‘আর পারলে একটা দামি দেখে ‘You are my Love’ মার্কা একটা দামি গ্রিটিংস কার্ড দিয়ে দিস তো।’
ওরে কে কোথায় আছিস, দৌড়ে আয়, আমাকে ধর। কে বলে ভালোবাসা কেবলই যাতনাময়? ওরে আছে, এখনও প্রেম বেঁচে আছে পৃথিবীতে…গাছে গাছে পাখি, মুখে মুখে হাসি, বাগানে কত ফুল, বাজারে কত ইলিশ…
‘আর শোন, লিখবি, ‘ফ্রম ইওর লাভ, নয়নিকা’!’
নয়নিকা? এইবারে সামান্য চমকাতে হলো, ‘নয়নিকাটা আবার কে?’
‘কে আবার, এই ডাইনিটাই তো দাদার মাথা খেয়ে ফেলছিলো আরেকটু হলে।’
আবার সব গুলিয়ে গেলো। ভদ্রলোককে খুবই ভালো করে চিনি। অমন নিরীহ নির্বিরোধী সজ্জন মানুষ আর হয় না! তিনি….আর যদি তাই হয়…আগুনে আবার ঘি ঢেলে.
‘কবে?’ নিজের গলা শুনে নিজেই ভাবিত হয়ে পড়ি, এ কি আমারই গলা?
‘আর বলিস না, সেই ক্লাস এইটে টিউশন পড়ার সময়। তোর দাদা ভালোমানুষ বলে প্রায় মাথাটা চিবিয়ে খেয়েই ফেলেছিলো ডাইনিটা’, ফেঁসফেঁস শব্দটা স্পষ্ট ফোনের এপারেও শোনা যায়।
এইবারে কেসটা পুরোটা ঘেঁটে যায় আমার। কেন, মানে এতদিন বাদে কিসের কে কি কোথায় কেন কিভাবে?
‘তারপর?’ সন্তর্পণে জিজ্ঞেস করি।
‘তারপর আবার কি। দুই বছর ফষ্টিনষ্টি করার পর ভালোমানুষটা বিগড়ে যাচ্ছে দেখে নেহাত বাধ্য হয়েই আমাকে খামচা মেরে লোকটাকে ছিনিয়ে আনতে হলো। আমার আর কি বল নেহাত চোখের সামনে একটা ভালো লোক উচ্ছন্নে যাচ্ছিলো বলেই তো…নইলে ওকে বিয়ে করতে আমার বয়েই গেছিল।’
‘তা খামচা মেরে লোকটাকে নিজের চামচা করেছো তা বেশ,’ আমার কনফিউশন শেষ হতেই চায় না, ‘তা এখন আবার তার নাম নিয়ে লোকটাকে গোলাপফুল আর গ্রিটিংস কার্ড পাঠানোর মানে কি? তাও আবার সেন্ট মেরে?’
‘আহা, দেখতে চাইছি, লোকটা এখনও শয়তানি মুটকিটাকে মনে রেখেছে কি না, বুঝলি গাধা?’
মনে হলো আমি একটা পাঁচনম্বরী ফুটবল, বাইচুং এক শটে মোহনবাগানের জাল ছিঁড়ে দিয়েছে, সেখান থেকে ফের লাথাতে লাথাতে আমাকে কে যেন সেন্টারে নিয়ে যাচ্ছে…
‘কিন্তু..কি দরকার কি ওসবের? এমন চমৎকার লোক বিল্টুদা, কারও সাতে নেই পাঁচে নেই, মুড়ি দিয়ে স্কচ খায়, তার সঙ্গে এসব করার মানেটা কি? কোনও বেচাল দেখেছো ইদানীং? ‘
‘আহা তা নয়। অফিস, মোহনবাগান, আর বার্সেলোনার বাইরে বোঝে কি ঘটিটা যে ফুলুকফালুক করবে? তিন চামচ চিনি ছাড়া চা খেতে পারে না, এখনও লুচিকে নুচি বলে, ”পেছনে” বলতে পারে না, বলে ”পেচুনে”, এমন লোককে কে প্রেম করবে রে? আর করতে এলেও কি, আঁশবঁটি নিয়ে গলা নামিয়ে দেবো না?’
বাঙাল মেয়ে কি পারে আর কি পারে না সে নিয়ে আমার প্রথম যৌবনের যথেষ্ট ভীতিকর অভিজ্ঞতা আছে, সভয়ে বলি ‘ইয়ে তাহলে এসবের দরকারটাই বা কি? মানে লোকটা যখন চাইলেও পাচ্ছে না, মানে ইয়ে, গলা না হলে আর চুমু খাবে কোথায় বলো?’ আমি মিষ্টি করে যুক্তির অবতারণা করি।
‘চুপ কর ছোঁড়া, পুরুষ মানুষকে বিশ্বাস করতে নেই। মাঝে মাঝে টোপ ফেলে দেখতে হয়, ঠোকরায় কিনা। একবার ঠুকরে দেখুক দেখি, আমিও রামতারণ মুখুজ্জের মেয়ে। আঁশ ছাড়িয়ে ছাদে টাঙিয়ে রেখে দেবো না?’
বুঝলাম, মা এবারে গোষ্ঠমামা অবতারে অবতীর্ণ হয়েছেন। বিল্টুদার জন্যে মায়াই হতে থাকে। ক্ষীণ গলায় বলি, ‘আচ্ছা ১৩৫ টাকা দিয়ে দিও, পেটিএম করে দিলেই হবে বুঝলে? গ্রিটিংস কার্ডের উপর পারফিউম ছড়িয়ে দেব, ওটা আমার পক্ষ থেকে কমপ্লিমেন্টারি’।
‘একশো পঁয়ত্রিশ না, দুশো সত্তর পাঠাচ্ছি, পেটিএম নাম্বারটা বল চট করে’
‘দুশো সত্তর কেন? এই তো বললাম কম্পলিমে…’
‘আহ, বড্ড বকিস তুই। দুটো কার্ড পাঠাবি, বুঝলি? একটা যেমন বললাম তেমন, আরেকটা শিলিগুড়ি যাবে’।
‘শিলিগুড়িতে কার কাছে?’ আমার বিস্ময় আর বাধ মানতে চায় না।
‘প্রিয়তোষের কাছে। আশ্রমপাড়া রোড। ঝটপট লিখে নে…’
‘প্রি..প্রিয়তোষ আবার কে?’ একটা সারিডনই খাই না কি? নাকি একটা বিয়ারের খালি বোতল নিজের মাথায় মেরে দেখবো সব ঠিকঠাক শুনছি আর বুঝছি কি না!
এইবার ফোনের ওদিক থেকে সলজ্জ হাসি ভেসে এলো, ‘আহা, ইয়ে মানে প্রিয়তোষ, বুঝলি কি না, ওই ক্লাস এইটেই, বুঝলি তো…’
আমার হাত থেকে মোবাইলটা ঠকাস করে নীচে পড়ে যায়.
এর পরেও যদি আপনি ভ্যালেন্টাইন্স ডে নিয়ে আমার সামনে আদিখ্যেতা করতে এসেছেন, তাহলে থান ইঁট ছুঁড়ে মারবো, এই বলে রাখলুম, হ্যাঁ!