কোনো কারণে পিতার কাছ থেকে যদি দূরে থাকতে হয় তা হলে সুযোগ সুবিধা পেলেই পিতার সঙ্গে দেখা করো। নতুন মাকে শ্রদ্ধা জানাতে যেন কোনো ভুল না হয়। বাপ-মায়ের কাছে সকল অহঙ্কার চূর্ণ করে ফেলে দাও। পিতা যদি অজস্র গালি দেন তবে তা শোনবার জন্যেই তার সঙ্গে দেখা করবে। পুত্র হয়ে পিতার কাছ থেকে দূর হয়ে থাকা বিধাতার আঁখিজলের মতোই করুণ ও অন্যায়। পিতার গালি-গালাজে মনে একটা গোপন আনন্দ হয়, কারণ এরই নাম পিতৃভক্তি।
পিতৃভক্তির অর্থ যেন কেউ না বোঝে পিতার ইচ্ছায় নিজের বিবেককে বিসর্জন দেওয়া। বিবেক অনেক সময় আমাদের ভুল পথে নিয়ে গেলেও সর্বদা তাকে অনুসরণ করতে হবে। বিবেকের আদেশ পালন না করে মানুষের আর উপায় নেই। বিবেকের অনুবর্তী হয়ে সাধ্যমতো আমাদেরকে পিতা-মাতার তুষ্টি বিধান করতে হবে।
নিজের চিন্তা ও ভাব পিতার কাছ থেকে গোপন করে রাখা ভুল। অনেক সময় পিতাকে শিশু ভেবে বিনয়ে তাঁর কাছে সত্য ও কল্যাণের কথা জানাতে হবে।
সাবধান! পিতার প্রতি ব্যবহারে নিজেকে কোনো প্রকারের রূঢ় অহঙ্কারী করে তুলো না।
নারী জাতিকে পরের ঘর করতে হয়। বিয়ের পর দিন হতেই সে স্বামীর পরিবারের একজন হয়ে যায়। পিতার কুলের কারো প্রতি তার বিশেষ কোনো কর্তব্য থাকে না। বিয়ের পর পিতামাতার আজ্ঞা পালন করাই তার পক্ষে কঠিন। যে নারী স্বামীর কথা ভুলে পিতামাতার আজ্ঞানুবর্তিনী হয় সে হতভাগিনী। সত্য কথা বলতে, পিতামাতার প্রতি নারী জাতির বিশেষ কোনো কর্তব্য নেই।
নারীর একমাত্র প্রভু স্বামী। স্বামী ছাড়া আর কারো কথা শুনতে নারী বাধ্য নয়।
নারীর নিতান্ত অসহায় বলে তার মনুষ্যত্ব স্ফুরণ হবার কোনো সুযোগ হয় না। সে যা সত্য বলে মনে করে, তা সে করতে সাহস পায় না। সে জীবনে যা বলে ও করে তার নিজের বলা ও নিজের করা নয়। জাতিত্ব, বিবেক ও ভাব, স্বাধীনতা তার কিছু নেই। জীবনের দুরবস্থা ও অসহায় অবস্থার কথা স্মরণ করে সে কার কথা শুনবে, কীভাবে চলবে। কিছুই ঠিক পান না। যাবৎ না সে চিন্তা ও কর্মশক্তির স্বাধীনতা পাচ্ছে, তবে তার কাছে উচ্চজীবনের কথা বলা বৃথা।
পিতামাতার কথা শুনতে নারী বাধ্য নয় বলে ব্যথার সময় সুযোগ পেলে নারী প্রাণ দিয়ে পিতামাতার সাহায্য করবে।
কোনো কোনো স্বামী শ্বশুরকে জব্দ করবার জন্য পত্নীকে বাপের বাড়ি যেতে একদম বন্ধ করে দেন। এরা নিষ্ঠুর।
কোনো নারীর কথা জানি, তিনি যে ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার সঙ্গে পীড়িতা মায়ের সেবা করেছিলেন, তা অতি আশ্চর্য, দুই তিন বৎসর কঠিন পরিশ্রম করেও তিনি মাকে বাঁচাতে পারেন নি। অনেক সময় সারাটি রজনী অনিদ্রায় কাটিয়ে দিতেন।
কারো কারো পিতা বৃদ্ধকালে বহুদিন ধরে রোগ শয্যায় শায়িত থাকেন। বাড়ির সবাই অগোচরে বিরক্তি ভরে বলে থাকেন, এ বিপদ আর সহ্য হয় না। কতকাল আর এ ব্যাধি টানতে হবে।
পিতা সম্বন্ধে এরূপ চিন্তা যেন মনে কখনও স্থান না পায়।