‘আহ প্রভু, কি করছেন কি? সভার মধ্যিখানে…’
‘কেন? ব্যাপারটা বাড়াবাড়ি লাগছে নাকি? যাগগে যাক। তা ইয়ে, ওহে আগন্তুক, তোমার নামটি কী ঘোঁচুসোনা?’
‘কত পুণ্যবলে আপনার চরণসকাশে এসে আজি কি অপার আনন্দের হিল্লোল আমার শরীরে প্রভু, কি দুর্নিবার মোহমায়ার বন্ধন ছাড়িয়ে আমার আত্মা আজ অনন্ত আকাশে…’
‘উরিব্বাস, দিব্যি সরেস বাঙলা বেরোচ্ছে তো মুখ থেকে!’
‘হেঁ হেঁ, ঠিকই ধরেছেন প্রভু, ওই বাঙলাই আর কি, হেঁ হেঁ… যমদূত দাদাকে বল্লুম যখন খালাসিটোলা হয়েই যাচ্ছি, একটু বসে গেলে হত না? হেঁ হেঁ, অপরাধ নেবেন না কিন্তু স্যার’।
‘চিতু, শুনলে?’
‘শুনলাম প্রভু, আজকেই ওটার ব্যবস্থা করছি’
‘হ্যাঁ হ্যাঁ করে ফেলো, করে ফেলো। রোজই কি আর স্কচ খেতে মন যায় হে? মাঝে মাঝে এসব বাংলা টাংলাও তো….’
‘আহ কি হচ্ছে কি প্রভু? আমি কি তাই বল্লুম? সক্কাল সক্কাল কি শুরু করলেন বলুন তো? বাংলা না, যমদূতটার কথা বলছি।’
‘ অ। যাই হোক, তা বাপু, বাংলু টেনে মেজাজটি যে দিব্বি খোলতাই সে বুঝনু। এইবার খোলসা করে বলতো ছুংকুমণি, কি কি এমন পুণ্যকাজ করে এসেছো পৃথিবীতে যে তোমাকে স্বর্গে হাসিখুশি খেলে বেড়াতে দেওয়া হবে? প্রূভ ইওর পয়েন্ট, বি ক্রিস্প অ্যান্ড শার্প। আমার হাতে টাইম বেশি নেই। কি করতে হে মর্তে?’
‘ইয়ে, সেলসে ছিলাম প্রভু’।
‘অ্যাঁ? সেলসে? চিতু, একে নিয়ে যাও, স্ট্রেইট রৌরব নরক, পাঁচশো বছর। রাস্তায় কোত্থাও দাঁড়াবে না। হেব্বি ডেঞ্জারাস মাল। স্ট্যাম্প প্যাডটা এদিকে দাও দিকিন। আহ, পেনটা আবার কোথায় রাখলুম..কি জ্বালা…..’
‘প্রভু প্রভু, কি অপরাধ প্রভু? আপনি তো শুনলেনই না….’
‘বেশি শোনার দরকার নেই সন্টিমন্টি। সেলসের লোকগুলোকে হাড়ে হাড়ে চিনি। গতবার এক ছোঁড়া আমাকে একটা বাক্স দিয়ে বলে তাতে নাকি স্পেশাল অ্যান্টিগ্র্যাভিটি সিউয়িং ইন্সট্রুমেন্ট, ও মা খুলে দেখি একবাক্স সূঁচ আর সুতো! এই গছিয়ে দিয়ে স্বর্গে যাবার ধান্ধা আর কি! সাহসটা ভাবো! আরেক মক্কেল তো অথেনটিক ওয়্যারেবল এয়ার কন্ডিশনিং র্যাপঅ্যারাউন্ড নাম করে ইয়াব্বড় একটা প্যাকিং বাক্স নিয়ে হাজির, স্বর্গে যাবার নজরানা, আমি তো মাইরি হেবি ইম্প্রেসড, ওমা, খুলে দেখি বারোখানা বাঁদিপোতার গামছা! ওপরে আবার লেখা ওয়র্কস বেস্ট হোয়েন ওয়েট! দুটোকেই দেড় হাজার দেড় হাজার বছর করে কুম্ভীপাকে পাঠিয়েছি। ‘
‘ইয়ে, সব সেলসম্যান তো ওরকম না প্রভু’।
‘বটে? প্রূভ ইট। আর কি কি করেছো? ‘
‘বাংলা সাহিত্যের একনিষ্ঠ সেবা করেছি প্রভু’
‘সাউন্ডস ইন্টারেস্টিং। কি রকম?’
‘ফেসবুকে একটি বাংলা সাহিত্যমূলক গ্রুপের অ্যাডমিন ছিলাম স্যার। এছাড়াও আরও অনেক গ্রুপে….’
‘চিতু, লিখে নাও, পাঁচশো বছর রৌরবের সংগে আড়াইশো বছর অন্ধকূপ। আর শোনো, ঝটপট রওনা করিয়ে দাও। ইশশ অনেকটা বেলা হয়ে গেলো এই একটা কেস নিয়েই। ন্যাঅ্যাঅ্যাক্সট’।
‘প্রভু প্রভু, দয়া করুন। আমি আরও ভালো ভালো কাজ করেছি..’
‘শুনি। এইটেই লাস্ট চান্স কিন্তু, বুইলে তো?’
‘পাড়ায় পাড়ায় ভোটের আগে দেওয়াল লিখেছি প্রভু, বসে আঁকো প্রতিযোগিতা, পুজোয় বইয়ের স্টল, রক্তদান শিবির, ফাইভ অ্যা সাইড ফুটবল টুর্নামেন্ট, ব্রিগেডে মিটিং ও চিড়িয়াখানা অ্যান্ড বিরিয়ানি, গণসংগীত ও লোকাল কমিটি। তারপর মোমবাতি মিছিল, ইলিশ ও হাওয়াই চটি উৎসব, ইনফ্যাক্ট একবার তো বইমেলায় ”জাগো বাঙলা”র স্টলের সামনে বাউল অবধি হয়েছিলাম প্রভু।’
‘হেঁ হেঁ। তুমি কি লেভেলের আতাক্যালানে পাবলিক সেটা নিজে এখনো বোঝনি, না? নাহ, কৃমিভোজন নরক আরও আড়াইশো বছর, ন্যাঅ্যাঅ্যাক্সট…’
‘প্রভু, ও প্রভু, শুনুন না… আহ এই দ্যাখো জাপটে ধরে, উঁহহ, সর না মাইরি, কি বিচ্ছিরি গন্ধ গায়ে…’
(যমদুতেরা চ্যাংদোলা করে আগন্তুককে বাইরে নিয়ে যায়).
-‘ চিতু, পরের ক্যান্ডিডেটকে… এ কি, খামোখা দাঁত ক্যালাচ্ছো কেন? ওরে কে আছিস, চট করে একটা তক্তা কি বাটাম নিয়ে আয় তো, এটার বোধহয় আন্তারা ফাঁচকলিয়ে গেছে…’
-‘ও হো, খ্যাঁক খ্যাঁক, খৌয়া খৌয়া…. ‘
‘ইঃ, হাসছে দেখো, যেন দাঁড়কাকে রসগোল্লা খাচ্ছে। বলি এত আনন্দের কি হলো অ্যাঁ ? এমাসের টার্গেট অ্যাচিভমেন্টের স্ট্যাটাস মনে হচ্ছে ভালো, নইলে এতো হেসে কুটিপাটি হবার কারণ কি বাওয়া? কেসটা কি, অ্যাঁ? ‘
‘সে সুখবরটা দিতেই তো সকাল থেকে প্রাণটা আনচান করছে প্রভু। শুনলে আপনি হেসে কুটিপাটি হবেন। এখন মাসের টার্গেট দিনেই হচ্ছে কি না, হেঁ হেঁ। আজকেরটায় অবশ্য আপাতত তিপ্পান্ন কনফার্মড, তবে ওটা বাড়তেও পারে।’
‘অ্যাঁ? বল কি? এখন তো ইয়ার এন্ডিং নয় চিতু, তাতেই এই?? বাহ বাহ, শাব্বাস, ব্রাভো। তা কোথাকার কাস্টমার চিতু? ওই বলি ইরাক নাকি নাইজেরিয়া ?’
‘না প্রভু, অরল্যান্ডো, আমেরিকা’।
‘বাহ বাহ বেশ। তা কোন স্কিমে তুল্লে?’
‘সে ভারি বিচ্ছিরি ব্যাপার স্যাপার প্রভু, আপনি হয়তো শুনতেই চাইবেন না। হোমো’।
‘মোমো? তা তিব্বত না এক্সাইড মোড়েরটা? আমার অবিশ্যি এক্সাইড মোড়েরটাই…..’
‘আহ, তা নয় প্রভু, বলতেও যে ছাই কি গা গুলোচ্ছে সে আর কি বলি! বলছি শস্তায় খান পঞ্চাশেক হোমো তুলেছি প্রভু। হোমো, হিজড়ে, বেশ্যামাগী, এগুলো শস্তা মাল প্রভু, তুলতে কষ্টটা একটু কম হয়, কেউ বিশেষ গা করে না কি না। ভ্যালুতে না হলেও, ভল্যুম টার্গেট কিন্তু দিব্যি পুষিয়ে যায় প্রভু, অন্তত আপিস চালানোর খরচাটা উঠে আসে আর কি, হেঁ হেঁ। ‘