মা মরলে পিতা অনেক সময় দ্বিতীয় বিয়ে করে থাকে, এতে অনেকে বিরক্ত হয় নতুন মাকে অপমান ও অপ্রস্তুত করতে আনন্দ অনুভব করে। পুত্রের পক্ষে পিতার প্রতি এর বেশি দুর্ব্যবহার আর নাই। নতুন নারীকে ‘মা’ বললে তো কোনো দোষ হয় না–এতে মৃত মায়ের প্রতি অসম্মান দেখান হয় না। এ যে মনে করে তার মন খুবই ছোট। হারানো মার আসন পুরোতে আর একজন নারী যে এলেন, সে জন্যে নিজকে সৌভাগ্যবান মনে কর। মানুষ পথের নারীকে মা বলে আনন্দ অনুভব করে, আর তুমি তোমার পিতার পত্নীকে মা বলতে সঙ্কোচ বোধ কর? নতুন মা ছেলেদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে এ কথাটা অন্যায়। বর্বর সমাজে শুধু মা বলে নয়, প্রত্যেকে প্রত্যেকের প্রতি কঠিন ব্যবহার করতে আনন্দ বোধ করে। আপন মৃত মায়ের মতো নতুন মায়ের সহ্য করার ক্ষমতা না থাকতে পারে। সে যদি দৌরাত্ম সহ্য না করতে পেরে শিশুকে একটু মারে, সেজন্যে তাকে দোষ দেওয়া যায় না। তার স্বভাব ও মন নিষ্ঠুর নয়। পর বললেই মানুষ পর হয়ে যায়। তৃষিত পথের কুকুরকে মানুষ গালি দেয়, নিজের স্বামীর পুত্র কন্যাগণকে নারী কেন ভালবাসে না? মানুষ প্রেম হতে জন্মেছে, ভালবাসা তার স্বভাব।
সৎমাকে সৎমা বলে তার মনুষ্যত্বের অবমাননা করো না। মায়ের মৃত্যুর পর পিতার বিবাহে কখনও অসন্তোষ প্রকাশ করবে না। বাপ বুড়ো হয়ে গিয়েছে এ বয়সে তার বিয়ে করা অন্যায় এসমস্ত কথা বলা নিতান্তই অভদ্রতা। বুড়ো মানুষের বালিকার সঙ্গে বিয়ে আমি। সমর্থন করছি না। নতুন মায়ের ছেলে হলে, তার সম্পত্তির অংশ পাবে এই ভয় পোষণ করাও নীচাশয়তা। বাপের সম্পত্তি ভোগ করবার জন্য তোমার এত লালসা কেন? যতদিন নিঃসহায় ছিলে, তৃতদিনই তোমার অপরের সাহায্য প্রয়োজন ছিল। যে সমস্ত পুত্র পিতার সম্পত্তির লোভে ক্ষুধিত শৃগাল হয়ে বসে থাকে, তারা অপদার্থ। বিশ্বকে মানুষ সর্বস্ব দান। করেছে, তুমি তোমার ভাইকে তোমার নিজের অংশ দিতে কষ্ট বোধ করবে কেন? হোক না যত ইচ্ছা ভাই বোন, তাদের সকলকে নিয়ে ইসলামের সেবায় জীবন উৎসর্গ কর।
মৃত মায়ের সম্পত্তি নিয়ে অনেক পিতা-পুত্রে মনোমালিন্য হয়। পুত্র পিতার সঙ্গে কঠিন ব্যবহার করতে কষ্ট বোধ করে না। শিশুকালে যে একবার তোমায় চুমো খেয়েছে তার কাছে তুমি কত ঋণী আর পিতা কলিজার স্নেহ দিয়ে তোমায় পালন করেছেন তাঁর সঙ্গে কি কোনো আড়ি করা যায়? পিতা যদি স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে পুত্রকে দূর হয়ে থাকতে বলেন তবে নীরবে তার ইচ্ছামতই কাজ করতে হবে, তার প্রতি ক্রোধ পোষণ করা ঠিক নয়।
অত্যধিক পিতৃভক্তিতে পত্নী ত্যাগ করা কিংবা পত্নীকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া মনুষ্যত্ব নয়–পত্নীর দাবি শোধ দিবার জন্যে যদি পিতাকে অসন্তুষ্ট করতে হয়, তবে তা করতে হবে যদি পরীর সম্ভ্রম রাখবার জন্যে জমিদারি ত্যাগ করতে হয় তাতেও তোমার মনুষ্যত্বের অবমাননা হবে না। পিতার খেয়ালের মূলে একটা মানুষ হত্যা করা মানুষেরা। কখনও অনুমোদন করে না।
পিতার মৃত্যুর পর নতুন মায়ের প্রতি কখনও অসদ্ব্যবহার করবে না। এরূপ করা কাপুরুষতা।
সামান্য সামান্য ব্যাপারে পুত্র-কন্যারা পিতা-মাতার সঙ্গে কিরূপ ব্যবহার করবে; তা পিতামাতাদেরই শিশু অবস্থায় শেখান কর্তব্য। নইলে এসব তারা কোনো কালে নিজে শিখবে না।
মা যদি অল্প বয়সে বিধবা হন, তবে, তাকে পুনরায় বিয়ে করতে বলা উচিত। এতে কিছুমাত্র অসম্মান বা লজ্জা নেই। হীন ব্যক্তির ঘরে যেয়ে যদি তার কোনো অসম্মান হবার ভয় থাকে তবে সেজন্যে অভিভাবক হয়ে পূর্ব হতেই মাকে সতর্ক করবে; তাই বলে তার স্বামীর মতের উপর হস্তক্ষেপ করো না। যারা এ বিষয়ে কোনো প্রকার ব্যঙ্গোক্তি করে। তারা নিতান্তই ঘৃণিত জীব।
পুত্রকন্যা যেদিন ভূমিষ্ট হয়, সেদিন মনে ভেবো–আজ আল্লাহর বান্দা আমার ঘরে এসেছে; না জানি খোদা তাকে কী উদ্দেশ্য সিদ্ধ করবার জন্য জগতে পাঠিয়েছেন। আমি পিতা নই–আল্লাহর বান্দার সেবক। যে পিতা মাতার পুত্র-কন্যাগণ সম্বন্ধে এরূপ কল্পনা করতে পারেন, তিনি কত বড়, তার পুত্রেরা মহাপুরুষ হবে না কেন? জনক-জননীর জন্য তারা অকুতোভয়ে হাসতে হাসতে তলোয়ারের সামনে যেয়ে দাঁড়াবে।
মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে শিশুকে পালন কর–বড় হয়ে তোমার জন্য হৃদয়ের রক্ত দেবে।
মা যদি বিধবা হন, তবে দিনের মধ্যে বসে তার সঙ্গে নানা বিষয়ের গল্প করা চাই। বৌ নিয়ে যদি বিদেশে থাকতে হয় তাহলে মায়ের বিশেষ ইচ্ছা ব্যতীত তাকে একাকিনী বাড়িতে ফেলে রাখবে না। বৃদ্ধ বয়সে নারীর একমাত্র অবলম্বন পুত্র। তাঁর সঙ্গ হতে বঞ্চিত থাকা তার অবলম্বনহীন জীবনে খুবই বেদনার কথা। অনেক মা নিজের সুখের কথা না ভেবে অনবরত পুত্রের মঙ্গল ও সুখের কথা চিন্তা করেন। এই জন্যই মায়ের কথা বেশি ভাবতে হবে।
বিয়ের পর কোনো কোনো পিতা-মাতা মনে করে ছেলে পর হয়ে গিয়েছে–পুত্রবধূর, সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদ করে পুত্রবধূকে নিতান্ত অস্থির করে তোলেন; জীবনের এই অবস্থাটা বড়ই সমস্যাপূর্ণ। নানাফন্দি করে; পিতামাতা ও পত্নী উভয়পক্ষেরই মন রক্ষা করতে হবে। পিতামাতা যতই কোনো অন্যায় কথা বলুন; তাদের বিরুদ্ধে সন্তানের কিছুই বলার নেই। মনের কষ্ট বুকে চেপে রেখে সব নীরবে সহ্য করতে হবে। পিতা মাতার সঙ্গে রোষ-পূর্ণ বাক্য ও উগ্র ব্যবহার করবে না। সন্তানের পক্ষে বড়ই অগৌরবের কথা।