*
আমি অনেক কষ্টে আছি
আমার এখন নিজের কাছে নিজের ছায়া খারাপ লাগে
রাত্রি বেলা ট্রেনের বাঁশি শুনতে আমার খারাপ লাগে
জামার বোতাম আটকাতে কী কষ্ট লাগে, কষ্ট লাগে
তুমি আমার জামার বোতাম অমন কেন যত্ন কোরে
লাগিয়ে দিতে?
অমন কেন শরীর থেকে আস্তে আমার
ক্লান্তিগুলি উঠিয়ে নিতে?
তোমার বুকের নিশিথ কুসুম আমার মুখে ছড়িয়ে দিতে?
জুতোর ফিতে প্রজাপতির মতোন তুমি উড়িয়ে দিতে?
বেলজিয়ামের আয়নাখানি কেন তুমি ঘর না রেখে
অমন কারুকাজে সাথে তোমার দুটি চোখের মধ্যে
রেখে দিতে?
রেখে দিতে?
আমার এখন চাঁদ দেখতে খারাপ লাগে
পাখির জুলুম, মেঘের জুলুম, খারাপ লাগে
কথাবার্তায় দয়ালু আর পোশাকে বেশ ভদ্র মানুষ
খারাপ লাগে,
এই যে মানুষ মুখে একটা মনে একটা
খারাপ লাগে
খারাপ লাগে
মোটের উপর আমি এখন কষ্টে আছি, কষ্টে আছি বুঝলে যুথী
আমার দাঁতে আমার নাকে, আমার চোখে কষ্ট ভীষণ
চতুর্দিকে দাবী আদায় করার মতো মিছিল তাদের কষ্ট ভীষণ
বুঝতে যুথী,
হাসি খুশী উড়নচণ্ডী মানুষ আমার তাইতো এখন খারাপ লাগে
খারাপ লাগে
আর তাছাড়া আমি কি আর যীশু না হাবিজাবি
ওদের মতো সব সহিষ্ণু?
আমি অনেক কষ্টে আছি কষ্টে আছি কষ্টে আছি আমি অনেক…
*
স্থিতি হোক
একটি নারীর উড়াল কণ্ঠ বুকের ভিতর খুঁড়তে খুঁড়তে মন্ত্র দিলো
স্থিতি থোক, স্থিতি হোক, হৃদয়ে আবার স্থিতি হোক!
শ্যাওলা জুড়ে সবুজ দিঘির ঘাটলা ওদের জনবসতে স্থিতি হোক!
একা থাকার কপাল জুড়ে কলহ নয় স্থিতি চাই স্থিতি হোক!
বৃক্ষ ওদের বনানী জুড়ে চাইনা বিনাশ বালমিকী চাই স্থিতি চাই,
স্থিতি হোক!
বৃষ্টি আবার বরণ করুক কোমল শস্য, বিলাপকে নয় বিলাপ এবার ।
বিলুপ্ত হোক!
সেই সুরভি আবার আসুক অন্ধকারে সে মৃত্তিকা আনতমুখ।
আবার হাসুক, স্থিতি হোক!
মৃত্যু মাখা মানুষ ওদের আড়াল থেকে আর এক মানুষ
মন্ত্র দিলো স্থিতি হোক!
কবে কোথায় শুনেছিলাম পথের পিঠে পায়ের চাবুক আবার তারা
স্থিতি হোক!
ভুল প্রকৃতি পারস্পরিক প্রলয় শিখা অগ্নিখোলশ আবার খুলুক
স্থিতি হোক!
পালক পরা হরিতকীর আকুল বাগান হাতের কাছে ব্যাকুল বেলায়
স্থিতি হোক!
সময় থেকে শাড়ির মতো আবার তুমি উন্মোচিত শান্তি আমার
শান্তি আমার
কর্পুরেরই গন্ধ ভরা এক অনাদি কৌটো তুমি হে স্থিতি
তোমার ভিতর কাত হয়ে আজ সেই বিশুদ্ধি বিলিয়ে দিলাম হে স্থিতি
মাটির কলস ভরা জলের ঠাণ্ডা বসত তুমি আমার
সোঁদা বনের রৌদ্রে ভরা টলমলানো উঠোন তুমি মন্ত্র আমার
গ্রীষ্মকালের সরল হাওয়া, বিনাশবিহীন জাগরণে শান্ত ভূমি
মাইল মাইল তুমি আমার
কেবল শুধু ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি
তুমি আমার
শহর ভরা কাঁচের কোকিল, মুখর হলো মুখর হলো, ওদের আবার
স্থিতি হোক,
ঐতো আমি দেখছি ভাঙ্গন ওদের গহন নাভির মূলে, ওদের আবার
স্থিতি থোক, স্থিতি হোক!
রুটি গোলাপ শ্রমের সঙ্ঘ, স্বেচ্ছাচারের কানে এবার মন্ত্র দিলাম
স্থিতি হোক স্থিতি হোক?
*
কুরুক্ষেত্রে আলাপ
আমার চোয়ালে রক্ত হে অর্জুন আমি জানতাম, আমি ঠিকই জানতাম
আমি শিও হত্যা থামাতে পারবো না, যুবতী হত্যাও নয়!
ভ্রূণহত্যা! সেতো আরো সঙ্ঘাতিক, আমি জানতাম হে অর্জুন
মানুষ জন্ম চায় না, মানুষের মৃত্যুই আজ ধ্রুব!
আমার নাভিতে রক্ত-আমি জানতাম আমি ঠিকই জানতাম
আমি মানুষের এই রোষ থামাতে পারবো না, উন্মত্ততা থামাতে
পারবো না।
দুর্ভিক্ষ ও রাষ্ট্রবিপ্লব আমি থামাতে পারবো না
চালের আড়ত থেকে অভিনব চাল চুরি থামাতে পারবো না,
রিলিফের কাপড়ে আমি মানুষের অধঃপতন ঢাকতে পারবো না!
শেফালীর সোমত্ত গ্রীবায় লাগবে লাম্পটের লাল আর বিষ
আমি জানতাম হে অর্জুন অনাহারে অনেকেই যুবতী হয়েও আর
যুবতী হবে না!
ভাই পলায়নে যাবে বোন তার বাসনা হারাবে আমি জানতাম
ফুল ফুটবে না, ফুল ফুটবে না, ফুল আর ফুটবে না, ফুল আর কখনো
ফুটবে না!
বকুল-বৃক্ষদের এইভাবে খুন করা হবে সব গীতিকার পাখিদের
এইভাবে গলা, ডানা স্বরলিপি শব্দের পালকগুলি
ভেঙে দেয়া হবে আমি জানতাম
তিতির ও ঈগল গোত্রের সব শিশুদের এইভাবে ভিক্ষুক পাগল
আর উন্মাদ বানানো হবে
ভারতীয় যুদ্ধের উৎসবে আজ এই শুধু আমাদের
ধনুক ব্যবসা,
আমি জানতাম, হে অর্জুন,-আমি ঠিকই জানতাম।
*
শস্যপর্ব
বুকের কাছে বৃক্ষ তাতে লিখতে লিখতে লিখেই ফেলি হলকর্ষণ।
যন্ত্রচাকা
মায়ায় ঢাকা মাংসমধুর আলস্য আর অগাধ জল আলোর জল,
লিখেই ফেলি স্নিগ্ধ জল জিহ্বা-উরু ভালোবাসা নারীর চক্ষু নারীর
নাভি,
সাধ্য মতোন যেমন পারি শস্যগন্ধ, শস্যচাকা, শস্যমুগ্ধ, শস্যমানুষ!
লিখতে লিখতে ফিরে তাকাই মাটির দিকে, তাকাই ফিরে, মাটি মাটি,
মাড়াই মাটি
সঙ্গে সঙ্গে সুদৃষ্টিপাত, হিম অনাদি, হা হৃৎপিণ্ড, হা হৃৎকমল।
শিল্পবেদী,
যুথচারী মানুষ আবার মানুষ গড়ে লোকলস্কর মহৎ আঁধার, অন্য আঁধার
অভিজ্ঞতা,
লিখতে লিখতে লিখেই ফেলি ফুল কুসুম, মুগ্ধ কুসুম, মুগ্ধ শস্য!
অজস্র নীল মুকুর আমার ফোঁটায় দৃশ্য লিখেই ফেলি হে দিগ্বিদিক,
হে অদৃশ্য,
শরীর জুড়ে শীতল জলের শস্যগন্ধ, শস্যযুথী, শস্যকুসুম!
শস্যমাখা কলস তাতে লিখেই ফেলি শস্যকণ্ঠ, শস্যবৃক্ষ, শস্যাদীঘি,
শস্যদৃশ্য।