- বইয়ের নামঃ ধর্ম জীবন
- লেখকের নামঃ লুৎফর রহমান
- প্রকাশনাঃ আগামী প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ আত্মজীবনী
০১-০৫. ঈমান ধর্ম-বিশ্বাস
০১. ঈমান ধর্ম-বিশ্বাস
আল্লাহূতে বিশ্বাস–আল্লাহ্ আছেন, তাঁর কাছে মানুষের কৃতকর্মের বিচার হবে, তাঁর। প্রেরিত সমস্ত ধর্মগ্রন্থ বিশ্বাস, সমস্ত নবীগণে বিশ্বাস এবং সকলের উপরে আল্লাহ্ আছেন, আমার সুখ-দুঃখ জীবনের প্রত্যেক কাজের উপর তার দৃষ্টি আছে–এটা আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করার নাম ঈমান। এ কথা আরও পূর্বে বলা হয়েছে। সবাই আল্লাহ্ আল্লাহ্ করি, সবাই বলি মুখে আল্লাহ্। কিন্তু সত্য করে তার অস্তিত্বে বিশ্বাস মানুষের জন্যে এক অফুরন্ত শান্তি। ঈমান যে লাভ করেছে, সে মহাসম্পদ লাভ করেছে, সে রাজত্ব লাভ করেছে।
আল্লাহ্ আছে–এ বিশ্বাসের মূল্য অনন্ত। আল্লাহ আছেন, যে অন্তরে এ বিশ্বাস সত্যি করে পোষণ করে, তার জীবনে কোনো ভয় নেই। সে নির্ভীক, সে বলবান, সে সাহসী।
বিশ্বাসরূপ মহাসম্পদ আল্লাহই মানুষকে দান করেন। আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাসী জগতে অসাধ্য কাজ করে–সে পাপ করে না, পাপ করতে পারে না। দুঃখে সে সহিষ্ণু, বিপদে সে ধৈর্যশীল, অভাবে সে শান্ত। সে অজেয় শক্তির অধিকারী।
শত্রু যখন তরবারি হস্তে হযরতকে জিজ্ঞাসা করলো-মহম্মদ, তোমায় কে রক্ষা করবে? হযরত সুদৃঢ় বিশ্বাসে বললেন–আমার আল্লাহ্ আমাকে রক্ষা করবেন। শত্রুর কম্পিত ভীত হস্ত হতে তরবারি মাটিতে পড়ে গেল।
নেপোলিয়ন যুদ্ধক্ষেত্রে কামান গর্জন, গোলা বর্ষার মধ্যে ক্লান্ত শরীর নিয়ে নির্ভয়ে। শান্তির সঙ্গে পাঁচ মিনিটের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়তেন। বিশ্বাসই ছিল তাঁর শক্তি।
.
০২. ধর্ম জীবন
একজন ভদ্রলোক দিনের মধ্যে শতবার অজু করতেন। অজুর তার অন্ত ছিল না। নামাজেরও না। বাড়িতে নিজের সম্বন্ধীর পুত্রকে বাল্যকাল থেকে পালন করছেন। নিজের। একটি মেয়ে আছে, তারই সাথে বিয়ে দেবেন–এ রকম পাকাঁপাকি কথা। ছেলেটি ম্যাটিক। পাস করে কলেজে গেল। তখনও সবাই ভাবছিল, বোধ হয় দু-এক বছরেই ভদ্রলোক কথা। পালন করবেন।
এর মধ্যে তার ভ্রাতার ছেলেরা বি, এ, পাস করেছে। একদিন তিনি, তারই একজনার সঙ্গে মেয়েটিকে বিয়ে দিলেন। ইনি শতবার নামাজ পড়লেও ধর্মরক্ষা করেছিলেন কি?
মুসলমান সমাজে ধর্ম সম্বন্ধে একটা মিথ্যা বিশ্বাস ভূতের মতো পেয়ে বসেছে–এ বিশ্বাস ভাঙ্গা তার জীবনে হয়তো ঘটবে না। জীবনের কদর্যতা সম্বন্ধে সে সচেতন নয়–নিয়ম পালনই হয়েছে তার ধর্ম।
একটি লোকের বেতন মাত্র পঁচিশ টাকা। এই পঁচিশ টাকা বেতনের চাকরি করে ইনি জমিদারি করেছেন–চার-পাঁচটি ছেলেমেয়েকে উচ্চ শিক্ষা দিয়েছেন। একজনের বা দশজনের সর্বনাশ না করে কেমন করে তিনি উচ্চাসন লাভ করলেন? অথচ এর জীবনে। একবারও নামাজ কাজা হয় নি, কথায় কথায় ইনি কোরানের শ্লোক আবৃত্তি করেন। ইসলাম ধর্মের মতো মহৎ শ্রেষ্ঠ ধর্ম জগতে আর নাই, এই কথা বলেন।
মুসলমান জাতির ধর্ম, এই জাতির জীবন এবং আত্মার উপর কোনো প্রভাব বিস্তার করে না। নামাজ! নামাজ! নামাজ! আজান শুনলে পুণ্যের জন্য মুসলমানেরা মসজিদ ঘরের দিকে সন্তান সঙ্গপ্রয়াসী গাভীর মতো পুচ্ছ তুলে দৌড় দেন।
মুসলমান জাতির এই ভুল কঠিন আঘাতে ভাঙ্গতে হবে। ধর্ম অর্থ পাপ বর্জনের সাধনা। মিথ্যার সঙ্গে আত্মার সগ্রাম। প্রার্থনায় এই কাজের সহায়তা হবে–এই জন্য ইসলাম ধর্মে প্রার্থনার ব্যবস্থা।
আমি মুসলমান জাতিকে সাবধান করছি–যদি তারা শুধু রোজা-নামাজকেই ধর্ম মনে করে বসে থাকেন, তবে তারা পরকালে কোনোমতে মুক্তি পাবেন না।
আমার আত্মীয় শ্রেণীর কোনো কোনো অতি গুণ্ডা শ্রেণীর লোক যারা চির-জীবন বেশ্যালয়ে কাটিয়েছেন, তারা বুড়োকালে শক্তিহীন হয়ে শুধু রোজা নামাজ শুরু করে আমাকে ঘৃণায় বলে থাকেন, “তুমি ঘোর দুরাচার লোক। তুমি রোজা-নামাজ অস্বীকার কর? তুমি কাফের?” আমি যে কি বলতে চাচ্ছি সে কথা এইসব বুড়ো মূর্খরা মোটেই বুঝতে চায় না। ঈশ্বরের সঙ্গে প্রেমের বিনিময় এবং গভীর আত্মীক সংযোগ এইসব হতভাগ্য নামাজি দৃর্বত্তেরা শত জীবনেও লাভ করতে পারবে না। কারণ বুড়োকালে তারা কাছাখোলা মুসল্লী হয়েছে, তবু তারা চৌর্য, প্রতারণা, মিথ্যা ও মন্দ জীবন ত্যাগ করতে পারে নি। ধিক এইসব নামাজি শয়তানদিগকে! যদি ইংরাজের আমল না হতো, তা হলে নিশ্চয় অসহিষ্ণু, হয়ে এরা আমাকে এতদিন প্রকাশ্যে হত্যা করে ফেলতো। যদিও এ অবস্থায় গোপনে সে প্রচেষ্টা কতিপয় লোকের মধ্যে হয়েছিল।
যে মানুষ বা যে জাতির জীবনে ন্যায় ও সত্যের সমাদর নাই–যারা জীবনে ন্যায়বান ও সত্যময় হওয়াকে ধর্ম মনে করেন না–যারা জীবনে মিথ্যা কাজ ও অন্যায় কথা বলতে ভীত হয় না–এতে অধর্ম হয়, এই কথা আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করে না, বাইরে নিয়ম পালন, ক্রিয়াকলাপ, রোজা-নামাজ এবং পুজাকেই ধর্ম মনে করে, তাদেরকে অপবিত্র শার্দুল জ্ঞানে বর্জন কর। এরা ধর্মের কিছুই জানে না। এই কথা এক বর্ণও মিথ্যা নয়। জগতে যখন ধর্মের ভ্রান্তি ও বিস্মৃতি আসে, তখন ঈশ্বরের বাক্যপ্রাপ্ত এক একজন বাণী বাহকের আবির্ভাব হয়। এ ব্যক্তিবিশেষের ইচ্ছায় হয় না, সময় ও অবস্থার চাপে কঠিন দুঃখের ভিতর দিয়ে শত বেদনাকে জয় করে একটি মানুষের আবির্ভাব হয়–যে সারা জীবন ঈশ্বরের সত্য বাক্য প্রচার করে। মনুষ্য তাকে প্রথমত অগ্রাহ্য করে। যদি জীবনে মিথ্যা কাজ করতে অধর্ম বোধ না কর, অন্যায় করতে অধর্ম মনে না ভাব-জীবনকে সর্ব অন্যায় হতে রক্ষা করতে আন্তরিক চেষ্টা কর, তবে রোজা-নামাজ করো না। সে রোজা-নামাজ, পূজা-অর্চনা ছুঁড়ে ফেলে দাও।