আমার একটা ডেটা অ্যাসিস্ট্যান্ট দরকার। সন্ধানে কেউ থাকলে বলবেন প্লিজ। থার্ড পার্টি পে রোল, হাজার পনেরো মতন মাইনে। মোটামুটিরকম গ্র্যালজুয়েট হলেই হবে, যেন এক্সেল খুব ভালো জানে, আর হ্যাঁ, বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে যেন দূর দূর তক কোনও সম্পর্ক না থাকে!
আমার একটা ডেটা অ্যাসিস্ট্যান্ট দরকার। সন্ধানে কেউ থাকলে বলবেন প্লিজ। থার্ড পার্টি পে রোল, হাজার পনেরো মতন মাইনে। মোটামুটিরকম গ্র্যালজুয়েট হলেই হবে, যেন এক্সেল খুব ভালো জানে, আর হ্যাঁ, বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে যেন দূর দূর তক কোনও সম্পর্ক না থাকে!
ভ্যালেন্টাইনের দিন আমার কাছে বড়ই দুঃখের দিন, বেদনার দিন। এই দিনটা এলেই আমার শক্তি চাটুজ্জের কথা মনে পড়ে যায়, সে বড়ো সুখের সময় নয়, সে বড়ো আনন্দের সময় নয়। আক্ষরিক অর্থেই আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত টলমল করে। গায়ে কম্প দিয়ে জ্বর আসে, পেটের মধ্যে প্রজাপতির ওড়াউড়ি।
মোটমাট দিনটাকে আমি পারতপক্ষে এড়িয়ে চলতে চাই।
কী জিজ্ঞেস করছেন? ভ্যালেন্টাইন দিবস নিয়ে আমার পুরোন বেদনাটা কী?
সত্যি শুনবেন? আচ্ছা শুনুন তবে।
সভ্যতার ঊষাকালে আমার একটি গার্লফ্রেন্ড ছিল। উঁহু, এতেই এত ফিক ফিক করে হাসার কিচ্ছুটি হয় নি। আপনাদেরপুরো ষোল আনা ইয়ে থাকতে পারে, আর আমার নয়া পয়সা টাইপের একটা গার্লফ্রেণ্ড থাকলেই দোষ?
তিনি ছিলেন এইটে জেনে রাখুন ব্যস।কবে কোথায়, কীভাবে এসব বেত্তান্ত জেনে কাজ নেই। তিনি আপাতত সোয়ামী নে”, চুন্নুমুন্নু নে” সুখে শান্তিতে ঘরকন্না করতিছেন, তাতে আপনাদের এত নজর
ক্যান বাপু? এসব আমি মোটেও জানাব না, পাব্লিক ঠিক ল্যাটিচিউড লঙ্গিচিউড ধরে পৌঁছে যাবে।
যাই হোক। আমার এককালে একটি উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের একটি বান্ধবী ছিলেন। পরমাশ্চর্যের বিষয় এই যে তাঁকে আমি জোটাইনি। তিনিই আমাক জুটিয়েছিলেন। মানে সচরাচর যা হয়ে থাকে, ছেলেরা উদয়াস্ত পরিশ্রম করে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, রীতিমতো সাধ্য সাধনা করে রমণীরত্ন লাভ করে থাকে।আমার ক্ষেত্রে ঠিক তেমনটি ঘটে নাই। আমি যাকে বলে কোনদিনই ত্যামন বলিয়ে কইয়ে স্মার্ট ছিলাম না ( পাশ থেকে গিন্নি বলছেন এখনওনই, হবেও বা!) ফলে আমি সেই বন্ধুদের টপাটপ প্রেমে পড়া, স্কুল কেটে সিনেমা দেখতে যাওয়া এসবদেখে, ঈর্ষায় সবুজ হয়ে দিন কাটাচ্ছি, এমন এক বসন্তদিনে তিনি ‘শুনলাম ফাঁকা আছ, আমার সদ্য থার্ড ব্রেকআপ হয়েছে, আপাতত ফ্রি আছি। ইন্টারেস্টেড?’ বলে কোলের পাশে জমাটি করে বসলেন।
এই করে আমার প্রথম প্রেমের যাত্রাশুরু।
এখানে বলে রাখা ভালো, মহিলা মানুষ হিসেবে অতি চমৎকার ছিলেন।অত্যন্ত মারকুটে হওয়া ছাড়া আর কোনও দোষ ছিল না। শুধু ইংলিশ মিডিয়ামের ধারালো স্টুডেন্ট বলে কেবলই ঝাঁইঝাকানাকা ইংরেজি গানা শুনতেন।আর মাঝেমধ্যে আমি প্রেমেন মিত্তির কি সুধীন দত্ত আওড়ালে সামান্য বেজার হতেন এই যা। তবে তেনার দৌলতেই প্রথম বব ডিলান শুনি। তিনিই আমাকে প্রথম শোনান বীটলস। আর শুনি ব্যাকস্ট্রীট বয়েজ, এম এল টি আর, বয়জোন, এবং স্করপিয়ন।
যাগগে যাক, সেই সুনয়নী তন্বীটির নাম ছিল, সোমা। আগে পরেও কিছু ছিল বটে। তবে বুইতেই পারছেন যে, সেসব আমি সেন্সরের কাঁচির ওইপারে ফেলে এয়েচি।
যাই হোক, শ্রীময়ী সোমার সঙ্গে আমার একমাত্র অমিল ছিল একটা জায়াগাতেই। তিনি ছিলেন উচ্চতায় চার ফুট এগারো ইঞ্চি, ওজনে চল্লিশ কিলো খানেক, আর আমি? নিজের মুখেআর কি বলি, মানে শত্তুরের মুখে ছাই দিয়ে আমি তখনই আশি তে এসে গেছি আর কি, আর উচ্চতাখান তো দেখেছই। জোরে হাওয়া দিলে তিনি বেশ করে আমাকে অঁকড়ে ধরতেন।না না, প্রেমের আবেশে নয়, স্রেফ ভয়ে! উড়ে যাবার ভয়ে! সেই থেকেই ‘ঝড় উঠেছে বাউল বাতাস’ বা ‘পাগল হাওয়া’ কিংবা’ আমি ঝড়ের কাছে রেখে গেলাম’ গোছের যাবতীয় ঝঞ্ঝাসঙ্গীত আমার ভারী প্রিয়।
যাই হোক, সেবার আমাদের মোটামুটিরকম প্রেমের বেশ বয়েস হয়েছে, এই ধরুন মাস্ট আটেক এমন সময় এলো সেই কালান্তক ভ্যালেন্টাইন ডে।
তা সক্কাল থেকে মাঞ্জা টাঞ্জা দিয়ে বেরিয়েছি, লতুন জিন্স, লতুন পাঞ্জাবি। বন্ধুর কাছ থেকে পারফিউমের বোতল চেয়ে প্রায় আদ্দেকটা গায়ে ঢেলেছি। সে ছোকরার আবার সদ্য ব্রেকআপ হয়েছে। ফেব্রুয়ারির এমন মন উচাটন বসন্তদিনে সকাল থেক টেপ রেকর্ডারে লুপে ‘শাওন রাতে যদি স্মরণে আসে মোরে’ শুনছে।আমার সাজ পোষাক দেখে মোষের মতন ফোঁৎ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে গাঢ় গলায় বললো ‘মনে রাখিস ভাই, ভালোবাসা মানেই কিন্তু প্রবঞ্চনা। কবি বলেছেন মানুষের ওপর বিশ্বাস মারানো চাপ।’
আমি অবশ্য এসব পাত্তা দিইনি। দেওয়ার কথাও নয়। দাড়ি কেটে গাল দুটো বেশ চকচকে। মোকাসিনটাকে আগের দিনই মুচিকে দিয়ে বেশ পালিশ করে এনেছি।শ্যাম্পু করে চুলটায় বেশ একটা উদাস কবি মার্কা জেল্লা এসেছে।
এসব পরেটরে সোজা পার্কস্ট্রীট। না, কিছু কেনার ছিলো না, কিন্তু তিনি সেখানেই দাঁড়াতে বলেছিলেন। তা পাক্কা একঘণ্টা বাদে তিনি উদয় হলেন, লাল কালোতে মেশানো একটা মারকাটারি অফ শোল্ডার ড্রেস (গুরু মুজতবা আলির ভাষায় দেরেশি) পরে। আহা, সমস্ত পার্কস্ট্রীট যেন ক্যায়াবাত ক্যায়াবাত করে উঠলো। তিনি এলেন, এসেই আমার পোশাক দেখে মন্তব্য করলেন ‘মোস্ট অর্ডিনারি গাঁইয়া ড্রেস’, তারপর হাতে হাত রেখে, চোখে চোখ রেখে বললেন, ‘চলো’।
আমিও গলাটা প্রেমে আবেগে ভালোবাসায় গাঢ় করে বল্লুম’ কোথায়?’
‘হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারের কাছে’।
বুঝতেই পারছেন মনের কি অবস্থা। গাঁইয়া ড্রেস বুইলুম, তাতে শপিং মল এ চল লো সখী, নতুন দেরেশি কিনবো না হয়। ডাক্তার ক্যানে?
© 2023 BnBoi - All Right Reserved
© 2023 BnBoi - All Right Reserved