আমি তার ভ্রূণের ভিতর হিংসা ভ্রাতৃহিংসা হেনে ফের
ভ্রাতৃহন্তাকারী হই, পরিব্রাজক হই
পায়ের ভিতরে আমি সেই প্রথম অনুভব দাবী করি আরো
অজস্র অজস্র পা আমার শরীরে
নৃত্য করছে নৃত্যপর- তারা
সেই প্রথম আমাকে বোঝালো,
এইসব তামসপ্রবাহে মিগ্ধ স্নান সেরে নাকি এক
বিলুপ্ত জাতির ফের জাগরণ হবে,
এক কান্তিমান নাকি ফিরে আসবে আবার উষ্ণীষে,
কিন্তু কই? আমি যতবার আসি
ততবার ওরা তো আমাকে আজো হত্যা করে!
হত্যা করে ফেলে!
*
নির্বিকার মানুষ
নদীর পারের কিশোরী তার নাভির নীচের নির্জনতা
লুট করে নিক নয়টি কিশোর রাত্রিবেলা
আমার কিছু যায় আসেনা,
খুনীর হাতের মুঠোয় থাকুক কুন্দকুসুম কি আসে যায়?
প্রেমিক করতলে না হয় লুকিয়ে ফেলুক ফুলের ফণা কি আসে যায়?
শিশুর মাথায় সাপের মতো বুদ্ধি খেলুক আমার তাতে কি আসে যায়?
বৃক্ষ ফলাক বিষাক্ত ফল, ছোঁব না আমি তবেই হলো!
আমার ছুঁতে হবেই এমন শর্ত কি কেউ বলে দিয়েছে।
পথের উপর গর্ত আছে আঁধার আমি দেখিনা যে!
না হয় আমার পা-ই ভাঙ্গুক, সঠিক পায়েই সুখী মানুষ?
নারীকে যে নিদ্রা থেকে চুম্বনে তার চোখ খুলিনি বলেই আমার
তার বিরোধী হতেই হবে, এমন কোনো শর্ত তো নেই।
আসবো বলে আর আসিনি, আসায় কিছু যায় আসেনা
এমনি যেমন মানুষ আসে তেমনি আমি চলে এলাম,
এই আসাই প্রচলিত ভিন্ন অর্থে ভিন মানুষের
কাঁপন খেয়ে কখন বনে কান্তি আবার কখন ধুলো
ধূসরতার প্রতিমূর্তি
এখন তোমার কাছে বসে এক অশান্তি এই যে কাঁদে কান্তি আমার
কোথায় আমি কান্তি পাবো? অভিমানের আগুনে যে
পোড়া পুতুল, কান্তি কোথায়?
প্রজ্বলিত অগ্নি আমার শুদ্ধতম শান্তি কোথায়?
অন্ধ আমি চতুর্মতি
আমরা এখন এ ওর প্রতি বাণ ছুঁড়ি আর হো হো হাসির মধ্যে নামাই
আর মানুষের উগ্র ক্ষতি।
*
নিঃসঙ্গতা
অতটুকু চায়নি বালিকা!
অত শোভা, অত স্বাধীনতা!
চেয়েছিল আরো কিছু কম,
আয়নার দাঁড়ে দেহ মেলে দিয়ে
বসে থাকা সবটা দুপুর, চেয়েছিল
মা বকুক, বাবা তার বেদনা দেখুক!
অতটুকু চায়নি বালিকা!
অত হৈ রৈ লোক, অত ভীড়, অত সমাগম
চেয়েছিল আরো কিছু কম!
একটি জলের খনি
তাকে দিক তৃষ্ণা এখনি, চেয়েছিল
একটি পুরুষ তাকে বলুক রমণী!
*
ভিতর বাহির
(হাসান হাফিজকে)
আমার শরীর তোমরা খুঁড়ে দ্যাখো আছে কিনা
ভিতরে কোথাও সেই কুমারী মাটির গন্ধ, মানুষের মায়া ও মমতা আজো
আছে কিনা একাকার আরো কি কি সেইসব, তোমরা বলো ঐ যে কী সব!
খুঁড়ে দ্যাখো আছে কিনা মস্তিষ্কে ও হাত পা জোড়ায় সেই
ঐ যে কী
মানুষের মনুষ্যত্ব, মর্মছেঁড়া জীবনের এপাশ ওপাশ এটা ওটা!
আমার শরীর খোঁড়া, দুঃখময় আত্মার গাঁথুনী, দ্যাখো আমি ঠিকই
খণ্ডিত ইটের মতো খুলে যাবো সহজেই, কিছুই থাকবো না!
মায়া ও মমতা ছাড়া, মানুষের দুঃখবোধ, ব্যথাবোধ ছাড়া আমি
কিছুই থাকবো না!
*
তোমার চিবুক ছোঁবো, কালিমা ছোঁবো না
এ ভ্রমণ আর কিছু নয়, কেবল তোমার কাছে যাওয়া
তোমার ওখানে যাবো, তোমার ভিতরে এক অসম্পূর্ণ যাতনা আছেন,
তিনি যদি আমাকে বলেন, তুই শুদ্ধ হ’, শুদ্ধ হবো
কালিমা রাখবো না!
এ ভ্রমণ আর কিছু নয়, কেবল তোমার কাছে যাওয়া
তোমার ওখানে যাবো; তোমার পায়ের নীচে পাহাড় আছেন
তিনি যদি আমাকে বলেন, তুই স্নান কর
পাথর সরিয়ে আমি ঝর্ণার প্রথম জলে স্নান করবো!
কালিমা রাখবো না!
এ ভ্রমণ আর কিছু নয়, কেবল তোমার কাছে যাওয়া
এখন তোমার কাছে যাবো
তোমার ভিতরে এক সাবলীল শুশ্রূষা আছেন
তিনি যদি আমাকে বলেন, তুই ক্ষত মাছ আকাশে তাকা-
আমি ক্ষত মুছে ফেলবো আকাশে তাকাবো
আমি আঁধার রাখবো না!
এ ভ্রমণ আর কিছু নয়, কেবল তোমার কাছে যাওয়া
যে সকল মৌমাছি, নেবুফুল গাভীর দুধের শাদা হেলেঞ্চা শাকের ক্ষেত
যে রাখাল আমি আজ কোথাও দেখিনা- তোমার চিবুকে
তাঁরা নিশ্চয়ই আছেন!
তোমার চিবুকে সেই গাভীর দুধের শাদা, সুবর্ণ রাখাল
তিনি যদি আমাকে বলেন, তুই কাছে আয় তৃণভূমি
কাছে আয় পুরনো রাখাল!
আমি কাছে যাবো আমি তোমার চিবুক ছোঁবো, কালিমা ছোঁবো না!
*
বন্দুকের নল শুধু নয়
এমনও সময় আসে
বন্দুকের নল শুধু নয়, মানুষেরও বুক বড় বেদনায়
বেজে ওঠে ব্যথায় বারুদে–
আর তাতে হাওয়া লাগে…
আর তাতে জ্বলে যায়…
ভস্মীভূত হয় সব রাজ্যপাট, সিংহাসন, ভুল নৃপতির মুণ্ডু
চাঁদ
ফুল
নারী
শিল্প
সভ্যতার কুশপুত্তলিকা!
এমনও সময় আসে,
বিপ্লবীর মন শুধু নয়, বনভূমি সেও বড় বেদনায়
বিদ্রোহ জমিয়ে রাখে গাছে গাছে সবুজ পাতায়!
উত্তেজিত কাতুর্জে কান্দায়
আমের বোলের মতো ঝরে পড়ে
তখোন যৌবন
টাকা
কাটামুণ্ডু
রাজপথে
রাজার দ্বৈরথে!
এমনও আগুন আছে দমকলও নেভাতে পারে না!
সে আগুন নটীর মুদ্রায় জ্বলে,
পাটের গাঁটের মতো যুবতীর তলপেটে জ্বলে ওঠো
সে সব রহস্য-আগুনে দূরে…
দুপুরে হাওয়ার আহা তারপর
তখোন যেনো কার ভালোবাসা পোড়ে…
কার যেনো…
কার যেনো…
কা…র…
*
গোলাপের নীচে নিহত হে কবি কিশোর
গোলাপের নীচে নিহত হে কবি কিশোর আমিও ভবঘুরেদের প্রধান
ছিলাম।
জ্যোত্সায় ফেরা জাগুয়ার চাঁদ দাঁতে ফালা ফালা করেছে আমারও
প্রেমিক হৃদয়!
আমিও আমার প্রেমহীনতায় গণিকালয়ের গণিকার কাছে ক্লান্তি
সঁপেছি
বাঘিনীর মুখে চুমো খেয়ে আমি বলেছি আমাকে উদ্ধার দাও।
সক্রেটিসের হেমলক আমি মাথার খুলিতে ঢেলে তবে পান করেছি মৃত্যু
হে কবি কিশোর
আমারও অনেক স্বপ্ন শহীদ হয়েছে জীবনে কাঁটার আঘাত সয়েছি
আমিও।
হৃদয়ে লুকানো লোহার আয়না ঘুরিয়ে সেখানে নিজেকে দেখেছি
পাণ্ডুর খুবই নিঃস্ব একাকী!
আমার পায়ের সমান পৃথিবী কোথাও পাইনি অভিমানে আমি
অভিমানে তাই
চক্ষু উপড়ে চড় ইয়ের মতো মানুষের পাশে ঝরিয়েছি শাদা শুভ্র পালক!
হে কবি কিশোর নিহত ভাবুক, তোমার দুঃখ আমি কি বুঝি না?
আমি কি জানি না ফুটপাতে কারা করুণ শহর কাঁধে তুলে নেয়?
তোমার তৃষ্ণা তামার পাত্রে কোন কবিতার ঝিলকি রটায় আমি কি
জানি না
তোমার গলায় কোন গান আজ প্রিয় আরাধ্য কোন করতলও হাতে লুকায়
আমি কি জানি না মাঝরাতে কারা মৃতের শহর কাঁধে তুলে নেয়?
আমারও ভ্রমণ পিপাসা আমাকে নারীর নাভিতে ঘুরিয়ে মেরেছে
আমিও প্রেমিক জুবাদুর গান স্মৃতি সমুদ্রে একা শাম্পান হয়েছি
আবার
সুন্দর জেনে সহোদরাকেও সঘন চুমোর আলুথালু করে খুঁজেছি
শিল্প।
আমি তবু এর কিছুই তোমাকে দেবো না ভাবুক তুমি সেরে ওঠো
তুমি সেরে ওঠো তোমার পথেই আমাদের পথে কখনো এসো না,
আমাদের পথ
ভীষণ ব্যর্থ আমাদের পথ।