পূজোর দিনে তো আমি অনেককেই দেখেছি
কেমন প্রতিমা দেখার নামে চুপে চুপে দেখে নিচ্ছে
লাবণ্য লোভন লোনা মাংসের প্রতিমা।
এইসব দেখে শুনে মনে মনে ভাবি,
আড়ালে ও অন্তরালে তবে কি রহস্য আছে,
যারা আজো চুপে চুপে কাজ করে যায়?
না হলে দ্যাখো না এই আমার বুকের নীচে ফুরফুরে গেঞ্জি নেই
শাসিত লোকের মতো আমার চোখের নীচে কালো দাগ কালো চতুরতা!
মুখে ম্লান মৃত্যুকে সরিয়ে বহুদিন
বুকের ভিতরে কোনো কান্তির কোমল শব্দ শুনিনা এবং
বাসমতি চালের সুঘ্রাণও আমি পাইনা অনেকদিন!
তবু আমি শাসিত লোকের চেয়ে কেন আজো
তোমার মতোন নীল শোষকের সান্নিধ্যই বেশী ভালোবাসি!
কেন ভালোবাসি?
*
এখন পারি না
এখন পারি না, কিন্তু এক সময় পারতাম!
আমারও এক সময় খুব প্রিয় ছিল
নারী, মদ, জুয়া ও রেসের ঘোড়া!
আমিও গ্রহণ করে দেখেছি দুঃখকে
দেখেছি দুঃখের জ্বালা যতদূর না যেতে পারে
তারও চেয়ে বহুদূরে যায় যারা সুখী!
দেখেছি দুঃখের চেয়ে সুখ আরো বেশী দুঃখময়!
এখন পারি না, কিন্তু এক সময় পারতাম
আমারও এক সময় খুব প্রিয় ছিল
নারী, মদ, জুয়া ও রেসেও ঘোড়া প্রিয় ছিল, খুব প্রিয় ছিল।
*
স্তন
(জিনাত ও তারেককে)
কুমারী, তোমার অই অনুভূতিময় উষ্ণ অন্ধকার ঝুলবারান্দায়
আজ বড় মেঘলা দিন,
আজ বড় সুসময়,
এসো হোক তোমাতে আমাতে
এখন তমসা, কোনো চাঁদ নেই,
তোমার বুকের পাত্র আলো দেবে
স্পর্শ করলেই চোখে জেগে উঠবে যুগল পূর্ণিমা।
সমস্ত সতীর গাত্রে লাথি মেরে
সমস্ত সৃষ্টির পাত্র ভেঙে-চুরে।
এসো হোক তোমাকে আমাতে
এসো ভয় নেই!
এসো অইতে উদ্ধারমূর্তি, অইতো বুদ্ধের বোকা ধ্যান!
কামুককে ভঙ্গি দিয়ে নৃত্য করে অইতো আদিম!
বুকে অইতো জলপাই ঘ্রাণ!
অই আনে মধ্যপ্রাচ্য, তেলের সংকট
দূতাবাসে খুনোখুনি,
অই আনে তুর্কী নারীর নাচ, তা তা থৈ অন্ধকার
দুটি তলোয়ার হাতের তালুতে
অই আনে রোমান সভ্যতা!
কুমারী, দহন ওকে কেন বলো?
ওতো লোকগাথা, ওতো প্রবচন,
ওতো পৃথিবীর প্রথম হ্রদের তলদেশ-উথথিত
ক্রন্দন ভরা মাটি!
ওতো সমুদ্রের অপার মহিমা!
এসো হোক তোমাতে আমাতে
এসো নৃত্য করি, জল খাই,
হাতে খুঁড়তে খুঁড়তে যাই তোমার তুমুল শাড়ি
তোমার কুমারী জন্ম
তোমার সুষমা!
*
সেই মানবীর কণ্ঠ
প্রিয়তম পাতাগুলি ঝরে যাবে মনেও রাখবে না
আমি কে ছিলাম, কী ছিলাম- কেন আমি
সংসারী না হয়ে খুব রাগ করে হয়েছি সন্ন্যাসী
হয়েছি হিরণ দাহ, হয়েছি বিজন ব্যথা, হয়েছি আগুন!
আমি এ আঁধার স্পর্শ করে কেন তাকে বলেছি হৃদয়,
তৃষ্ণায় তাড়িতে তবু কেন তাকে বলেছি ভিক্ষুক
আমি এ জলের পাত্রে জল চাই না, বিষ চাই বিষও তো পানীয়।
প্রিয়তম পাতাগুলি ঝরে যাবে মনেও রাখবে না
আমি কে ছিলাম, কী ছিলাম, কেন আমি
এ বুক স্পর্শ করে বলেছি একদিন গ্রীস, কলহাস্য, অদিতি উৎসব!
আমি তাম্রলিপি আমি হরপ্পার যুগল মূর্তির কার কে?
কী আমার অনুভূতির কোনোদিন কোনোই নারীকে
কেন আমি বলিনি মাতৃত্ব? কেন বলেছি নির্জন
প্রিয়তম পাতাগুলি ঝরে যাবে মনেও রাখবে না
আমি কে ছিলাম, কী ছিলাম, সঙ্ঘমিত্রা নাকি সে সুদূর
সভ্যতাসন্ধির রাণী, অন্য কোনো আশোকের বোন,
হয়েছি এখন আমি কেন বা এমন প্রবাহিত।
*
পরাজিত পদাবলী
আমার বাহু বকুল ভেবে গ্রীবায় পরেছিলে
মনে কি পড়ে প্রশ্নহীন রাতের অভিসার?
অন্ধকারে আড়াল পেয়ে ওষ্ঠে তুলে নিলে
হঠাৎ গাঢ় চুম্বনের তীব্র দহনগুলি?
মনে কি পড়ে বলেছিলে এ পোড়া দেশে যদি
বিরহ ছাড়া কিচ্ছুতে নেই ভালোবাসা বোধি-
রাজ্য জুড়ে রাজার মতো কে আর থাকে কার
রাতের পথে সহজ হবে দিনের অভিসার
হৃদয় আজ কুপিয়ে দেই বিচ্ছেদের চারায়
দোলাই তাতে মন চেতনা মনস্তাপের ফুল!
তোমার ইন্দ্রিয়ে তার সৌরভেরা হারায়
যখোন তুমি বাধতে বসো তোমার এলোচুল?
তোমার কাছে গিয়েছিলাম রাতে নদীর ঢেউ
তোমায় আমি পরিয়েছিলাম অঙ্গুরীয় মেয়ে
ভুল বুঝা সে মানুষ তাকে বোঝেনি আর কেউ
তুমি যেমন তোমার মতো বুঝতে চেয়েছিলে।
*
পাতকী সংলাপ
এইসব থেকে আমি ছুটি চাই, ছুটি চাই
এই শিল্প, এই সামাজিক ফুল, হুলস্থুল সমিতি প্রধান যুগ
রৌদ্র আর রাত্রিভুক এই অবসাদ থেকে ছুটি চাই ছুটি চাই প্রভু!
সিংহযূথ, অশ্ববাহন থেকে ফিরে আসি আজকাল এতেও অনেক ক্লান্তি
বিমবিষা লাগে খুব ঘৃণা হয়, ঘৃণা হয় প্রভু আমি কি পাতক?
এক বেদুইন শুধু আজকাল আমাকে জ্যোৎস্নারাতে কেবলি জ্বালায়-
আমি আর ঘুমোতে পারি না, আমি ঘুমোতে পারি না প্রভু আমি কি পাতক
কসাইখানার কাছে রেখে আসি অবজ্ঞায় রাজার মুকুট আমি
ঘৃণা করি সিংহাসন, খুব ঘৃণা করি এই রাজাসন প্রভু আমি কি পাতক?
এক পাল সে গোলাপ্রভু সিংহ শুধু আজকাল আমাকে ইশারায় ইশারায়
কবি হতে বলে প্রভৃ ঘৃণা হয় প্রতিবাদে আমি সেই সুন্দর
গোলাপব্যাপী
থুথু ফেলে দেই, আমি থুথু ফেলে দেই প্রভু, আমি কি পাতক
এক সে আলুলায়িত শিল্প শুধু আজকাল আমাকে তার স্তন
দেখিয়ে বলে,
স্তন দেখিয়ে বলে দ্যাখো এই, দ্যাখো ঐইই আমার নারীত্ব এইই আমার
নির্মাণ প্রভু
আমি কি বলবো, আমি কি বলবো, আমি অভিমানে অভিমানে
তখন আমার সব মরপুটে শিশ্ন দেখিয়ে বলি এ দিয়ে হবে না
এ দিয়ে হবে না কিছু এ দিয়ে হবে না আমি নপুংশক আমি তো
নপুংশক!