কবি কাউপার চিরকাল অবিবাহিত ছিলেন। প্রথমে তার বোন সম্পর্কীয় থিওডোরার সঙ্গে তার প্রণয় জন্মে। তার মাথা খারাপ হয়েছে। সন্দেহ করে পরে থিওডোরার সঙ্গে কাউপারের বিয়ে নিষিদ্ধ হয়ে গেল। দু’জনই চিরকাল অবিবাহিত ছিলেন।
চার্লস ল্যাম্ব তার পাগলী বোনকে রেখে কোনো নারীকে পত্নীরূপে গ্রহণ করেন নি। সারা জীবন বোনের সেবা-যত্ন করেই তিনি আনন্দ লাভ করতে চেষ্টা করেছিলেন।
ফরাশি কবি বেরেঞ্জার এক ইংরেজ বালিকার প্রেমে পড়ে একেরারে পাগল হয়ে উঠেছিলেন। এক বন্ধু তার এই শোচনীয় অবস্থা দেখে তাকে এক নির্জন পাহাড়তলীতে নিয়ে সেখানে কিছুদিন বাস করেন। পাহাড়ের উদার গম্ভীর দৃশ্য দেখতে দেখতে কবির হৃদয়-ক্ষত অনেকটা শুকিয়ে ওঠে।
বিয়ের আগেই অনেক সময় সুযোগ হলে যুবক-যুবতীর মাঝে যথেষ্ট প্রণয় সঞ্চার হয়, কিন্তু শেষকালে বিয়ে হবার পর সে প্রেম যদি টেকসই হয় তবেই জানা যায় সে প্রেম সত্য।
এক ভদ্রলোক এক বালিকার প্রেমে পড়ে প্রায় উদাসী হয়ে জীবন কাটাতেন। বালিকার অন্য জায়গায় বিয়ে হয়েছিল। ভদ্রলোক কত আঁখিজলে এই বালিকাটির কাছে গোপন পত্র লিখতেন। শেষকালে একদিন বালিকা বিধবা হলেন। পুরাতন প্রণয়ী তখন খোদাকে অশেষ ধন্যবাদ দিয়ে তার জীবনের পথহারা কুসুমকে আপনার করে নিলেন। আশ্চর্যের বিষয় কিছু কাল পরে এই প্রেমিক প্রভু তার প্রণয়ীকে ফেলে হাটে বাজারে জঘন্য স্থানে মাতলামি করে বেড়াতে শুরু করলেন।
প্রেম সত্য কিনা, এটা বিশেষ জেনে নিয়ে নারীকে স্বামীর গ্রহণ করতে হবে, নইলে জীবনে অনেক বিপদ হয়। কত সরলা যুবতী ও বালিকাকে দুষ্ট লোক বাড়ির বের করে ফাঁকি দিয়ে অন্যত্র বিক্রি করে যায়; সে সব কাহিনী শুনলে শরীর শিউরে উঠে।
বিবাহিত জীবনে স্বামী-স্ত্রী উভয়ে উভয়ের প্রতি গভীর সহানুভূতি পোষণ করবেন; তাহলে দাম্পত্য জীবন ভারী সুখময় হবে। সহানুভূতিতে নিতান্ত অপরিচিতদের মধ্যে যে প্রণয় হয়, তা স্বামী-পত্নীতে হবে না, একি সম্ভব? স্বামী-স্ত্রী কেউ কারো প্রতি কোনো প্রকার অশ্রদ্ধাপূর্ণ কথা বা ব্যবহার জানাবেনা।
দূরদেশ থেকে নিশার আঁধার, বৃষ্টি-বিদ্যুৎ মাথায় নিয়ে স্বামী বাড়িতে আসেন; কার মায়ায়? বাড়ির নিশ্চয়ই। আর সে বাড়িরও প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে তার পত্নী। কাছে যদি যত্ন ও ভালবাসা না পাওয়া যায়, সে কি কম দুঃখের কথা? এ কথা অশ্রদ্ধাপূর্ণ কথা, একটা অবজ্ঞাভরা ব্যবহার প্রাণে কত বাজে? বাড়ি হবে শান্তি ও পুণ্যের কেন্দ্র। সেখানে যে আসবে তারই প্রাণ শান্তি ও পবিত্রতায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে। কোনো কোনো প্রতিভাশালী ব্যক্তির বিবাহিত জীবন মোটেই সুখময় হয় নি। পারস্যের মহাকবি সাদী ও গ্রিসের দার্শনিক সক্রেটিস পত্নী নির্বাচনে বিশেষ সুখী হতে পারে নি।
রাজনীতিবিশারদ বার্লের পত্নী ছিলেন বড় ভালো। তাঁর মৃত্যুতে বার্লে দুঃখ করে সদাই বলতেন, আমার পরীর মতো সতী-সাধ্বী রমণী জগতে অতি অল্প আছে।
কবি ম্যাসন একখানা মজলিশে এক নারীকে লক্ষ্য করেছিলেন। তিনি সারা সন্ধ্যা কারো সঙ্গে একটি কথাও বলেন নি। এই কারণেই কবির মন এই নারীর প্রতি প্রসন্ন হয়ে উঠলো। শেষে তিনি একে বিয়ে করেছিলেন। ম্যাসনের জীবনও হয়েছিল সুখময়। বস্তুত এক একটা বিশেষ বিশেষ গুণে বিশেষ বিশেষ মানুষকে মুগ্ধ করে। সে গুণে হয়তো কালের কাছে বিশেষ প্রীতিপদ নয়।
ব্যস্তবাগীশ ক্যালভীন (Calvin) প্রেম, ভালবাসা বা নারী-সঙ্গের জন্যে বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করতেন না। এক বন্ধুকে একটা বৌ খুঁজে দেবার জন্য তিনি একবার বলেছিলেন। বন্ধু কিছুদিন চেষ্টা করেছিলেন বটে কিন্তু কাজটা নিতান্ত অসম্ভব ভেবে চেষ্টার শেষে ক্ষান্ত দিয়েছিলেন।
মার্টিন বোসার এক দশ-ছেলের মা বুড়িকে বিয়ে করেন। আশ্চর্যের বিষয় এতে তার কিছুমাত্র অসুবিধা হয় নি। বেশ সুখেই তিনি জীবন কাটিয়েছিলেন। দুঃখের বিষয় আমাদের দেশে পুরুষের যেমন দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণ করবার ক্ষমতা আছে নারীর সেরূপ নাই। শিক্ষা ও শক্তিহীন নারী তার দাবি অনুযায়ী কাজ করতে শরমে মরে যান।
এক বিখ্যাত চিকিৎসক একদিন পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন, এমন সময় তাঁর সামনে হঠাৎ একটি যুবতী স্ত্রীলোক মূৰ্ছিতা হয়ে পড়ে যান। চিকিৎসক যত্ন করে যখন তার জ্ঞান সঞ্চয় করলেন তখন স্ত্রীলোকটির প্রতি তার একটা দয়ার সঞ্চার হল। শেষকালে তাকে তিনি একেবারে বিয়ে করে ফেললেন। দৈব ঘটনায়ও নারী-পুরুষে অনেক সময় প্রেমের সঞ্চার করে।
চিকিৎসক হান্টার (Flunter) এক বালিকাকে ভালবাসেন, কিন্তু আয় ভালো হচ্ছিল বলে তখন তাকে বিয়ে করতে পারেন নি। প্রণয়িনীর কথা মনে করে তিনি অক্লান্ত পরিশ্রমে মন দিয়েছিলেন। শেষে যখন অবস্থা ফিরলো তখন তিনি বিয়ে করলেন। কবি ক্রের দীর্ঘ আট বছর তার প্রণয়িনীর অপেক্ষায় কত না কষ্ট, কত না আশা-শঙ্কায় কাটিয়েছিলেন।
দরিদ্র ক্রেব প্রথমে চিকিৎসক ব্যবসা আরম্ভ করেন; সুবিধা হল না দেখে বই লিখে জীবিকা অর্জনের চেষ্টা করলেন। এতেও সুবিধা হলো না দেখে তিনি ধর্মযাজকের কাজে ঢুকলেন। এই সময়ে তাঁর একখানা বই বাজারে দাঁড়িয়ে গেল। অবস্থাও তার ভালো হল এবং তিনি জীবনের আনন্দ প্রতিমাকে এতকাল পরে ঘরে আনতে পারলেন।