‘বেশ করেছ, তা বাপু, এই হোমো না মোমো কি একটা বললে, তা এরা এমন কি করছিল যে এর”ম হোলসেল রেটে খামচে তুল্লে?’
‘সে কি অসৈরণ কাণ্ডকারখানা প্রভু, আপনাকে আমি লজ্জায় বলতেই পারবো না, ছি ছি ছি ‘।
‘ক্যানো, ক্যানো?’
‘সে সৃষ্টিস্থিতিলয়, সমাজসংস্থিতি লোপ, ইত্যাদি মিলিয়ে খুবই ভজঘট্ট কেস প্রভু। ধরুন অ্যাবস্ট্রাক্ট জিওমেট্রির সঙ্গে খামচা মেরে এট্টু সাব অল্টার্ন স্টাডি, বা স্ট্রিং থিওরির সঙ্গে সুররিয়ালিজম খুব কষে ঘুঁটে দিলে…..’
‘ওরে কে কোথায় আছিস, আমার ডাঙ্গশটা নিয়ে আয় তো, এটাকে সামান্য গুছিয়ে ক্যালাই, নইলে মনে হচ্ছে না বাংলা ভাষায় কেসটা খুলে বলবে বলে ‘।
‘না না, তা নয়… ‘
‘তাহলে কেস টা কি হে?’
‘ইয়ে, ওরা চুমু খায় প্রভু’
‘তো? তো?? তো??? ঘুষ নয়, বিষ নয়, কাটমানি নয়, কারো রক্ত নয়, নিষিদ্ধ নেশার বস্তু নয়, চুমু খাচ্ছে বলে মুঠো ধরে… ‘
‘ছেলে ছেলেকে চুমু খায় প্রভু, মেয়ে মেয়েকে, ছিঃ ছিঃ…. ‘
‘একটু এদিকে এসো তো চিতু, এই আমার কাছে একটু কাছে, অ্যায়, মুখটা একটু নিচে নামিয়ে বাহ বেশ, এই বার….
<চকামগ্গ….
‘এ হে হে হে, অ্যা ম্যা, এটা কি করলেন প্রভু, এটা….’
‘ভালোবাসা একটু আধটু রেসপেক্ট করতে শেখো, চিতু। তোমায় বোধহয় অনেক দিন কেউ চুমু খায় নি,না? তাই একটু খেলুম, হে হে। তাছাড়া কারো প্রাইভেট ব্যাপারে নাক গলানোটা ইতরামি, সেটা তোমাকে তোমার মা বাবা ছোটবেলায় শেখায় নি চিতু, অ্যাঁ? যাগগে যাক। তা চুমু খাওয়া ছাড়া এরা আর কি কি করছিল বাওয়া?’
‘সে বলতে গেলে, ম্যা গো, ওয়াক ওয়াক….’
‘ওরে কে আছিস, আমার ডাঙ্গশটা…. ‘
‘না না থাক, ইয়ে ওরা প্রভু, ইয়ে মানে, কি করে বলি, নিজেদের মধ্যে ঝিংকুলুলু করে।’
‘অ্যাঁ, কি করে বলে? ‘
‘ঝিংকুলুলু, ইশ ছি ছি, বলতেও অপবিত্র অপবিত্র বোধ হচ্ছে’।
‘সেটা কি হে? ঝিংকু… ওরেশশশাল্লা, বুয়েছি। ওলে বাবালে, ঘুঞ্চুপুঁচু নেকুপুষু আমার, তা বাওয়া তুমি করো না? রাত্তিরে বউমার সঙ্গে কি লুডো খেলো, অ্যাঁ? ‘
‘আজকাল তো আর ( দীর্ঘশ্বাস),… ইয়ে, লুডোই চলে প্রভু’।
‘নইলে আর অন্যের আনন্দ দেখে চোখ টাটাবে কেন বাওয়া? বলি একটু এদিকে এসো তো চিতু…. ‘
‘না না প্রভু, ইয়ে, থাক বরং, আপনার ইয়ে, বক্তব্যটা মানে, যথাযথ ভাবে প্রণিধান কল্লুম। কিন্তু আমার কথা শুনুন, ওসব কি ঠিক? মানে হারাম বা নিষিদ্ধ ইয়ে না? ‘
‘ হুমম, তা সন্টুমন্টু বাপিসোনা, আমার নামে আর কি কি হারাম বলে চালিয়ে বাওয়াল দিচ্ছ তার লিস্টিটা এট্টু দাও তো বাপধন। মালঝাল খেয়ে বুঁদ হয়ে থাকি বলে আমার নামে আর কি কি….’
‘খুব ছোওট্ট লিস্ট প্রভু, বিয়ের আগে ভালোবাসা বা জেনা করা, গরু বা শুয়োরের মাংস, বেজাতকুজাতে বিয়ে দেওয়া, এর দেশে ওর পুজোআচ্চা… ‘
‘ফুটবল?’
‘ইয়ে, খেলাধুলো তো হারাম তাই….’
‘স্কচ?’
‘ইয়ে, মদ তো নিষিদ্ধ তাই আর কি… নেহাত বাধ্য হয়েই, হেঁ হেঁ হেঁ…কিছু মাইন্ড করলেন না তো?’
‘বিধর্মী মেয়েদের গণিমতের মাল বলে রেপ? বিধর্মীদের সম্পত্তি ”শত্রুসম্পত্তি” দেগে দিয়ে লুটতরাজ? জ্যান্ত জ্বালিয়ে দেওয়া? বাচ্চা কেটে তারই মা কে খাইয়ে দেওয়া? বাচ্চা বাচ্চা মেয়েদের বিক্রি করে দেওয়া? বাচ্চা ছেলেদের ইয়ের চুলের সাইজ দেখে কতল করা? ফ্রিজে মাংস দেখে বুড়ো লোককে পিটিয়ে মারা?’
‘ইয়ে না প্রভু, ঠিকঠাক, মানে ধর্মীয় ইয়ে মেনে চললে…’
‘বাহ বাহ বাহ, গানবাজনা?’
‘হারাম’
‘নাচ? অভিনয়? নাটক?’
‘মানে, ইয়ে, হারাম প্রভু’
‘কবিতা? চিত্রশিল্প? ভাস্কর্য? ‘
‘ইয়ে, মানে এক কথা কেন আমাকে দিয়ে বারবার বলাচ্ছেন প্রভু? এসবই হারাম ‘
‘শাবাস চিতু,ভালো ব্যবসা ফেঁদে বসেছ হে, বেশ গুছিয়ে বসেছো তো বাপু। আমার তো মনে হচ্ছে যে তোমার রাজত্বে বেঁচে থাকাটাই হারাম চিতু, বেঁচে থাকাটাই হারাম!’
-‘অ। আমার দোষটাই চোখে পড়লো, না? বলি রাদ্দিন যে মালঝাল খেয়ে বুঁদ হয়ে থাকেন, এই সৃষ্টি সামলায় কে? এই লোকস্থিতি কার দায়িত্বে থাকে, অ্যাঁ? দেখুন প্রভু, এভাবে চলতে পারে না। বিশেষত, আপনাকে ওই ইয়ে, মানে ওদের ব্যাপারে কিন্তু একটা ডিসিশন নিতেই হবে প্রভু। নইলে কিন্তু আমার পক্ষে এভাবে ডিউটি করা আর সম্ভব হচ্ছে না, পষ্ট করে বলে দিলুম, হ্যাঁ’।
‘এই দ্যাকো, রাগ কত্তে নেই চিতু। এইখানে বসো দিকিন, অ্যাই দ্যাকো ফেঁতফেঁত করে। একটু বকেছি বলে, ওল্লে বাবালে, ঘুন্নুমুন্নুপুচুটা….’
‘ইয়ে, না থাক, মানে চুমুটা, ন্না, ইয়ে থাক প্রভু। পষ্টাপষ্টি কাজের কথায় আসুন। বলি ওদের কি ব্যবস্থা করলেন?’
‘কাদের?’
‘সেই অবাধ্য ত্যাঁদড় ছোকরার দল, যাদের আপনি তো লাই দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলেছেন। হারামজাদাগুলোকে পাঠালেই ঝামেলা কেলেংকারির একশেষ! উঃ দুদন্ড তিষ্ঠোতে দেয় এরা? সব সময় এঁচোড়ে পাকামি, জাত ধর্ম নিয়ম নিষ্ঠা সব কিছু নিয়ে ক্যাচাল, একে খোঁচাবে, ওকে রাগিয়ে দেবে, কিছু বলতে গেলেই উলটে দুটো প্রশ্ন করে, উফফ, পুরো হাড়হারামজাদা দল, জাতবিছুটি এক একটা’…
‘উরেব্বাবা থামো, এক্কেবারে মেলট্রেন চালিয়ে দিলে হে? তা বলি বাপু,তাতে তোমার ইয়ে জ্বলছে কেন সন্টিমন্টি?’
‘মানে? জ্বলবে না? আজকাল আদ্দেক লোক পুজোআচ্চা শুনলে খ্যাঁক করে হেসে ফেলছে, প্রার্থনা করতে বললে জিজ্ঞেস করছে এই করে কোন মহাভারত উদ্ধার হবে, উফফফ, পুরো ধ্বংস করে দিল, জ্বালিয়ে দিল মাইরি।’