পদলে
কত সূর্য বিলুন্ঠিত পাদতলে।
কত বন্দনঝঙ্কৃত ভক্তচিতে
নমি বিশ্ব বরাভয় মৃত্যুজিতে।

বলব কি ভাই

বল্‌ব কি ভাই হুগ্‌লি গেলুম
বলছি তোমায় চুপি চুপি-
দেখ্‌তে পেলাম তিনটে শুয়োর
মাথায় তাদের নেইকো টুপি।।

 বাবু

অতি খাসা মিহি সুতি
ফিনফিনে জামা ধুতি,
চরণে লপেটা জুতি জরিদার।
এ হাতে সোনার ঘড়ি,
ও হাতে বাঁকান ছড়ি,
আতরের ছড়াছড়ি চারিধার!
চক্চকে চুঁল ছাঁটা
তায় তোফা টেরিকাটা-
সোনার চশমা আঁটা নাসিকায়।
ঠোঁট দুটি এঁকে বেঁকে
ধোঁয়া ছাড়ে থেকে থেকে,
হালচাল দেখে দেখে হাসি পায়।

ঘোষেদের ছোট মেয়ে
পিক্ ফেলে পান খেয়ে ,
নিচু পানে নাহি চেয়ে,হায়রে।
সেই পিক থ্যাপ ক’রে
লেগেছে চাদর ভরে
দেখে বাবু কেঁদে মরে যায়রে।
ওদিকে ছ্যাকরাগাড়ি
ছুটে চলে তাড়াতাড়ী
ছিট্‌কিয়ে কাঁড়ি কাঁড়ি ঘোলাজল ।
সহসা সে জল লাগে
জামার পিছন বাগে,
বাবু করে মহারাগে কোলাহল ।।

বিচার

ইঁদুর দেখে মাম্‌দো কুকুর বল্‌লে তেড়ে হেঁকে-
“বলব কি আর, বড়ই খুশি হলেম তোরে দেখে।
আজকে আমার কাজ কিছু নেই, সময় আছে মেলা,
আয় না খেলি দুইজনাতে মোকদ্দমা খেলা ।
তুই হবি চোর তোর নামেতে করব নালিশ রুজু”-
“জজ্ কে হবে?” বল্লে ইঁদুর ,বিষম ভয়ে জুজু,
“কোথায় উকিল প্যায়দা পুলিশ , বিচার কিসে হবে?”
মাম্‌দো বলে “তাও জানিসনে ? শোন বলে দেই তবে!
আমিই হব উকিল হাকিম , আমিই হব জুরি,
কান ধরে তোর বলব ব্যাটা, ফের করেছিস চুরি?
সটান দেব ফাসির হুকুম অমনি একেবারে-
বুঝবি তখন চোর বাছাধন বিচার বলে কারে।”

বিষম কান্ড

কর্তা চলেন, গিন্নী চলেন, খোকাও চলেন সাথে,
তড়্‌বড়িয়ে বুক ফুলিয়ে শুতে যাচ্ছেন রাতে ।
তেড়ে হন্‌হন্ চলে তিনজন যেন পল্টন চলে,
সিঁড়ি উঠ্‌তেই একি কান্ড! এ আবার কি বলে!
ল্যাজ লম্বা কান গোল গোল, তিড়িং বিড়িং ছোটে,
চোখ্ মিট্‌মিট্ কুটুস্ কাটুস্-এটি কোনজন বটে !
হেই! হুস! হ্যাস!ওরে বাস্‌রে মতলবখানা কিরে,
করলে তাড়া যায়না তবু,দেখ্‌ছে আবার ফিরে।
ভাবছে বুড়ো করবো গুঁড়ো ছাতার বাড়ি মেরে,
আবার ভাবে ফস্‌কে গেলে কাম্‌ড়ে দেবে তেড়ে।
আরে বাপ্‌রে! বস্‌ল দেই দুখ পায়ে ভর করে,
বুক দুর দুর বুড়ো ভল্লুর, মোমবাতি যায় পড়ে।
ভীষন ভয়ে দাঁত কপাটি তিন মহাবীর কাঁপে ,
গড়িয়ে নামে হুড়মুড়িয়ে সিঁড়ির ধাপে ধাপে।

 বিষম ভোজ

“অবাক কান্ড!” বল্‌লে পিসী, “এক চাঙাড়ি মেঠাই এল-
এই ছিল সব খাটের তলায়, এক নিমিষে কোথায় গেল?”
সত্যি বটে বললে খুড়ী, “আনলো দু’সের মিঠাই কিনে-
হঠাৎ কোথায় উপসে গেল? ভেল্কিবাজি দুপুর দিনে?”
“দাঁড়াও দেখি” বল্‌লে দাদা, “কর্‌ছি আমি এর কিনারা-
কোথায় গেল পটলা ট্যাঁপা – পাচ্ছিনে যে তাদের সাড়া?”
পর্দাঘেরা আড়াল দেওয়া বারান্দাটার ঐ কোণেতে
চল্‌ছে কি সব ফিস্ ফ্সি্ ফিস্ শুনলে দাদা কানটি পেতে।
পটলা ট্যাঁপা ব্যস্ত দুজন ট্প্‌টপাটপ্ মিঠাই ভোজে,
হঠাৎ দেখে কার দুটো হাত এগিয়ে তাদের কানটি খোঁজে।
কানের উপর প্যাঁচ্ ঘুরাতেই দু চোখ বেয়ে অশ্রু ছোটে,
গিলবে কি ছাই মুখের মিঠাই ,কান বুঝি যায় টানের চোটে।
পটল বাবুর হোম্‌রা গলা মিল্‌ল ট্যাঁপার চিকন সুরে
জাগ্‌ল করুন রাগরাগিণী বিকট তানে আকাশ জুড়ে।

বেজায় খুশি

বাহবা বাবুলাল! গেলে যে হেসে!
বগলে কাতুকুতু কে দিল এসে?
এদিকে মিটিমিটি দেখ কি চেয়ে?
হাসি যে ফেটে পড়ে দু’গাল বেয়ে !
হাসে যে রাঙা ঠোঁট দন্ত মেলে
চোখের কোণে কোণে বিজলী খেলে
হাসির রসে গ’লে ঝরে যে লালা
কেন এ খি-খি-খি-খি হাসির পালা?
যে দেখে সেই হাসে হাহাহা হাহা
বাহবা বাবুলাল বাহবা বাহা!

বেজায় রাগ

ও হাড়্‌গিলে, হাড়্‌গিলে ভাই, খাপ্পা বড্ড আজ।
ঝগড়া কি আর সাজে তোমার? এই কি তোমার যোগ্য কাজ?
হোম্‌রা চোম্‌রা মান্য তোমরা বিদ্যেবুদ্ধি মর্যাদায়
ওদের সঙ্গে তর্ক করছ – নাই কি কোন লজ্জা তায়?
জান্‌ছ নাকি বলছে ওরা ? কিচির মিচির কিচ্চিরি,
অর্থাৎ কিনা, তোমার নাকি চেহারাটা বিচ্ছিরি ।
বলছে আচ্ছা বলুক, তাতে ওদেরই তো মুখ ব্যথা,
ঠ্যাঁটা লোকের শাস্তি— যত ওরাই শেষে ভুগবে তা ।
ওরা তোমায় খোঁড়া বলছে? বেয়াদব ত খুব দেখি!
তোমার পায়ে বাতের কষ্ট- ওরা সেসব বুঝবে কি?
তাই বলে কি নাচ্‌বে রাগে? উঠ্‌বে চ’টে চট করে?
মিথ্যে আরো ত্যক্ত হবে ওদের সাথে টক্করে।
ঐ শোন কি বলছে আবার , কচ্ছে কত বক্তৃতা-
বল্‌ছে তোমার নেড়া মাথায় ঘোলা ঢালবে – সত্যি তা?
চড়াই পাখির বড়াই দেখ তোমায় দিচ্ছে টিট্‌কিরি-
বল্‌ছে তোমার মিষ্টি গলায় গান ধরত গিট্‌কিরি ।
বল্‌ছে তোমার কাঁথাটাকে ‘রিফুকর্ম’ করবে কি?
খোঁড়া ঠ্যাঙে নামেবে জলে ? আর কোলা ব্যাং ধরবে কি?
আর চ’টো না আর শুনো না ঠ্যাঁটা মুখের টিপ্পনি,
ওদের কথায় কান দিতে নেই, স’রে পড়্ এক্ষুনি।

 বেশ বলেছ

এসব কথা শুনলে তোদের লাগবে মনে ধাঁধাঁ,
কেউ বা বুঝে পুরোপুরি, কেউ বা বুঝে আধা।

কারে বা কই কিসের কথা, কই যে দফে দফে,
গাছের ‘পরে কাঁঠাল দেখে তেল মেখ না গোঁফে।

একটি একটি কথায় যেন সদ্য দাগে কামান,
মন বসনের ময়লা ধুতে তত্ত্বকথাই সাবান।

বেশ বলেছ, ঢের বলেছ, ঐখেনে দাও দাঁড়ি,
হাটের মাঝে ভাঙ্‌বে কেন বিদ্যে বোঝাই হাঁড়ি!

বড়াই

গাছের গোড়ায় গর্ত করে ব্যাং বেঁধেছেন বাসা,
মনের সুখে গাল ফুলিয়ে গান ধরেছেন খাসা।
রাজার হাতি হাওদা -পিঠে হেলে দুলে আসে-
বাপরে ব’লে ব্যাং বাবাজি গর্তে ঢোকেন ত্রাসে!
রাজার হাতি মেজাজ ভারি হাজার রকম চাল ;
হঠাৎ রেগে মটাং করে ভাঙল গাছের ডাল।
গাছের মাথায় চড়াই পাখি অবাক হ’য়ে কয়-
বাসরে বাস! হাতির গায়ে এমন জোরও হয়!
মুখ বাড়িয়ে ব্যাং বলে, ভাই তাইত তোরে বলি-
“আমরা, অর্থাৎ চার-পেয়েরা, এন্মি ভাবেই চলি”।।

 ভারি মজা

এই নেয়েছ, ভাত খেয়েছ, ঘন্টাখানেক হবে-
আবার কেন হঠাৎ হেন নামলে এখন টবে?
একলা ঘরে ফুর্তি ভরে লুকিয়ে দুপুরবেলা,
স্নানের ছলে ঠান্ডা জলে জল ছপ্‌ছপ্ খেলা ।
জল ছিটিয়ে, টব পিটিয়ে, ভাবছ, “আমোদ ভারি-
কেউ কাছে নাই, যা খুশি তাই করতে এখন পারি।”
চুপ্ চুপ্ চুপ্- ঐ দুপ্ দুপ্! ঐ জেগেছে মাসি,
আসছে ধেয়ে, শুনতে পেয়ে দুষ্ট মেয়ের হাসি।

 ভাল ছেলের নালিশ

মাগো!
প্রসন্নটা দুষ্টু এমন! খাচ্ছিল সে পরোটা
গুড় মাখিয়ে আরাম ক’রে বসে –
আমায় দেখে একটা দিল ,নয়কো তাও বড়টা,
দুইখানা সেই আপনি খেল ক’ষে!
তাইতে আমি কান ধরে তার একটুখানি পেঁচিয়ে
কিল মেরেছি ‘হ্যাংলা ছেলে’ বলে-
অম্‌নি কিনা মিথ্যা করে ষাঁড়ের মত চেচিয়ে
গেল সে তার মায়ের কাছে চলে!

মাগো!
এম্‌নিধারা শয়তানি তার, খেলতে গেলাম দুপুরে,
বল্‌ল, ‘এখন খেলতে আমার মানা’-
ঘন্টাখানেক পরেই দেখি দিব্যি ছাতের উপরে
ওড়াচ্ছে তার সবুজ ঘুড়ি খানা।
তাইতে আমি দৌড়ে গিয়ে ঢিল মেরে আর খুঁচিয়ে
ঘুড়ির পেটে দিলাম করে ফুটো-
আবার দেখ বুক ফুলিয়ে সটান মাথা উঁচিয়ে
আনছে কিনে নতুন ঘুড়ি দুটো!

মনের মতন

কান্না হাসির পোঁটলা বেঁধে বর্ষভরা পুঁজি,
বৃদ্ধ বছর উধাও হ’লে ভুতের মুলুক খুঁজি।
নূতন বছর এগিয়ে এসে হাত পাতে ঐ দ্বারে,
বল দেখি মন, মনের মতন কি দিবি তুই তারে?
আর কি দিব?- মুখের হাসি ভরসাভরা প্রাণ।
সুখের মাঝে দুখের মাঝে আনন্দময় গান।

মাসি গো মাসি

মাসি গো মাসি পাচ্ছে হাসি
নিম গাছেতে হচ্ছে শিম্-
হাতীর মাথায় ব্যাঙের ছাতা
কাগের বাসায় বগের ডিম্ ।।

 মূর্খমাছি

মাকড়সা
সান্-বাঁধা মোর আঙিনাতে
জাল বুনেছি কাল্‌কে রাতে ,
ঝুল ঝেড়ে সব সাফ করেছি বাসা।
আয় না মাছি আমার ঘরে,
আরাম পাবি বসলে পরে,
ফরাশ্ পাতা দেখবি কেমন খাসা!

মাছি
থাক্ থাক্ থাক আর বলে না ,
আনকথাতে মন গলে না-
ব্যবসা তোমার সবার আছে জানা।
ঢুকলে তোমার জালের ঘেরে
কেউ কোনদিন আর কি ফেরে?
বাপ্‌রে সেথায় ঢুক্‌তে মোদের মানা।

মাকড়সা
হওয়ায় দোল জালের দোলা
চারদিকে তার জান্‌লা খোলা
আপ্‌নি ঘুমে চোখ যে আসে জুড়ে!
আয়না হেথা হাত পা ধুয়ে
পাখনা মুড়ে থাক না শুয়ে-
ভন্ ভন্ ভন্ মরবি কেন উড়ে?

মাছি
কাজ নেই মোর দোলায় দুলে,
কোথায় তোমার কথায় ভুলে
প্রাণটা নিয়ে টান পড়ে ভাই শেষে।
তোমার ঘরে ঘুম যদি পায়
সে ঘুম কভু ভাঙ্‌বে না হায় –
সে ঘুম নাকি এমন সর্বনেশে!

মাকড়সা
মিথ্যে কেন ভাবিস্ মনে?
দেখ্না এসে ঘরের কোণে
ভাঁড়ার ভরা খাবার আছে কত!
দে-টপাটপ্ ফেলবি মুখে।

মাছি
লোভ দেখালেই ভুলবে ভবি,
ভাবছ আমায় তেমনি লোভী!
মিথ্যে দাদা ভোলাও কেন খালি,
করব কি ছাই ভাড়ার দেখে?
প্রণাম করি আড়াল থেকে-
আজকে তোমার সেই গুড়ে ভাই বালি।

মাকড়সা
নধর কালো বদন ভরে
রূপ যে কত উপচে পড়ে!
অবাক দেখি মুকুটমালা শিরে!
হাজার চোখে মানিক জ্বলে!
ইন্দ্রধনু পাখার তলে!
ছয় পা ফেলে আয় না দেখি ধীরে।

মাছি
মন ফুর্‌ফুর্ ফুর্তি নাচে-
একটুখানি যাই না কাছে!
যাই যাই যাই- বাপরে একি বাধাঁ।
ও দাদা ভাই রক্ষে কর!
ফাঁদ পাতা এ কেমন তরো।
পড়ে হাত পা হল বাঁধা ।

মেঘ

সাগর যেথা লুটিয়ে পড়ে নতুন মেঘের দেশে-
আকাশ- ধোয়া নীল যেখানে সাগর জলে মেশে।
মেঘের শিশু ঘুমায় সেথা আকাশ দোলায় শুয়ে-
ভোরের রবি জাগায় তারে সোনার কাঠি ছুঁয়ে।
সন্ধ্যা সকাল মেঘের মেলা- কুলকিনারা ছাড়ি
রং বেরঙের পাল তুলে দেয় দেশবিদেশে পাড়ি।
মাথায় জঁটা, মেঘের ঘাঁটা আকাশ বেয়ে ওঠে,
জোছনা রাতে চাঁদের সাথে পাল্লা দিয়ে ছোটে।
কোন্ অকুলের সন্ধানেতে কোন্ পথে যায় ভেসে-
পথহারা কোন্ গ্রামের পরে নাম-জানা-নেই-দেশে।
ঘূর্ণীপথের ঘোরের নেশা দিক্‌বিদিকে লাগে,
আগল ভাঙ্গা পাগল হাওয়া বাদল রাতে জাগে;
ঝড়ের মুখে স্বপন ছুটে আঁধার আসে ঘিরে!
মেঘের প্রানে চমক হানে আকাশ চিরে চিরে!
বুকের মাঝে শঙ্খ বাজে- দুন্দুভি দেয় সাড়া!
মেঘর মরণ ঘনিয়ে নামে মত্ত বাদল ধারা!

মেঘের খেয়াল

আকাশের ময়দানে বাতাসের ভারে,
ছোট বড় সাদা কালো কত মেঘ চরে।
কচি কচি থোপা থোপা মেঘেদের ছানা
হেসে খেলে ভেসে যায় মেলে কচি ডানা।
কোথা হতে কোথা যায় কোন্ তালে চলে,
বাতাসের কানে কানে কত কথা বলে।
বুড়ো বুড়ো ধাড়ি মেঘে টিপি হয়ে উঠে-
শুয়ে ব’সে সভা করে সারাদিন জুটে।
কি যে ভাবে চুপচাপ, কোন ধ্যানে থাকে,
আকাশের গায়ে গায়ে কত ছবি আঁকে।
কত আঁকে কত মোছে, কত মায়া করে,
পলে পলে কত রং কত রূপ ধরে।
জাঁধারী বুনো মেঘ ফোঁস ফোঁস ফোলে,
গুরু গুরু ডাক ছেড়ে কত ঝড় তোলে।
ঝিলিকের ঝিকিমিকি চোখ করে কানা,
হড়্ হড়্ কড়্ কড়্ দশদিকে হানা।
ঝুল কালো চারিধারা আলো যায় ঘুচে,
আকাশের যত নীল সব দেয় মুছে।

 লক্ষ্মী

হাত -পা- ভাঙ্গা নোংরা পুতুল মুখটি ধুলোয় মাখা,
গাল দুটি তার খাবলা মতন চোখ দুটি তার ফাঁকা-
কোথায় বা তার চুল বিনুনি, কোথায় বা তার মাথা,
আধখানি তার ছিন্ন জামা,গায় দিয়েছে কাঁথা।
পুতুলের মা ব্যস্ত কেবল তার সেবাতেই রত,
খাওয়ান শোয়ান আদর করেন ঘুম ডেকে দেন কত।
বলতে গেলাম “বিশ্রী পুতুল” অমনি বলেন রেগে –
“লক্ষ্মী পুতুল জ্বর হয়েছে তাইত এখন জেগে।”
দ্বিগুন জোরে চাপড়ে দিল “আয় আয় আয়” ব’লে-
নোংরা পুতুল লক্ষ্মী হ’য়ে পড়ল ঘুমে ঢুলে!

 লোভী ছেলে

কি ভেবে যে আপন মনে শুধু শুধু চামচ চেটে
হাসি আসে ঠোঁটের কোন,- মনে মনে সাধ কি মেটে?
আধ আধ ঝাপ্‌সা বুলি একটু খানি মিষ্টি দিয়ে
কোন কথা কয়না খুলি রাখ আমায় চুপ করিয়ে,
বসে বসে একলা নিজে নৈলে পরে চেঁচিয়ে জোরে
লোভী ছেলে ভাবেন কি যে-তুলব বাড়ি মাথায় করে।

 শিশুর দেহ

চশমা-আঁটা পন্ডিতে কয় শিশুর দেহ দেখে-
“হাড়ের পরে মাংস গেঁথে চামড়া দিয়ে ঢেকে,
শিরার মাঝে রক্ত দিয়ে ফুসফুসেতে বায়ু
বাঁধল দেহ সুঠাম করে পেশী এবং স্নায়ু।’
কবি বলেন, “শিশুর মুখে হেরি তরুন রবি,
উৎসারিত আনন্দে তার জাগে জগৎ ছবি।
হাসিতে তার চাদের আলো পাখির কলকল ,
অশ্রুকনা ফুলে দলে শিশির ঢলঢল।”
মা বলেন, “এই দুরু দুরু মোর বুকেরই বাণী
তারি গভীর ছন্দে গড়া শিশুর দেহখানি।
শিশুর প্রানে চঞ্চলতা আমার অশ্রুহাসি,
আমার মাঝে লুকিয়েছিল এই আনন্দরাশি।
গোপনে কোন্ স্বপ্ন ছিল অজানা কোন আশা ,
শিশুর দেহে মূর্তি নিল আমার ভালবাসা।”

শুনেছ কি বলে গেল

শুনেছ কি বলে গেল সীতানাথ বন্দ্যো?
আকাশের গায়ে নাকি টকটক গন্ধ?
টকটক থাকে নাকো হ’লে পরে বৃষ্টি-
তখন দেখেছি চেটে একেবারে মিষ্টি।

 শোন শোন গল্প শোন

শোন শোন গল্প শোন, ‘এক যে ছিল গুরু’
এই আমার গল্প হল শুরু।
যদু আর বংশীধর যমজ ভাই তারা-
এই আমার গল্প হল সারা।

শ্রীগোবিন্দ-কথা

আমি অর্থাৎ শ্রীগোবিন্দ মানুষটি নই বাঁকা!
যা বলি তা ভেবেই বলি, কথায় নেইক ফাঁকা।
এখনকার সব সাহেবসুবো, সবাই আমায় চেনে
দেখ্তে চাও ত দিতে পারি সাটিফিকেট এনে।
ভাগ্য আমায় দেয়নি বটে করতে বি-এ পাশ,
তাই বলে কি সময় কাটাই কেটে ঘোড়ার ঘাস?
লোকে যে কয় বিদ্যে আমার ‘কথামালা’ই শেষ-
এর মধ্যে সত্যি কথা নেইক বিন্দুলেশ।
ওদের পাড়ার লাইব্রেরিতে কেতাব আছে যত
কেউ পড়েছে তন্নতন্ন করে আমায় মতো?
আমি অর্থাৎ শ্রীগোবিন্দ এমনি পড়ার যম
পড়াশুনো নয়ক আমার কারুর চেয়ে কম।
কতকটা এই দেখেশিখে কতক পড়েশুনে,
কতক হয়ত স্বাভাবিকী প্রতিভারই গুণে
উন্নতিটা করছি যেমন আশ্চর্য তা ভারি,
নিজের মুখে সব কথা তার বলতে কি আর পারি?
বলে গেছেন চন্ডীপতি কিংবা অন্য কেউ
“আকাশ জুড়ে মেঘের বাসা, সাগরভরা ঢেউ,
জীবনটাও তেমনি ঠাসা কেবল বিনা কাজে-
যেদিক দিয়ে খরচ করি সেই খরচই বাজে!”
আমি অর্থাৎ শ্রীগোবিন্দ চলতে ফিরতে শুতে
জীবনটাকে হাঁকাই নেকো মনের রথে জুতে।

হাইড্রোজেনের দুই বাবাজি অক্সিজেনের এক
নৃত্য কবেন গলাগলি কান্ডখানা দেখ্,
আহাদেতে এক্‌সা হলে গলে হলেন জল
এই সুযোগে সুবোধ শিশু “শ্রীগোবিন্দ” বল্।

[অসমাপ্ত]

শ্রীশ্রীবর্ণমালাতত্ত্ব

পড় বিজ্ঞান হবে দিকজ্ঞান ঘুচিবে পথের ধাঁধা
দেখিবে গুণিয়া এ দিন দুনিয়া নিয়ম নিগড়ে বাঁধা।
কহে পন্ডিতে জড়সন্ধিতে বস্তুপিন্ড ফাঁকে
অনু অবকাশে রন্ধ্রে- রন্ধ্রে আকাশ লুকায়ে থাকে।
হেথা হেথা সেথা জড়ের পিন্ড আকাশ প্রলেপে ঢাকা
নয়কো কেবল নিরেট গাঁথন, নয়কো কেবলি ফাঁকা।
জড়ের বাঁধন বদ্ধ আকাশে, আকাশে বাঁধন জড়ে-
পৃথিবী জুড়িয়া সাগর যেমন, প্রাণটি যেমন ধড়ে।;
‘ইথার’ পাথারে তড়িত বিকারে জড়ের জীবন দোলে,
বিশ্ব – মোহের সুপ্তি ভাঙিছে সৃষ্টির কলরোলে।।

শুন শুন বার্তা নুতন, কে যেন স্বপন দিলা
ভাষা প্রাঙ্গণে স্বরে ব্যাঞ্জনে ছন্দ করেন লীলা ।
সৃষ্টি যেথায় জাগে নিরুপায় প্রলয় পয়োধি তীরে
তারি আশেপাশে অন্ধ হুতাশে আকাশ কাঁদিয়া ফিরে।
তাই ক্ষণে ক্ষণে জড়ো ব্যঞ্জনে স্বরের পরশ লাগে
তাই বারেবার মৃদু হাহাকার কলসংগীতে জাগে
স্বরব্যঞ্জন যেন দেহমনে জড়েতে চেতন বাণী
একে বিনা আর থাকিতে না পারে, প্রাণ লয়ে টানাটানি।
দোঁহি ছাড়ি দোঁহে, মূক রহে মোহে, ব্যঞ্জনে নাহি বুলি
স্বরের নিশাসে ‘আহা’ ‘উহু’ ভাষে ভাষার বারতা ভুলি।
ছিল অচেতন জগৎ যখন মগন আদিম ধুমে,
অরূপ তিমির স্তব্ধ বধির স্বপ্ন মদির ঘুমে:
আকুল গন্ধে আকাশ কুসুম উদাসে সকল দিশি,
অন্ধ জড়ের বিজন আড়ালে কে যেন রয়েছে মিশি!
স্তিমিত-স্বপ্ন স্বরের বর্ণ জড়ের বাধন ছিড়ি
ফিরে দিশাহারা কোথা ধ্রুবতারা কোথা র্স্বগের সিঁড়ি!
অ আ ই ঈ উ ঊ, হা হি হি হু হু হাল্কা শীতের হাওয়া
অলখচরণ প্রেতের চলন, নিঃশ্বাসে আসা যাওয়া ।
লেখে কি না খেলে ছায়ার আঙুলে বাতাসে বাজায় বীণা
আবেশ বিভোর আফিঙের ঘোর বস্তুত মন্ত্রহীনা।
ভাবে কুল নাই একা আসি যাই যুগে যুগে চিরদিন,
কাল হতে কালে আপনার তালে অনাহত বাধাহীন।।

অকুল অতলে অন্ধ অচলে অস্ফুট অমানিশি,
অরূপ আধারে আখি অগোচরে অনুতে অনুতে মিশি।

আসে যায় আসে অবশ আয়াশে আবেশ আকুল প্রাণে,
অতি আনমানা করে আনাগোনা অচেনা অজানা টানে,
আধো আধো ভাষা আলেয়ার আসা , আপনি আপনহারা
আদিম আলোতে আবছায়া পথে আকাশগঙ্গা- ধারা।

ইচ্ছা বিকল ইন্দ্রিয়দল, জড়িত ইন্দ্রজালে,
ঈশারা আভাসে ঈঙ্গিতে ভাষে রহ-রহ ইহকালে।

উড়ে ইতিউতি উতালা আকুতি উসখুস উকিঝুঁকি
উড়ে উচাটন, উড়ু উড়ু মন , উদাসে উধ্বমুখি।

এমন একেলা একা একা খেলা একুলে ওকুলে ফের
এপার ওপার এ যে একাকার একেরি একেলা হের।
হেরে একবার সবি একাকার একেরি এলাকা মাঝে
ঐ ওঠে শুনি, ওঙ্কার-ধ্বনি, একুলে ওকুলে বাজে।

ওরে মিথ্যা এ আকাশ-চারণ মিথ্যা তোদের খোঁজা,
স্বর্গ তোদের বস্তু সাধনে বহিতে জড়ের বোঝা।
আকাশ বিহানে বস্তু অচল, চলে না জড়ের চাকা,
আদুল আকাশে ফোকলা বাতাস কেবলি আওয়াজ ফাঁকা।

সৃষ্টিতত্ত্ব বিচার করনি শাস্ত্র পড়নি দাদা-
জড়ের পিন্ড আকাশে গুলিয়া ঠাসিবে ভাষার কাদা।
শাস্ত্রবিধান কর প্রণিধান ওরে উদাসীন অন্ধ,
ব্যঞ্জনস্বরে যেন হরিহরে কোথাও রবে না দ্বন্দ্ব।
মরমে মরমে সরম পরশে বাতাস লাগিয়ে হাড়ে,
ভাষার প্রবাহে পুলক- কম্পে জড়ের জতো ছাড়ে।
(তবে)আয় নেমে আয়, জড়ের সভায় , জীবন মরণ দোলে,
আয় নেমে আয়, ধরণীধুলায় কীর্তন কলরোলে।
আয় নেমে আয় রূপের মায়ায় অরূপ ইন্দ্রজালে
উল্কা ঝলকে থনল পুলকে আয় রে অশনিতালে।
আয় নেমে আয় কণ্ঠ্য বর্ণে কাকুতি করিছে সবে
আয় নেমে আয় র্ককশ ডাকে প্রভাতে কাকের রবে।

নামো নামো নমঃ সৃষ্টি প্রথম কারণ জলধি জলে
স্তব্দ তিমিরে প্রথম কাকলী প্রথম কৌতুহলে।
আদিম তমসে প্রথম বর্ণ কনক কিরণ মালা
প্রথম ক্ষুধিত বিশ্ব জঠরে প্রথম প্রশ্ন জ্বালা।

অকূল আঁধারে কুহকপাথারে কে আমি একেলা কবি
হেরি একাকার সকল আকার সকলি আপন ছবি ।
কহে,কই কে গো, কোথায় কবে গো ,কেন বা কাহারে ডাকি?
কহে কহ-কহ , কেন অহরহ ,কালের কবলে থাকি?
কহে কানে কানে করুণ কুজনে কলকল কত ভাষে,
কহে কোলাহলে কলহ কুহরে কাষ্ঠ কঠোর হাসে।
কহে কটঁমট কথা কাটা কাটা -কেওকেটাঁ কহ কারে ?
কাহার কদর কোকিল কণ্ঠে,কুন্দু কুসুম হারে?
কবি কল্পনে কাব্যে কলায় কাহারে করিছ সেবা
কুবের কতন কুঞ্জকাননে, কাঙালি কুটিরে কেবা ।
কায়দা কানুনে ,কার্য কারণে কীর্তিকলাপ মুলে ,
কেতাবে কোরানে কাগজে কলমে কাঁদায়ে কেরানীকুলে ।
কথা কাড়ি -কাড়ি কত কানাকড়ি কাজে কচু কাচকলা
কভু কাছাকোছা কোর্তা কলার কভু কৌপীন ঝোলা ।
কুৎসা -কথনে কুটিলে কৃপণে কুলীন কন্যাদায়ে
কর্মকান্ত কুলিম কান্ত,ক্লিষ্ট কাতর কায়ে ।
কলে কৌশলে ,কপট কোদলে ,কঠিনে কোমলে মিঠে
কেদ কুৎসিত ,কুষ্ঠ কলুষ কিলবিল কৃমি কীটে।
কহ সে কাহার কুহক পাথারু “কে আমি একেলা কবি ?
কেন একাকার সকল আকার সকলি আপন ছবি !”
‘ক’-এর কাঁদনে ,কাংস্য-ক্বণনে বর্ণ লভিল কায়া
গহন শুন্যে জড়ের ধাক্কা কালের করাল ছায়া।
সুপ্ত গগনেকরুণ বেদনে বস্তুচেতন জাগে
অকাল ক্ষুধিত খাই খাই রবে বিশ্বে তরাস লাগে
আকাশ অবধি ঠেকিল জলধি,খেয়াল জেগেছে খ্যাপা
কারে খেতে চায় খুজে নাহি পায় দেখ কি বিষম হ্যাপা!
(খালি)কর্তালে কভু কীর্তন খোলে? খোলে দাও চাটিপেটা !
নামাও আসরে ‘ক’এর দোসরে, খেঁদেলো খেদেলো খেঁটা।”
কহ মহামুনি কহ খুর শুনি ‘খ’য়ের খবর খাঁটি
খামারে খোয়ারে খানায় খন্দে খুজিনু খয়ের ঘাঁটি।
কহেন বচন খুড়ে খন্‌খন্ পাখালি আঁখির দিঠি
খালি খ্যাঁচাখ্যাঁচি খামচাখামচি খুঁৎখূঁতি খিটিমিটি ।
এখনো খুলেনি মুখের খোলস? এখনো খোলেনি আখি?
নিক খেয়ালে পেখম ধরিয়া, কি খেলা খেলিল পাখি!
এখনও রাখনা ক্ষুধার খবর এখনও শেখনি ভাষা
পঞ্চকোষের মুখের খোসাতে অন্ন দেখনি ঠাসা?
খোল খরতালে খোলসা খেয়ালে ‘খোল খোল খোল ‘বলে ,
শখের খাঁচার খিড়কী খুলিয়া খঞ্জ খেয়াল চলে।
সে ক্ষুধায় পাখি পেখম খুলিয়া খাঁছায় খেমটা নাচে
আখেরী ক্ষুধায় সখের ভিখারী খাস্তা খাবার যাচে-
প্রখর-ক্ষুধিত তোখড় -খেয়াল -খেপিয়া রুখিল ত্বরা,
চাখিয়া দেখিল, খাসা এ অখিল খেয়ালে-রচিত ধারা ।
খুঁজে সুখে দুখে খেয়ালের ভুলে খেয়ালে নিরখি সবি ,
খেলার খেয়ালে নিখিল -খেয়াল লিখিল খেয়াল ছবি ।
খেলার লীলা খদ্যোৎ-শিখা খেয়াল খধুপ -ধুপে’
শিখী পাখা পরে নিখুত আখরে খচিত খেয়াল রূপে ।
খোদার উপরে খোদকারী করে ওরে ও ক্ষিপ্ত মতি
কীলিয়ে অকালে কাঁঠাল পাকালে আখেরে কি হবে গতি ?
খেয়ে খুরো চাঁটি খোল কহে খাঁটি, ‘খাবি খাব ক্ষতি নাই,’
খেয়ালের বাণী করে কানাকানি – ‘গতি নাই, গতি নাই।’
নিখিল খেয়াল খসড়া খাতায় লিখিল খেয়াল ছবি
ক্ষণিকের সাথে খেয়ালের মুখে খতিয়া রাখিল সবি।

গতি কিসে হবে, চিন্তিয়া তবে বচন শুনিনু খাসা,
পঞ্চ কোষের প্রথম খোসাতে অন্ন রয়েছে ঠাসা!
আত্মার মুখে আদিম -অন্ন তাহে ব্যঞ্জনগুলি
অনুরাগে লাগি,করে ভাগাভাগি মুখে-মুখে দাও তুলি।
এত বলি ঠেলি আত্মারে তুলি তত্ত্বের লগি ধরি,
খেয়ালের প্রাণী রহে চুপ মানি বিস্ময়ে পেট ভারি ।
কবে কেবা জানে গতির গড়ানে গোপন গোমুখী হতে
কোন ভগীরথে গলাল জগতে গতির গঙ্গা স্রোতে।
দেখ আগাগোড়া গণিতের গড়া নিগূঢ় গুণ সবি
গতির আবেগে আগুয়ান বেগে অগণিত গ্রহরবি।
গগনে গগনে গোধুলি লগনে মগন গভীর গানে,
করে গমগম আগম নিগম গুরু গম্ভীর ধ্যানে।
গিরি গহ্বরে অসাধ সাগরে গঞ্জে নগরে-গ্রামে,
গাঁজার গাজনে গোষ্ঠে গহনে গোকুলে গোলকধামে।

শুনি সাবধানে কহি কানে কানে শাস্ত্রবচন ধরি
কৌশলে ঋষি কহে কখগঘ কাহারে স্মরণ করে
কয়ে দেখ জল খয়ে শুন্যতল গ’য়ে গতি অহরহ
কভূ জলে ভাসে কভূ সে আকাশে হংস যাহারে কহ ।
আঘাতে যে মারে ‘ঘ’কহি তারে হন ধাতু ‘ড’ করি
তেঁই কখগঘ কৃষ্ণে জানহ হংস-অসুর -অরি।
ব্যঙ্গে রঙ্গে ভ্রুকুটি -ভঙ্গে সঙ্গীত কলরবে
রণহুংকারে ধনুঠংকারে শংকিত কর সবে ।
বিকল অঙ্গে ভগ্নজঙঘ এ কোন পঙ্গু মুনি ?
কেন ভাঙ্গা ঠ্যাংঙে ডাঙায় নামিল বাঙালা মুলুকে শুনি।
রাঙা আঁখি জলে চাঙ্গা হয়ে বলে ডিঙাব সাগর গিরি ,
কেন ঢঙ ধরি ব্যাঙাচির মতো লাঙুল জুড়িয়া ফিরি ?

টলিল দুয়ার চিত্তগুহার চকিতে চিচিংফাক
শুনি কলকল ছুটে কোলাহল শুনি চল চল ডাক ।
চলে চঁটপট চকিত চরণ ,চোঁচা চম্পট নৃত্যে
চল চিত্রিত চিরচিন্তন চলে চঞ্চল চিত্তে।
চলে চঞ্চলা চপল চমকে,চারু চৌচির বক্রে।
চলে চন্দ্রমা চলে চরাচর চড়ি চড়কের বক্রে
চলে চকমকি চোখের চাহনে চঞ্চরী চল ছন্দ ,
চলে চিৎকার চাবুক চালনে চপট চাপড়ে চন্ড
চলে চুপি চুপি চতুর চৌর চৌদিকে চাহে ত্রস্ত
চলে চুড়ামণি চর্বে চোষ্যে চটি চৈতনে চোস্ত
চিকন চাদর চিকুর চাঁচর চোখা চালিয়াৎ চ্যাংড়া ,
চলে চ্যাংব্যাং চিতল কাতল চলে চুনোপুটি ট্যাংরা।।

ছোটে ছঁটফটি ছায়ার ছমক ছমলীলার ছলে
ছায়ারঙে মিশি ছোটে ছয় দিশি ছায়ার ছাঊনী তলে
ছোটে ছায়াবাহু পিছে পিছে পিছে ছন্দে ছুটেছে রবি
ছয় ঋতু ছোটে ছায়ার ছন্দে ছবির পিছনে ছবি
ছায়াপথ – ছায়ে জ্যোছনা বিছায়ে…

[অসমাপ্ত]

সন্দেশ

সন্দেশের গন্ধে বুঝি দৌড়ে এল মাছি?
কেন ভন্ ভন্ হাড় জ্বালাতন ছেড়ে দেওনা বাঁচি!
নাকের গোড়ায় সুড়সুড়ি দাও শেষটা দিবে ফাঁকি?
সুযোগ বুঝে সুড়–ৎ করে হুল ফোটাবে নাকি?

 সম্পাদকের দশা

সম্পাদকীয় –
একদা নিশীথে এক সম্পাদক গোবেচারা ।
পোঁটলা পুঁটুলি বাঁধি হইলেন দেশছাড়া ।।
অনাহারী সম্পাদকী হাড়ভাঙ্গা খাটুনি সে।
জানে তাহা ভুক্তভোগী অপরে বুঝিবে কিসে?
লেখক পাঠক আদি সকলেরে দিয়া ফাঁকি।
বেচারি ভাবিল মনে- বিদেশে লুকায়ে থাকি।।
এদিকে ত ক্রমে ক্রমে বৎসরেক হল শেষ।
‘নোটিশ’ পড়িল কত ‘সম্পাদক নিরুদ্দেশ’।।
লেখক পাঠকদল রুষিয়া কহিল তবে।
জ্যান্ত হোক মৃত হোক ব্যাটারে ধরিতে হবে।।
বাহির হইল সবে শব্দ করি- ‘মার মার’ ।
-দৈবের লিখন, হায় খন্ডাইতে সাধ্য কার।।
একদা কেমনে জানি সম্পাদক মহাশয়।
পড়িলেন ধরা – আহা দুরদৃষ্ট অতিশয়।।
তারপরে কি ঘটিল কি করিল সম্পাদক ।
সে সকল বিবরনে নাহি তত আবশ্যক।।
মোট কথা হতভাগ্য সম্পাদক অবশেষে।
বসিলেন আপনার প্রাচীন গদিতে এসে।।
(অর্থাৎ লেখকদল লাঠ্যৌষধি শাসনেতে।
বসায়েছে তার পুনঃ সম্পাদকী আসনেতে।)
ঘুচে গেছে বেচারীর ক্ষনিক সে শান্তি সুখ।
লেখকের তাড়া খেয়ে সদা তার শুস্কমুখ।।
দিস্তা দিস্তা পদ্য পদ্য দর্শন সাহিত্য পড়ে।
পুনরায় বেচারির নিত্যি নিত্যি মাথা ধরে।।
লোলচর্ম অস্থি সার জীর্ণ বেশ রুক্ষ্ণ শ।
মুহুর্ত সোয়াস্তি নাই -লাঞ্ছনার নাহি শেষ।।

 সাহস

পুলিশ দেখে ডরাইনে আর, পালাইনে আর ভয়ে,
আরশুলা কি ফড়িং এলে থাকতে পারি সয়ে।
আধাঁর ঘরে ঢুকতে পারি এই সাহসের গুণে,
আর করে না বুক দুর্ দুর্ জুজুর নামটি শুনে।
রাত্তিরেতে একলা শুয়ে তাও ত থাকি কত,
মেঘ ডাকলে চেঁচাইনেকো আহাম্মুকের মত।
মামার বাড়ির কুকুর দুটোর বাঘের মত চোখ,
তাদের আমি খাবার খাওয়াই এমনি আমার রোখ্!
এম্‌নি আরো নানান দিকে সাহস আমার খেলে
সবাই বলে “খুব বাহাদুর” কিংবা “সাবাস ছেলে”।
কিন্তু তবু শীতকালেতে সকালবেলায় হেন
ঠান্ডা জলে নাইতে হ’লে কান্না আসে কেন?
সাহস টাহস সব যে তখন কোনখানে যায় উড়ে-
ষাড়ের মতন কন্ঠ ছেড়ে চেঁচাই বিকট সুরে!

Previous Post

হরতাল – সুকান্ত ভট্টাচার্য

Next Post

আবোল তাবোল – সুকুমার রায়

মন্তব্য করুন জবাব বাতিল

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

No Result
View All Result
  • আত্মজীবনী
  • ইতিহাস
  • উপন্যাস
  • কবিতা
  • কাব্যগ্রন্থ
  • গল্পের বই
  • গোয়েন্দা কাহিনী
  • ছোট গল্প
  • জীবনী
  • দর্শন
  • ধর্মীয় বই
  • নাটকের বই
  • প্রবন্ধ
  • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
  • বৈজ্ঞানিক বই
  • ভূতের গল্প
  • রহস্যময় গল্পের বই
  • রোমাঞ্চকর গল্প
  • রোম্যান্টিক গল্পের বই
  • শিক্ষামূলক বই
Next Post
আবোল তাবোল - সুকুমার রায়

আবোল তাবোল - সুকুমার রায়

  • আমাদের সম্পর্কে
  • যোগাযোগ
  • গোপনীয়তা নীতি

© 2022 BnBoi - All Right Reserved

No Result
View All Result
  • বাংলাদেশী লেখক
    • অতুলচন্দ্র গুপ্ত
    • অভিজিৎ রায়
    • আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
    • আনিসুল হক
    • আবু ইসহাক
    • আবু রুশদ
    • আবুল আসাদ
    • আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন
    • আবুল বাশার
    • আরজ আলী মাতুব্বর
    • আল মাহমুদ
    • আসাদ চৌধুরী
    • আহমদ ছফা
    • আহমদ শরীফ
    • ইমদাদুল হক মিলন
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
    • কাসেম বিন আবুবাকার
    • জসীম উদ্দীন
    • তসলিমা নাসরিন
    • দাউদ হায়দার
    • দীনেশচন্দ্র সেন
    • নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
    • নিমাই ভট্টাচার্য
    • প্রফুল্ল রায়
    • প্রমথ চৌধুরী
    • ময়ূখ চৌধুরী
    • মহাদেব সাহা
    • মাহমুদুল হক
    • মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    • হুমায়ূন আহমেদ
  • ইন্ডিয়ান লেখক
    • অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়
    • অতুল সুর
    • অদ্রীশ বর্ধন
    • অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • অনীশ দেব
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার
    • আশাপূর্ণা দেবী
    • আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
    • কাজী নজরুল ইসলাম
    • ক্ষিতিমোহন সেন
    • তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
    • তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়
    • দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
    • নারায়ণ সান্যাল
    • নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
    • নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    • পাঁচকড়ি দে
    • পূর্ণেন্দু পত্রী
    • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
    • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • বিমল মিত্র
    • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
    • হেমেন্দ্রকুমার রায়
  • বিভাগসমূহ
    • আত্মজীবনী
    • ইতিহাস
    • উপন্যাস
    • কবিতা
    • কল্পকাহিনী
    • কাব্যগ্রন্থ
    • খেলাধুলার বই
    • গল্পের বই
    • গোয়েন্দা কাহিনী
    • ছোট গল্প
    • জীবনী
    • দর্শন
    • ধর্মীয় বই
    • নাটকের বই
    • প্রবন্ধ
    • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
    • বৈজ্ঞানিক বই
    • ভূতের গল্প
    • মুক্তিযুদ্ধের-বই
    • রহস্যময় গল্পের বই
    • রোমাঞ্চকর গল্প
    • রোম্যান্টিক গল্পের বই
    • শিক্ষামূলক বই
    • সমগ্র
  • সিরিজ বই
    • মিসির আলী সমগ্র
    • হিমু সিরিজ

© 2022 BnBoi - All Right Reserved

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In