আমি দেখেছি তো মানুষ কেবলি তারা ভুল মানুষ ভুল মানুষ,
ভুল মানুষ!
আমি দেখেছি তো শিল্প কেবলি তারা ভুল শিল্প, ভুল শিল্প!
আমি দেখেছি নির্মাণ কেবলি তো অবৈধ নির্মাণ শুধু অবৈধ নির্মাণ!
হয়েছে আমার দেখা হয়ে গেছে সব, জানা হয়ে গেছে সব, চেনা হয়ে
গেছে সব!
হয়েছে আমার ভালোবাসা হয়েছে অনেক আর ঘৃণা করা হয়েছে অনেক!
আমি জেনেছি জলের ধারা, বৃঝেছি হত্যার শিল্প, চিনেছি সমিতি!
আমি দেখেছি গোলাপভুক সিংহেরও কারসাজি।
কসাইখানায় কারা সুন্দর নিষ্পাপ গাভী করে বিক্রি এও তো দেখেছি!
সিংহয়ূথ, অশ্বাহন, মুক্তা, নারীর নিভৃত নাভি যাতনা সঙ্গম আমি
এওতো দেখেছি!
আজ আমি খুব ক্লান্ত আমি ছুটি চাই প্রভু আমি কি পাতক?
*
ধুলো
ধুলো কি দগ্ধ কয়লা? ধুলো কি বারুদ?
রাস্তায় বেরুলে শুধু ধুলোর কাহিনী ওড়ে
ধুলোর কাহিনী ওড়ে!
ধুলো যেনে দগ্ধ কয়লা যতদূর যায় কেবলি পোড়ায়
ধুলো যেনো একটি সুড়ঙ্গ পথ
ধুলো যেনো হৃদয়ের গোপন সম্পদ
যতদূর যাই ঠিক ততদূর সেও যায়
মানুষের সকল শাখায়
সাথী হয়ে জ্বালায় পোড়ায়- ধুলো কি বারুদ?
*
দৈতদ্বন্দ্ব
যেমন হাতিকে খুব গভীর গহন বনে মনে হয় একমাত্র স্বাভাবিক
যেমন বনেই তার একমাত্র ‘বৃংহতি’ শব্দটি মানায়
যেমন প্রার্থিত ওষ্ঠের উষ্ণ অধীর কিনারে অধর ভিড়ানো হলো
প্রকৃত চুম্বন!
আমি হরিণকে লোকালয়ে হরিণ বলি না,
বলি অসহায় কোমল করুণ জন্তু।
যেমন পথ ভুললে পথিক আর পথিক থাকে না, হয় ক্লান্ত মানুষ!
যেমন ভিক্ষুকের পয়সা আমার পয়সার সাথে কখনো মেলে না।
যেমন মেঘের দিনে ‘বিষণ্ণতা’ শব্দটিকে মনে হয় একা।
ভালোবাসতে পারে যেমন কেবল ভালোবাসা,
আমি বকুল বৃক্ষকে বোকা খুনীর ঘরের পাশে
কখনো যেমন আর বকুল বলি না, বলি তার আচ্ছাদন
তার হতার হরিৎ পটভূমি।
যেমন যৌবন আজ যন্ত্রণায় আমার মনন বোধে, আমাকে খরচ করে
শেষকালে তৃপ্ত হয় আমারই মজ্জায়!
আজ আমিও কি তাই? তুমিও কি তাদের মতোন? নাকি
পাকেচক্রে অন্য কিছু অন্য কোনো কিছু
*
অন্যরকম সাবধানতা
রৌদ্রে উঠলে পৌঁছে যাবো আপাততঃ এই মেঘের প্লাবনে দাঁড়াও।
কেউ সামনে যেওনা সাবধান!
সাইকেল ঘণ্টি বাজিওনা, সাবধান!
তোমাদের যাবতীয় সহায় সদ্ভাব ঠিক করো
রৌদ্র উঠতে দাও।
আর তোমাদের চৌধুরীর মেয়েরা যেনো
একটুতেই খিল খিল না হাসে
উষ্ণ চোখে না কাঁদে সাবধান!
মেয়েদের চোখে চোখে রাখো!
রৌদ্র উঠলে পৌঁছে যেতে হবে। আপাততঃ এখানে দাঁড়াও!
তোমাদের ঠাণ্ডা পানির কুঁজো যেনো আজ না ফাটে সাবধান!
পথে পানি খুব মূল্যবান শোনো হে,
সোনার জিনিশগুলো টাকা পয়সাগুলো
বাসে লুকিয়ে রাখো, চোর গুণ্ডা বদমাশ রয়েছে।
রুটি খেতে খেতে আর ভাতের ব্যাপার নিয়ে
কুটকচাল পোড়া না সাবধান!
গাছতলায় এসে দাঁড়াবে এমন
যেনো তুমি পথিক, উপরে ফলের প্রতি লোভ নেই
যেনো তুমি আসলেই পথ হাঁটছো, পথিক, সাবধান!
গৃহপালিত পশুকে আর আঘাত দিওনা
পাশুটে জিভের দিকে তাকিয়ে আর ক্ষুধাকে দেখোনা।
হা করে থেকো না, একটু পা চালাও,
চলো খুব দ্রুত চলো!
বলা যায় না কোথায় ফুটুস করে কে কাকে ঝপাৎ করে মেরে বসে।
মমতা তো নেই!
*
অস্থিরতা
একটু খানিক তন্দ্রাতে সে
একটু খানিক জেগে,
বুকের কাছে হাতটি ছিলো
হঠাৎ সে উদ্বেগে
বোললো তোকে বোললো যে নেই
নেই!
একটু খানিক ক্রন্দনে আর
একটি খানিক মনে
তন্দ্রাতে সে বিভোর ছিলো।
হঠাৎ সে উদ্বেগে
বোললো তোকে বোললো যে নেই,
নেই!
*
এই ভাবে বেঁচে থাকো, এই ভাবে চতুর্দিক
বেঁচে থাকতে হলে আজ কিছু চাই। কিছুই কি চাই?
গেরস্থালী নয়তো শূন্যতা? নয়তো সন্ন্যাসী নয় নীলাঞ্জনশ্যাম নারী
নয়তো কিছুই নয়? বসে থেকে বেয়াকুল দিন দেখে
দিন কাটানো অলস ভঙ্গি-সেও বেঁচে থাকা নাকি?
বেঁচে থাকতে হলে এই বেঁচে থাকা? চূর্ণ গেরস্থালী তাতে
বসে থেকে উরুতে থাপ্পড় দিয়ে বলে ওঠা চাই হোক
শূন্য হোক, পুণ্য হোক খাঁ খাঁয় ভরপুর থোক সব কিছু
খঞ্জ ও খোঁড়ায় যেমন দেখতে পায় আমি ভালো আছি?
আমি অভাবের সমস্ত অক্ষর, নারীর উরুর জোড় জীবনের অসীম ভিতর
জটিল শলায় গেঁথে আজো বলে উঠি হোক
শূন্য হোক, পূণ্য হোক খাঁ খাঁয় ভরপুর থোক সব কিছু
দুঃখ যেনো দেখতে পায় আমি সুখে আছি!
আমি চালের ভিতর ভুল সেঁকো বিষ, কৃত্রিমতা করুণ কাঁকর
তবু উরুতে থাপ্পড় দিয়ে তাই খাই, স্নান করি নয়তো ঘুমাই
নয় নারীকে বুঝাই এসো এইভাবে এরকম ভাবে!
*
কচ্ছপ শিকারীরা
ওদের চোখে জলের কুহক আমরা বলি নদী
পা ডুবিয়ে দাহ ভেজাই জিহ্বা ভেজে তৃষ্ণা হরণ জলে।
ঐ জলেই বর্শা হাতে দাঁড়ায় ওরা দলেঃ
ওদের তখনো বাঁচার চিহ্ন কচ্ছপের পিঠে
সাঁতরে আসে সাঁতরে আসে জলেরই কংক্রিটে
কোমল কালো রহস্যের মৌন অলংকার
নদীর গ্রীবা শোভায় ঝরে কচ্ছপের হার!
আমরা ভাবি আদিজগৎ ফিরলো বুঝি প্রাণী
ওদের হাতে জীবনতৃষ্ণা ঝককে ওঠে বাণী,
বিদ্ধ করো! বিদ্ধ করে বিদ্ধ করে ওকে।
তিনদিকে তিন মূলশিকারী বর্শা তুলে তাঁকে
বরণ করে কচ্ছপের ধাবিত যাত্রাকে।
কালো কঠিন পেশীর কালো রৌদ্র ভরা দেহ
সঞ্চারিত হতো তখোন বর্শা ফলায় আর।
শিকারীদের শরীর থেকে সে এক চমৎকার
গতির ছায়া চমকাতো সেই কচ্ছপের পিঠে
মৃত্যু যাকে মরণ দিতো জলেরই কংক্রিটে।