‘ইন্টারেস্টিং হে, খুবই ইন্টারেস্টিং। তা বুলু গেলো? ও কিন্তু এসব ব্যাপারে খুব স্ট্রিক্ট শুনেছি’।
‘তা ম্যাডাম এলেন বই কি। একা নয় অবশ্য, সঙ্গে এক বান্ধবী ছিলেন। ছোটখাটো ফর্সামতন মিষ্টি দেখতে। খুবই কম কথা বলেন যদিও। অলিভিয়া না কি যেন একটা নাম।’
‘অ্যাঁ? কি বললে? অ’
‘কি হলো, অ বলে গম্ভীর হয়ে গেলেন যে?’
‘ও কিছু নয়, তুমি বলে যাও।’
‘যাই হোক, মোটমাট অভিলাষ চেষ্টা করলো অনেক। কিন্তু আদ্যন্ত ভালো ঘরের ছেলে, কড়া শাসনে মানুষ। রজতের মতন ছ্যায়েলছবিলা নাকি? ফলে বুলুম্যাডাম যেমনকে সেই। ঘন্টাদুয়েক শুকনো মুখে বসে থেকে শেষে গুনে গুনে দুচামচ বিরিয়ানি খেয়ে উঠে পড়লেন। কি বলবো কাকু, আরসালানের আসাদৌল্লাহ উস্তাদকে ডেকে স্পেশালি বানানো বিরিয়ানি, দেবভোগ্য জিনিস কাকু, দেবভোগ্য জিনিস! ও জিনিস যে কেউ হেলাচ্ছেদ্দা করে উঠে আসতে পারে না দেখলে বিশ্বাস হয় না। পাপ, কাকু ও বিরিয়ানি ফেলে আসা পাপ। ইশশ… আমি তো ডাব্বা করে বাড়িতেও…..’
‘হুম, তাহলে ভবী ভুললো না?’
‘নাহ, কিছুতেই কিছু হলো না। মাঝখান থেকে ওই ক্যারেক্টারলেস রজত অলিভিয়াকে তুলে ফেললো’।
‘ক্কি ক্কি ক্কি বললে? তুলে ফেললো মানে কি? মাছ নাকি যে তুলে ফেলবে? অত্ত সহজ?’
‘আর কাকু, আপনিও মাইরি। বিদ্রোহী কবি শরৎচন্দ্র বলেছেন প্রেমের ফাঁদা পাতা ভুবনে, এর ওপরে আর কথা হয়, অ্যাঁ? আর তাছাড়া কালো, বেঁটে, মোটা আর টাক হলে কি হবে, রজতের একটা অদ্ভুত মেয়ে পটানোর ক্ষমতা আছে। আর তার ওপর টাকা তো আছেই। তাছাড়া একটা মাচো ইমেজও আছে, সবসময় একটা রিভলভার নিয়ে ঘোরে কি না’।
‘রি-রিভলভার?’
‘আরে ছাঁট লোহার কারবার না ওদের? এসব লাইনে রিভলবার তো রাখতেই হয়। আর তাছাড়া দুটো ডান্স বারও আছে যে, খুন যখম পুলিশ নিত্যই লেগে আছে। খড়গপুরের মস্তান শ্রীরামুলু আর খিদিরপুরের আসলাম ভাই তো ওর বাবার বুজুম ফ্রেণ্ড! ফলে বুঝতেই পারছেন, আমরা তো পইপই করে অভিলাষকে বারণ করি, ওরে ওর সঙ্গে মিশিস না, মিশিস না মিশিস না। তা কে শোনে কার কথা।লাস্ট বার যখন রজতকে পুলিশে ধরে, অভিলাষই তো বেইল করিয়ে আনলো’।
‘থানাপুলিশ? লাস্ট বার? মানে ছোকরার সেখানে রেগুলার যাতায়াত আছে নাকি?’
‘আছে তো বটেই। তবে লাস্ট বারে জোর ফেঁসে গেছিলো। ওর আগের গার্লফ্রেণ্ডকে তো পাওয়া যাচ্ছিল কি না! কেউ বলে সোনাগাছিতে বেচে দিয়েছে, কেউ বলে প্রেগন্যান্ট হয়ে গেছিলো বলে মেরে পুঁতে দিয়েছে’।
‘মাই ঘড!!!’
‘এতেই মাই ঘড? তাহলে তো কাকু আপনি রজত কে চেনেনই না। ছেলে মাধ্যমিক ফেল করার পরেই বাবার ব্যবসায় ঢোকে, বুঝলেন? প্রথম খুন সতেরো বছর বয়সে, গলায় ছুরি চালিয়ে। স্রেফ প্রূফ নেই বলে ছাড়া পেয়ে যায়। তারপর থেকে এখনও অব্ধি সাতটা খুন নিজের হাতে করেছে, কটা করিয়েছে জানি না। কাকপক্ষীতে টের অবধি পায় নি। হাওড়ার রেলসাইডিঙের সমস্ত গুণ্ডামস্তান গুরু বলতে একজনকেই মানে, শুনে রাখুন। আর তো আর, রজতশুভ্র মণ্ডলের নাম লালবাজারে স্পেশাল ওয়াচ লিস্টে রাখা আছে, জানেন সেটা? এর থেকে আর বেশি কি বলবো? যাক গে যাক, যা বলছিলাম। তা অভিলাষের কাজের কাজ তো কিছু হলো না, এদিকে অলিভিয়া আর রজতের তো প্রেমের ফুল ফুটে ফল ধরে ধরে আর কি’।
‘ভাই, জলের গ্লাসটা একটু দেবে? শরীরটা কেমন…’
‘এ কি! শরীর খারাপ লাগছে নাকি? আপনার বাড়ির লোকজনকে ডাকবো? য্যাত্তারা, এই নিন জল খান দেখি। প্রেশারটা ফল করলো নাকি? কি জ্বালা, দাঁড়ান দেখি….’
‘না বাবা, কাউকে বলতে হবে না। উতলা হয়ো না, আমি ঠিক আছি। তারপর কি হলো বলো।’
‘বলছেন? আপনি কিন্তু ঘামছেন কাকু, গলাটাও খুবই নির্জীব মনে হচ্ছে কিন্তু! ঠিক আছেন বলছেন? আচ্ছা, পাখাটা আরেকটু আপনার দিকে ঘুরিয়ে দিলাম। যাক গে যাক, তা কি বলছিলাম? হ্যাঁ। তা অভিলাষের তো চিঁড়ে ভিজলো না। মাঝখান থেকে আবার এক কেলো’।
‘অ্যাঁ? ফের কি হলো? অলিভিয়া কে নিয়ে কিছু…’
‘আরে ন্না ন্না, তা নয়। এর পরের মাসেই ফের এক রাত্রে অভিলাষের দোকানে সেই বার্গলার অ্যালার্ম বেজে ওঠে। ফের তুলকালাম কাণ্ড। ফের বুলুম্যাম আর পুলিশ বাহিনী’।
‘এবার কি সত্যি চোর?’
‘নাহ, এবারেও ফলস, সেই একই কেস। এইবারে কিন্তু বুলুম্যাডাম আর ছাড়লেন না, দুটো গরম গরম কথা শুনিয়ে বিদায় নিলেন।’
‘বলেইছিলাম, মেয়েটার মেজাজ বড় কড়া। একবার তো আমার পোষা অ্যালসেশিয়ান ঘুঁচু এমনি এমনি, বুঝলে, মানে এমনি এমনি কামড়াবে বলে বা খেলবে বলে বুলুর দিকে দৌড়ে গেছিলো। না না, ঘুঁচু কামড়াতো না, ভারি সভ্যভব্য কুকুর ছিল কিনা! তা বুলু খুব কড়া করে ঘুঁচুর দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে ছিল, সেই থেকে ঘুঁচু বাইরেই বেরোতো না বুলুর গলার আওয়াজ শুনলে। তারপর?’
‘তারপর? একমাস বাদে ফের সেই অ্যালার্ম!!!’
‘এবার নিশ্চয়ই বুলু খুব কষে দিয়েছিল? ইশশ, বুলুকে দিয়েই এই রজতের বাচ্চাটাকে…’
‘য্যাত্তারা, রজত আবার আপনার কি করলো?’
‘না কিছু না। যা বলছিলে বলো’।
‘এইবার বুলুম্যাম একা এসেছিলেন, সঙ্গে এক ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি। এসে দেখলেন যে ফের সেই একই কাণ্ড! তবে এইবার কিন্তু উনি কিচ্ছুটি বলেননি। হাসিমুখে সবার সঙ্গে কথা বললেন, অভিলাষের সঙ্গে তো চোখ চোখ রেখে সে কি হা হা হি হি। ‘