‘দেখুন কাকু, আপনিই কিন্তু শুনতে চেয়েছিলেন, আমি কিন্তু বলতে চাইনি। যদি বলেন, তো এইখানে স্টপ করে দিচ্ছি, হ্যাঁ’।
‘আরে ন্না ন্না। হেঁ হেঁ, এমনি বল্লুম, তা বাদ দাও। তারপর কি হলো?’
‘তারপর যা হলো কাকু, কি বলবো, যা হলো ভাবতেই পারবেন না। অলিভিয়া একদিন সোজা অভিলাষের মা বাবাকে নিয়ে বুলু ম্যাডামের বাড়ি!’
‘অ্যাঁ? সে কি? মান….মানে ওই অলিভিয়ার এত্ত সাহস? তারপর, তারপর? মারকাট দাঙ্গাহাঙ্গামা অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি, না? কিন্তু আমরা টের পেলুম না কেন বলতো? ইশ, হরিসাধন যদি একবার বলতো.. আমার দোনলাটা তো বাড়িতেই ছিল..ইশশ, আগে বললে পালিশ করে….
‘ধ্যার মশাই। আপনি কি মিঠুন চক্কোত্তি মার্কা মারকাট ছাড়া কিচ্ছুটি বোঝেন না, অ্যাঁ? আরে সেইদিনই তো ওদের বিয়ের দিন ফিক্স হলো মশাই!’
‘ অ্যাঁ? অ্যাঁ?? অ্যাঁ??? ‘
‘অ্যাঁ আবার কি কাকু, বলুন হ্যাঁ। সেইদিনই তো ডেট, ভেনু, মায় মেনু অবধি ঠিক হয়ে গেলো।’
‘আর…আর… আর অমন মারকুট্টে মেয়েটা সেটা একবাক্যে মেনে নিলো?’
‘কাকু, আপনি মাইরি এ লাইনে এক্কেবারে নভিস। ওসব স্বপন সাহা ছেড়ে প্রিটি উয়োম্যান বা নটিং হিল টাইপের সিনেমা দেখুন। বলি লভ ইজ স্ট্রেঞ্জ অ্যান্ড ব্লাইণ্ড, এ কথাটা কি শোনেননি? আরে মশাই, হিন্দিতে বলতে গেলে আগ দোনো তরফ বরাব্বর লাগি থি। কিছু টেকনিক্যাল আইনি প্রবলেম ছিলই, বুলুরাণির কর্তব্যপরায়ণতার সাইড এফেক্ট। তা সেই অলিভিয়া আপনাদের বুলুর বাপিকে নিয়ে গিয়ে বুলুম্যাডামের বসকে গিয়ে বলতেই কেস খাপে খাপ..’
‘পঞ্চুর বাপ?’
‘একদম।’
‘কিন্তু, ইয়ে সেই অলিভিয়া আর রজত তাদের কি হলো?’
‘তাতে আপনার কি মশাই? তারা তো বোধহয় গতমাসে কালীঘাটে গোপনে বিয়েও করেছে। মেয়েটার বাবা নাকি হেব্বি খরুস মাল, তাই আর দেরি করেনি।। এই বুলুর বিয়েটা হয়ে গেলেই বাড়িতে…… এ কি, এ কি, ও কাকু, কি হলো? অমন এলিয়ে পড়লেন কেন? এই দ্যাখো, কি ঝামেলা…আরে উঠুন…কি বিপদ…এ তো মহা জ্বালা হলো।দেখছি…’।
‘না বাবা থাক। কাউকে ডেকো না। শরীরটা খুব দুর্বল লাগছে বুইলে। হঠাৎ করে মাথাটা….ইয়ে, মানে তুমি ঠিক বলছো ওরা বিয়ে করেছে?’
‘আলবাত। আরে বিয়ে না করে উপায় ছিল নাকি? অলিভিয়া যে দেড় মাসের প্রেগন্যান্ট! এরপরে তো আর না প্রকাশ করে উপায় নেই। আর ওদের কারোরই ইচ্ছা নয় অ্যাবর্শন করানোর। অলিভিয়ার তো শুনলুম খুব ইচ্ছে, ওর বাবা আর ওর বাচ্চাকে নিয়ে একসঙ্গে সেলফি তুলে ফেসবুকে স্টেটাস দেবে, ‘হ্যাপি ফ্যামিলি, লভ উইনস ওভার প্রেজুডিসেস’…. আরে আরে…ফের কি হলো? ও মশাই? আবার এলিয়ে পড়লেন কেন? বলি আপনার বাড়ির কাউকে ডাকি? অসুস্থ বোধ হচ্ছে? বমি বমি পাচ্ছে? পটি পাচ্ছে? বাথরুমে যাবেন?’
‘ঠিক আছি বাবা, ঠিক আছি, কিছুই হয়নি। শুধু প্রেশারটা একটু…’
‘বলি ও জগবন্ধু, এখানে কি করছোটা কি বসে বসে? বলি বুলু কি একা আমার মেয়ে? তোমাদের মেয়ে নয়? তোমরা হলে গিয়ে পাড়াপড়শি, তোমরা এখানে বসলে কি করে চলবে ভাই? একটু গিয়ে বরযাত্রীদের আপ্যায়ন করো! তোমরা হলে গিয়ে আমার নিজের লোক…আরে দেখো দেখো, বাবাজীবনও এখানে যে। বলি এর সঙ্গেই আলাপ করছিলে বুঝি? তা ভালো, তা ভালো। বলি শুনেছো তো বাবাজীবনের কীর্তিকাহিনী? ‘
‘ইয়ে, আমি চলি কাকু। অভিলাষ বোধহয় একা খুব বোর হচ্ছে।’
‘ আরে দাঁড়াও বাপু। ওহে জগবন্ধু, দেখে নাও হে, একেবারে মা সরস্বতীর সাক্ষাৎ বরপুত্র। মাধ্যমিকে ফোর্থ, উচ্চমাধ্যমিকে সেকেণ্ড। তারপর আই আই টি দিয়ে এখন… এখন যেন কোথায় লেকচারারশিপ করছো বাবা? ম্যাসাচুসেটস না বোস্টন?’
‘ইয়ে বোস্টন। আমি যাই কাকু, নিচে বোধহয় অভিলাষ খুব… ‘
‘ আরে জামাই এখন তার শালিদের নিয়ে বিজি, তুমি ব্যস্ত হয়ো না বাবা। বলি হিরের টুকরো ছেলে হে জগবন্ধু। জগদীশচন্দ্র স্কলার, দেশ পত্রিকায় লেখা বেরিয়েছে কয়েকটা, আর তার ওপর ছেলে গিটারও বাজায় ভারি চমৎকার। সব মিলিয়ে হীরের টুকরো ছেলে হে। এমন ছেলের সঙ্গে আলাপ করাও গৌরবের কথা।’
‘সে কি? তা ভায়া কিন্তু নিজে থেকে কিছুই জানায়নি! এতক্ষণ তো অনেক কথাই হলো… ‘
‘বাহ বাহ, নামটা মনে রেখো জগ, এ ছেলে একদিন নোবেল পাবে। তুমিও বলতে পারবে যে বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক রজতশুভ্র মণ্ডলকে তুমি ভালো করেই চেনো। এ কি? পালাচ্ছো কেন? ওকি, চললে কোথায়? ও বাবা রজত..বলি যাও কই? কথাটা শোনো…