‘বাহ বাহ, তাহলে তো হয়েই গেলো। তাহলে তারপরেই কি….’
‘তারপরে আবার কি? পনেরো দিন বাদে ফের সেই একই কাণ্ড!’
‘উরে বাবারে। এই নিয়ে কতবার হলো? চার? নাকি তিনবার, অ্যাঁ? বুলু এবারও কি..’
‘না, এবারে ম্যাডাম একা নয়, টিম নিয়ে এসেছিলেন। ভেতরে গেলেন হাতেএকটা ট্যাব নিয়ে, কিসব দেখলেন। তারপর তো দোকানের বাইরে দাঁড়িয়ে কোমরে হাত দিয়ে সেকি হো হো করে হাসি!’
‘তারপর কি? ইঁদুর নিশ্চয়ই, অ্যাঁ? তারাই নিশ্চয়ই তার কেটে দিচ্ছিলো বার বার? আরে আজকালকার ইঁদুরগুলো সব শালা হাড়হারামি। সে যাই হোক, তা ইয়ে, তারপরেই কি, মানে বলতে লজ্জা করছে যদিও, তারপরেই কি ওদের ব্যাপারটা…’
‘তারপর বুলুম্যাডাম অভিলাষকে কোমরে দড়ি বেঁধে থানায় নিয়ে গেলেন।’
‘অ্যাঁ? অ্যাঁ?? অ্যাঁ???’
‘অ্যাঁ নয়, হ্যাঁ। সে এক বিশশাল কেলো কাণ্ড মশাই। থানা পুলিশ উকিল আদালত নিয়ে তো সে বিশাল হুজ্জোত।’
‘উরেশাল্লা। এ তো বিশাল কেস ভায়া। তাই শুনছিলাম বটে, কি যেন একটা কেলেঙ্কারি আছে। তা কি কেস বাবা? পুরো ঘটনাটা কি খুলে বলতো, বেশ চনমনে ফীল কচ্ছি কিন্তু।’
‘কি আর বলবো কাকু। বলতে লজ্জাও লাগে, হাসিও পায়। আমাদের অভিলাষ বাবু নাকি দ্বিতীয়বারের পর থেকে ইচ্ছে করে অ্যলার্মে কি সব করে রাখতেন, যাতে টাইম হলেই অ্যালার্ম বেজে ওঠে আর আর সেই অজুহাতে ম্যাডামকে ডেকে আনা যায় !’
‘কেন?’
‘আহা, যদি ম্যাডামকে একটিবার চোখের দেখা দেখা যায়। এছাড়া আর উপায় কি?’
‘খ্যাঁক খ্যাঁক খৌয়া খৌয়া…উফফফ মাইরি…সত্যি বলছো? আমাদের জামাই এরকম আতাক্যালানে নাকি? হো হো হো হা হা হাহা হা হি হি হি….উফফফ ওরে বাবারে, পেট ফেটে যাবে যে রে। ওরে বাবা রে, জল দে ভাই, উফফফ, ওহহ আহহহ। সত্যি বলছো তো ভাই? বানিয়ে বলছো না তো?’
‘ নিয্যস সত্যি কথা কাকা। তাই তো ম্যাডাম ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি নিয়ে এসেছিলেন, লুকিয়ে লুকিয়ে একটা পিনহোল মোশন ক্যামেরা না কি ফিট করে গেছিলেন। পরের বার অ্যালার্ম বাজতেই ম্যাডাম তো সবার আগে গিয়ে ক্যামেরা চেক করেছেন, দেখেছেন যে আসল কালপ্রিট কে। ব্যাস, ক্যাচ কট কট। পুলিশকে হয়রান করা, সরকারি কর্তব্যে বাধাদান, ক্রিমিনাল কনস্পিরেসি, এইরকম পাক্কা একুশখানা না সাতচল্লিশ খানা ধারায় মামলা সাজিয়ে সোওজা লক আপ’।
‘উফফ বাপ রে। বাপস রে….বলি থার্ড ডিগ্রি টিগ্রি দেয় নি তো? মেয়েটার মেজাজ বড়ই গরম, আর কথায় কথায় হাত চলে। একবার তো ওর ছোটবেলায় আমারদের ব্যানার্জিদা, বুঝলে, বুড়ো বয়সে ভীমরতি আর কি, ওর জামার ভেতর হাত ঢুকিয়ে ওকে একটু বেশি চটকে আদর করছিলেন। মেয়েটা একটা কাঁচি তুলে সটান ব্যানার্জিদার হাঁটুতে। সেই নিয়ে আরেক হুলুস্থুলু কাণ্ড। সেই থেকেই ব্যানার্জিদা খুঁড়িয়ে হাঁটেন। এই তো সেদিনই বাজারে দেখা হলো, এখন অবশ্য অন্য পাড়ায় থাকেন।’
‘তারপর আর কি। অলিভিয়া।’
‘অ্যাঁ, ক্কি ক্কি কি করলো সে? তাকে ওই গুন্ডাটার সঙ্গে ইনভলভড হতে, এই ঝামেলা হুজ্জোতের মধ্যে যেতে কে বলেছিল? আনসার মি, হোয়াই?’
‘যাহ, সে আমি কি করে বলবো? আমার ওপরে চেঁচাচ্ছেন কেন মশাই? আমি কি করলুম? এ তো মহা জ্বালা হলো। আর গেলেই বা, তাতে আপনার কি? আপনার তো আর কেউ হয় না।’
‘হেঁ হেঁ, সরি সরি। আসলে বয়েস হয়েছে তো, মাঝেমধ্যে প্রেশারটা একটু… না না, সে আমার কেউ নয়, আমার মেয়ের নাম মান্তু। যাক গে যাক, তা সেই অলিভিয়া গিয়ে করলো কি?’
‘কিছুই না। রজতের প্রেমে তো সে এক্কেবারে দিওয়ানা। একবার গিয়ে রজতের সঙ্গে দেখা করে, তারপর লক আপে অভিলাষের সঙ্গে, তারপর একবার ম্যাডামের সঙ্গে। আর ম্যাডামও বড় কড়া, ছোটবেলার বন্ধু বলে বিন্দুমাত্র রেয়াৎ করলেন না, স্রেফ হাঁকিয়ে দিলেন, এমনও বললেন যে ফের অভিলাষের হয়ে তরফদারি করতে এলে ওকেই লকআপে রাখবেন!’
‘অ্যাঁ? সে কি? কই, এসব তো আমাকে কেউ…উফফ বাপরে বাপ। বুলুর মেজাজ সেই ছোটবেলা থেকেই হেবি গরম, বুঝলেন? একবার কি হয়েছে…’
‘ আরে ধোর মশাই। রাখুন তো আপনার বুলুর ছোটবেলায় কি করেছে তার ব্যাখ্যান! বাঘা বাঘা উকিল নাকাল হয়ে যাচ্ছে অভিলাষের বেইল করাতে, আর আপনি…. আপনাদের সাধের বুলু যা একগাদা সাংঘাতিক দফা দিয়ে রেখেছিলো না! বোধহয় খুন, ধর্ষণ আর দেশদ্রোহ বাদ দিয়ে বাকই সবই ছিলো, তার ওপর সেই স্পাই ভিডিও। অর্ধেক উকিল তো শুনেই পিছিয়ে আসছিলো। জান কয়লা হয়ে গেছিলো মাইরি!’
‘তারপর?’
‘তারপর আর কি! একদিন রজত ওর ফাঁকা ফ্ল্যাটে অলিভিয়াকে আদর করতে করতে…’
‘অ্যাঁ ক্ককি ক্কি বললে? রজত ওর ফাঁকা ফ্ল্যাটে…’
‘আরে আপনি কাকু এমন চমকে চমকে ওঠেন না, মাইরি, গল্প বলার ইয়েটাই চলে যায়। আরে ফাঁকা ফ্ল্যাটে বয়ফ্রেণ্ড তার গার্লফ্রেণ্ডকে আদর করবে নাতো কি কেনেথ অ্যারোর ইকনমিক্সের থিওরি নিয়ে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করবে? আর রজতের দুটো ফ্ল্যাট আছে শুধু এইসব করার জন্যেই। ওই দুটো ফ্ল্যাটে কত মেয়ের যে সর্বনাশ…..যাক গে সে কথা, তা অলিভিয়া তো আপনার কেউ নয় বললেন। আপনি এত উতলা হচ্ছেন কেন?’
‘নাহ। আসলে শরীরটা আসলে একটু…বুঝলে …মাথাটা বাঁই করে ঘুরে গেলো কিনা! তা বাপু একটু তাড়াতাড়ি শেষ করা যায় না অ্যাঁ ? না, মানে পরের ঘরের এত কেচ্ছা শোনা কি ভালো? ইয়ে, এতে শরীর মনের ওপর একটা এফেক্ট পড়ে না?’