সব পেমেন্টই অবশ্য পাঁচশো ও হাজারের নোটে!! অর্থাৎ আপদ তো বিদেয় হলো, তার ওপর স্টক দিতেও ডিস্ট্রিবিউটর বাধ্য। ফলে অনেকটা নিশ্চিন্দি।
তা যে ডিস্ট্রিবিউটর মহাশয় সঙ্গে ছিলেন, তিনি দেখলাম নির্বিকার চিত্তে সমস্ত পেমেন্ট কালেক্ট করছেন, হ্যাঁ, পাঁচশো আর হাজারি নোটেই!
এহেন মহত্বের কি কারণ?
তিনি উদাসস্বরে বললেন টাকা জমা দিতেই হবে, একবার নয় অনেক বারই, আর তাছাড়া জমা দেবেন কারেন্ট অ্যাকাউন্টে, সেভিংসে নয়। অতয়েব আমি কি ডরাই সখী ভিখারি রাঘবে? এই সুযোগে ভদ্রলোকের ব্যবসার চেহারা ফিরে গেলো, মার্কেটে এখন জিরো ক্রেডিট!
বুঝলুম, ভদ্রলোক ব্যবসা বোঝেন। তা ইন্দোর শহরের যে দ্বিতীয় ডিস্ট্রিবিউটর আছেন, শুনলাম তিনি কোনও পেমেন্ট নিচ্ছেন না যে? এক যাত্রায় এহেন পৃথক ফলের কারণ?
ইদিকউদিক তাকিয়ে ভদ্রলোক ফিক করে হেসে ফেললেন, ‘উসকা প্রোমোটারি কা ভি ধান্দা হ্যায় না! ‘
এইবার বুঝো সাধু যে জানো সন্ধান!
রিটেইলারদের মধ্যে দেখলাম তিন প্রকারের রিঅ্যাকশন। তার আগে দেখলাম রাতারাতি ইন্দোরের প্রায় সমস্ত গ্রসারি বা জেনেরাল মার্চেন্টে পেটিএমে পেমেন্ট নেওয়া চালু হয়ে গেছে। নতুন প্রজন্ম আহ্লাদিত, পুরোনো প্রজন্মের বিচলিত। এতদিন এসব না ব্যবহার করেও দিব্যি চলে যাচ্ছিলো, এখন হুড়মুড় করে ঘাড়ের ওপর এসে পড়াতে তাঁরা মন দিয়ে কি করে পেটিএম ইউজ করা যায় শিখছেন। এ নিয়ে একটা ছোট্ট অভিজ্ঞতা হলো, উপসংহারে বলবো না হয়।
তা যা বলছিলাম, তিন প্রকারের রিঅ্যাকশন। এক, কিছুতেই পাঁচশো হাজারের নোট নিচ্ছেন না, দুই, নিচ্ছেন, কিন্তু পুরো পাঁচশো টাকার সামান নিতে হচ্ছে। তাঁদের বিশেষ দোষ দিয়ে লাভ নেই, দু একজন গল্লা, অর্থাৎ ক্যাশবাক্স খুলে দেখালেন সবই পাঁচশো হাজারের নোট। খুচরো নোট সার্কুলেশনে নেই, চেঞ্জ দেবে কোত্থেকে? তিন, হাসিমুখে পাঁচশো হাজারের নোট নিচ্ছেন, নো ইস্যুজ।
তবে দুটো জিনিস কমন, এক ব্যবসার পরিমাণ অর্ধেক বা তারও কমে নেমে গেছে। আর দুই, মহল্লার চেনা লোকজনদের সবাই উদারহস্তে ধারবাকি দিচ্ছেন, ‘এক দো হপ্তে মে তো মিল হি জায়েগা। ইতনা তো করনা পড়তা হ্যায়’।
তা তো বুঝনু, কিন্তু ডিস্ট্রিবিউটরদের পেমেন্ট করে দিচ্ছেন, পাবলিককে ক্রেডিটে মাল দিচ্ছেন, আপনাদের চলবে কি করে?
কেন? সবজি ছাড়া সবই তো দোকানেই আছে। আর এক হপ্তা সবজি কেনার পয়সা ঘরে থাকেই। ওটা তেমন বড় ইস্যু নয়।
বুঝলাম, আপাতত মার্কেটে বিশাল পরিমাণ ক্রেডিটে লেনদেন চলছে, ‘এক দো হপ্তে মে কাম নিপট যায়েগা’র আশায়।
তা এত বড় ডিসিশনটা যে নেওয়া হলো, তাতে ফল কিছু হবে?
ব্যবসায়ী লোক, দুটো কথা মুখে বলেন, দশটা কথা পেটে থাকে। অনেকেই সোৎসাহে সমর্থন করলেন, বেশিরভাগই সতর্ক, ‘আশা তো করছি ভালো কিছু হবে, দেখা যাক কি হয়’ টাইপের জবাব।
তা ইত্যাকার জ্ঞানভাণ্ডারে চিত্তপূর্তি হলে পর খেয়াল হলো যে উদরপূর্তির আশু ব্যবস্থা দরকার। তা ইন্দোরের আপনা স্যুইটসের চানা ভাটুরা নাকি বিশ্বের ইতিহাসে বিশেষ স্থান করে নিয়েছে, আবিষ্কর্তা নোবেল কি অস্কার কিছু একটা পেলেন বলে, এইসব শুনে সেখানে যাওয়াই সাব্যস্ত হলো।
আগে পেমেন্ট কাউন্টার। সেখানে মেনুকার্ড রাখা। সেই দেখে পেমেন্ট করলে আপনি কুপন পাবেন, আর সেই কুপন ”ডেলিভারি” লেখা জানালায় নিয়ে গেলে উদ্দিষ্ট বস্তুটির খোঁজ পাবেন।
গিয়ে দেখি তুমুল বাওয়াল!
এক বছর সত্তর পঁচাত্তরের বৃদ্ধ, মিলিটারিমার্কা গোঁফ নাচিয়ে মিলিটারি মেজাজে পেমেন্ট কাউন্টারে দাঁড়ানো মালিককে চোস্ত ইংরেজিতে ঝেড়ে চলেছেন, কেন পাঁচশো টাকার নোট নেওয়া হবে না তার কারণ দর্শানো হোক, এই মর্মে। মালিক ভদ্রলোকের কাঁদোকাঁদো অবস্থা, বাবুর অবস্থা দেখে কর্মচারীরাও ভীত ও ত্রস্ত। আর তো আর, এমপি পুলিশের এক ইন্সপেক্টর সাহেবও খেতে এসেছিলেন, তিনি চুপচাপ কেটে পড়লেন, ‘আপনি বাঁচলে বাপের নাম’ আওড়াতে আওড়াতে।
শেষে যখন কিছুতেই কিছু হলো না, মালিক কার্ড বা পেটিএম ছাড়া পেমেন্ট নিলেন না, ভদ্রলোক লাইন থেকে বেরিয়ে এসেই আমাকে পাকড়াও করলেন, ( খুব সম্ভবত মজা দেখার জন্যে সবচেয়ে কাছে দাঁড়িয়ে ছিলুম বল), ‘হে ইয়ং ম্যান, আই হ্যাভ ইন্সটলড পেটিএম ইন মাই মোবাইল লাস্ট উইক, বাট আই ডোন্ট নো হাউ টু পুট এনি মানি দেয়ার। ক্যান ইউ প্লিজ হেল্প মি? মাই ক্রেডিট কার্ড ইজ উইথ মাই সন, অ্যান্ড দ্যাট বাগার ইজ সিটিং হ্যাপিলি ইন ভোপাল….’ আমি তাড়াতাড়ি ফোন কেড়ে নিয়ে বললাম, ‘দাঁড়ান স্যার, দেখছি।’
স্যার শুনে ঈশ্বর প্রসন্ন হলেন, গোঁফের ফাঁকে মৃদু হাসি দেখা গেলো। পেটিএমে টাকা ভরতে গিয়ে দেখি ক্রেডিট কার্ডের ডিটেইলস সেভ করা। হাজার টাকা ভরে মোবাইলটা ভদ্রলোকের হাতে দিয়ে বললাম ‘সিভিভি নাম্বার ডালুন।’
তা তিনি সিভিভি নাম্বার ডাললে যথারীতি পেটিএম ওটিপি নাম্বার পাঠালো, এবং তিনি সুগম্ভীর স্বরে জানালেন, ‘ দিস অ্যাপ ইজ রেজিস্টার্ড বাই মাই সানস মোবাইল, প্রব্যাবলি দ্যাট নাম্বার উইল গো টু হিম!!!’
লাও, এখন অ্যাকটিভিটি চলছে, সেটাকে বন্ধ করে তো আর ফোন করা যায় না, তাহলে তো উদ্দেশ্যটাই সিদ্ধ হবে না।
পাশে আমার সেলস অফিসারটি এতক্ষণ ত্রিভঙ্গমুরারি হয়ে সবকিছু নিমীলিত চোখে নিরীক্ষণ করছিলেন, এখন সচল হয়ে পকেট থেকে মোবাইলটা বার করে বিনয়াবনত গলায় বললেন ‘আপকা বেটেকা নাম্বার বাতাইয়ে।’