প্রণয়িনীকে লাভ করবার আশায় কত মানুষ কত কঠোর সাধনা করছেন। চিত্রকর রিবলতর শিক্ষকের মেয়ের সঙ্গে প্রেমে পড়েন। একটা অপদার্থ মূল্যহীন যুবক বলে গালি খেয়ে তিনি ইতালিতে পালিয়ে যান। সেখানে বহু সাধনা করে তিনি একজন বিখ্যাত চিত্রকর হতে সক্ষম হয়েছিলেন। তার এই সফলতার মূলে ছিল একটা বালিকার মুখ। তাঁর গুণে মুগ্ধ হয়ে শেষকালে শিক্ষক মহাশয় রিবলতের হাতে কন্যাদান করেছিলেন।
এক নারী লেখিকা একখানি ভ্রমণ বৃত্তান্ত লিখেছিলেন। একখানা বড় কাগজে পুস্তকখানি বেশ একটু গরম সমালোচনা হয়েছিলো। লেখিকা সমালোচকের ঠিকানা পাবার জন্যে সম্পাদককে পত্র লিখলেন। তারপর ঠিকানা পেয়ে এই সমালোচক ভদ্রলোকের সঙ্গে কোনো কোনো বিষয় নিয়ে তার পত্র ব্যবহার হতে লাগলো। শেষকালে দুজনার মধ্যে একটা প্রীতির ভাব দেখা দিলে উভয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গেলেন।
ডাক্তার ডোনে গোপনে স্যার জর্জের মেয়েকে বিয়ে করেন। এর ফলে তাঁকে ভয়ানক কষ্টে পড়তে হয়েছিল। তিনি যেখানে চাকরি করতেন সেখানে জর্জের মেয়ে বেড়াতে আসতেন এবং উভয়ের মাঝে আলাপ হতো। জর্জ মেয়েকে সন্দেহ করে তখন-তখন অন্য জায়গায় সরিয়ে ফেললেন কিন্তু এর আগেই ডাক্তার ও তার মেয়ের মাঝে এতটা প্রণয় সঞ্চার হয়েছিল যা চেপে রাখা দু’জনের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছিল। গোপনে তারা এক গীর্জায় যেয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন। জর্জ জানতে পেরে ভয়ঙ্কর ক্রুদ্ধ হয়ে জামাইকে চাকরি হতে ডিসমিস করলেন। যেদিন পাদরী তাদের বিয়ের মন্ত্র পড়িয়েছিলেন সেদিন তাদেরকে জেলে দিলেন। শেষকালে যখন জানতে পারলেন তার জামাই সামান্য তোক নন, তখন তাঁর ক্রোধ পানি হয়ে গেল। প্রতিভাশালী পণ্ডিত ডোনের পত্নী স্বামীকে বড় ভালবাসতেন। ডোনের জীবন বড় সুখময় হয়েছিল।
গলিতবেত্তা সিমসনের ঘরবাড়ি ছিল না। একটু আশ্রয়ের জন্যে তাঁর চেয়ে ত্রিশ বছরের বড় এক দর্জির বৌকে তিনি বিয়ে করেন। এই মহিলার দুই ছেলে ছিল। বৌটি সিমসনের চেয়ে বয়সে বড়। আশ্চর্যের বিষয় বিয়ের পর এদের মধ্যে কোনো প্রকার অশান্তির উদ্রেক হয় নি। উভয়ে বেশ সুখে জীবন কাটিয়েছিলেন। এই সময় মহাপণ্ডিত জনসনও এক আশ্চর্য বিয়ে করেন। এক মাতাল অসভ্য হাবসির মতো চেহারা বুড়ির প্রেমে তিনি পাগল হন। জনসনের বয়সী দুটি ছেলেকে নিয়ে রমণী তার পণ্ডিত প্রেমিকের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন। জনসন এ জন্যে কোনো দিন অনুতাপ করেন নি প্রশংসা ছাড়া কোনোদিন পত্নীর নিন্দা করেন নি। সাহিত্যিক জন উজলীর পত্নী ছিলেন ভয়ানক প্রকৃতির মহিলা। যেমন মুখরা তেমনি বদমেজাজী। তিনি কখনও কখনও স্বামীকে ধরে মার দিতেন। ধীর শান্ত উজলী সে জন্যে কিছুমাত্র বিরক্তি প্রকাশ করতেন না। কোনো নারী কোনো প্রেমপত্র লিখছে কি না গোপনে গোপনে তা জানবার জন্যে স্বামীর পকেট খোঁজ করতেন। এই মহিলাটির হাতে অনেক টাকাকড়ি ছিল। তারই জোরে হয়তো তিনি স্বামীকে এতটা নাকাল করতেন।
দার্শনিক কমতির জীবনে কোনো সুখ ছিল না। মুখরা পত্নীর জ্বালায় তিনি অস্থির হয়ে উঠেছিলেন। শেষকালে একদিন তাকে ত্যাগ করে চলে গিয়েছিলেন।
তারপর কমতি এক ভদ্রমহিলাকে ভালবাসতে আরম্ভ করলেন। এই পত্নীর ক্রোধে ভালবাসার সঙ্গে কোনো স্পর্শ-লিপ্সা ছিল না। ভদ্রমহিলার স্বামীর কোনো অপরাধে জীবনের জন্যে নির্বাসিত হয়েছিলেন। সেই মহিলার মৃত্যুতে কমতি তার কবরের পাশে অশ্রু বিসর্জন করতেন। সঙ্গীত-শাস্ত্রে পণ্ডিত ওয়েবারের পত্নী ছিলেন বড় ভালো। গান গেয়ে গেয়ে ওয়েবারকে দেশে দেশে ঘুরে বেড়াতে হতো। পত্নীকে নিয়ে আমোদ করার সময় তার হতো না। পত্নী ছিলেন ইংরেজ মহিলা, তার স্বামী ওয়েবার জার্মানি স্বামীর কাছে উনি যেসব পত্র লিখতেন তাতে কত উৎসাহ, কত ভালবাসা মাখান থাকত। ওয়েবারও তাঁর পত্নীকে খুব শ্রদ্ধা-আদর করতেন।
কবি রেশাইন পত্নীকে নিয়ে খুব সুখের জীবন কাটিয়েছেন। এর সাহিত্য-প্রতিভা সম্বন্ধে পত্নী কোনোই খবর রাখতেন না। একখানা বই লিখে রাজার কাছ থেকে রেশাইন দশ হাজার টাকা পুরস্কার পান। মনের আনন্দে পত্নীকে খবর দেবার জন্যে দৌড়ে এসে তাকে আলিঙ্গন করে বলেন, “ওগো আমার জীবনের আলোক; আজ আমাদের আনন্দ করার দিন। রাজা আমার প্রতিভাকে সম্মান করেছেন আর এই টাকা দিয়াছেন। এ আনন্দ শুধু আমার নয়; তোমারও এতে অংশ রয়েছে।” কবি-প্রিয়া সে কথায় আদৌ কান না দিয়ে ছেলেরা কী নিয়ে কলহ করছিল তাই বলা আরম্ভ করলেন। রেশাইন পত্নীর হাত ধরে বললেন,–“আজ ওসব কথা থাক, স্বামীর সম্মানে আজ তুমি আনন্দ কর।”
জন রিচারকে একজন ভাগ্যবান পুরুষ বলতে হবে। তার লেখার মধ্যে নারী-চিত্তকে গলিয়ে দেবার এমন একটা প্রভাব থাকতো যা পড়লে তার নারীদের একটা মমতা না হয়ে পারতো না। যে মহিলা বা বালিকা তাঁর লেখা পড়তেন রিচারের প্রতি তারই একটা অনুরাগের সঞ্চার হতো। একটা বিপদ আর কি! লেখা বের হলে দেশসুদ্ধ নারী গোপনে গোপনে তার কাছে অনুরাগের পত্র লিখতেন। যখন তাঁর বয়স পঞ্চাশ এবং তিনি ছেলেমেয়ের বাপ তখন এক সতের বছরের বালিকা তার অনুরাগে একেবারে ক্ষেপে উঠলেন। শেষকালে প্রতিদানের কোনো আশা না দেখে বালিকা জলে ডুবে আত্মহত্যা করেছিলেন–কী দুঃখের কথা!