চেকটা যাকে বলে অ্যাকনলেজ করে, দুটো সই করিয়ে নিয়ে, কাউন্টারাধিষ্ঠিতা বিধুমুখী ললনাটি একটি ভুবনমোহিনী হাসি উপহার দিয়ে মদালসা ন্ট্রে জানালেন, শুধুমাত্র দুহাজার টাকার নোটই পাবো, পাঁচশো, একশোর নোট সেদিনকার মতন শেষ। তার বদলে তিনি খুবই মিষ্টি করে বার দুয়েক সরি অবধি বললেন।
আপনারা তো জানেনই, আমি খুবই কোমলহৃদয়ের মানুষ। বিশেষ করে সুন্দরী মহিলাদের দুঃখ দুর্দশা এক্কেবারে সহ্য করতে পারি না। ফলে ‘ঠিকাচে ঠিকাচে, আপনাকে আর অত ইয়ে হতে হপে না’ কয়েটয়ে ব্যাঙ্কের পিয়নকে, ‘এইও, দেখতা নেহি ভদ্রমহিলা কি বিচ্ছিরি রকমের ঘাম রাহা হ্যায়, বলি এসিটা জোরসে চালানে মে কি তুমকা কিছু কষ্ট হোতা হয় রে ব্যাটা’ বলে একটু দাবড়ে দিয়ে বাইরে এসে ভাবলুম অতঃকিম? এইবার অন্তত একটা দুহাজার টাকার শিভ্যালরি ভাঙাই কোথায়? পকেটে তো দুটো একশো টাকার নোট ছাড়া আর কিছু নেই!
তা কাল বিকেলে অফিসফেরতা গেছি পাওয়াই হিরানন্দানিতে, বুইলেন। সে প্রায় বম্বের বুকে একটুকরো স্যুইৎজারল্যাণ্ড। বিশাল বিশাল বিদেশি ধাঁচের বাড়ি, ঝকঝকে রাস্তাঘাট, দারুণরকম ভালো দোকানপাট আর পাব, চওড়া ফুটপাথ, তাতে আবার সুবেশ তরুণ তরুণীদের ভিড়, মানে শুধু পারিজাতবন আর ঐরাবতটাই যা নেই আর কি!
তা সেই স্বর্গোদ্যানে গ্যালেরিয়া বলে একটি ছোট মার্কেট আছে। মানে নিউমার্কেটের ছোট সংস্করণ আর কি, অত্যন্ত গোছানো আর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। আর নিউমার্কেটের ফুটপাথের হকারদের বাঁদরামি তো একদমই নেই!
তা গ্যালেরিয়াতে ঘুরে বেড়াচ্ছি, আর চেনা পুরোনো বইয়ের স্টলগুলোতে ঢুঁ মারছি, এমন সময় দেখি, যাঃ! পাশের টি শার্টের দোকানটা তো দেখি মাছি তাড়াচ্ছে যে! মানে লিটারেলি মাছি দেখলেই কাউন্টারের ছেলেটা তাড়াবার জন্যে দৌড়ে যাচ্ছে। আর মাছিগুলোও হয়েছে তেমন অবাধ্য আর ত্যাঁদড়, তাকে দেখলেই ‘ও যেন আমাকে টাচ না করে’ ভঙ্গিতে পগারপার, এদিকে আসার নামই নেই? সে তাড়াবার জন্যে মাছি খুঁজে খুঁজে কি হয়রান অবস্থা তার!
মনটা হু হু করতে লাগলো বুঝলেন? আহা রে, এই ডিমনির বাজারে ব্যবসাপাতির অবস্থা এমনিতেই মন্দা, তার ওপরে ছেলেটা এক একা মাছি তাড়াচ্ছে, ঠিক সহ্য হলো না। আর গ্রাফিক টি শার্ট আমার খুব পছন্দের জিনিস, সে তো আপনি জানেনই। বাড়িতে প্রায় খান পঞ্চাশেক মজুত আছে, তাও পেলেই কিনি। গিন্নিও চুপ থাকেন, কারন এর একটা গঠনমূলক দিক হলো যে বাড়িতে কখনো ন্যাতার অভাব হয় না!
তা দয়ার্দ চিত্তে আমি দোকানে ঢুকতেই সেই বালকের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো, দেখে তো মাইরি নিজের ওপর আমি নিজেই খুব ইম্প্রেসড! ফলে বেশ উদারভাবে আমার মিষ্টি ও গম্ভীর হাওড়া ইংরেজিতে সেই বিপণীবালককে বললাম ‘বঢ়িয়াঁ টি শার্ট হ্যায় তো দিখাও।’
সে খান পাঁচেক টি শার্ট ঝটাকসে কাউন্টারে নামিয়ে ফেলতেই আমি প্রায় গৌতম বুদ্ধ লেভেলের একটা হাসি হেসে তাকে বল্লুম, বৎস, তিষ্ঠ! আমি বিশেষ ডিজাইন ছাড়া টি শার্ট পরি না, সমঝা?
‘তো কেয়া দুঁ?’
‘জোকার কা দিখাও, হিথ লেজার ওয়ালি’।
দুটো উমদা পিস এলো বটে, কিন্তু রংটা এখনই ছেতড়ে গেছে। এ জিনিস একবার কাচলেই তো বাঁদিপোতার গামছা হয়ে যাবে বাবু সোনা!
‘ব্যাটম্যান দিখাও’
পছন্দ হলো না।
‘ সুপারম্যান দিখাও’
‘টি শার্ট নেহি হ্যায় জি, দো ঠো চাড্ডি হ্যায়’
মাথাটা দেওয়ালে ঠুকে দেওয়ার জন্যে হাতটা নিশপিশ করে উঠলেও নিজেকে সংযত করলাম।
‘ সিভিল ওয়ার হ্যায়’
‘খতম হো গ্যায়া জি’
‘থর? উলভেরাইন? স্টর্ম?’
‘উয়ো ক্যা জি?’
‘হাল্ক? ডক্টর স্ট্রেঞ্জ? অ্যাভেঞ্জার্স? আয়রন ম্যান? ‘
‘আয়রন ম্যান?’
ইক্কিরে বাওয়া, মালটা টনি স্টার্ককে অবধি চেনে না দেখছি! গ্রাফিক টি শার্ট কেন, এর তো দেখছি স্যান্ডো গেঞ্জি অবধি বেচা উচিৎ নয়।
তবে স্টার্ক শব্দটা মনে আসতেই…
‘গেম অফ থ্রোন্স তো হোগা?’
‘??????’
এবার অসহিষ্ণুহয়ে পড়ি, ‘হাউস অফ স্টার্ক, টারগেরিয়ান? ল্যানিস্টার? অল মেন মাস্ট ডাই? কম করকে আই অ্যাম খালিসি অন্তত তো হ্যায়?’
‘নেহি বাবু, ই সব নেহি রাখতে’
‘তো তুমারে পাস একঠো ভি কাম কা টি শার্ট নেহি হ্যায় দেখতা হ্যায়। আরে ভাই মেরে লিয়ে কুছ তুমহারে পাস হ্যায় ইয়া নেহি, অ্যাঁ? ‘
সে ছোকরা অপাঙ্গে একবার দেখলো আমাকে। তারপর সরাসরি আমার মধ্যপ্রদেশের দিকে নজর রেখে ভারি নিঃস্পৃহ গলায় বললো,
‘দো ঠো কুংফু পাণ্ডা হ্যায়, দিখাউঁ?’
বলেছিলাম না, মনে হচ্ছে সে ছোকরাকে ধরে কেলিয়ে পাটপাট করে দিই, তারপর থেঁতো করে, আগুনে পুড়িয়ে, হামানদিস্তায় ফেলে গুঁড়ো গুঁড়ো করে..