তা সেদিন বিকেলে ঘটনাচক্রে একটু অলিপাবে গেছি গলা ভেজাতে, গিয়ে দেখি সে মক্কেল তুম্বোপানা মুখ করে এক কোণে বসে আছে। গিয়ে পিঠ চাপড়ে বল্লুম ‘কি বে, হাঁড়িপানা মুখ করে বসে আছিস যে বড়? বউ বকেছে?’ বলতেই সে ছোকরা ভেউভেউ করে উঠলো। সে কি কেলেঙ্কারি! কি বলে কিছুই বোঝা যায় না। শেষে জলটল খাইয়ে একটু ঠান্ডা করাতে পুরো ব্যাপারটা খুলে বলল।
আমি অবাক হয়ে বল্লুম, ‘এ আর এমন কি ব্যাপার? কাল সকালে ইউরিন নিতে এলে বউয়েরটা দিয়ে দিস। ওরা তো আর দেখতে যাচ্ছে না টয়লেটে কে যাচ্ছে!’
ছোকরা পাক্কা আড়াই মিনিট হাঁ করে চেয়ে রইলো। তারপর লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে চুমুটুমু খেয়ে একাকার কান্ড! আমার বিলটাও জোরজার করে ওইই দিল, আমি আর না করতে পারলুম না!
যাই হোক। পরামর্শ মেনে সমস্ত কাজকম্ম সুসম্পন্ন করে, পরের দিন হাসিমুখে বিপিন গেছে অ্যাপোলোতে, রিপোর্ট নিয়ে নতুন অফিসে সাবমিট করেই শ্বশুরবাড়ি যাবে এই প্ল্যান, ডাক্তারবাবু ওকে দেখেই ফের বগলদাবা করে কেবিনে।
‘ইয়ে আবার কি হল স্যার? সব কিচু ঠিকঠাক আচে তো এইবার?’
রিপোর্ট পড়তে পড়তে রিডিং গ্লাসের ওপর দিয়ে ফের তাকালেন ডাক্তারবাবু, বললেন ‘বাকি সব তো ঠিকই আছে, তবে কি না…..’
একটু ভীত স্বরে বিপিন বলল ‘ইয়ে, তবে কি ডাক্তারবাবু?’
‘আপনি কি জানতেন যে আপনি প্রেগন্যান্ট?’
হাসবে না কাঁদবে,বিপিন সত্যিই বুঝে উঠতে পারলো না!
দাম্পত্য
গত মাস ছয়েক ধরে লেকটাউন এলাকায় কোন কাক বা চিল দেখা যাচ্ছে না।
ব্যাপারটা প্রথমে মাস তিনেক আগে, এক ছুটির দিনে, খেয়াল করেন সুরেশচন্দ্র আগরওয়াল। শঙ্কিত স্বরে গিন্নীকে ডেকে বলেন, ‘ডাভড়ি, লারল তিন হফতা হুঁ কোঈ কাগলোকো নি দিখিও’। জবাবে গিয়ারসি দেবি অত্যন্ত গম্ভীর ভাবে তিনতলার ফ্ল্যাটের দিকে দেখিয়ে দেন। নতুন আসা বংগালি মোটেয়ার-লুগাই দুটিই যে এই অনর্থের কারণ, সেটাও জানাতে কসুর করেন না।
সুরেশ্চন্দ্র একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ক্রসওয়ার্ড পাজল করতে বসেন।
সুজন আর স্নিগ্ধার বিয়েটা হয়েছিল খুব ধুমধাম করেই। দুপক্ষের জ্যোতিষীরাই ঘাড় নেড়ে রায় দিয়েছিলেন যে এই বিয়ে রাজযোটক হতে বাধ্য। স্নিগ্ধার বাপের বাড়ি বলতে গেলে বেশ বড়লোক, দেওয়া-থোওয়াতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেন নি। মোটমাট দুজনের সংসার সুখের করে তুলতে কোনও পক্ষের চেষ্টাতেই কোন ত্রুটি ছিলো না।
কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেলো বিধি শুধু বামই নয়, পুরো নন্দীগ্রামের সিপিএম।
প্রথম দিন থেকেই স্পষ্ট বোঝা গেছিলো যে এই বিয়ের ভবিষ্যৎ একেবারেই অন্ধকার। তেল এবং বেগুন, আদা এবং কাঁচকলা, সাপ এবং নেউল, এরা বরং একে ওপরের প্রতি অনেক বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সহানুভূতিশীল। নাইট বালবের রঙ থেকে শুরু করে পর্দার ডিজাইন, ননদের ছেলের স্কুলের খরচ দেওয়া থেকে রাত জেগে কোপা ফুটবল ম্যাচ দেখা, আগ্নেয়গিরির পারদ দিনে দিনে ক্রমেই উর্ধমুখী হয়ে উঠছিল।
সবাই আশঙ্কিত হয়ে ফাইনাল শো ডাউনের জন্যে অপেক্ষা করছিলই। তবে বেশীদিন অপেক্ষা করতে হল না। সবার সম্মিলিত আশঙ্কাকে সম্মান জানিয়ে বিয়ের মাস ছয়েক বাদেই সেই ডি ডে সগৌরবে উপস্থিত!
সেদিন ছিল স্নিগ্ধার বেস্ট ফ্রেন্ড অনুপমের বিয়ে। বিয়ে বউভাত মিলিয়ে ছবি ভিডিও তোলা হয়েছিল কম নয়। সেসব সেভ করার জন্য খুব সম্ভবত বাধ্য হয়েই স্নিগ্ধা সুজনের হার্ড ড্রাইভ থেকে এগারো বছর ধরে জমানো সাড়ে সাতশ জিবি র মুভি কালেকশন ( সানি লিওনি থেকে সিটিজেন কেন, অ্যানিমেশন মুভিজের পুরো সেট) ডিলিট করে দেয়।
জবাবে সুজন বিশেষ কিছু করেনি। শুধু স্নিগ্ধার দুটো দামি বেনারসি পাড়ার মোড়ের চায়ের দোকানি লছমনকে কেটে লুঙ্গি করে পরার জন্য দিয়ে আসে।
এর পরে সংসার করা সত্যিই ভারি মুশকিল। সেইদিনই স্নিগ্ধা বাপের বাড়ি চলে আসে। আর মিউচুয়াল ডিভোর্স দিতে সুজনের বিন্দুমাত্র আপত্তি ছিলো না।
কিন্তু মাঝখান থেকে বাধ সাধলেন দুই মা। স্নিগ্ধার মা যতই হাপুস নয়নে বলুন,’মেয়েকে মানুষ করতে পারিনি দিদি,ক্ষমা করে দিন’, সুজনের মা ততই বিব্রত হয়ে বলতে থাকেন ‘আরে না না, বৌমা ঠিক বুঝতে পারেনি, বাচ্চা মেয়ে তো। ওটা কোন ব্যাপারই না। আর আমার ছেলেরও বাঁদুরে বুদ্ধি দেখুন, অমন দামি শাড়ি তুই লুঙ্গি করে পরতে বলে এলি?’
এইসব পর্ব পেরিয়ে, ম্যারেজ কাউন্সেলরের পরামর্শ মেনে দুজনকে ধরেবেঁধে তুলে দেওয়া হল জগন্নাথ এক্সপ্রেসে। দুটো দিন ওরা একত্তর কোথাও নিরিবিলিতে কাটিয়ে এলে কিছু হলেও হতে পারে এই আশায়।
ট্রেন ছাড়তেই স্নিগ্ধা সুজনের উল্টোদিকে এসে বসল। প্রথম থেকেই এই ”দুদিন গিয়ে কোথাও ঘুরে আয় না” ন্যাকামিটায় ওর গা জ্বলছিল। এইভাবে বিয়ে বাঁচিয়ে এই হরিবল লোকটার সংগে থাকতে হবে? জঘন্য। ইরিটেটিং।
বিরক্তিসহ ও তাকিয়েছিল বাইরের দিকেই। সুজন একটা ছ’শ এম.এল স্প্রাইটের বোতলে আধাআধি ভদকা আর স্প্রাইট মিশিয়ে এনেছিল। সেটাই অল্প চুমুক দিতে দিতে কাঁটা সিরিজ পড়ছে এমন সময় পাশের কামরা থেকে এক মধ্যবয়স্ক দম্পতি সবেগে এসে ওদের পাশে বডি ফেললেন।
দুজনের মধ্যে যিনি মহিলা, সেই ফর্সা, পৃথুলা এবং পাঁচ ফুট উচ্চতার ষাট ছুঁইঁছুঁই সুন্দরী গিন্নীটি স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠেন ‘কিচু মনে করেন নি তো?’