দিনের হিসাব
ভোর না হতে পাখিরা জোটে গানের চোটে ঘুমটি ছোটে-
চোখ্টি খোলো, গাত্র তোলো আরে মোলো সকাল হলো।
হায় কি দশা পড়্তে বসা অঙ্ক কষা, কলম ঘষা।
দশটা হলে হট্টগোলে দৌড়ে চলে বই বগলে!
স্কুলের পড়া বিষম তাড়া, কানটি নাড়া বেঞ্চে দাঁড়া
মরে কি বাঁচে! সমুখে পাছে বেত্র নাচে নাকের কাচে।।
খেলতে যে চায় খেল্বে কি ছাই বৈকেলে হায় সময় কি পায়?
খেলাটি ক্রমে যেম্নি জমে দখিনে বামে সন্ধ্যা নামে;
ভাঙ্ল মেলা সাধের খেলা- আবার ঠেলা সন্ধ্যাবেলা-
মুখ্টি হাঁড়ি তাড়াতাড়ি দিচ্ছে পাড়ি যে যার বাড়ি।
ঘুমের ঝোঁকে ঝাপ্সা চোখে ক্ষীণ আলোকে অঙ্ক টোকে ;
ছুটি পাবার সুযোগ আবার আয় রবিবার হপ্তা কাবার!
দুষ্টুলোকের মিষ্টি কথায়
দুষ্টুলোকের মিষ্টি কথায়
নাচলে লোকের স্বস্তি কোথায়?
এম্নি দশাই তার কপালে লেখে।
কথার পাকে মানুষ মেরে
মাকড়জীবী ঐ যে ফেরে,
গড় করি তার অনেক তফাৎ থেকে।
*বিখ্যাত ইংরাজি কবিতার অনুকরণে
নদী
হে পর্বত, যত নদী করি নিরীক্ষণ
তোমাতেই করে তারা জনম গ্রহণ।
ছোট বড় ঢেউ সব তাদের উপরে
কল্ কল্ শব্দ করি সদা ক্রীড়া করে,
সেই নদী বেকে চুরে যায় দেশে দেশে,
সাগরেতে পড়ে গিয়া সকলের শেষে।
পথে যেতে যেতে নদী দেখে কত শোভা,
কি সুন্দর সেই সব কিবা মনোলোভা।
কোথাও কোকিলে দেখে বসি সাথী সনে,
কি সুন্দর কুহু গান গায় নিজ মনে।
কোথাও ময়ূর দেখে পাখা প্রসারিয়া
বনধারে দলে দলে আছে দাড়াইয়া!
নদীতীরে কত লোক শ্রান্তি নাশ করে,
কত শত পক্ষী আসি তথা বিচারে।
দেখিতে দেখিতে নদী মহাবেগে ধায়
কভুও সে পশ্চাতেতে ফিরে নাহি চায়।
নাচন
নাচ্ছি মোরা মনের সাধে গাচ্ছি তেড়ে গান
হুলো মেনি যে যার গলায় কালোয়াতীর তান।
নাচ্ছি দেখে চাঁদা মামা হাসছে ভরে গাল
চোখটি ঠেরে ঠাট্টা করে, দেখনা বুড়ার চাল।
নূতন বৎসর
‘নুতন বছর! নুতন বছর!’ সবাই হাঁকে সকাল সাঁঝে,
আজকে আমার সূর্যি মামার মুখটি জাগে মনের মাঝে।
মুস্কিলাসান করলে মামা, উস্কিয়ে তার আগুনখানি,
ইস্কুলেতে লাগ্ল তালা থাম্ল সাধের পড়ার ঘানি।
এক্জমিনের বিষম ঠেলা চুলক রে ভাই ঘুচ্ল জ্বালা,
নতুন সালের নূতন তালে হোক্ তবে আজ ‘হকির’ পালা।
কোন্খানে কোন মেজের কোণে, কলম কানে চশমা নাকে,
বিরামহারা কোন বেচারা দেখেন কাগজ, ভয় কি তাঁকে?
অঙ্কে দিবেন হকির গোলা, শঙ্কা ত নাই তাহার তরে,
তঙ্কা হাজার মিলুক তাঁহার, ডঙ্কা মেরে চলুন ঘরে,
দিনকে যদি জোটেন খেলায় সাঁঝের বেলায় মাঠের মাঝে,
‘গোল্লা’ পেয়ে ঝোল্লা ভরে আবার না হয় যাবেন কাজে!
আয় তবে আয়ে, নবীন বরষ মলয় বায়ের দোলায় দুলে
আয় সঘনে গগন বেয়ে, পাগলা ঝড়ের পালটি তুলে।
আয় বাংলার বিপুল মাঠে শ্যামল ধানের ঢেউ খেলিয়ে,
আয়েরে সুখের ছুটির দিনে আম-কাঁঠলের খবর নিয়ে!
আয় দুলিয়ে তালের পাখা, আয় বিছিয়ে শীতল ছায়া,
পাখির নীড়ে চাদের হাটে আয় জাগিয়ে মায়ের মায়া।
তাতুক না মাঠ, ফাটুক না কাঠ, ছুটুক না ঘাম নদীর মত,
জয় হে তোমার নূতন বছর! তোমার যে গুণ গাইব কত?
পুরান বছর মলিন মুখে যায় সকলের বালাই নিয়ে,
ঘুচ্ল কি ভাই মনের কলি সেই বুড়োকে বিদায় দিয়ে?
নুতন সালে নুতন বলে, নুতন আশায়, নুতন সাজে
আয় দয়ালের নাম লয়ে ভাই, যাই সকলে যে যার কাজে!
বদ্যি বুড়ো
শুন্ছ দাদা! ঐ যে হোথায় বদ্যি বুড়ো থাকে ,
সে নাকি রোজ খাবার সময় হাত দিয়ে ভাত মাখে?
শুন্ছি নাকি খিদেও পায় সারাদিন না খেলে ?
চক্ষু নাকি আপনি বোজে ঘুমটি তেমন পেলে ?
চলতে গেলে ঠ্যাং নাকি তার ভুয়েঁর পরে ঠেকে?
কান দিয়ে সব শোনে নাকি? চোখ দিয়ে সব দেখে?
শোয় নাকি সে মুন্ডুটাকে শিয়র পানে দিয়ে?
হয় না কি হয় সত্যি মিথ্যা চল না দেখি গিয়ে!
বন্দনা
নমি সত্য সনাতন নিত্য ধনে,
নমি ভক্তিভরে নমি কায়েমনে।
নমি বিশ্বচরাচর লোকপতে
নমি সর্বজনাশ্রয় সর্বগতে।
নমি সৃষ্টি-বিধারণ শক্তিধরে,
নমি প্রাণপ্রবাহিত জীব জড়ে।
তব জ্যোতিবিভাসিত বিশ্বপটে
মহাশুন্যতলে তব নাম রটে।
কত সিন্ধুতরঙ্গিত ছন্দ ভরে
কত স্তব্ধ হিমাচল ধ্যান করে।
কত সৌরভ সঞ্চিত পুষ্পদলে
কত সূর্য বিলুন্ঠিত পাদতলে।
কত বন্দনঝঙ্কৃত ভক্তচিতে
নমি বিশ্ব বরাভয় মৃত্যুজিতে।
বলব কি ভাই
বল্ব কি ভাই হুগ্লি গেলুম
বলছি তোমায় চুপি চুপি-
দেখ্তে পেলাম তিনটে শুয়োর
মাথায় তাদের নেইকো টুপি।।
বাবু
অতি খাসা মিহি সুতি
ফিনফিনে জামা ধুতি,
চরণে লপেটা জুতি জরিদার।
এ হাতে সোনার ঘড়ি,
ও হাতে বাঁকান ছড়ি,
আতরের ছড়াছড়ি চারিধার!
চক্চকে চুঁল ছাঁটা
তায় তোফা টেরিকাটা-
সোনার চশমা আঁটা নাসিকায়।
ঠোঁট দুটি এঁকে বেঁকে
ধোঁয়া ছাড়ে থেকে থেকে,
হালচাল দেখে দেখে হাসি পায়।
ঘোষেদের ছোট মেয়ে
পিক্ ফেলে পান খেয়ে ,
নিচু পানে নাহি চেয়ে,হায়রে।
সেই পিক থ্যাপ ক’রে
লেগেছে চাদর ভরে
দেখে বাবু কেঁদে মরে যায়রে।
ওদিকে ছ্যাকরাগাড়ি
ছুটে চলে তাড়াতাড়ী
ছিট্কিয়ে কাঁড়ি কাঁড়ি ঘোলাজল ।
সহসা সে জল লাগে
জামার পিছন বাগে,
বাবু করে মহারাগে কোলাহল ।।
বিচার
ইঁদুর দেখে মাম্দো কুকুর বল্লে তেড়ে হেঁকে-
“বলব কি আর, বড়ই খুশি হলেম তোরে দেখে।
আজকে আমার কাজ কিছু নেই, সময় আছে মেলা,
আয় না খেলি দুইজনাতে মোকদ্দমা খেলা ।
তুই হবি চোর তোর নামেতে করব নালিশ রুজু”-
“জজ্ কে হবে?” বল্লে ইঁদুর ,বিষম ভয়ে জুজু,
“কোথায় উকিল প্যায়দা পুলিশ , বিচার কিসে হবে?”
মাম্দো বলে “তাও জানিসনে ? শোন বলে দেই তবে!
আমিই হব উকিল হাকিম , আমিই হব জুরি,
কান ধরে তোর বলব ব্যাটা, ফের করেছিস চুরি?
সটান দেব ফাসির হুকুম অমনি একেবারে-
বুঝবি তখন চোর বাছাধন বিচার বলে কারে।”